The Cobra King Mafia Boss- Season 4

The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 97

রুহীর জোরাজুরিতে রোয়েনকে রেজোয়ান মাহবুব আর আনিলার হানিমুনের ব্যাবস্থা করতে হলো।জায়গা হলো মালোয়শিয়া।আনিলা শুনেই বেশ খুশি হন।কিন্তু রেজোয়ান মাহবুব না করে দেন।কি লজ্জাজনক ব্যাপার।এ বয়সে বিয়ে করেছে কতোনা আবার হানিমুন ভাবা যায়?কিন্তু মেয়ের জোরজবরদস্তিতে না করতে পারেননা রেজোয়ান মাহবুব।ওদের ভিসার জন্য রোয়েন এপ্লাই করলো।মালোয়শিয়ান ইমিগ্রেশনে রোয়েনের নাম নিতেই ওরা জানালো জলদি হয়ে যাবে।শামীম ফিরে আসে।এর ঠিক দুদিনের মাথায় ভিসা চলে এলো টিকিট ও করা হলো।পরদিন রাত এগারোটায় ফ্লাইট।রুহী সেদিন রেজোয়ান মাহবুবের বাসায় গিয়ে অনেক্ষন কাঁটালো।আনিলা কে প্যাকিংয়ে সাহায্য করলো।প্যাকিং শেষ হতে বারোটা বাজলো।রোয়েন রেজোয়ান মাহবুব সহ ঘরে আসে।রোয়েনকে দেখে সারা মুখ জুড়ে হাসির ঝলকানি ফুঁটে উঠে।রোয়েন মুচকি হেসে আনিলার সাথে একটু কথা বলে নেয়।আনিলা আজ কাজের লোক ডাকিয়ে এনেছে রান্নার জন্য।রোয়েন রুহীকে নিয়ে যেতে চাইলে আনিলা বলেন,
.
.
-”কি করছেন?কতো রাত হলো।না খেয়ে চলে যাবেন কেন থেকে যান।”
-”না আনিলা মা ঘরে ফিরতে হবে কাজ আছে।”
-”এতো রাত হলো ভাবলাম মেয়েটা আজ থাকবে আমার সাথে।”
.
.
আনিলার কথায় রোয়েন রুহীর দিকে তাকায়।রুহী রোয়েনকে দেখে বলল,
.
.
-”মা কাল আসবো।তোমাদের রেস্ট নিতে হবে।আমি থাকলে ঘুম হবেনা।ওর নাস্তা দিতে হবে।”
-”ওকে। কিন্তু খেয়ে তো যেতেই পারো।একসাথে খেলাম আমরা।”
.
.
রোয়েন সম্মতি জানায়।চারজনে একসাথে ডিনার করে নেয়।রুহীকে নিয়ে বেরিয়ে আসে রোয়েন।গাড়িতে পাশাপাশি বসে আছে ওরা।রোয়েন বলল,
.
.
-”থাকতে মা বাবার সাথে।”
-”তুমি থাকলে থাকতাম।”
-”তোমার মায়ের সাথে থাকবে।আমি কি করবো সেখানে?”
-”ঘুমোতে পারতাম না।”
-”কেন?”
.
.
একটা হাত রুহীর পিছনে নিয়ে রুহীর কাঁধ স্পর্শ করে রোয়েন।রুহী বলল,
.
.
-বুঝোনা তোমাকে ছাড়া ঘুম হয়না আমার।”
.
.
রোয়েন হেসে রুহীকে বুকে টেনে নেয়।ঘরে পৌছে দুজনে ফ্রেশ হয়ে নেয়।রোয়েন ল্যাপটপ নিয়ে বসে খাটের ওপর।আজকাল রাতে কাজ করতে পারেনা রুহীর জন্য।মেয়েটা ঘুমোয়না ওকে ছাড়া।রোয়েন কাজ করতে করতে একপর্যায়ে রুহীকে দেখে নেয়।চোখ বড় বড় করে রুহী তাকিয়ে আছে ওর দিকে।রোয়েন বলল,
.
.
