The Cobra King Mafia Boss- Season 4

The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 125

→মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে নাস্তা নিয়ে বসে রুহী কিন্তু খেতে পারেনি।বারবার রোয়েনের নম্বরে কল করে যাচ্ছে কিন্তু ফোন বন্ধ আসছে।কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা এমন টা।লোকটা এমন করেনা কখনোই।রুহী আর না পেরে শামীমকে কল দেয়।শামীম জানায় রোয়েন কাজে আসেনি।মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে গেছে রুহীর। যেখানে কল দিচ্ছে সবার একই উত্তর।কারোর সাথে কথা হয়নি যায়ও নি।রুমে চলে আসে রুহী। ড্রেসিং টেবিলের কাছে এসে দাঁড়িয়ে চিরুনি হাতে নিতেই একটা কাগজ দেখতে পায় ও।এমনিতেই প্রচন্ড অস্থিরতা কাজ করছে।কেমন লাগছে রুহী বলতে পারবেনা।কাগজ টা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করে রুহী।এদিকে রামীন শামীম সবাই চিন্তিত।স্যার আসেনি এমন টা আজ হয়েছে।রামীন কিছুদিন যাবৎ রোয়েনকে বুঝতে পারছিলোনা।ওর মনে কেমন সন্দেহ ঢুকে গিয়েছিলো।কি চাইছে কি করছে রোয়েন?কোন সমস্যায় পড়েনি তো?রামীন আর শামীম কাউকে না জানিয়ে রোয়েনকে খুঁজতে বেরিয়ে যায়।রামীলা খেয়াল করছে রুহী কেমন অস্থির সকাল থেকে।বেচারী নিজে ও খায়নি।হঠাৎ উপর থেকে রুহীর চিৎকার শুনে রামীলার হাত থেকে ভাতের পাতিল পড়ে গেলো।দৌড়ে রুমে এসে দেখলো রুহী চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করেছে।রামীলা দৌড়ে এসে রুহীকে জড়িয়ে ধরে খাটে বসিয়ে দেয়।তারপর জিজ্ঞেস করতে থাকলো,
”কি অইছে আফু?কান্দেন কেন?”
রুহী কিছু বলতে পারছেনা।কথা বলার অবস্থায় নেই ও।রামীলা আনিলা কে কল দেয়।আনিলা জানায় সে আসছে জলদি। রামীলা রুহীর কাছে এসে বসলো,
”আফু কি অইছে?কননা।”
রুহী কাঁদতে কাঁদতে এতোটুকুই বলছে,
”এই তোমার ভালবাসা?রোয়েন কি ভাবে পারলে এমনটা করতে?”
রামীলা ভয়ে কাঁদতে শুরু করে।রুহী কে জিজ্ঞেস করতে থাকে,
”ভাইয়ে কই আফু?কননা।ডর লাগতাছে।”
রুহী না পেরে রামীলাকে জড়িয়ে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলো আমি শেষ রামীলা।কি হবে আমার আমার বাচ্চাদের?”
”আল্লাহ আছে আফু্।কাইন্দেননা।”
এরই মাঝে আনিলা আর রেজোয়ান মাহবুব চলে আসেন।রুহীকে কাঁদতে দেখে ওনারা অস্থির হয়ে যান।বারবার জিজ্ঞেস করার পর ও কোন উত্তর পায়নি রুহীর কাছ থেকে।আনিলা হঠাৎ দেখলেন রুহীর হাতের কাগজটা।সেটাকে মুঠ করে রেখেছে রুহী।মেয়ের হাত থেকে সেটা নিয়ে পড়তে লাগলেন আনিলা।রেজোয়ান মাহবুব দেখছেন মেয়েকে।চিঠিটা দেখে কি বলবেন বুঝতে পারেননা আনিলা।সেখানে লেখা,
”সরি রুহী প্রথমে মাফ চেয়ে নিলাম।অনেক আশা ছিলো বাচ্চাদের সাথে নিয়ে থাকবো একসাথে।কিন্তু সেটা হয়ত পূরন হলো না।চলে যাচ্ছি আমি।আর হয়ত কখনো দেখা হবেনা।ভুলে যেও আমি তোমার জীবনে কখনো ছিলাম।কেন গিয়েছি সেটা বলতে পারবোনা।অসহায় আমি।তবে ছয় টা বছর আমার জীবনের বেস্ট সময় ছিলো তোমার সাথে।কখনো এতোটা ভালবাসা আশা করিনি যতোটা তোমার থেকে পেয়েছি।গত কয়েকমাস তোমাদের ওপর অনেক অন্যায় করেছিলাম।পারলে ক্ষমা করবে।আমার বাচ্চাদের ভালো শিক্ষায় শিক্ষিত করবে।আমার দোয়া ভালবাসা তোমাদের সাথে আছে থাকবে সবসময়।রুহী আমার বাচ্চা গুলোকে বাবা মা দুজনের ভালবাসা দিও।নিজের খুব খেয়াল রেখো।সবসময় মনে রাখবে তোমার নিজের প্রতি অন্যায় আমার রুহকে প্রতিমুহূর্তে বিদ্ধ করবে কাঁটার আঘাতে।ঠিক মতো খাবে ঘুমাবে।রুহী তোমার সাথে না থেকে ও তোমার সাথে সবসময়ই আছি।আমি খুব ভালবাসি তোমাকে মায়াবতী।অভিমান রেখোনা আমার ওপর।খুব ভালবাসি তোমাকে খুব ভালবাসি।চলে আসাটা কতো কঠিন ছিলো ভাবতে ও পারবেনা।যাইহোক ভাল থেকো রুহী।আমার ভালবাসা নিও।আল্লাহ হাফেজ।আনিলা কেঁদে ফেলে।রেজোয়ান মাহবুব বলেন,
”কি লিখেছে রোয়েন?”
