The Cobra King Mafia Boss- Season 4

The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 96

→যেখানে বুড়ো কাকুর ভয় সেখানে দেখা মেলে তার ব্যাপারটা মনে মনে আউড়ায় সামায়রা আয়নায় লোকটাকে দেখতে দেখতে।লোকটা ওর দিকেই তো আসছে।উফ কি একটা অবস্থা!!!কি করতে এখানে এসেছিলো ও?তাও আবার ওয়য়শরুমে না গিয়ে কিচেনের সিংকে এলো হাত ধুতে।লোকটা বেসিনের কাছে এসে পানির ভিতর হাত দিয়ে সামায়রার দিকে একটু পানি ছিটালো। মুখ সরিয়ে রেগে ফাহমিনের দিকে তাকায় সামায়রা।ফাহমিন কিছু বলতে নিলে সামায়রা দৌড়ে পালাতে যাবে তখনই ওর গাউনের ফ্লোর টাচ অংশটা কিছুতে আটকে যায়।সামায়রা ভয়ে আঁৎকে উঠে।আজ ওকে মনে হয় শেষ করে দিবে লোকটা?খুন করবে মনে হয়।নাকি ওকে ওদের মেইডটার মতো আর ভাবতে পারেনা সামায়রা কয়েকটা ঢোঁক গিলে নিয়ে সাহস যুগিয়ে বলল,
.
.
-”দেখুন আপনাকে কাকু ও বলবো না আঙ্কেল ও বলবো না ভাইয়া ও বলবো না কিছু বলবো না।প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।আম্মু বকা দিবে আমাকে।”
-”তোমাকে ধরে রেখেছে কে?আর তোমার মা কেন বকা দিবে?”
.
.
পিছন থেকে ফাহমিন বলে উঠে।সামায়রা পিছনে ফিরে দেখলো ওর গাউনের অংশটা একটা ধারালো কিছুর সাথে আটকে গেছে।ফাহমিন বসে পড়লো নিচে।খুব যত্নে গাউনটা খুলে দেয়।সামায়রা দৌড়ে বেরিয়ে যায়।ফাহমিন ভাবছে এভাবে পালাচ্ছে কেন মেয়েটা?আজ এর একটা ব্যাবস্থা করতে হবে।ফাহমিন হেঁটে বেরিয়ে আসে।সামায়রা পাগার পার।মেয়েটা যেভাবে দৌড়ালো বাবারে বাবা।ফাহমিন বন্ধুদের সাথে যোগ দেয়।রুহীকে দেখতে চায় রোয়েন।তবে মামী আর অন্যদের কারনে পারছেনা।রুমের সামনে কয়েকবার হেঁটে ভিতরে ঢুকে রোয়েন।রোয়েন কে আসতে দেখে নীরা হামিদ হেসে বলল,
.
.
-”তো আমরা নিচে গেলাম।রুহী তুই রেস্ট কর।”
-”না মামী আমি ও আসি।”
-”বেশি কথা বলিস।আনিলা আপা আপনি ও চলেন।আশফিনা তুমি ও চলো।”
.
.
রুহীকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওরা বেরিয়ে গেলো।রোয়েন এতক্ষন ব্যাস্ততা দেখানোর চেষ্টা করলে ও ওরা বেরুতেই দরজা লক করে দিয়ে রুহীর কাছে এসে বসে।রুহী সাদা শাড়ীতে বেশ আমোদে আছে।শাড়ীটাও পাতলা।রোয়েনটা ও আজকে ওকে যেন পাগল করেই ছাড়বে।গায়ের সাদা পাঞ্জাবীটা একদম ফু্টে উঠেছে ওর ওপর।রুহী আপাদমস্তক রোয়েনকে দেখে বলল,
.
.
-”সবার সামনে সাদা কখনো পরবেনা।শুধু আমার সামনে পরবে।”
-”কেন?ভালো লাগছেনা?”
-”এতোটাই ভালো লাগছে যে চোখ সরতেই চাইছেনা।”
.
.
রুহীকে টেনে এনে কোলে বসায় রোয়েন।রুহীর মাথার কোনায় চুমু খেয়ে রোয়েন বলল,
.
.