-”ঘুমাও না কেন?”
-”আসছেনা।”
-‘:কাজ আছে আমার।একটু চেষ্টা করো।”
-”করছি তো।আসেনা তাতে আমার কি দোষ?এমন বদঅভ্যাস তো আপনি করিয়েছেন।”
-”এটা বদ অভ্যাস?”অবাক রোয়েন।
-”ঠিকই তো।এখন দেখুন বুকে নিয়ে ঘুমাচ্ছেননা।যার কারনে আমি ও ঘুমোতে পারছিনা।”
.
.
রোয়েন কি বলবে খুঁজে পায়না।রোয়েন শুয়ে রুহীকে বুকে টেনে নেয়।রুহী চোখ বুজে।রোয়েন পেটের ওপর ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে থাকে।এক পর্যায়ে ঘুমের মাঝেই রুহী রোয়েনের ওপর উঠে শুয়ে থাকে।রোয়েন নিজে ও অবাক এমন কখনো করেনি রুহী।ল্যাপটপ পড়ে যেতে নিলে সেটা সরিয়ে রাখে রোয়েন।হাত বাড়িয়ে লাইট অফ করে রুহীকে জড়িয়ে ধরে দুহাতে।নাহলে পড়ে যেতে পারে।ঘুমিয়ে যায় রোয়েন।
পরদিন অফিসে যাওয়ার সময় রুহীকে আনিলার কাছে দিয়ে যায় রোয়েন।এদিকে সামায়রা আর ফাহমিনের সময় গুলো কাঁটছে অন্যরকম।আগে যেমন ফাহমিনকে দেখে পালাতো সামায়রা এখন তেমন টা করেনা।এখন সামায়রা নিজে হাত নেড়ে ইশারা করে ফাহমিনকে।দুষ্টুমি করে ফাহমিনের সাথে।চোখাচোখি হয় একে অপরের।ফাহমিন হাসলে সামায়রা কেন যেন লজ্জা পায়।এর কারন ওর নিজের জানা নেই।ফাহমিন সবসময়ই চকলেট নিয়ে আসে ওর জন্য।তাও আবার এক দুটো না এক দু বক্স করে নিয়ে আসে।সামায়রা তো সেই খুশি।একদিন তো জড়িয়েই ধরে ফাহমিনকে।তারপর দুজনেই লজ্জায় লড়ে যায়।সেদিন সামায়রা ছুটি শেষে বেরিয়ে আসলে খেয়াল করলো ফাহমিন ওকে ইশারা করছে থাকার জন্য।সামায়রা দাঁড়িয়ে যায়।ফাহমিন এসে কর হাত টেনে এক কোনায় নিয়ে এসে বলল,
.
.
-”তোমার ড্রাইভার কে বলো ক্লাশ শেষ হয়নি তোমার।এক্সট্রা ক্লাশ করবে।”
-”মিথ্যে কেন বলবো?”
-”আমরা ঘুরতে বের হবো।”
-”আজ না প্লিজ।মা জানলে বকবে।”
-”সামায়রা বিশ্বাস করোনা আমাকে।জাস্ট একঘন্টা প্লিজ।তারপর তোমাকে এখানে এনে দিলে যেও।”
-”ড্রাইভার যদি বলে দেয়।”
-”পাগলী ওনাকে বলো চলে যেতে।ক্লাশ শেষ হবে একঘন্টা পর।”
-”ভয় করছে আমার।”
-”তুমি যদি আসো তাহলে গিফট আছে তোমার জন্য।”
.
.
সামায়রা উত্তেজিত হয়ে বলল,
.
.
-”গিফট??”
-”হুম।”
-”আচ্ছা বলে আসি।আপনি দাঁড়ান।”
-”শিওর।”
.
.
সামায়রা ড্রাইভারকে চলে যেতে বলল ক্লাশের নাম দিয়ে।ড্রাইভার যেতেই ফাহমিনের কাছে আসলো।ফাহমিন হেসে সামায়রার হাত ধরে বলল,
.
.
-”চলো।”
-”জি।”
.
.
