The Mysterious Man- Mafia Boss- Season-3 (Part-2) Part- 09
ইয়ারাবী ফোন সামনে এনে সেদিকে তাকিয়ে আছে।চোখজোড়া ভরে উঠছে।চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে আসছে।ফোনটাকে ছুড়ে মেরে দুহাতে মুখ ঢেঁকে কাঁদতে শুরু করে ইয়ারাবী।
রাগে ফুঁসছে আরাভ।চোখজোড়া রক্ত লাল হয়ে আছে।কিন্তু রাগের মাঝে ও চোখের কোনা বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।হাতের গ্লাসটাকে জোরে চেঁপে ধরে আছে।কাঁচের গ্লাসটি ভেঙ্গে হাতের ফিনকি দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।কিন্তু সেদিকে আরাভের কোন খেয়াল নেই।রাগটা প্রচন্ড ভাবে ওর ওপর জেঁকে বসেছে।
রুমে আকরাম আজহার প্রবেশ করছিলেন আরাভের প্রিয় ক্ষীর নিয়ে।
বাহির থেকেই আরাভের চিৎকার শুনে খানিকটা ভড়কে যান।তারপর চিৎকার থামায় ধীরে ধীরে রুমে প্রবেশ করেন আকরাম আজহার।আরাভের আশেপাশের কোন খেয়ালই নেই।এয়ারকন্ডিশন্ড রুমে ও ঘেমে নেয়ে একাকার আরাভ।আকরাম আজহার কখনোই ছেলেকে এরুপে দেখেননি।
-আ আরাভ!!!ঠিক আছিস আব্বু?জিজ্ঞেস করেন আকরাম আজহার।
-হঠাৎ কারোর ডাকে নড়ে উঠে আরাভ।কেঁটে যাওয়া হাতটা লুকিয়ে নিয়ে বলল জি আঙ্কেল।
-তোমার পছন্দের ক্ষীর এনেছি।তোমার আন্টি স্পেশালী তোমার জন্যই বানালো।
চোখ মুছে নেয় আরাভ। কষ্ট করে টেবিলে রাখুন।খেয়ে নিবো আমি।আকরাম আজহার বাটিটা টেবিলে রাখতে গিয়ে ফ্লোরে চোখ পড়ে ওনার।ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পড়ে আছে ফ্লোরে।আর সেই সাথে ভাঙ্গা কাঁচের অংশ।
সোজা হয়ে দাঁড়ান আকরাম। তারপর দ্রুত হেঁটে এসে আরাভের কাছে এসে দাঁড়িয়ে টেনে ওকে সামনে ফিরান।আরাভ হাত টা নিজের গেঞ্জী দিয়ে চেঁপে ধরে আছে।
আকরাম আজহার হাত টা ধরে সামনে আনেন।
-এসব কি আরাভ?আতঙ্কিত গলায় বলেন আকরাম।
-আঙ্কেল তেমন কিছুনা। গ্লাস ভেঙ্গে গেছে।তো সেটাতে লেগেছে একটু।হাত সরাতে চেষ্টা করে আরাভ।
-একটু বলছো এটাকে?কতো রক্ত বেরুচ্ছে।আসো দেখি ঔষধ লাগিয়ে দেই।বলে আরাভকে খাটে বসিয়ে ফাস্টএইড বক্স নিয়ে আসেন আকরাম আজহার।
পরম মমতায় ছেলের হাতে পট্টি করলেন আকরাম।তারপর আরাভের কাঁধে হাত রেখে বললেন।শোন আব্বু রাগটাকে নিয়ন্ত্রনে আনো।দেখলে তো নিজেরই ক্ষতি করলে।এটা কি তোমার জন্য ভালো হলো?আর এতো জোরে চিৎকার করলে ব্রেইনে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়।এমন করোনা আর।তা কার সাথে কথা বলছিলে?জানতে পারি?