-”নিজে ও তো সাদা পরী হয়ে পাগল করছো আমাকে।”
-”তাহলে আমাকে উন্মাদতায় ভরিয়ে দাও।”
-”আরো পাঁচটা মাস অপেক্ষা করো।ভালবেসে ভরিয়ে দেবো যে আর উঠতেই মন চাইবেনা।”
-”উঠতে ও চাইনা।তোমাকে নিজেতে মিশিয়ে নিতে চাই।”
.
.
রুহীকে সামনে ফিরিয়ে ওর কপালে ঠোঁট বুলিয়ে বুকের মাঝে গভীরভাবে জড়িয়ে নেয়।এদিকে সামায়রা কে দেখছে ফাহমিন মেয়েটা বারবার পালাচ্ছে ওকে দেখে।ফাহমিন কয়েকবার ওর দিকে হাসলে ও মেয়েটা মুখ গুমড়ো করে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।ফাহমিন ওর চলাচল দেখতে থাকে।সামায়রা লুকোতে লুকোতে ড্রয়িং রুমে চলে আসে।এখানে কেউ নেই।সবাই গার্ডেনে।ফাহমিন হঠাৎ দেখলো সামায়রা নেই।আশেপাশে তাকিয়ে খুঁজতে থাকে।হঠাৎ দেখলো মেইন ডোর খোলা তার মানে ভিতরে ও।ফাহমিন সবার থেকে আড়াল হয়ে ঘরে প্রবেশ করে।সামায়রা সোফায় বসে নখ খুঁটছে হাতের।ফাহমিন এসে ওর পাশে বসতেই না বলে।চিৎকার করে লাফিয়ে উঠে সামায়রা।ছিটকে কিছুটা দূরে সরে যায় ও।ফাহমিন উঠে এসে ওর সামনে দাঁড়ায়।সামায়রা পালাতে চাইছে সেটা বুঝতে পারছে ফাহমিন।সামায়রা দৌড়াতে নিলে ফাহমিন ওর সামনে এসে দাঁড়ায়।তারপর বলল,
.
.
-”পালাচ্ছো কেন?”
-”ক কই পালাচ্ছি?”
-”আমাকে দেখে দৌড়াচ্ছো।কি হয়েছে?”
-”আপনি আমাকে ফলো করছেন।তখন কিচেনে ও চলে গেলেন।”
-”ম্যাডাম তোমাকে ফলো করছিনা।হাত ধুতে গেছিলাম।”
-”তাহলে কলেজে আমাকে ফলো করেন কেন?”
-”কোথায় ফলো করলাম?”
-”ঐযে কলেজের সামনের হাসপাতালে দাঁড়িয়ে থাকেন।আমি নামলে হাসেন হাত নাড়াঁন।”
-”তোমাকে ফলো করছিনা।ওখানকার ডাক্তার আমি।ডাক্তার ফাহমিন হক।এখন তুমি বলে পালাচ্ছো কেন?”
-”আমি বুড়ো মানুষ পছন্দ করিনা।”
.
.
ফাহমিনের খারাপ লাগলে ও নিজেকে কন্ট্রোল করে বলল,
.
.
-”আচ্ছা বুড়ো মানুষ পছন্দ করোনা কিন্তু কেন?”
-”ঐযে বলেছিলাম না দুবাইতে বুড়ো লোকটার কথা।আমাদের মেইডকে রেপ করেছিলো।”
.
.
সামায়রার কথায় জোরে জোরে হাসতে শুরু করে ফাহমিন।সামায়রা মুখ গুঁমড়ো করে ওকে দেখছে।ফাহমিন এবার নিজের হাত জোড়া সামায়রার দিকে ধরলো।তারপর বলতে শুরু করে,
.
.
-”দেখো আমার হাতের পাঁচটা আঙ্গুল কি সমান?”
-”না।ছোট বড় আছে।”
-”ঠিক তেমনই সব মানুষ এক হয়না।যেমন তোমার দুলাভাই। ওনি মাফিয়া বাট আমি ডাক্তার,তোমার জুয়েল ভাইয়া বিজ্ঞানী।আমরা কি সবাই এক?আমাদের টেস্ট আলাদা মন মানসিকতা আলাদা।খারাপ ভালো দুই ধরনের মানুষ পৃথিবীতে আছে।আর আমি যদি খারাপ হতাম তোমার দুলাভাই আমাকে বুলেট মেরে উড়িয়ে দিতো কবেই।”
.
.
সামায়রা ফাহমিনের কথা শুনে চোখ ঘুরাতে শুরু করে।ওর চোখের খয়েরী মনি গুলো মার্বেলের মতো ঘুরছে।ফাহমিনের হাসি পায়।ও জিজ্ঞেস করে,
.
