The Cobra King Mafia Boss- Season 4

The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 93

বিয়ের পর কোথা ও ঘুরা হয়নি ওদের।তাই আজ বের হলো দুজনে।রামীন অবশ্য রোয়েনকে প্রথম মিথ্যে বলল। ভিতরে ভিতরে খারাপ লাগছে রামীনের।মিথ্যে না বললে ও সমস্যা ছিলো না কিন্তু কেন বলল সেটা ও জানেনা।রামীন আর আশফিনা পাশাপাশি হাঁটছে লেকের পাশ ঘেঁষে। আশফিনা গোলাপী রং এর কাতান শাড়ী পরেছে আর হাতে তরতাজা একটা গোলাপ।রামীন আশফিনার হাত ধরে হাঁটছে কিন্তু চোখ লেকের পানিতে।বন্ধুকে কিভাবে মিথ্যা বলল ও?আশফিনা বারবার রামীনকে দেখছে।সাদা পাঞ্জাবীতে বেশ লাগছে।কিন্তু এতো কি ভাবছে সে?ওকে দেখছে না কেন লোকটা?সুন্দর লাগছেনা ওকে?আশফিনা হঠাৎ রামীনকে জড়িয়ে ধরে হাঁটতে লাগলো।রামীন চমকে উঠে আশফিনার এই কাজে।রামীন বলল,
.
.
-”কি হলো তোমার?রাস্তায় এভাবে জড়িয়ে ধরলে?”
-”কথা বলছেননা।কি ভাবছেন এতো?আমাকে সময় দিতে পর্যন্ত পারছেননা।”
-”কিছু ভাবছিলাম।”
-”আমাকে সাথে নিয়ে এসে কাকে ভাবছেন?”
-”রোয়েন!রোয়েন কে ভাবছিলাম।”
-”কেন কি হয়েছে ভাইয়ার?”
-”ওর কিছু হয়নি।মিথ্যে বলেছি ওকে।বলেছিলাম বাড়ি ফিরবো শরীর ভালো লাগছেনা।কিন্তু তোমার সাথে ঘুরতে চলে এলাম।”
-”হুম ভালো করেছেন।এমন দু একটা মিথ্যে বলা যায়।”
-”কনা কনা জলে যেমন সাগর থেকে মহাসাগর তৈরি হয় ঠিক তেমনি দু একটা মিথ্যা থেকে হাজার লাখ মিথ্যার সৃষ্টি হবে।কিন্তু সেটা আমি চাইনা।রোয়েনের সাথে চাইনা মিথ্যা বলতে।”
-”দেখুন যা করার করেছেন।এরপর থেকে আর বলবেননা।এবার একটু হাসুন।”
.
.
রামীন মৃদু হাসলো।আশফিনা বলল,
.
.
-”দেখুন এখন চমৎকার লাগছে আপনাকে।”
-”কিছু খাবে?”
-”খিদে পেয়েছে।”
-”কি খাবে?”
-”ফুচকা।”
-”ওটা অপশনাল।লাঞ্চ করে নেই কোথা গিয়ে তারপর ফুচকা আর বাসায় গিয়ে তোমার হাতের এককাপ মিষ্টি চা আর তোমার সাথে এক দফা ভালবাসাবাসি(আশফিনার কানে ফিসফিসিয়ে)।
.
.
রামীনের কথায় লজ্জা পেয়ে যায় আশফিনা।রামীনের কাঁধে বাড়ি দিয়ে বলল,
.
.
-”ইসস কি নির্লজ্জ আপনি।”
-”বড় সুন্দরী তুৃ্মি।ইচ্ছে তো করছে এখন এখানে শুরু হয়ে যাই।”
-”ধ্যাত রামীন প্লিজ। ”
-”লজ্জা লাগছে?”
-”তো কি?আপনার মতো নির্লজ্জ নই অবশ্যই।”
.
.