ফাহমিনের গাড়িতে দুজন উঠে বসে।সামায়রা হঠাৎ করে বলল,
.
.
-”বললেন না গিফট দিবেন?”
.
.
ফাহমিন বড় একটা চকলেট পট সামায়রার দিকে ধরে।সামায়রা খুব খুশি হয়ে পটটি হাতে নেয়।সেটি খুলে কিছু চকলেট খেয়ে নেয়।দুজনে একটা লেকের কিনারায় চলে আসে।ভেজা সবুজ ঘাসের ওপর বসলো ওরা।ফাহমিন সামায়রা কে দেখছে আড় চোখে।সামায়রা ও ফাহমিন কে দেখে লজ্জায় অন্য দিকে তাকায়।ওর দেখা সবচেয়ে সুন্দর ডাক্তার ওর পাশে।লোকটা বেশ লম্বা আর সুদর্শন।চোখ গুলো একদম মায়াবী খুব আকর্ষনীয়।ফাহমিনের দিকে তাকালে কেমন যেন ঘোর লাগা কাজ করে সামায়রার।কিছুক্ষন তাকাতাকির পর সামায়রা বলল,
.
.
-”আপনি তো ডাক্তার তাইনা?”
-”হুম।কি হয়েছে?”
-”এখন রুহী আপু খুব সুন্দর হয়ে গেছে তাইনা?”
-”হুম।হঠাৎ এ কথা?’
-”না এমনি।”
-”হুম।তোমার রুহী আপুর বেবি হবে তাই সুন্দর লাগে।”
-”আপনি তো আমার ফ্রেন্ড তাইনা?”
-”হুম।”
-”একটা কথা বলবো কাউকে বলবেননা তো?”
-”বলবোনা।বলো তুমি।”
-”আমাকে কেমন দেখাবে?”
-”মানে?কখন তোমাকে কেমন দেখাবে?তুমি তো খুব সুন্দর মেয়ে।”
-”না মানে আমি যখন রুহীর আপুর মতো বাবুর মা হবো।তখন কেমন লাগবে আমাকে?”
.
.
ফাহমিন অবাক।সতের আঠারো বছরের মেয়ের অন্তত এতটুকু বুঝা উচিৎ কাকে কি বলতে হয়।আর নিজের থেকে এতো বড় একটা লোকের সামনে জিজ্ঞেস করছে প্রেগন্যান্সির সময় ওকে কেমন লাগবে?ব্যাপারটা লজ্জা জনক হলে ও বেশ হাসি পায় ফাহমিনের।তখন সামায়রা আবার বলল,
.
.
-”জানেন আমার ও বাবু নিতে ইচ্ছে করছে।”
-”সামায়রা দেখো তুমি ছোট মানুষ।তোমার মন এখন পড়াশুনায় থাকা উচিৎ এসব ভাবনায় নয়।এখন পড়াশুনা করবে।আর আল্লাহ তা’আলা চাইলে তোমার ইচ্ছা ও একদিন পূরন হবে।”
-”সেটা এখন হলে খুব ভালো হতো।”
-”তুমি নিজেই বাচ্চা আরেকটা বাচ্চাকে কিভাবে সামলাবে?”
-”ওমা আমি কেন সামলাবো।ওর বাবা সামলাবে আমি শুধু আদর করবো।”
-”তা বাচ্চার বাবাটা কে শুনি?”
.
.
ফাহমিনের প্রশ্নে চিন্তায় পড়ে যায় সামায়রা।ও তো আসলে ভেবেই দেখেনি।ফাহমিন আবার বলল,
.
.
-”কি ভাবছো?”
-”না ভাবছিলাম আগে কেন ভাবিনি?”
-”কি ভাবোনি?”
-”আমার বাবুর বাবা কে হবে?সে কই থাকে?এখন ও আসেনা কেন?সে কি মরে গেলো নাকি?”
.
.