”চলে গেছেন ওনি?”
আঁৎকে উঠেন রেজোয়ান মাহবুব।
”চলে গেছেন মানে কি?কি পেয়েছেন ওনি?আমার মেয়েকে এভাবে ফেলে কই গেলেন?”
”মনে হচ্ছে খুব বড় কোন সমস্যায় আছেন।কিন্তু একটা বলতে পারতেন তো।”
অতিরিক্ত কান্নার কারনে দূর্বল হয়ে যায় রুহী।রাতে রামীন আর শামীম রোয়েনের ঘরে ফিরে দেখলো আশফিনা রামীনের ছেলেরা আর বাকি সবাই আছে।রুহীর মাথায় পানি ঢালছে আশফিনা।আনিলা তাঞ্জুম পাশে বসে আছে।রেজোয়ান মাহবুব থেকে জানতে পারলো রোয়েনের চলে যাওয়ার কথা।রামীন স্তব্ধ।রোয়েন কে চেনে না ও।ওর রোয়েন তো এমন না।এমন সুখের সংসার ছেড়ে কেমনে চলে গেলো?রামীন খেয়াল করলো দ্রিধা এক কোনায় বসে রোয়েনের ছবি ধরে কাঁদছে।রামীন গিয়ে দ্রিধার পাশে এসে বসলো।দ্রিধা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
”আব্বু কই আঙ্কেল?”
”বাবা আছে মামনি চলে আসবে।”
”বাবা ভালবাসেনা আমাদের।”
রামীন দ্রিধাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলল,
”লক্ষী আম্মু এভাবে বলেনা আম্মা।বাবা আসবে।তোমাদের ছেড়ে কেমনে থাকবে বলো।”
”মিস করছি আব্বুকে।”
”আম্মু তোমাকে অনেক শক্ত থাকতে হবে।তোমার মা অনেক অসুস্থ।আমরা আছি তোমাকে ও মায়ের সাথে থাকতে হবে।আব্বু চলে আসবে।কান্না করেনা আম্মা।”
খবর টা জার্মানে চলে গেলো। ফাহমিন কেঁদে দেয়।ও নিজে ও নাকি রোয়েনের সাথে আগে কথা বলেছিলো।তবে আগের রোয়েনকে পায়নি।কিন্তু বন্ধ এমন কাজ করবে ভাবতে ও পারেনি।রুহীর সাথে সেদিন আনিলা, নীরা হামিদ থেকে যায়।সারারাত কেঁদেছে রুহী।চিৎকার করে কাঁদার কারনে গলা ভেঙ্গে গেছে।
কিন্তু তারপর ও গুঁমড়ে কাঁদছিলো রুহী।মেয়েকে বুকে জড়িয়ে সারারাত কাঁদে।যে মানুষটাকে ধরে সারাজীবন বাঁচতে চেয়েছিলো সে কই চলে গেলো নীরবে।একটাবার ও কি মায়াবতীকে বলতে পারতোনা?অনেকটা দিন পার হয়ে যায় এভাবে।প্রত্যেক রাত চোখের জলে ভিজিয়ে দিয়েছিলো রুহী।রুহীকে আনিলা বারবার জোর করেন বাসায় চলে আসতে।কিন্তু রুহী রাজিই হয়নি।নিজের স্বামীর ঘর ছেড়ে যাবেনা।লোকটা আসবে অবশ্যই আসবে।বাচ্চাদের জন্য হলে ও আসবে।খেতে পারেনা রুহী।চেহারাটা ভেঙ্গে গেছে।চোখের নিচাটায় কালি পড়ে গেছে।চুল গুলো ও সতেজতা হারিয়ে ফেলেছে।চেহারায় আকর্ষনীয় ভাবটা আর নেই।ঘুমের সময় রোয়েনর ছবি বুকে জড়িয়ে ঘুমায়।সকাল হলেই মেইন ডোর খুলে দাঁড়িয়ে থাকে।এ যেন সে আসলো।কোব্রা কিং এর কাছে ও চলে যায় একা একা। ওদের সাথে কেঁদে কেঁদে কথা বলে।কুমির দুটো ভালো নেই।কুকুর গুলো ও কেমন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।
সময়ের সাথে সাথে রুহীর গর্ভের ছোট্ট জানটা ও বড় হতে থাকে।
রুহীর ডেলিভারির সময়টা বেশি কঠিন হয়ে গিয়ে ছিলো ওর জন্য আর বাকি সবার জন্য।সারারাত কাঁদতো।খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলো।আনিলা মেয়ের কাছে চলে আসেন অনেক আগে।