ঘরে ফিরে শুয়ে পড়ে রুহী।মনটা কেমন করছে।মিস আনিলা মানুষটি খারাপ ছিলোনা।কিন্তু ও চিনতে পারেনি মানুষটাকে।বাবা এখব কষ্ট পাচ্ছে শুধু ওর জন্য।ও কি করে কষ্ট দিতে পারলো বাবাকে?মিস আনিলা ও তো সবসময় ওকে নিজের মেয়ে হিসেবে মেনেছে কিন্তু ও পারেনি।অবশ্য কাজটা ওর জন্য ভীষন কঠিন ছিলো।কিন্তু অসম্ভব ছিলো না।দুপুরে খায়নি রুহী। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে এলো ওর পেটে খাবার যায়নি।ওর খেতে ইচ্ছে হচ্ছেনা।
অবশ্য বাবুর জন্য খেতে হবে ওর।নামতে ইচ্ছে হচ্ছে না ওর।পেটে হাত বুলাতে থাকে রুহী এ যেন ক্ষুধার্ত বাচ্চাটিকে ঘুম পাড়াতে চাইছে ও।তখনই রুমে প্রবেশ করে রামীলা।হাতে একটি প্লেট ওর।রামীলা বলল,
.
.
-”দেখি আফু উডেন।খায়া লন।”
-”খিদে নেই।তুই যাও।”
-”খিদে নাই কইলে হইবোনা।আপনের বেশি বেশি খাওন লাগবো।বাবুর জন্য হইলে ও খাওন লাগবে।”
-”বেশি কথা বলছিস যা।”
-”স্যার আইলে কয়া দিমু।”
-”ভয় দেখাচ্ছিস আমাকে?”
-”না। স্যাররে ভয় পান আপনি?”
-”একদম না।”
-”তাইলে স্যার আওনের আগে খায়া লন ক্যান?এত হুলুস্থুল করেন ক্যান?”
-”তোর এসব জেনে কাজ নাই।”
-”জানা জানির লাগবোনা।আপনে খাইবেন অখন।স্যারে যদি জানে আপনে সকালে ও নাস্তা খাননাই,দুপুরে ও খাননাই বকবো আপনেরে।”
-”জানবে না।”
-”হেরে জানানোর লাইগ্যাই তো আমি আছি।”
-”ওকে বলে দিবি?”
-”কমুইতো।”
-”তোরে গান স্যারে শুনায়?মোবাইলে গেমস খেলতে কে দেয় স্যারে?সাইন করা শেখাইছে স্যারে?”
-”এতো খুডা দেন কিল্লিগা?আর খুডা দেব যাই দেন খাইতে তো অইবোই।বয়েন আফু।
.
.
রুহীকে টান দিয়ে উঠিয়ে বসায় রামীলা।তারপর ওকে খাইয়ে দেয়।খাওয়া শেষে রুহী শুয়ে পড়ে রামীলা বেরিয়ে যায়।সন্ধ্যায় রোয়েন ফিরে আসে।রামীলার থেকে রুহীর সারাদিনের খাওয়ার খবর নিয়ে রুমে এসে দেখলো রুহী ঘুম।রোয়েন রুমে এসে ওর পাশে দাঁড়ায়।কি অসাধারন লাগছে ঘুমন্ত রুহীকে।রোয়েন রুহীর ফুলে উঠা পেটে হাত বুলিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
.
.
-”কেমন আছিস বাবা?নিশ্চয়ই মা তোদের ভালো রেখেছে।বাবা ও ভালো আছি।”
.
.
বাবুদের সাথে কথা বলে ওয়াশরুমে যায় রোয়েন।রুহী চোখ খুলে মুচকি হাসে।তারপর পেটে হাত বুলিয়ে উঠে বসে রোয়েনের কাপড় বের করে খাবার গরম করতে চলে যায়।রোয়েন বেরিয়ে এসে দেখলো রুমে নেই রুহী।বিছানায় ওর কাপড় রাখা।কাপড় পাল্টে নিচে আসে রোয়েন।রুহী টেবিলে খাবার সাজালো।রোয়েন এসে খেতে বসতে বসতে বলল,
.
.
-”কেমন আছো?”
-”ভালো।তুমি?”
