The Mysterious Man- Mafia Boss- Season-3 (Part-2) Part- 10
আজ প্রফেসরকে দেখতে এসেছেন ডাক্তার রাব্বি, সম্পা আরো অনেকেই।প্রফেসরকে এ অবস্থায় দেখবে বলে কেউ ভাবতে ও পারেনি।রোয়েনকে ঘিরে ওর স্টুডেন্টস ডাক্তার নার্সরা বসে আছে।সবার দিকে চেয়ে মৃদু হাসছে রোয়েন।
সবাইকেই বিষন্ন দেখাচ্ছে।প্রফেসর ছাড়া যে বড় শূন্য শূন্য লাগে ওদের।স্টুডেন্টস রা বার বার বলছে স্যার কবে আসবেন ক্লাশ নিতে।আপনার ক্লাশ একদিন না পেলে একদমই ভালো লাগেনা।রোয়েনের হাসপাতালের পাশে আরেকটি মেডিকেল কলেজ আছে ওর।
রাব্বী বলছে স্যার কিছু করুন।ভেবেছিলাম অন্য কোথাও বসবো কিন্তু পারলাম না।আপনি ছাড়া শূন্য লাগে সব।এদিকে ডাক্তার সম্পাও দুঃখিত। সেদিন যদি নিজেই মেটার টা হ্যান্ডেল করতো আজ হয়ত এদিন দেখতে হতোনা প্রফেসরকে।
রাব্বী আর সম্পাকে কাছে ডাকলো রোয়েন।ওরা দুজনেই ওর স্টুডেন্ট।
তারপর ওদের হাত একসাথে একহাতের মুঠোয় ধরে বলল,
-আমার জন্য নিজেদের থামিয়ে রেখোনা।তোমরা নিজেদের গড়ে তুলো।জীবন টা পড়ে আছে তোমাদের।অন্য কোথা ও চেম্বার নিয়ে সেখানে যাও।
রাব্বীর হাতের সাথে স্পর্শ লাগায় ভিতরটা কেঁপে উঠে সম্পার।বারবার হাতের দিকে তাকাচ্ছে আর রাব্বী তারপর প্রফেসরের দিকে।৮বছরের সম্পর্ক রাব্বী আর সম্পার।তবে এখনো বিয়ের পিড়ীতে বসার সুযোগ হয়ে উঠেনি ওদের।একে অপরকে ভীষন ভালোবাসে ওরা।
-স্যার আপনি জলদি সুস্থ হন।আমাদের হাসপাতালের সিলগালা অবশ্যই খুলবে।আর সেটা হবে খুব জলদি।বলতে থাকে রাব্বী।
-তার আগে তোমাদের বিয়েটা খেতে চাই আমি রাব্বী আর সম্পা।বলে উঠে রোয়েন।
প্রফেসরের মুখে নিজেদের বিয়ের কথায় দুজোড়া গাল লজ্জায় লাল হয়ে আসে।তারপর ও রাব্বী লজ্জা মাখা মুখেই বলল স্যার জলদি সুস্থ হয়ে নিন।তারপরই বিয়ে করবো আমি আর সম্পা।বলেই লজ্জায় মাথা নিচু করে রাব্বী।
রুহী আর আরাবী ট্রে নিয়ে রুমে ঢুকেছে।সবার জন্য নাস্তা বানিয়েছে ওরা।
আসসালামু আলাইকুম ম্যাম!!বলে উঠে সবাই রুহীকে দেখে।রুহী হাসিমুখে সবার সালামের উত্তর দিলো।
-স্যার আপনার বেটার কেয়ারের জন্য একজন নার্স দরকার।রোয়েনের একজন স্টুডেন্ট বলে উঠে।
-নার্স!!!(রোয়েনের নার্স কথায় রুহী রোয়েনের দিকে তাকায় চোখ বড় করে।)তোমাদের ম্যাম থাকতে কাউকে প্রয়োজন পড়েনা আমার।বলে উঠে রোয়েন।
-রুহী লজ্জা মাখা হাসে।লোকটা কয়েকদিনে মোটামুটি সুস্থ হয়েছে।মনটা ও বেশ ফুরফুরা রুহীর।
রুহী সেখান থেকে চলে আসে আরাবীকে নিয়ে।
-আরাভ!!!চল খেলি।(আরাবী)
-ভালো লাগছেনা আরাবী।তুই যা।
