সে কি জানে Season 2 ! Part- 28
হলুদের অনুষ্ঠান শেষে বিয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। স্টেজে আবদ্ধ আর দীঘি পাশাপাশি বসেছে আর তাদের সামনে বসে আছেন কাজী সাহেব৷ আমি আর রেয়ান দাঁড়িয়ে আছি আবদ্ধের ঠিক পাশে। কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করতেই রেয়ান আমার কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন…
— “চলো না মরুভূমি আমরাও বিয়ে করে ফেলি।”
— “আমার সাথেই করতে হবে কেন? রহিমা আছে তো। ও কিন্তু আপনার জন্য অপেক্ষা করছে ডক্টর। ওকে এভাবে ঠকানো ঠিক হবে না।”
রেয়ানের করুন মুখ মুহুর্তেই রাগে লাল হয়ে গেলো। আমার থেকে চোখ সরিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলেন…
— “একবার বিয়ে হোক তারপর দেখাবো এ ডক্টর কি করতে পারে।”
ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালাম উনার দিকে। সবার আড়ালে উনার পেটে কনুই দিয়ে দিলাম এক গুটা। চমকে উঠলেন উনি। আমার দিকে একবার রাগী দৃষ্টিতে তাকালেন। পরক্ষনেই গালে চুমু দিয়ে দিলেন। হতবাক আমি! চোখ বড় বড় করে চারপাশে তাকাচ্ছি মাত্র। তা দেখে উনি বাঁকা হাসলেন। কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন…
— “কেউ দেখেনি জান। তবে তুমি চাইলে সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে চুমু খাবো তোমায়।”
চোখ পাকিয়ে তাকালাম তার দিকে৷ বললাম…
— “নির্লজ্জ, বেহায়া!”
________________
কাজী সাহেব আবদ্ধকে কবুল বলতে বললেই সে একেবারে তিনবার কবুল বলে ফেলে। কিন্তু বাদ সারলো দীঘিকে নিয়ে। ওর মুখ থেকে যেন কথা বেরই হচ্ছে না। কাজী সাহেব দীঘিকে “কবুল” শব্দটা বলাতেই পারছেন না। ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন উনি। আবদ্ধ শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো দীঘির দিকে। আস্তে করে বলল…
— “কি হয়েছে? কবুল বলছিস না কেন?”
দীঘি ভাঙ্গা গলায় জবাব দেয়…
— “আমার না কেমন যেন লাগছে। ওই শব্দটা মুখ থেকে বেরই হতে চাইছে না।”
— “কেন?”
— “জানি না।”
— “আমার মনে হয় তুই নার্ভাস। কয়েকটা জোড়ে জোড়ে দম নে!”
দীঘি তা-ই করল। আবদ্ধ আবার বলল…
— “আমার ওপর বিশ্বাস আছে?”
মাথা উপর-নিচ ঝাঁকালো দীঘি।
— “তাহলে এত নার্ভাসনেস কেন? আই সোয়ের দীঘি আমি কখনও তোকে কষ্ট দিবো না, বিশ্বাস কর! চোখ বন্ধ করে আমার সাথে কাটানো সুন্দর মুহুর্তগুলো মনে কর, আল্লাহ’র নাম নে। তারপর কবুলটা বলে ফেল।”
চোখ বন্ধ করে ফেলল দীঘি। সাথে সাথে চোখে ভেসে উঠল আবদ্ধের হাসি মাখা মুখশ্রী! মৃদু হাসলো সে। আল্লাহ’র নাম নিয়ে একেবারে তিনবার “কবুল” বলে ফেলল। এতে কাজী বলে উঠলেন…
— “আলহামদুলিল্লাহ! বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।”
২৬.
বিয়ে পড়ানো শেষে একদল ক্যামেরা ম্যান হামলে পড়ল আবদ্ধ আর দীঘির ওপর। যেন চিবিয়ে চিবিয়ে তাদের খাবে তারা। একবার এ ভাবে বসতে বলছে তো একবার ও ভাবে। লাইটের তীব্র আলো সরাসরি মুখে পড়ছে আবদ্ধের। বিরক্তির শেষ প্রান্তে সে! বেজায় বিরক্তি নিয়ে আবদ্ধ দীঘিকে বলে উঠে…
— “বিয়ে তো হয়েই গেছে। কৌ একটু বাসর ঘরে গিয়ে রেস্ট নিবো, সারারাত গল্প করব, তা না! এখানে সং সেজে বসিয়ে রেখেছে। যত্তসব! তুই একটু কাউকে বল না বিয়ের অনুষ্ঠানটা শেষ করতে। আমার বিরক্তি লাগছে এসব।”
দীঘির এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো আবদ্ধের মতো ভালো মানুষ আর হয়-ই না। পরক্ষনেই আবদ্ধের বলা কথাতে মস্তিষ্ক দ্রুত গতিতে বলে উঠল- “আবদ্ধের মতো নির্লজ্জ মানুষ আর একটাও নেই।একটাও না!” কিন্তু আবদ্ধের কি? সে তো তার মতোই বলে যাচ্ছে…
— “জানিস পিচ্চি তোকে আজকে চকলেট পেত্নি লাগছে। ইচ্ছে করছে খেয়ে ফেলি।”
— “অসভ্য লোক! আপনার সাথে কথা নেই।”
ঠোঁট কামড়ে হাসলো আবদ্ধ। দীঘির কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে গান গাওয়া শুরু করল সে…
— “এই ফাগুনি পূর্ণিমা রাতে,
তোকে চিবিয়ে খাই!”
