আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 03
অনু ট্রেন থেকে নামতেই ধপাস করে প্ল্যাটফর্মের উপর পড়ে যায়।
তা দেখে রিদি খিলখিল করে হেসে ওঠে।
অনু বলে,”এই শহরে পা রাখতে না রাখতে পড়ে গেলাম।শহরের বুঝি আমাকে পছন্দ হয় নি।
এই যে মিস্টার চিটাগাং শহর কিছু আর করার নেই আমি আপনাকে দু বছর জ্বালিয়ে মারবো যতোই লেং মেরে ফেলে দেন না কেনো তবুও আমাকে সহ্য করতে হবে।”
রিদি বলে,”অনু নামতে না জানলে বুঝি প্লাটফর্মের এর দোষ?আর এ শহর তোমার কি করেছে?”
অনু বলে,”তোমার এতো জানার দরকার নাই,আমি পড়ে যাওয়াতে তুমি হেসে ঠিক কাজ করো নাই।”
রিমা তাড়াতাড়ি অনুকে হাতে ধরে উঠিয়ে দেয়।
খালা আর খালু বলে,” আহ রিদি মেয়েটা পড়ে গেছে তাকে সাহায্য না করে হাসি তামাশা এসব কোন ধরণ এর কাজ? ”
রিদি বলে,”সরি অনু আমার তোমার কষ্টে হাসা উচিৎ হয়নি।”
অনু :it’s ok.apu বেপার না এমন হতেই পারে।
এরপরে তারা স্টেশন থেকে সোজা রিদিদের গাড়িতে করে ওদের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
অনু রিমা রিদি তিন জন কারের পিছনের ছিটে বসে জানালা দিয়ে বাহির সবুজ উঁচু নিচু পাহাড় দেখছে।
অনু বলে,”এতো দেখছি সবুজরং এর ছড়াছড়ি চারিদিক দিয়ে।উফফ এসব পাহাড়ের বুকে তো নিজেকে হারিয়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে।”
রিদি বলে,”এই টুকু দেখে এমন অবস্থা যখন তুমি পাহাড়ে ঘুরাঘুরি করবে তখন কি করবে? ”
রিমা বলে,”অনু কি আর করবে আসে পাশের মানুষ অনুর কান্ড দেখে জ্ঞান হারাবে! ”
রিদি বলে,”আমি তো ভাবছি অনু জ্ঞান হারাবে।”
অনু বলে,”আমি জ্ঞান হারাবো এমনটা ভাবা বোকামি ছাড়া আর কিছু না।”
রিমা বলে,”অনু যেখানে সব কিছু সেখানে অন্য রকম হবে এটা স্বাভাবিক। ”
এইভাবে কথা বলতে বলতে ওরা রিদিদের বাড়িতে চলে আসে।
অনু রিমা গাড়ি থেকে নেমে তো একদম অবাক।
চারিদিক সবুজে ঘেরা তার মাঝে রিদি দের বাড়ি।
দেখতে কোনো কল্পনার বাড়ির থেকে কম না।
বাড়ির ভেতর প্রবেশ করার পর রিদি রিমা আর অনুকে তাদের ঘর দেখিয়ে দেয়।
অনু আর রিমা আলাদা রুমে থাকবে।
অনুর রুমে ঢুকে দেখে বারান্দা আছে।
তাড়াতাড়ি বারান্দায় গিয়ে দেখে বারান্দা থেকে দূরের পাহার গুলো দেখতে খুব সুন্দর লাগছে।
অনু আরো বেশী খুশি হয় কারণ বারান্দায় কোনো গ্রিল দেওয়া নাই।
একটু চালাকি করলেই দোতালার বারান্দা থেকে সে নিচে যখন খুশী নেমে বাহিরে ঘুরাঘুরি করতে পারবে।
রিদি বলে,”কি অনু রুম পছন্দ হয়ছে তো? ”
অনু বলে,”তা আর বলতে আপু।”
রিদি না বুঝতে পারলেও রিমা ঠিকি বুঝতে পারছে অনুর এতো খুশীর কারণ কি?