-”আছি।খেয়েছো?”
-”না। তুমি খাও।”
-”তুমি বসে খেয়ে নাও।রুমে চলে যাবো লাইট অফ করে।”
.
.
রুহী খেতে বসে যায়।রোয়েন খেয়াল করে রুহীর মুখ মলিন হয়ে আছে।ব্যাপারটার কারন আংশিক ও আর বাকিটা কি?
.
.
-”কিছু নিয়ে আপসেট?”
.
.
মাথা নাড়ে রুহী।নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছে ওর।কোনমতে একটু খেয়ে রোয়েনের সাথে রুমে চলে এলো।দুজনে খাটে বসে আছে।রুহী বলতে যেয়ে ও পারছেনা।বুক ফেঁটে কান্না পাচ্ছে।কোনমতে চোখের পানি সামলে বলল,
.
.
-”আমি খুব খারাপ তাইনা?”
.
.
রোয়েনের এমনিতেই মন ভালোনা।রামীন মিথ্যে বলে লেকে গিয়েছে আশফিনাকে নিয়ে।এটলিস্ট বলেই যেতো।রামীন ওকে কি করে মিথ্যে বলল?তারওপর রুহীর কন্ঠ শুনে মনে হলো কান্না পাচ্ছে ওর।রোয়েন জিজ্ঞাস করে,
.
.
-”কেন রুহী?”
-”কোন প্রশ্ন না।শুধু বলো আমি কি খারাপ?খুব খারাপ?”
-”না।কি হয়েছে?”
.
.
রুহী সামনে ফিরে রোয়েনের গেঞ্জী চেঁপে ধরলো।তারপর কেঁদে বলতে লাগলো,
.
.
-”আমি খুব খারাপ রোয়েন।আমার বাবার শান্তি নষ্ট করেছি আমি।মিস আনিলাকে বের করে বাবার শান্তি শেষ করে দিয়েছি।খুব খারাপ আমি।মিস আনিলার ভালবাসাটা দেখতে পারিনি আমি।খুব খারাপ আমি।কিভাবে পারলাম কাজটা করতে?বলেন তো?মানলাম রাগ হয়েছিলো।পারতামনা নিজেকে সামলাতে?বলুন।”
.
.
রুহীর চুল ঠিক করে দেয় রোয়েন।ওর ভালো লাগছে।অন্তত রুহী আনিলা কে বুঝতে শুরু করেছে।নিজের ভুল বুঝতে পারছে।রোয়েন রুহীকে কাছে টেনে বসায়।তারপর জর মাথায় ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল,
.
.
-”দোষটা বুঝতে পেরেছো এটাই অনেক।তুমি খারাপ না রুহী।পরিস্থিতিটাই এমন।তোমার জায়াগায় থাকলে হয়ত আমি ও এমনটাই করতাম।আমি ও অনেক জায়গায় ভুল ছিলাম তবে সেগুলো শুধরানোর সময় শেষ।তোমার সময় আছে।মেনে নাও মাকে।ওনি তোমাকে খুব ভালোবাসেন।ওনার সাথে মিশলে বুঝবে।ওনি তোমার মায়ের জায়গা কখনো নিবেননা।মায়ের জায়গা মায়ের জায়গাতেই আছে।ওনি এখন তোমার বাবার বৃদ্ধ বয়সের সঙ্গী।সব সৎ মায়েরা খারাপ না।ভালো ও আছে।সেখানে একজনকে হয়ত আল্লাহ তা’লা তোমাকে দিয়েছেন।সেটার কদর করো রুহী।আর আমি ও সেদিন খুব খারাপ ব্যাবহার করেছিলাম।তোমাকে এ অবস্থায় টেনে বসিয়েছিলাম।কাজটা ঠিক হয়নি আমার।সরি রুহী।”
-”আমি ঠিক আছি।আর তোমাকে আফসোস করতে হবেনা।আর ওনাকে মা হিসেবে মানার চেষ্টা করবো আমি।”
-”গুড।”
-”শুনো।আজ একটু ভালবাসা দেবে?”