.
-”কি করছো?”
-”লেট মি ভাবিং।ভাবতে দিন।”
-”লেট মি ভাবিং!!! এটা আবার কি?”
-”বাংলিশ।”
-”বাংলিশ!!!অবাক ফাহমিন।”
-”হ্যা।আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের রীমা আপুর কাছে এমন অনেক ওয়ার্ড আছে।ওর থেকে শিখেছি কিছু।তাই আজ আপনার ওপর ঝাড়লাম।”
-”আমাকেই পেলে বাংলিশ ঝাড়তে?”
.
.
গুনগুনায় ফাহমিন।ফাহমিন কে গুনগুন করতে দেখে সামায়রা বলল,
.
.
-”কিছু বললেন আমাকে?”
-”নাহ।ভাবো তুমি।”
-”আচ্ছা”
.
.
পনের বিশমিনিট ভাবার পর মুখ খুলে সামায়রা।ও বলল,
.
.
-”সব ভেবে দেখলাম আপনি ভালো মানুষ।তবে বিশ্বাসযোগ্য কিনা বুঝতে পারছিনা।”
-”ওহ।তাও কিছুটা ধারনা তো পাল্টালো।”
-”হুম।”
-”ফ্রেন্ড হতে পারি আমরা?”
-”একটা শর্তে ফ্রেন্ড হবো আপনার।”
-”সেটা কি?”
-”চকলেট খাওয়াতে হবে।”
.
.
ফাহমিন আবার ও হেসে ফেললো।তারপর ওর হাত ছুঁয়ে বলল,
.
.
-”খাওয়াবো।কাল তোমার কলেজের সামনে দেখা হবে ওকে?”
-”ওকে।”হাত সরিয়ে নেয় সামায়রা।
-”যাও বাহিরে যাও।আমি একটু পরে আসছি।”
.
.
সামায়রা বেরিয়ে যায়।আর কিছুক্ষন পর ফাহমিন বেরিয়ে আসে।এদিকে রুহীর সাথে কিছু ভালবাসাময় মুহূর্ত পার করে ওকে নিয়ে নিচে নেমে আসে রোয়েন।দুজনে গেস্টদের জয়েন করে।রোয়েনের নতুন কিছু বন্ধু ও এসেছে।সবার সাথে পরিচয় হয় রুহী।নানাকে ও আসতে দেখে রুহী দৌড়ে ওনার কাছে আসে।সালাম দিয়ে ওনাকে ভিতরে এনে বসায়।কিছুক্ষন গল্প করে সবাই তাজোয়ার সাহেবের সাথে।লাঞ্চ টাইম চলে আসে।বিরিয়ানী রান্না হয়েছে।কয়েকজন লোক খাবার গুলো বেড়ে ডাইনিং টেবিল সাজায়।রুহী নিজে নানা কে খাবার বেড়ে দেয়।ব্যাপারটায় ভীষন খুশি আনিলা।আসলেই খুব ভালো মেয়ে রুহী।এতো জলদি ওদের আপন করে নিবে ভাবতেই পারেনি আনিলা।এদিকে রোয়েন আলাদা করে রুহীর জন্য খাবার বেড়ে নেয়।নিজ হাতে খাইয়ে দিতে শুরু করে রুহীকে।সবাই দেখে ওদের সন্তুষ্টির চোখে।সবার মনেই এক কথা ভালবাসার শেষ নেই যেন।সবাই চলে যেতে শুরু করে।নীরা হামিদ আনিলা রেজোয়ান রোয়েনের বন্ধুরা আর আশফিনা রামীন ছিলো।ওরা দেরি করে বেরুবে।সারাদিনের ব্যাস্ততায় কথা হয়নি তেমন।বোকা সামায়রা ফাহমিন কে দেখে কিটকিটিয়ে হাসছে আর হাসাচ্ছে ও।ফাহমিন এটা ওটা ইশারা করছে সামায়রাকে।ব্যাপারটা রোয়েন খেয়াল করলে ও গায়ে মাখেনি।এমনিতে ও ওর বন্ধুরা সামায়রাকে আদর করে।হয়ত ছোট হিসেবে ফাহমিন মজা করছে।সবার জন্য কফি বনিয়ে আনে রুহী।সাহায্যে ছিলো আশফিনা।কফি খেতে খেতে জম্পেশ আড্ডা চলে নয়টা পর্যন্ত।নয়টার পর ওরা বেরিয়ে যায়।রুহীকে কোলে তুলে রুমে চলে আসে রোয়েন।ঘরে ফিরে জামা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে আশফিনা।শাড়ীটা বেশ জ্বালিয়ে মেরেছে ওকে।ফুঁটছিলো গায়ে।এখন একটু তো শান্তি মিলবে।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো রামীন খাটে বসে আছে খালি গায়ে।আশফিনা বলল,
.