বেশ বিরক্ত মাখা কন্ঠে কথাটা বলে সামনে তাকিয়ে আবার পাশ ফিরে আরাভ।এইমাত্র কি বলল আরাভ এটা?একটু আগে ও আরাবী ওর সামনে ছিলো সাদা ফ্রক পরে।ছোট্ট চুল গুলো দুপাশে ঝুঁটি করা।গোলাপী গাল গুলো ফুলে উঠেছিলো।লাল ঠোঁটজোড়া প্রশ্বস্ত করে হাসছিলো ওর বোন।আজ যখন বোন কে প্রথম দেখলো তখন যেন পুরোনো দিন গুলো স্পষ্ট ওর চোখে ভেসে উঠেছিলো।আরাবীর মাঝে বড় রকমের পরিবর্তন এসেছে।সে এখন দায়িত্ববান হয়ে গেছে।বোনের সাথে হাত মিলানোর সময় মনে পড়ে যায় একসাথে স্কুলে যাওয়ার কথা।দুভাইবোন একে অপরের হাত ধরে স্কুলে যেতো।খেলা ধুলা ফাইটিং হতো অনেক।আরাবীটাই মার খেতো বেশি।প্রথমে আরাভ না দিলে ও পরে শুরু হয়ে যেতো আরাবীকে মারা।কিন্তু ভালোবাসাটাও যে কোন অংশে কম ছিলোনা।আরাবীটা রাগ ও পেয়েছে ঠিক বাবাইয়ের মতো।যখন বাবাই কে ওসব বলছিলো আরাভ তখন আরাবীর চোখ জোড়া ভিজে গেছিলো।তারপর কিভাবে আরাভকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো।আরাভের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুঁটে উঠে।বেশ সাজিয়েছে আরাবী অফিস রুমটাকে।
এদিকে আরাবী শুয়ে আছে।চোখের পানিতে বালিশ ভিজে যাচ্ছে।কেন যেন ভাইটাকে খুব মিস করছে আজ।ঐ লোকটার নাম শোনার পর থেকেই মনটা কেমন করে উঠেছিলো।যেন মনে হচ্ছিলো সেই আদরের ভাই।
আরাভ কই তুই?খুব মিস করছি তোকে।প্লিজ ফিরে আয় জলদি।আস্তে আস্তে বলে কেঁদে উঠে আরাবী।লোকটার চেহারা ও ঠিক আরাভের মতো।তার চাহনি ও ওর ভাইয়ের মতো।কে জানে কই আছে আরাভ?কি অবস্থায় আছে ও?ভাবতে থাকে আরাবী।
খেতে বসেছে রুপন্তী রেহান আর তাদের রাজ্যের রাজকুমারী ইয়ারাবী।কলেজের ড্রেস পরে নিচে এসেছে ব্রেকফাস্ট করতে।এমন মলিন মুখে কখনোই ইয়ারাবী কে দেখেনি রুপন্তী আর রেহান।কলিজার টুকরাটাকে খুব বেশি মলিন দেখাচ্ছে আজ।নিঃশব্দে খাচ্ছে ইয়ারাবী।
-আম্মু ঠিক আছিস তুই?জিজ্ঞেস করে রেহান।
-বাবার ডাকে সাড়া দেয় ইয়ারাবী জি পাপা।কেন?
-না মানে তোকে খুব আপসেট মনে হচ্ছে।সব ঠিক আছে তো?ভ্রু কুঁচকায় রেহান।
-জি পাপা।আমার হয়ে গেছে।আমি আসি।বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে ইয়ারাবী।কয়েকদিন ধরে ঘুম খাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছে বললেই চলে।
কখনো কেউ এভাবে ওর ওপর চিৎকার করেনি এভাবে।মাম্মা পাপা ও না।কিন্তু ওনি এভাবে কেন চিৎকার করলো?ভাবতেই বুক ফেঁটে কান্না আসতে চায় ইয়ারাবীর।রোয়েনের গায়ে কাঁথা জড়িয়ে পাশে শুয়ে পড়ে রুহী।রুহীর পিঠ দিয়ে শোয়ায় একদমই ভালো লাগছেনা রোয়েনের।
রুহীর পিঠের ওপর থেকে চুল সরে গিয়ে সাদা পিঠ দৃশ্যমান।পিঠের লাল তিলটায় সামান্য পরিমানে বার্ধক্যের ছোঁয়া পায়নি।রুহীর লাল তিলটায় হাত ছোঁয়ায় রোয়েন।শরীরে অজানা শিহরন বয়ে যায় রুহীর।পিছনে ফিরে তাকায় রুহী তারপর বলে,
-কি হলো এমন করছো কেন?বলে উঠে রুহী।
-রোয়েন রুহীকে টেনে কাছে নিয়ে আসে।আমার দিকে পিঠ দিয়ে রেখেছো কেন অসভ্য মেয়ে?