ফাহমিন বোতল উঠিয়ে পানি খাচ্ছিলো।সামায়রার কথায় বিষম উঠে যায়।পানি পড়ে শার্ট পুরো ভিজে একাকার।এদিকে সেদিন সন্ধ্যায় রেজোয়ান মাহবুব আর আনিলা বেরিয়ে গেলো।রুহী আনিলাকে জড়িয়ে খুব কাঁদছিলো।রোয়েন ওকে অনেকটা কষ্টে সামলে নেয়।রুহীকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসে।রুহীর মনটা বেশ খারা হয়ে যায়।একমাসের সফর গেছেন ওর মা বাবা।কবে দেখবে ওনাদের?ভেবেই কান্না পায় রুহীর।এদিকে আনিলা আর রেজোয়ান যাচ্ছে জর্জ টাউন সিটিতে।যেতে দেড়দিনের পথ।রেজোয়ান প্লেনে তেমন কথা বলেনি।ওনার কেমন লজ্জা হচ্ছে এই বয়সে হানিমুনে যেতে।কিন্তু রুহীর কারনে যেতে হলো আর আনিলা ও খুশি তাই না করতে পারেননি।পরদিন রাত দুটোয় প্লেন ল্যান্ড করলো এয়ারপোর্টে।সকল ফর্মালিটিস পূরন করে রেজোয়ান মাহবুব আনিলাকে নিয়ে ভাড়া করা গাড়িতে উঠে যান।
আগেই হোটেল বুক করা ছিলো তাই হোটেল খোঁজার মতো ঝামেলা পোহাতে হয়নি।রিসিপশনে গিয়ে রুমের চাবি নিয়ে রুমে চলে যায় ওনারা।রাতটা রুমেই কাঁটিয়ে দেয়।হোটেলে আসতেই চারটা বেজে গেলো।আনিলা ঘুমের চোখে কিছুই দেখছেননা।সেরাত কিছু খাওয়া হয়নি ওনাদের।পরদিন সকাল দশটায় ঘুম ভাঙ্গে দুজনের।ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেড়ে নিচের ক্যাফেটেরিয়ায়।নাস্তা শেষে পরিকল্পনা হলো দুজন বের হবেন।ভাড়া করা গাড়িটির ড্রাইভার একজন ন্যাটিভ।পাশ্ববর্তী সুন্দর জায়গার কথা জিজ্ঞেস করায় সে জানায় পাশেই আছে একটা বিচ টিওমান।এর আকর্ষনের প্রধান কারন বিচ টি ড্রাগন শেপড এবং এর সুর্যাস্ত বড় সুন্দর।আনিলা এবং রেজোয়ান দুজনের ভালো লাগে জায়গাটার কথা।তাই তারা বেরিয়ে পড়ে।এদিকে রুহীর সাথে আজকাল অনেক সময় কাঁটায় রোয়েন।প্রায়শই ঘরে থাকে।কাজ গুলো ঘরেই করে।রুহী ও খুব বেশি খুশি।রোয়েনের সাথে দুষ্টুমিষ্টি খুঁনসুটি গুলো লেগে থাকে।বিকেল।হলে বেরিয়ে পড়ে হাঁটতে।রুহী মাঝে মধ্যে বাগান থেকে ফুল নিয়ে খোপায় লাগায় আর রোয়েন ছবি তুলে দেয়।রোয়েন সেদিন ওর বাগানের ফুল দিয়ে রুহীকে হাতের ব্রেসলেট বানিয়ে দিলো।বেগুনী আর সাদা ফুলের কম্বিনেশন খুব সুন্দর লাগছে।রুহীর হাতে সেটা আরো বেশি ফুঁটে উঠেছে।কয়েকটাদিন পার হতে থাকে।রোয়েন খেয়াল করে ল্যাপটপে চার্জ নেই তাই রুহীর ল্যাপটপ নিয়ে বসে।ল্যাপটপ অন করে গুগলে যায় রোয়েন।সার্চ অপশনে ক্লিক করতেই রোয়েন প্রচন্ড ধাক্কা খায়।ওর বিশ্বাস হচ্ছেনা রুহী এমন কিছু করতে পারে।আর এখন ও ব্যাপারটা ওর মস্তিস্কে গেঁথে আছে।
চলবে