রিদির ওদের দু জন কে ফ্রেশ হয়ে নিচে খাবার খেতে আসতে বলে।
এরপর দু বোন ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে। রিদির সাথে বাড়ির আশেপাশে ঘুরাঘুরি করে আসে।
রাতে রিদির বাবা খাওয়া দাওয়া শেষে ওদের বলে,”তোমরা দু জন কাল সকালে রেডি থাকবে আমি তোমাদের কলেজে নিয়ে যাবো।
কলেজের বাকী কাজ কমপ্লিট করে দিবো।
আর কোনো সমস্যা হলে তো রিদি থাকবে সেখানে। ”
তারপর সবাই সবার রুমে চলে যায়।
অনু তার রুমের বারান্দায় বসে ভাবতে থাকে,কোথায় ছিলাম আর কোথায় আসলাম। বাবা মা একবার ও আমাকে এতো দূরে পাঠানোর আগে আমার মতামত জানতে চাইলো না।
তারা যখন আমাকে ভুলে গেছে আমিও তাদের ভুলে যাবো।
এরপর নিজের রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়ে।
এদিকে সকালে তিনজন রেড়ি হয়ে একসাথে রিদির বাবার সাথে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
কলেজে খালুজান ওদের ভর্তির সব ফর্মালিটি কমপ্লিট করে চলে যায়।
রিদি ওদের দু জন কে সাথে করে কলেজের সব কিছু চিনিয়ে দিতে থাকে।
রিমা আর অনু নতুন জায়গাতে নতুন সুন্দর একটা কলেজে ভর্তি হতে পেরে সেই খুশী হয়।
রিদি হঠাৎ বলে ওঠে,”এই জানো কিছুটা গেলেই ভার্সিটি আছে।চলো তোমাদের সেখান থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।”
অনু আর রিমা তো ঘুরাঘুরি করতে ভালোবাসে তাই না করে না।তাছাড়া ওদের ওহ শখ করছিলো ভার্সিটি দেখতে যেতে।
তিনজন কিছু সময় পর ভার্সিটিতে পৌঁছে যায়।
অনু রিমা ভার্সিটি দেখে তো অবাক।
রিমা বলে,”অনু রে ভার্সিটি তো সেই সুন্দর আমি ভার্সিটি দেখে ক্রাশ খাইলাম তো।”
অনু বলে,”তোর মতো নিরামিষের পক্ষে এইসব জড় পদার্থ ছাড়া অন্য কিছুতে ক্রাশ খাবে না।”
রিদি বলে,”ভার্সিটি দেখে ক্রাশ খাইলে এখানে যে ছেলে গুলো আছে তাদের দেখলে তো তোমার মাথা ঘুরে যাবে।”
রিমা বলে,”আমি এইসব ক্রাশে বিশ্বাসী না।যে ক্রাশ খায় তাকে বলো।”
তাই বলে রিমা অনুর কানের কাছে এসে বলে,”দেখিস সুন্দর পোলা দেখে রাজ কে ভুলে যাবি না তো?
তোর তো আবার ক্রাশ খাওয়া পেশা নয় নেশা।”
অনু বলে,”এই অনুর রুচি তাই বলে এতোটা খারাপ না।”
এমন সময় রিদি ওদের বলে,”এই তোমরা ঝগড়া করা বন্ধ করো তো।চলো তোমাদের আমি একজনের সাথে মিট করিয়ে দেই।”
অনু বলে,”কার সাথে মিট করাবে গো আমাদের?”
রিদি বলে,”তোমাদের হবু দুলাভাই এর সাথে।”
অনু রিমার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে তারপর রিদিকে উদ্দেশ্য করে বলে,”তোমার যে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে তা তো আগে কখনো বলো নাই? ”
রিদি বলে,”আজব কাহিনী তো আমি কখনো বলছি বাড়ির মানুষ আমাদের বিয়ে ঠিক করে রাখছে? ”
অনু বলে,”তারমানে এখন যার সাথে দেখা করবো সে তোমার বি এফ তাই তো?”