-রুহী হেসে রোয়েনের বুকে চুমু দেয়।রোয়েন রুহীকে জড়িয়ে নেয় বুকের মাঝে।রুহী ও স্বামীকে জড়িয়ে ধরে।
রোয়েন মাথা নিচু করে রুহীর ঠোঁটে নিজের রসালো ঠোঁট জোড়া ডুবিয়ে দেয়।
শুষে নিতে শুরু করে রুহীর ঠোঁটের সকল মিষ্টতা।
★★★★
ধানমন্ডির নামকরা একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে আরাভ আর আকরাম আজহার।চকলেট কালার শার্টের হাতা দুটো কুনুই পর্যন্ত ভাজ করে নিয়েছে আরাভ।কিছুক্ষন পর পরই ঘড়ি দেখছে ও।
আকরাম আজহার পাঁচ কাপ কফির অর্ডার করলেন।
কিছুক্ষনের মাঝে একদম নির্দিষ্ট টাইমে আরাবী ওর পিএস আর একজন এম্পলয়ি এসে পৌছোলো সেই রেস্টুরেন্টে।আরাবী এসে দাঁড়াতেই আরাভ আর আকরাম আজহার দাঁড়িয়ে হ্যান্ডশেক করলো।
আরাবী নিজের সানগ্লাসটা খুলে পাশে রাখলো।আরাভের সানগ্লাসটা আগের থেকে খোলা ছিলো।
-So!!বলে উঠে আরাবী।
-I’m sorry for my insolent manner.আসলে ওভাবে কথাগুলো বলতে চাইনি আমি।বলে উঠে আরাভ।
-That’s Good.আমি আমার বাবাকে খুব ভালোবাসি।ওনার বিরুদ্ধে কোন নেগেটিভ ওয়ার্ড নিতে পারিনা আমি।
-হুম।মলিন হাসে আরাভ।
-আমার একটা প্রশ্ন আছে।বলে উঠে আরাবী।
-জি?বলুন।ভ্রু নাচিয়ে বলল আরাভ।
-আমেরিকায় এতো বড় কোম্পানীর মালিক হয়ে আমার কোম্পানীর সাথে কেন ডিল সাইন করতে চান?বলে উঠে আরাবী।
-গুড কোয়েশ্চেন। আসলে আপনার কোম্পনীর প্রত্যেক তথ্য জানা আমার।আমি প্লিজড আপনার অনেস্টি আর কাজের ধরন দেখে।একটু হেসে বলল আরাভ।
-থ্যাংকস।আসলে কোম্পনীটা বাবার।নিজের রক্ত ঘাম দিয়ে এই কোম্পনীটাকে এ পর্যন্ত এনেছেন।মলিন কন্ঠে বলল আরাবী।
-ওহ আচ্ছা।তা ওনি মানে আপনার বাবা মা কেমন আছেন?জিজ্ঞেস করে আরাভ।
-ওনারা কেউই ভালো নেই।হাসপাতালে সিলগালা লাগার পর থেকে বাবা ভেঙ্গে পড়েছিলেন।।খুব অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন।তবে এখন একটু ভালো আছেন।মা ও ভালো নেই মনের দিক থেকে।মন খারাপ করে বলল আরাবী।
-মিটিং শুরু করা যাক।বলে উঠেন আকরাম আজহার।
ইয়ারাবী টেডিটার দিকে চেয়ে আছে।এগুলো কার?আর কেন ওর ঠিকানায় এলো।ওর যদি হয় তাহলে কে পাঠালো?ওর তো আরাভীয়া নামে কোন বান্ধুবী নেই।
পুতুলটার একপাশে লাল হার্টশেপড বালিশটা রাখা আছে।সেখানকার সরি লেখাটার দিকে বারবার চোখ যাচ্ছে ইয়ারাবীর।সব বান্ধুবীদের জিজ্ঞেস করা শেষ।ওরা কেউই নাকি পাঠায়নি।তাহলে!!!