-”আমি তো অনেকটা ভালবাসতে চাই আজ।”
-”তাহলে আর অপেক্ষা কিসের?”
.
.
রুহীর পেটে হাত রেখে রোয়েন বলল,
.
.
-”ওদের আসার অপেক্ষা।”
.
.
রুহী হেসে রোয়েনের বুকে মাথা রাখে।রোয়েন রুহীর মাথায় চুমু খেয়ে ওকে শুইয়ে দিয়ে ওর চিবুক,ওষ্ঠে ঘন ঘন চুম্বনের সৃষ্টি করতে থাকে রোয়েন।রাত পেরিয়ে সকাল হয়।রোয়েন অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে আর রুহী রোয়েনের গলা জড়িয়ে ঝুলছে।রোয়েন হেসে রুহীর চিবুক নেড়ে দিলো।রুহী বলল,
.
.
-”আজ দুপুরে বাবা কে নিয়ে আসবে।”
-”কেন?”
-”কেন আবার কি?লাঞ্চ করবো একসাথে।”
-”আচ্ছা।আমি ও বাবাকে কল দিবো তুমি ও বলবে কিন্তু।”
-”ওকে।”
.
.
রোয়েন নাস্তা সেড়ে বেরিয়ে আসে।রুহী এবার অনলাইনে কিছু অর্ডার করেছিলে।সেটার পার্সেল এসে গেছে।পার্সেলটা নিয়ে নেয় রুহী।এদিকে সামায়রা কলেজ থেকে বেরিয়ে ফাহমিন কে খোঁজার চেষ্টা করছিলো।কিন্তু পায়নি।লোকটাকি আসেনি?হঠাৎ ওকে চমকে দিয়ে পাশ থেকে কেউ বলল,
.
.
-”কাকে খুঁজছো?”
.
.
সামায়রা পাশ ফিরে দেখলো ফাহমিনকে।ও ভয়ে শিউরে উঠে বলল,
.
.
-”ফলো করতে করতে আজ কাছেই এসে গেছেন।”
-”কে ফলো করছে তোমায়?”
-”আপনি।দেখুন ভাইয়া আঙ্কেল কাকু যাই হন প্লিজ আমাকে ফলো করা বন্ধ করুন।”
.
.
কথাটা বলেই দৌড়ে কলেজ গেটে ঢুকে পড়ে সামায়রা।ফাহমিন বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলো মেয়েটাকে বৌ বানাতে যাচ্ছিলো আর মেয়েটা ওকে ভাইয়া আঙ্কেল আর কাকু বানালো।ছিঃ ছিঃ ফাহমিন ছিঃ তোকে এতোটাই বুড়ো লাগলো আজ ভালোবাসার মানুষটির কাছে?রামীন কাজ করছিলো তখনই রোয়েন বলল,
.
.
-”লেকে কি ভালো হাসপাতাল আছে?”
-”কেন?”
.
.
রোয়েনের দিকে তাকায় রামীন।রোয়েন কাজে মন দিয়ে বলল
.
.
-”তোর আর আশফিনার মতো কাকে যেন দেখলাম।তাই।”
-”আমি নিজেও জানি না কেন তোকে মিথ্যে বললাম।”
-”আমার ও বিশ্বাস হচ্ছেনা তুই আমাকে মিথ্যে বললি?”
.
.
রামীন এসে রোয়েনকে জড়িয়ে ধরে বলল,
.
.
-”কাল সারাদিন মিথ্যেটা খুব জ্বালিয়েছে।মাফ করে দে প্লিজ।”
-”আরেহ ইটস ওকে।তবে এটাই লাস্ট আর না ওকে?”
-”হুম।আর বলবো না।”
.
.
দুপুরে ঘরে যাবার মুহূর্তে রেজোয়ান মাহবুবকে ও সাথে নেয় রোয়েন।ওনাকে অবশ্য রুহী বলেছিলো ঘরে যেতে।ঘরে ঢুকে রোয়েন আর রেজোয়ান মাহবুব অবাক হয়ে যায়।
চলবে