The Cobra King Mafia Boss- Season 4

The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 94

→দরজা খুলেই কাজের মেয়েটা অবাক হয়ে যায়।তাজোয়ার শোহরাব হেঁটে দরজার কাছে এসে হেসে দিয়ে বলেন,
.
.
-”নাতনী আসছো?খুব ভালো লাগছে।এ নানাকে মাঝে মাঝে দেখতে আসতে পারো তো।”
-”জি নানা আসবো।এখন থেকে আসবো।”
.
.
হঠাৎ তাজোয়ার সাহেবের মনে পড়ে যায় রুহীর প্রেগন্যান্সির কথা তারওপর রুহী এ বাসায় আগে আসেনি।তাই রুহীর হাত ধরে বলেন,
.
.
-”আসো নানুমনি আমি তো ভুলে গেছিলাম তোমার কথা।আসো ভিতরে এসে বসো।রুমকি যা দুধ জাল দেয়।আর আতপ চাল ভিজা।তোর আপুরে বল এখানে আসতে।আর হ্যা মুরগী ভিজা।ডিম সিদ্ধ দেয়।”
-”নানা ভাই এতো ঝামেলা করবেননা।”
-”নানু মনি কি বলো তুমি আসছো আর না খেয়ে চলে যাবা।এমন হয়না বসো।”
-”নানা ভাই কাজে আসছিলাম।আসলে ম মম মা কে দরকার।”
.
.
তাজোয়ার শোহরাব অবাক।রুহী আজ ওনাকে নানাভাই বলছে আবার আনিলাকে মা।ওনার ভীষন ভালো লাগছে।আজ নিজের মেয়ের জন্য ও খুশি খুব।আনিলা মা হতে পারবেনা।কিন্তু এখন ও নিজের মেয়ে পেয়ে গেলো।ওনি নিজেকে সামলে বলেন,
.
.
-”তুমি বসো নানুমনি।তোমার মা আসবে।”
-”আচ্ছা।আপনার শরীর কেমন এখন নানা?”
-”ক্যান্সারের রোগী আর কতোদিন ভালো থাকি বলো।বেশিদিন সময়তো আর নাই রে। তাই তোমার মাকে বলে কয়ে জোর করে বিয়ে দিলাম।তোমার মা তো বিয়ে করবেই না।ভয় পাচ্ছিলো তুমি হয়ত ওকে মানবানা।শেষমেষ তোমার জামাই মানিয়ে নিলো।তবে তুমি তো ওকে মা হিসেবে গ্রহন করলা এতেই খুব খুশি আমি।”
.
.
রুহীর ভীষন খারাপ লাগতে শুরু করে।ও আনিলাকে কতো খারাপ ভেবেছিলো।কিন্তু সে তো ওর চিন্তা করেই বিয়ে করতে চায়নি।আর রোয়েন হয়ত ওনার রোগের কারনে চটজলদি বিয়েটা করিয়েছিলো।কতো কিনা বলেছিলো রোয়েনকে।বুঝাতে পারেনি ও লোকটাকে।তার ভিতর ঢুকে দেখলে হয়ত রুহী তখন রোয়েনকে আরো গভীর ভাবে ভালবাসতে পারবে।হয়ত ওর পুরো দুনিয়া হবে রোয়েন।রুহীর চোখ ভরে আসতেই তাজোয়ার শোহরাব বলেন,
.
.
-”নানু মনি কি হয়েছে তোমার?কাঁদছো কেন?তোমাকে কষ্ট দিয়ে কিছু বললাম?”
-”না নানাভাই একদম না।আমার জীবনটাই হয়ত এখন সুখে ভরে যাবে।”
.
.
রুমকি নামের মেয়েটা রুহীর সামনে দুধ এনে রাখে আর সিদ্ধ ডিম।সাথে আম, বিস্কিট,সমুচা আছে।রুহী খাবার দেখে বলল,
.
.
-”এতো কিছু কেন?আমি নাস্তা খেয়ে আসলাম।”
-”দুধ ডিম খাও তোমার জন্য ভালো।”
-”আচ্ছা ডিমটা খাচ্ছি।ওগুলো রেখে দিতে বলেন।”
-”দুধটা ও খাও।আমার গরুর ফার্ম আছে ওখানকার দুধ।”
-”ওহ।”
.