রিদি খুব লজ্জা পেয়ে বলে,”হুম ঠিক বুঝতে পারছো! ”
অনু বলে,”তুমি যে প্রেম করো সে খবর তোমার বাড়ির মানুষ জানে? ”
রিদি বলে,”এই অনু তুই কি পাগল? আমি প্রেম করি সে কথা বাড়ির মানুষ জানতে পারলে আমাকে প্রেম করতে দিবে? কখনো দিবে না তাই তো চুরি করে প্রেম করি।আর চুরি করে গোপনে প্রেম করার মজাই আলাদা।”
অনু বলে,”তা প্রেম করো ভালো কথা! প্রেম কি টাইমপাস করতে করছো না কি বিয়ে শাদী ও করবে তোমরা?”
রিদি বলে,”অবশ্যই প্রেম যখন করছি তখন বিয়ে তাকে করবো! ”
অনু বলে,”সে তোমাকে বিয়ে করবে তো না কি সে ফুলের মধু খেয়ে উড়াল দিবে? ”
রিদি বলে,”আমার ও মোটেও এমন টাইপের ছেলে না বুঝলি অনু।”
অনু বলে, “সেই টাইপের না হলেই ভালো।
ঐ টাইপের হলে তোমার কপাল মন্দ।”
রিমা বলে,”তা তোমার বিএফ এর কথা যে আমাদের কাছে বলে দিলে আমরা যদি বাড়িতে বলে দেই তখন কি করবা? ”
রিদি বলে,”আমার তোমাদের উপর পুরা বিশ্বাস আছে যে বাড়ির মানুষ কে কিছু বলবে না।সেইজন্য তো তোমাদের তার সাথে মিট করাতে নিয়ে আসছি।”
একটু পর কিছু দূরে কয়েক জন ছেলেকে দেখা যাচ্ছিলো।
রিদি তাদের দিকে উদ্দেশ্য করে বলে,”ঐ যে ওখানে তিন চারজন আছে তাদের মাঝে একজন আমার বিএফ।”
অনু ঐ দিকে তাকিয়ে তো ওর চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়।
কারণ কিছুদূরে ওর সামনে ওর ক্রাশ রাজ দাঁড়িয়ে আছে।
অনু তো রাজকে দেখে খুশীতে গদগদ হয়ে আছে।
অনু তো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।সে তার রাজকে এই চিটাগাং এসে পেয়ে যাবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারে নাই।
মনে মনে এখন সে তার বাড়ির মানুষ দের অনেক অনেক ধন্যবাদ দিচ্ছে।
এমন সময় রিদি ওদের সামনে নিয়ে যেতে থাকে।
হঠাৎ রিমা বলে,”তা দুলাভাই এর নাম কি আপু? ”
রিদি বলে,”রাইদুল ইসলাম রাজ তার না।”
রিদির মুখে রাজ নাম শুনে সেখান অনু বরফের মতো জমে যায়।অনুর পা আর সামনে যাচ্ছে না।
নিয়তি এ কোন খেলা করলো তার সাথে সে রাজকে পছন্দ করে সেই রাজের সাথে ওর বোন প্রেম করে।আর যাই হোক বোনের প্রেমিকের উপর তো আর কু নজর দেওয়া যায় না।
আবার নিজের ক্রাশ কে বোনের সাথে সহ্য করতে পারবে না।
এইসব সাত পাঁচ ভাবছিল অনু কি করবে এখন সে।
রিদি এবার অনুর হাত ধরে টেনে ওদের সামনে নিয়ে যায়।
অনু তো রাজের সামনে কেঁদে দিবে এমন অবস্থা।
এতো ভালোবেসে ফেলেছে সে তার ক্রাশ কে।এখন না কি সেই ক্রাশ কে দুলাভাই বলে ডাকতে হবে এটা কোনো ভাবে সহ্য করা যায় না।
এবার সেই ছেলে গুলো অনুদের দিকে খেয়াল করলো না।ওরা কি নিয়ে যেনো ফোনোর মধ্যে ডুবে আছে।
রিদি হঠাৎ রাজকে ডাক দেয়,”এই রাজ জানু শুনছো তুমি।”
অনুর তো এমন ডাক দেওয়া শুনে কলিজা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।
(এখন অনু কি নতুন কারোও উপর ক্রাশ খাবে না কি দুলাভাই এর সাথে টাঙ্কি মারবে😜😜😜)
‘
‘
‘
চলবে….