-না আঙ্কেল তেমন কেউ না।কলিগ আমার।বলে উঠে আরাভ।
-ওহ আচ্ছা।আকরাম আজহার হাতে ক্ষীরের বাটিটি নিয়ে সেখান থেকে চামচে করে ক্ষীর নিয়ে আরাভের মুখের সামনে ধরলেন।
আরাভের চোখের সামনে ভেসে উঠে হারানো দিন গুলি।ম্যাট্রিক পরীক্ষার সময় সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি।বাবাই মা আরাবী বার বার ডাকছিলো।কিন্তু আরাভের একটাই কথা পড়া শেষ হওয়ার আগে কিছু খাবেনা ও।
রুহী আর রোয়েন ও ছেলের জন্য বসে আছে।সবাই খাবে আর ও না খেয়ে থাকবে?আরাবীকে খাইয়ে দিয়ে ঘুমাতে পাঠিয়েছে রুহী ১১টার মধ্যে।
ওপর থেকে আরাভের জোরে পড়ার শব্দ ভেসে আসছে।রুহী প্লেটে একটু খাবার বেড়ে নিলো।রুহী কি করতে চলছে তা বুঝতে পেরে রোয়েন ও বাটিতে ক্ষীর নিয়ে রুহীর সাথে আরাভের রুমে চলে যায়।আজ স্পেশালী ওর জন্যই ক্ষীর রান্না করেছে রুহী।
দরজায় নক পড়ায় আরাভ পড়ার মধ্যেই বলল,
-মা পড়া হয়নি আমার।হলেই খাবো।
ঠিক তখনই রোয়েন আর রুহী রুমে প্রবেশ করে।আরাভ মা বাবাকে দেখে চমকে যায়।রোয়েন ছেলেকে উঠিয়ে খাটে এনে বসায়।তারপর আরাভের মুখে একচামচ ক্ষীর দিয়ে বলল,
-না খেয়ে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবি।পড়ার শক্তি পাবিনা।খেয়ে নেয়।
-বাবাই পড়াটা শেষ করেই খেতাম।বলে উঠে আরাভ।
-চুপ করে খেয়ে নেয়,বলে ছেলে কে রোয়েন আর রুহী দুজনে মিলে খাওয়ালো।
যাওয়ার সময় রুহী রোয়েন কে বলছিলো চলো আমরা ও খেয়ে নেই।রোয়েন মাথা ঝাঁকিয়ে রুহীকে নিয়ে নিচে চলে যায়।আরাভ ঘড়ি চেক করে।রাত একটা বাজে।আমার জন্য বাবাই আর মা না খেয়ে ছিলো।ভীষন খারাপ লাগতে শুরু করে আরাভের।
-আরাভ!!!!কই হারিয়ে গেলে আব্বু?আকরাম আজহার জোরে ডাকেন।
-ঘোর কাঁটে আরাভের।নাহ আঙ্কেল ক্ষীর টা ভীষন ভালো হয়েছে।(তবে সেই স্বাদ আজ ও পাইনি)
-তোমার আন্টি শুনলে ভীষন খুশি হবেন।বলে বেরিয়ে যান আকরাম আজহার।
আরাভ আকরাম আজহারের যাওয়ার পথে চেয়ে থাকে।পরক্ষনেউ মনে হয় ইয়ারাবীর কথা।ভীষন খারাপ লাগতে শুরু করে আরাভের।এ কি করলো ও?মেয়েটা তো ভুল কিছু করেনি।কিন্তু রাগের বশে কাজ টা ঠিক হয়নি।মেয়েটা কি করছে কে জানে?