________________
হলের মেন গেটের একটু সামনে আমি আর রেয়ান দাঁড়িয়ে আছি। হাতে চা! বাইরে দমকা হাওয়া বইছে। আকাশ থেকে পড়ছে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোটা। এক ধরণের রোমাঞ্চক পরিবেশ চারপাশে। এসময় রেয়ান কোত্থেকে আদা-লেবুর লাল চা নিয়ে আসেন। এমন পরিবেশে লাল চা খাওয়া দারুন ব্যাপার। তারওপর আমরা এখন বিয়ে বাড়িতে। সব মিলিয়ে ফাটাফাটি লাগছে। আমি রেয়ানকে বললাম…
— “চা কোথা থেকে আনলেন?”
— “হলের একটু দূরেই একটা টং-এর দোকান আছে সেখান থেকে। কেমন লাগছে চা?”
— “ফাটাফাটি!”
হাসলেন রেয়ান। চা খাওয়া শেষে আমাকে বললেন…
— “তুমি এখানে একটু দাঁড়াও। আমি আমার ফোনটা রওনকের কাছ থেকে নিয়ে আসছি।”
চলে গেলেন রেয়ান। তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলাম একবার। মানুষটাকে কেন যেন খুব আপন আপন মনে হয় এখন। ভাবতেই আরেক দফা হাসলাম আমি।হঠাৎ চেনা কোনো পুরুষালী কণ্ঠ শুনে সামনে তাকালাম। দিহান দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে হাসিমুখে বললাম….
— “এখন আসার সময় হলো তোমার। এঙ্গেজমেন্টে আসলে না, গায়ে হলুদেও আসলে না। বিয়েতে এসেছ তাও এত দেড়িতে, কেন?”
— “মাথা ব্যথা করছিল। আসার ইচ্ছে ছিলো না। কিন্তু কথা যেহেতু দিয়েছে সেহেতু আসতেই হলো।”
— “আসো আবদ্ধ আর দীঘির কাছে নিয়ে যাই।”
— “পরে একদিন মিরু। আমার এখন যেতে হবে।”
— “মাত্রই না এলে।”
— “আমি তো এখানে বিয়ে দেখতে আসি নি মিরু। তোমাকে দেখতে এসেছিলাম। দেখা শেষ, এখন চলে যাচ্ছি।”
অবাক হয়ে তাকালাম দিহানের দিকে। সে হাসছে। কালকের সেই কষ্টদায়ক হাসি! চোখে পানি জমা হয়ে আছে তার। চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা শ্বাস ফেলল দিহান। মৃদু হেসে বলল…
— “এখম তাহলে আসি।”
— “আরেকটু থাকো। আবদ্ধ আর দীঘিকে দেখে যাও।”
আবারও হাসলো দিহান। বলল…
— “আমি এখানে আসতে চাইনি মিরু। তোমাকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল অনেক। তাই আসা। বিশ্বাস করো, এখানে এসে এখন মনে হচ্ছে অনেক বড় ভুল করেছি আমি। তোমাকে আর রেয়ানকে একসাথে দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে আমার। ইচ্ছে করছে আশেপাশের সবকিছু ভেঙ্গে ফেলি। নিজ হাতে মেরে ফেলি তোমাকে। সাথে মরে যাই আমি। কেন মিরু? কেন তুমি আমার হতে পারলে না।”
থামলো দিহান। চোখের পানিগুলো মুছে ফেলল সে। বড় বড় কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে বলল…
— “কেউ একজন বলেছে ছেলেদের কাঁদতে নেই। আমি তো সারাদিন কান্না করি মিরু। তাহলে কি আমি মেয়ে হয়ে গেলাম?”
কথাটা বলে অস্বাভাবিক ভাবে হাসলো দিহান। ইতোমধ্যে চোখ লাল হয়ে গেছে তার। আমার দিকে একবার তাকিয়ে কিছু না বলেই চলে গেল সে। তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে স্তব্ধ রুদ্ধবাক হয়ে আছি। আমার চোখেও পানি! গাল বেয়ে পড়বে এ সময় কোত্থেকে রেয়ান এসে পানি গুলো মুছে দিলেন। কপালে চুমু দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বললেন…
— “এভাবে ভাইয়ের বিয়েতে কেউ কাঁদে মরুভূমি?”
নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না। রেয়ানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বললাম…
— “দিহান কেমন যেন হয়ে গেছে রেয়ান। সবসময় কেমন ব্যবহার করে।”
আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন রেয়ান। ধীর কণ্ঠে বললেন…
— “ওর মনের অবস্থা ভালো নেই মরুভূমি। তোমার উচিত ওকে বোঝানো।”
— “কিভাবে বোঝাবো? ও আমার কথাই শুনতে চায় না।”
— “শুনবে। আমি নিজে গিয়ে বুঝাবো।”
— “হু।”
আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম রেয়ানকে। এতে হাসলেন রেয়ান। কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন…
— “তুমিও কি আমার মতো অসভ্যের খাতায় নাম লিখাচ্ছো মরুভূমি? পাবলিক প্লেসে যেভাবে জড়িয়ে ধরে আছো, আমার তো লজ্জা লাগছে।”
দূরে সরে আসলাম আমি। নাক টেনে বললাম…
— “অসভ্য।”
— “জানি তো। এখন চলো রওনক ডেকেছে আমাদের। গল্প করব সবাই মিলে।”
— “চলুন।”
রেয়ান হাত বারিয়ে দিলেন আমার দিকে। নির্দিধায় ধরলাম তার হাত। সে মুচকি হাসলো। হাত টেনে নিয়ে যেতে লাগলো রওনক ভাইয়াদের কাছে!
_________________
অবশেষে পূর্ণতা পেল একজোড়া জীবন। আর অন্য জোড়ার চলল জমিয়ে প্রেম। যেখানে আছে শুধু ভালোবাসা আর ভালোবাসা!
.
.
#চলবে🍁