অপরদিকে সামায়রা বোনের খবর শুনতে শুনতে সেখানে থাকতে পারছিলো না।একদিকে ও নিজে ও প্রেগন্যান্ট তিনমাসের বাবু ওর গর্ভে।বাংলাদেশে আসার জন্য পাগল করে দিয়েছিলো ফাহমিনকে।শেষমেষ ফাহমিন বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসে।সামায়রা এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি রোয়েনের ঘরে চলে আসে।রুহী বোন কে দেখে নিজেকে সামলাতে পারেনা।জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে।সামায়রা ও কাঁদছে।দ্রিধার মন বেশির ভাগ সময়েই খারাপ থাকে।লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদে বাচ্চাটা।মাকে কখনো দেখায়না ওর কান্না।রুহীর ডেলিভারির সময় চলে এলো।আগে সিজার করা হয়েছিলো তাই এবার ও সিজার করতে হলো।ডাক্তার জানায় রক্ত লাগবে নাহলে রুহীকে বাঁচানো যাবেনা।রেজোয়ান মাহবুব আর শামীম রক্ত দেয় রুহীকে।ছেলে সন্তানের জন্ম দেয় রুহী।রামীন ছেলেকে কোলে নিয়ে কাঁদতে থাকে।এর মাঝে ও রোয়েনের জন্য খবর লাগানো হয়।কিন্তু কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।রুহী ছেলের নাম রেখে দিলো রাদ্রিন রুশিদ চৌধুরী রোয়েন।ছেলেকে দেখে রোয়েনকে খুব বেশি মনে পড়ে রুহীর।আনিলা নীরা হামিদ দুজনেই রুহীর আর বাবুর খুব খেয়াল রাখছে পাশাপাশি সামায়রার ও। ও বেচারী প্রথম মা হতে যাচ্ছে।এভাবে কয়েকটাদিন যেতে লাগলো।রোয়েনের অফিসের সবাই ঠিক করলো রেজোয়ান মাহবুব রোয়েনের দায়িত্ব পালন করবেন অফিসে।কিন্তু ওনার মন টানছিলোনা।যার আসন তাকেই সাজে।কিন্তু রোয়েনের দায়িত্ব ওনি ছাড়ে কে পালন করবে?
শেষমেষ রাজি হলেন রেজোয়ান।তবে মনের দিক থেকে সবার মতোই খুব ভেঙ্গে পড়েছেন।
ছেলের একমাস হয়ে গেছে।এরই মাঝে চৌধুরী কলোনি আর পরিবারে লাগলো সবচেয়ে বড় ধাক্কা।পুরো এলাকায় নেমে কালো ছায়া।হয়ত এমন খবর কেউই মেনে নিতে পারেনি।কিভাবেই বা পারবে?শামীম কোথা থেকে দৌড়ে আসে রেজোয়ান মাহবুবের কাছে।শামীমকে এভাবে কাঁদতে দেখে রেজোয়ান মাহবুব ভয় পেয়ে যান।তারপর জিজ্ঞেস করেন,
”কি হয়েছে শামীম?”
শামীম খবরটা কিভাবে দেবে বুঝতে পারছেনা।পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে এসেছে।কি বলবে ও?কিভাবে বলবে?তারপর ও নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে বলল,
”স্যার বাহিরের একটা নম্বর থেকে কল আসছিলো।”
”তো?”
”তো একজন কিছু ছবি পাঠাইছে আমাদের।”
”কেমন ছবি?”
”স্যার সেখানে কিছু জিনিস পত্র ছিলো যেগুলো বড় স্যারের।”
”রোয়েন!!! কই ওনি?”
শামীম চুপ হয়ে গেলো।ছবিগুলোর কথা মাথা থেকে সরাতে পারছেনা।কিভাবে ভুলবে রক্তমাখা কালো কোট কালো শার্ট আর সোনালী ঘড়িটার কথা?শামীমকে চুপ দেখে রেজোয়ান মাহবুব চিৎকার করে বললেন,
”কি হলো বলো না কেন?কই ওনি?”
শামীম এবার কেঁদে দিয়ে বলল,
”স্যার আর নেই। ”
চলবে