একটা অফিসের ওয়েটিং রুমে বসে আছে আরাভ আর আকরাম আজহার।অফিসের সিইও এর সাথে দেখা করতে এসেছে তারা।তবে তিনি এখনো এসে পৌছাননি।
আরাভ আজ কালো কম্পলিট সুট আর চোখে সানগ্লাস পরে আছে।কিছু সময় পর পর ঘড়ি দেখছে।আজ মানুষটা যে বহুল প্রতীক্ষিত।
আকরাম আজহার ফোনে কারোর সাথে কথা বলছেন।
হঠাৎ আরাভ দেখলো বেশ লম্বা একজন নারী পদযুগলে উঁচু হিলের শু,ডার্ক ব্লু কোট প্যান্ট পরিহিত সিইও এর রুমে প্রবেশ করলো।
★★★★
একজন পিয়ন জাতীয় লোক এসে বলল ম্যাম এসেছে।আপনাদের ভিতরে যেতে বলেছে।
আরাভ আর আকরাম আজহার সিইও এর রুমে প্রবেশ করলো।আরাভ সানগ্লাসটাকে চোখ থেকে খুলে টেবিলের ওপর রাখলো।
সিইও এর রুমে কফি মেশিন আছে।ওনি কফি নিচ্ছেন আর বলছেন
-কত চামচ সুগার নিবেন?
-সুগার ফ্রী!!বলে উঠে আরাভ।
-ওহ।ওকে।আর আপনি?আকরাম আজহার কে জিজ্ঞেস করলো আরাবী।
-২চামচ।বলে উঠেন আকরাম আজহার।
আরাবী তিনটি মগে কফি এনে ওদের সামনে রাখলো।আরাভ কে দেখে কেমন জানি করে উঠলো মনটা।
তারপর ও নিজেকে সামলে নিয়ে চেয়ারে বসলো আরাবী।
আরাভ দাঁড়িয়ে হাত বাঁড়িয়ে বলল,
-আমি আরাভ আজহার,আর ওনি আমাস বাবা আকরাম আজহার।
-আরাভ শুনে বুকটা খাঁ খাঁ করে উঠে আরাবীর।কিন্তু আজহার শুনে মনটাই যেন ভেঙ্গে গেলো।আরাবী হাত মেলালো দুজনের সাথে আমি ইনায়াত আরাবী চৌধুরী।
-ওহ।কাজের কথায় আসি তাহলে।কথাটা বলে ফাইলটা আরাবীর দিকে ধরলো আরাভ।
-ফাইলটা দেখে আরাবী বলল আ’ম সারপ্রাইজড আপনি আমার সাথে ডিল করতে চাচ্ছেন।আ’ম শিওর আপনি আমার পাস্টটা জানেননা।
-আই নো এভ্রিথিং মিস আরাবী।আমি যার সাথে ডিল করি তার পাস্ট প্রেজেন্ট সম্পর্কে খুব ভালো ধারনা নেই আমি।আপনার বাবার হসপিটালে সিলগালা পড়েছে সেটা কারোর অজানা নেই।বাট আপনি খুব অনেস্টলি বিজনেসটা কে হ্যান্ডেল করে আসছেন সেটা দেখেই আমি এসেছি।
-আমার বাবা খুব অনেস্ট একজন ডাক্তার। ওনার সাথে অন্যায় হয়েছে।বল উঠে আরাবী।
-মিস আরাবী আপনার বাবা কি করেছে না করেছে সেটা আমার জানার বিষয় নয়।ওনি ড্রাগ বিক্রী করছেন অর ডেট এক্সপায়ার্ড মেডিসিন সেল করছে সেটা সম্পূর্ন ওনার নিজস্ব ব্যাপার।সেটা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই।এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে আরাভ।
-আরাবীর চোখে অশ্রু এসে গেছে।ওর বাবাই কেমন সেটা ও খুব ভালো করে জানে।কিন্তু আরাভের বাবাইকে নিয়ে এভাবে কথা বলা একদম পছন্দ হয়নি আরাবীর।