-Congrats miss Inayat Arabi chowdhury. The deal goes to you.বলে উঠে আরাভ।
-Thanks Mr Arav Azhar and thanks Mr Azhar.দুজনের সাথে হাত মেলালো আরাবী।
-তো আজ উঠি।নাইস টু মিট ইউ।বলে উঠে আরাভ।
-আপনাদের দাওয়াত করতে চাচ্ছি।বলে উঠে আরাবী।
-দাওয়াত!!অবাক হয় আরাভ।
-জি।আসলে মা বাবার ২৭ তম এ্যানিভার্সারি। তো বাবার মন ভালো রাখার জন্য ছোট্ট একটা পার্টির এ্যারেঞ্জ করছি।আপনারা আসলে ভালো লাগবে আমাদের।
আরাভ চিন্তায় পড়ে যায় আরাবীর কথায়।কি করে যাবে ও সেখানে?কি করে মানুষ গুলোকে ফেস করবে ও?আকরাম আজহার আরাভ কে সাইডে নিয়ে এসে অনেক বুঝান যে ওর যাওয়া উচিৎ।অন্তত বাবা মাকে দেখবে ও।কিছুক্ষন বাদে আরাভ এসে দাঁড়ায় আরাবীর সামনে।এড্রেস দিন বাসার।চলে আসবো নির্দিষ্ট সময়ে।
আরাবীর মুখে হাসি ফুঁটে উঠে।ঠিকানা দিয়ে বলল পরশু অবশ্যই আসবেন।
মাথা ঝাঁকায় আরাভ।আবার ও আরাবীর সাথে হ্যান্ডশেক করলো ও।
ঘরে ফিরে আসে আরাভ।ওর খেয়াল হলো ইয়ারাভ কথা।মেয়েটা ওকে কোন রিপ্লাই করলোনা এখনো।ম্যাসেঞ্জারে লগ ইন করলো আরাভ।দেখলো ইয়ারাভ অনলাইন।
সরাসরি কল দিলো ইয়ারাভ কে ও।
-হ্যালো!!ঘুমন্ত গলায় অপরপাশ থেকে বলল ইয়ারাবী।
-হ্যালো বিউটিফুল!!!! বাঁকা হেসে বলল আরাভ।
-বববি বিউটিফুউউউউল!!!ক ক কে আপনি?লাফ দিয়ে উঠে বসে ইয়ারাবী।
-এতো জলদি ভুলে গেলে?বলে উঠে আরাভ।
-ওহ আপনি?কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল ইয়ারাবী।
-জি।বিরক্ত হলেন মনে হয়?বলে উঠে আরাভ।
-আরে নাহ বলুন।বলে উঠে ইয়ারাবী।
-সরির রিপ্লাই পেলাম না এখনো।বলে উঠে আরাভ।
-সরি কখন বললেন যে রিপ্লাই পেতে বসে আছেন?রেগে যায় ইয়ারাবী।
-কেন চকলেটের সাথে কি পিলো আর টেডিটাকে ও খেয়ে নিলেন?দুষ্টু হাসে আরাভ।
-হোয়াট!!!ওগুলো আপনি পাঠিয়েছেন?অবাক হয়ে যায় ইয়ারাবী।
-জি মিস ইয়ারাভ।তাহলে কি আমার সরি এক্সেপ্টেড?
-না একদম না।আপনার চকলেট বালিশ আর টেডি অক্ষত আছে নিয়ে চলে যান।রেগে যায় ইয়ারাবী।
-গিফ্ট করা জিনিস ফেরৎ নেই না আমি।সরি তো আপনাকে নিতেই হবে।বলে উঠে আরাভ।
-আমি নিবো না।কি করতে পারবেন আপনি?মুড দেখিয়ে বলল ইয়ারাবী।
-আর ইউ শিওর?আপনি সরি নেবেননা?দেখুন কাউকে এতো সরি বলিনা আমি। জাস্ট আপনাকে বলছি।মুখ শক্ত করে বলল আরাভ।
-বলতে বলেছে কে?বলে উঠে ইয়ারাবী।
-নো মোর আর্গুমেন্টস। সরি এগেইন।
-এক্সেপ্ট হবেনা।বলে উঠে ইয়ারাবী।
-লিসেন মিস ইয়ারাভ আমি যদি আপনাকে সরি এক্সেপ্ট করাই তাহলে পস্তাতে হবে আপনাকে।বলে উঠে আরাভ।
-হুহ ভয় দেখাচ্ছেন মনে হয়?বলে উঠে ইয়ারাবী।
-ভয় দেখানোর আমি কে?জাস্ট বললাম।এক্সেপ্ট করুন নয়তো করাবো।(আরাভ)
-করান। আমি ও দেখতে চাই কিভাবে এক্সেপ্ট করান আপনার সরি।কপালে আসা চুল গুলো কে ফু্ঁ দিয়ে উড়িয়ে বলল ইয়ারাবী।
-Just wait and Watch beautiful. বলে কল কেঁটে দেয় আরাভ।
-হুহ।ফোন কেঁটে ঙেংচি দেয় ইয়ারাবী।কি করবে সে আমি ও দেখবো।আমেরিকা থেকে এসে জোর করে সরি নেয়াবে।যেন গাছে ধরে সরি।
চলবে
1.3K
79 Comments
3 Shares
Share