.
-”এভাবে বসে আছেন কেন?”
-”তোমার অপেক্ষা করছিলাম।”
-”ওহ।কিছু বলবেন?”
-”হুম।”
-”বলুন।”
.
.
রামীন কিছু না বলে এসে আশফিনার পিছে দাঁড়ায়।তারপর ওর চুল গুলো কানের ওপর থেকে সরিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
.
.
-”যদি বলি তোমাকে চাই এখন।”
-”এখন?আসলে……..”
.
.
পুরো কথা শেষ করতে পারেনা আশফিনা। রামীন ওকে কোলে তুলে খাটে নিয়ে আসে।তারপর শুইয়ে দিয়ে ওর ওপর নিজের ভর ছেড়ে দেয়।আশফিনার গলায় মুখ ডুবিয়ে ওকে ভালবাসায় মাতিয়ে তোলে রামীন।রুহী রোয়েনের বুকে চুপ করে শুয়ে আছে।ওর চুল হাতিয়ে দিচ্ছে রোয়েন।রুহী হঠাৎ বলল,
.
.
-”মা বাবাকে এক সাথে সুন্দর লাগছিলো তাইনা?”
-”হুম।”
-”ওনারা বিয়ের পর থেকে কাজই করছেন।একে অপরকে বুঝার সময় পান নাই।”
-”হুম।ঠিক বলেছো।তো কি করতে হবে এখন?”
-”দেখো হানিমুনই সবচেয়ে বড় সুযোগ একে অপরের সাথে কিছু ভালো সময় কাঁটানোর।একে অপরকে বুঝার।”
-”হ্যা।তাহলে ওনাদের কোথাও পাঠাতে চাচ্ছো?”
-”হুম।”
-”আচ্ছা ওটা দেখা যাবে।এখন ঘুমাও।”
-”আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমুবে।নড়বেনা একদম।”
.
.
রুহীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রোয়েন বলল,
.
.
-”আচ্ছা।তুমি ও ঘুমাও।কথা বলোনা।রাত অনেক হয়েছে।শরীর খারাপ করবে।”
-”রোয়েন!!!”
-”বলো।”
-”একটা গান শুনাও প্লিজ।”
-”রুহী কোন গান মাথায় আসছেনা ঘুমাও।”
-”না বলো না গান।নাহলে উঠে নাচবো আমি।”
-”পাগল?ঘুমাও।”
-”প্লিজ গান শুনাও।”
-”আচ্ছা।গান না কিছু কথা বলি।দেখো ভালো লাগবে।”
-”আচ্ছা।তুমি যাই বলো আমার ভালো লাগে।”
-”ওকে।রুহী আমার মায়াবতী আমার মায়াময়ী আমার রাজ্যের রানী আমার স্বপ্নচারিনী ভালবাসি খুব ভালবাসি।ভালবেসে কাঁটিয়ে দিতে চাই যুগ যুগ।দুজনে ভালবেসে হারিয়ে যাবে এমনি এক দ্বীপে যেখানে আমি আর তুমি আর আমাদের ভালবাসা আর কিছুই থাকবেনা।রোজ সকাল দুজনে হাঁটতে বেরুবো।চিকন রাস্তা ধরে সবুজ নরম ঘাসের ওপর তোমার ছোট্ট সুন্দর পা জোড়া যতোবার পড়বে ততোবার নুপুরের ধ্বনি প্রতিফলিত হবে আমার হৃদয়ে।ততোবারই তোমার প্রেমে পড়বো বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন উপায়ে।কারন যতোবারই প্রেমে পড়বো পড়তেই থাকবো।তোমাতে মিশে যাবো।ভালবেসে যাবো চিরকাল।
.
.
রোয়েন খেয়াল করলো রুহী কথা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গেছে।রোয়েনের বুকের মাঝটায় লেপ্টে আছে মায়াবতী।
চলবে