.
রুহী খেয়ে নেয় দুধ আর ডিম।তাজোয়ার শোহরাব বলেন,
.
.
-”চলো তোমাকে কিছু দেখাই।”
-”চলুন।”
.
.
তাজোয়ার সাহেব রুহীকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলতে থাকেন।ওরা এসে থামে বড় এক হল রুমের সামনে। রুহী সেখানে গিয়ে চমকে যায়।পুরো হল রুম ভর্তি পেইন্টিং।সেখানে রুহী নিজেকে ও দেখতে পায়।রুহী চোখ বড় করে বিস্ময়ের সাথে দেখতে থাকে।তাজোয়ার শোহরাব বলেন,
.
.
-”জিজ্ঞেস করবেনা এগুলো কে করেছে?”
-”কে?”
-”তোমার মা।”
-”মা করেছে?”
-”হুম।”
-”ওনি তো খুব ভালো আঁকেন।সব গুলো একদম প্রানবন্ত।”
-”হুম।আর্ট শিখেছে।জানো এখানে আসার পর থেকে তোমার কথাই বলে।খুব চিন্তা করে তোমাকে নিয়ে।”
-”ওহ।”
.
.
হঠাৎ রুমকি এসে জানায় আনিলা ওদের জন্য অপেক্ষা করছে।রুহী বলল,
.
.
-”চলুন।মায়ের সাথে দেখা করি।”
-”হ্যা চলো।”
.
.
ওরা আবার ও ড্রয়িং রুমে এলো।রুহী দেখতে পেলো আনিলা রান্নার ব্যাবস্থা করছেন।রুমকি কে এটা ওটা বের করতে বলছেন।তাজোয়ার শেহরাব মেয়ের কাছে আসতেই আনিলা রেগে বলল,
.
.
-”বাবা মেয়েটা এসেছে।কিছু না খাইয়ে ঘুরাচ্ছো ওকে।জানো ও প্রেগন্যান্ট।”
-”তোমার মেয়ে কিছু খাবেনা।জোর করে খাওয়ালাম।”
-”কই মেয়েটা?ডাকো।”
.
.
আনিলা শোহরাব আশেপাশে তাকাতে তাকাতে রুহীকে দেখতে পায়।রুহী কি বলবে ওর চোখ ভরে আসে।আজ এই মানুষটাকেই খুব বেশি আপন লাগছে।এ মানুষটা ওকে নিয়ে কতোটা চিন্তা করে।আনিলা বলেন,
.
.
-”মামনি বসো।দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
.
.
রুহী আর দাঁড়াতে পারেনা।কেঁদে দৌড়ে এসে আনিলাকে জড়িয়ে ধরে।আনিলা অবাক হয়ে যায়।ওনার চোখে ও পানি।রুহী কাঁদছে জোরে।
.
.
-”মা আ’ম সরি।আমি চিনতে পারিনি তোমাকে।মাফ করে দাও মা।”
.
.
আনিলা যেন সব পেয়ে গেলো।কাঁদার মাঝে ও হেসে দেন।বলেন,
.
.
-”এই পাগলী কাঁদবেনা মা।তুমি কোন দোষ করোনি।তুমি সবসময় আমার মেয়ে।”
-”তোমাকে চিনতে ভুল করেছি।আমি দুঃখিত মা।”
-”এটা অনেক বড় পাওয়া মামনি।”
.
.
রুহী সামনে আসতেই।আনিলা ওকে টেনে ধরে কপালে গালে চুমু খেয়ে আবার ও বুকে টেনে নেন।রুহীর মুখে অশ্রুমিশ্রিত হাসি।আনিলা আর রুহীকে দেখে তাজোয়ার কেঁদে ফেলেন।আজকে ওনার খুশির সীমানা নেই।মেয়েটা আজ সব পেয়ে গেলো।বাচ্চাটাও মাকে পেলো।আনিলা রুহীকে বসিয়ে দেন।রুহী বলল,
.
.
-”মা তুমি প্যাক করো।আমরা বাসায় যাবো।”
-”আজ কে?”