ফাইল টা ছুড়ে মারে আরাবী আমি আপনার সাথে ডিল সাইন করবোনা।যে আমার বাবাকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে পারবেনা তার সাথে কিসের ডিল। প্লিজ চলে যান আপনি।আমি আপনার সাথে ডিল করতে পারছিনা।প্লিজ চলে যান।
-আর ইউ শিওর আপনি ডিল সাইন করছেননা আমার সাথে?শক্ত গলায় বলল আরাভ।
-নোপ।আমি করছিনা।আপনারা আসতে পারেন।বলে উঠে আরাবী।
আরাভ আর আকরাম আজহার বেরিয়ে যায়।হাঁটতে হাঁটতে একটা দরজার দিকে চোখ যায় আরাভের।ডোরটার নেম প্লেটে লেখা Dr Royen Chowdhury. তখনই একটা লোক বলল বড় স্যার মাঝে মধ্যে এখানে আসেন আরাবী ম্যামের দরকারে।আরাভ নেমপ্লেট হাত ছোঁয়ায়।
সেদিন বাসায় গিয়ে নিজেকে শান্ত করতে পারছিলোনা আরাভ।বোনকে দেখে ওর কেমন ভালো লাগছিলো সেটা কাউকে বুঝানো পসিবল নয়।কিন্তু এভাবে কথা বলবে সেটা স্বপ্নে ও ভাবেনি আরাভ।বোন কে কষ্ট দিলো সে। তখনই আকরাম আজহার আরাভের রুমে আসেন,
-আরাভ দেখো আব্বু তোমার বাবা সত্যিই ভীষন সৎ একজন ডাক্তার।এভাবে কথা বলাটা উচিৎ হয়নি তোমার।আরাবী ও কষ্ট পেলো।
-কেন করলাম কাজ টা আমি জানিনা।আমার ভালো লাগছেনা।বলে উঠে আরাভ।
-আচ্ছা তোমাদের সেকেন্ড মিটিং এর ব্যাবস্থা করি সব ঠিক করে নিও।বলে উঠেন আকরাম আজহার।
মাথা ঝাঁকায় আরাভ।এদিকে ইয়ারাবীর মন ভীষন খারাপ থাকে।প্রথম কথায় এতোটা রুড বিহেভ আশা করেনি ও।বাবা মা বাসায় নেই।শুয়ে শুয়ে কাঁদছিলো ইয়ারাবী।হঠাৎ কলিংবেলের শব্দে উঠে বসে ও।দরজা খুলে দেখলো একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে।ইয়ারাবীর দিকে একটা একটা প্যাকেট আর বড় একটা হোয়াইট টেডিবিয়ার ধরলো।
-এটা কার?কে পাঠিয়েছে?জিজ্ঞেস করে ইয়ারাবী।
সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে “নীল ক্যাফের ভালোবাসা” পেজে পাবেন।
-লোকটা একটা পেজ দেখে বলল আরাভীয়া নামের কে যেন।
-ইয়ারাবী ভাবছে এ নামের কাউকে ও চিনেনা।তাহলে জিনিস গুলো ওর নয়।এগুলো আমার নয়।
-আপনার নাম আর এ ঠিকানাই বলল।লোকটা ইয়ারাবীর হাতে জিনিস গুলো দিয়ে চলে গেলো।
ইয়ারাবী জিনিস গুলো নিয়ে উপরে চলে আসে।এ নামের কোন ফ্রেড কিংবা আত্মীয় নাই ওদের। তাহলে কে এই আরাভীয়া?রুমে এসে প্যাকেট থেকে দুটো বক্স বের করলো ইয়ারাবী।একটায় চকলেট আর অপরটায় রেড হার্ট শেপড বালিশ আর সেখানে লেখা সরি।পুতুলটার বুকে ও রেড হার্ট শেপড বালিশ আছে সেটাতে ও সরি লেখা।ভাবনায় পড়ে যায় ইয়ারাবী।কে আছে যে এতো সরি বলছে ওকে?
চলবে
1.3K
68 Comments
3 Shares
Share