-”এক্ষুনি।চলো মা।”
-”রোয়েন আর তোমার বাবা জানে।”
-”না জানলে ও চলবে।সারপ্রাইজ মনে করো।”
-”তুমি লাঞ্চ করে নাও।আমি প্যাক করি।”
-”আরে মা বাবা আমাদের বাসায় আসবে ওর সাথে।তুমি ও আমার সাথে আমাদের বাসায় যাবা এখন।একসাথে সবাই লাঞ্চ করবো।”
-”ওদের এখানে আসতে বলি।”
-”সারপ্রাইজ হবে কি করে তাহলে।ঘরে এতো গুলো রান্না হয়েছে ওগুলোর কি হবে?”
-”ওহ।আচ্ছা আমি প্যাকিং করে নেই।”
-”আচ্ছা মা।”
.
.
আনিলা প্যাকিং করতে চলে যান।প্যাকিং শেষে দুজনে তাজোয়ার শোহরাবের কাছে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।রোয়েন আর রেজোয়ান মাহবুব অবাক আনিলা আর রুহীকে দেখে।দুজনে একই ডিজাইন আর রং এর শাড়ী পরে আছে।রোয়েন রুহীকে অবাক চোখে দেখছে।রুহী হেসে আনিলাকে জড়িয়ে ধরে।আনিলা হাসছেন।রোয়েন আর রোজোয়ান মাহবুব কিছু বুঝতে না পেরে একে অপরের দিকে তাকান।
রুহী হেসে বলল,
.
.
-”ভিতরে আসো তোমরা সব ঠিক আছে।মাকে নিয়ে এসেছি।”
.
.
রোয়েন এবার যেন বাস্তবে ফিরে এলো।ও বলল,
.
.
-”রুহী তুমি ওনাকে এনেছো?সত্যি?”
-”তোমার কি মনে হচ্ছে মিথ্যে বলছি আমি?”
.
.
রেগে যায় রুহী।রোয়েন বলল,
.
.
-”না তেমন কিছু না।বাবা এসে বসুন।”
.
.
রেজোয়ান মাহবুব সোফায় এসে বসেন আনিলার পাশে।রুহী ও সেখানে বসতেই যাচ্ছিলো তখন রোয়েনের ডাক পড়ে,
.
.
-”রুহী এখানে আসো।”
-”আসছি।বাবা মা তোমরা বসো।আমি আসছি্”
.
.
রেজোয়ান মাহবুব আর আনিলা সায় দেন মাথা ঝাঁকিয়ে।রুহী চলে আসে রুমে।রোয়েন খাটে বসে আছে।রুহী বলল,
.
.
-”ডাকলে যে?”
-”তুমি ওনাকে নিয়ে এসেছো।”
-”হ্যা এনেছি মাকে।”
.
.
রোয়েন এসে রুহীকে জড়িয়ে ধরে।তারপর সামনে এসে ওর কপালে চুমু খেয়ে বলল,
.
.
-”আমার রুহী বড় হয়ে গেছে।সব বুঝতে শিখেছে।”
-”আমি ভুল ছিলাম রোয়েন।”
-”আর ওসব বলোনা।এখন থেকে সবাই একসাথে থাকবো।”
-”হুম।”
.
.
রুহী জড়িয়ে ধরে রোয়েনকে।ওরা সবাই একসাথে লাঞ্চ করে।রাতে আনিলা আর রেজোয়ান ঘরে ফিরে যায়।রুহীকে কোলে নিয়ে রুমে আসে রোয়েন।রুহীকে খাটে শুইয়ে দিয়ে রোয়েন পাশে শুয়ে রুহীকে নিজের দিকে ফিরায়।দুজোড়া ওষ্ঠ একত্রিত হয়ে সুখের সন্ধান করতে থাকে।
এদিকে ঘরে ফিরে আনিলা আর রেজোয়ান নিজেদের রুমে আসেন।দুজনে এখনো কথা বলেনি।আনিলা হঠাৎ রেজোয়ান মাহবুবের পাশে বসে পড়েন ধুপ করে।ওনার মুখে সুখের ছোঁয়া।রেজোয়ান মাহবুব আনিলাকে দেখে নেন।আনিলা আচমকা রেজোয়ানের হাত ধরে বলেন,
.
.
-”আজ খুব খুশি আমি।সত্যি খুব খুশি।তোমার পাশাপাশি আমার মেয়েকে ও পেয়েছি।এর চেয়ে বড় খুশি আর কি হতে পারে বলো?থ্যাংক ইউ রেজোয়ান আমার জীবনে আসার জন্য।তোমার কারনে মেয়েকে ও পেলাম।”
.
.
কাঁদতে থাকেন আনিলা।রেজোয়ান বুকে টেনে নেন স্ত্রীকে।তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
.
.
-”কেঁদোনা সব ঠিক হয়ে যাবে এখন।আমরা একসাথে থাকবো এখন।আর আর একটা কথা বলার ছিলো।”
.
.
সরে আসে আনিলা।ওনি বলেন,
.
.
-”বলো। কি বলবে?”
-”আ… আ. আমি ত তোমাকে খুব ভাব… ভা ভালোবাসি।”
-”এতদিন অপেক্ষা করিয়ে আজ বললে?আজ আমার জীবনে খুশি আর খুশি রেজোয়ান।সব পেয়ে গেছি আমি।আমি ও খুব খুব ভালবাসি তোমাকে।”
.
.
রেজোয়ান মাহবুব আবার ও বুকে জড়িয়ে নেন আনিলাকে।রাত বারোটা বেজে পনেরো মিনিট।রুহী রোয়েনকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।ফোনে কথা বলছিলো রোয়েন।রোয়েনের কথা শেষে রুহীকে নিয়ে শুয়ে পড়ে রোয়েন।রুহীর পেটের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিসফিসিয়ে কথা বলছিলো বাবুর সাথে।রুহীর খুব হাসি পায়।লোকটার কথা কি বাবু বুঝে?তারপর ও হৃদয়ের টান যেখানে আছে বুঝতে ও পারে।রুহীর পেটে হাত রেখে ঘুমিয়ে যায় রোয়েন।আর রুহী রোয়েনের বুকে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।আশফিনা আর রামীনের ঘুম ভেঙ্গে যায় মাঝরাতে।আশফিনাকে দেখে মৃদু হাসে রামীন।আশফিনা পুরো চাদরে জড়িয়ে আছে।অবশ্য রামীন জড়িয়ে দিয়েছে ওকে।আশফিনা রামীনকে দেখে লজ্জা মাখা হেসে নিচে তাকায়। রামীন বলল,
.
.
-”জানো তোমার লজ্জা পেয়ে নিচে তাকানোটা নেশার মতো লাগে আমার।”
-”এতে নেশার কি আছে?”
-”তোমার চাহনিটাই বড় নেশাময়।সেটা আমি বুঝবো তুমি না।”
.
.
আশফিনা হেসে রামীনের দিকে তাকায় দুষ্টু চাহনি দিয়ে।কয়েকটা দিন পার হয়ে যায় রোয়েন ঠিক করলো সব ঠিক রাখার জন্য,রুহী আর বাবুকে সুস্থ রাখার জন্য একটা মিলাদ দরকার।রুহীর পাশে এসে বসে রোয়েন।ম্যাডাম মজা করে আচার খাচ্ছে মায়ের বানানো।রোয়েন হঠাৎ ওর গাল টেনে ধরে বলল,
.
.
-”আর কতো খাবে ম্যাডাম?পেট টা খারাপ হবে যে।”
.
.
তৎখনাৎ রোয়েনের হাত সরিয়ে দেয় রুহী।রেগে বলল,
.
.
-”ব্যাথা পাই তো বুঝোনা?”
.
.
রোয়েন এগিয়ে এসে রুহীর গালে কয়েকটা শীতল চুমু খেয়ে বলল,
.
.
-”ভালো হয়ে যাবে।এখন শুনো আমার কথা।”
-”বলো”
-”তুমি আর মা এক হয়েছো।আর আমি চাইনা কোন বিপদ আসুক।তুমি আর বাবু যেন সুস্থ থাকো।তাই তিনদিন পর একটা মিলাদ হবে আমাদের বাসায়।মামা মামীকে আমি জানাবো তুমি ও জানিও।আর আমার বন্ধুরা আসবে,অফিসের সবাই।হয়েছে না?”
-”হয়েছে।রোয়েন নানা ভাইয়ের জন্য ও দোয়া পড়িয়ে দিও।”
-”শিওর।অবশ্যই করাবো।”
চলবে