The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 124
তিনমাস পর
→ল্যাপটপের স্ক্রীন থেকে চোখ সরিয়ে মুখে ভাতের লোকমা তুলে নেয় ফাহমিন।মুখে সন্তুষ্টির হাসি ফুঁটে উঠে।মুখের ভাতটুকু গিলে অনুভব করলো সামনে আরেক লোকমা ভাত।সেটা না খেয়ে বলল,
”চিংড়ি কারিটা কে রেঁধেছে?”
”কেন ভালো হয়নি?আমি রেঁধেছি।”
”বেস্ট হয়েছে।”
সামায়রা ফাহমিনের মুখে ভাতটুকু দিয়ে বলল,
”আরেকটু আনবো?”
”না হয়েছে যথেষ্ঠ হয়েছে।আমাকে বেরুতে হবে।”
সামায়রা প্লেট রেখে হাত ধুয়ে ফাহমিনের পিছু পিছু রুমে আসে।কিছু ফাইল পত্র ঠিক করে নিতে নিতে ফাহমিন বলল,
”কিছু লাগবে?”
টপসের কোনা আঙ্গুলে পেঁচাতে পেঁচাতে সামায়রা বলল,
”দুটো কোন আইসক্রিম এনে দিবেন?”
”দুটো কেন?”
”এলিসন আপুর বেবিটা আসে এখানে।কাল আইস্ক্রিম চেয়েছিলো দিতে পারিনি আমি।”
”ওহ।ও তো তোমার জন্য বেশ পাগল দেখলাম।”
”আমার ও ভালো লাগে।কিউট অনেক।”
হেসে বলল সামায়রা।
ফাহমিন একগাল হেসে সব ঠিক করে নিয়ে সামায়রার কাছে এসে দাঁড়ায়।তারপর ওর চুলে আঙ্গুল পেঁচিয়ে খেলা করতে করতে বলল,
”দারোয়ান দিয়ে যাবে।আর আজ রেডি হয়ে থেকো।”
চোখ বড় করে তাকায় সামায়রা।উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
”কোথাও যাবেন?”
”নো।শুধু রেডি হয়ে থেকো।আসলেই বুঝবে।”
কথাগুলো বলে সামায়রার গালে সাজানো দাঁত গুলো বসিয়ে আলতো করে কামড়ে দিয়ে ওর কপালে হালকা ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বেরিয়ে যেতে থাকে।সামায়রা গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষনের জন্য চুপ হয়ে গেলে ও আর দাঁড়াতে পারেনা।দৌড়ে এসে পিছন থেকে গলা জড়িয়ে ধরে ফাহমিনের।তারপর রাগান্বিত গলায় বলল,
”আজ আপনাকে যেতে দিচ্ছিনা।খুব করে কামড়াবো আপনাকে।”
ফাহমিন সামনে ফিরে বলল,
”নাও কামড় দাও।”
সামায়রা অবাক।লোকটা কখনো এভাবে বলেনি।তারপর না ভেবেই ফাহমিনের গালে কামড়াতে থাকে।ফাহমিন ব্যাথা পেয়ে ও হাসছে।অবশেষে সরে আসে সামায়রা।ফাহমিন বলল,
”এতগুলো কামড়ের ফলাফল কি হতে পারে সেটা আজ এসে বুঝাবো।”
ভয়ে মুখের রং উড়ে গেলো সামায়রার।ফাহমিনকে জিজ্ঞেস করলো,
”কি করবেন?”
”সেটা আসলে দেখবে।আমি চাই রেডি থাকো তুমি।”
সামায়রাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে বেরিয়ে যায় ফাহমিন।চিন্তায় পড়ে যায় সামায়রা।কি করবে এখন ও?
রাতের বেলা বিছানায় শুয়ে আছে রোয়েন।বুকের ওপর শুয়ে আছে দ্রিধা।মেয়েটা ওকে ছাড়া কিছু বুঝেনা।একটা কাজ ও করতে পারেনা ও।মেয়েটার চোখের আড়াল হলেই কেঁদে কেঁদে বুক ভাসায়।রাতের বেলা কাজ করতে পারেনা ও।মেয়েটা কাঁদতে থাকে।ওর কথা হলো বাবা সামনে থাকবে আর ওকে নিয়ে থাকবে।অন্য কিছুতে ব্যাস্ত হতে পারবেনা।পাকঘরে মেয়ের দুধ বানাচ্ছিলো রুহী।ফোন বেজে উঠতেই সেটাকে হাতে নিতেই মুখে হাসি ফুঁটে উঠে।ফোন রিসিভ করে কানে রেখে দুধ নাড়তে থাকে।অপরপাশ থেকে সামায়রা বলল,
”আপু হেল্প।”
”কি হেল্প লাগবে?বল।”
”,ওনি হাসপাতালে যাওয়ার আগে বললেন রেডি থাকতে।কোথা ও নাকি যাবেননা।এখন কি করবো আমি?”
”তুই বুঝিস নি ওনার কথা?”
”না বুঝিনি বলেই তোকে কল দিলাম।”
রুহী হেসে দেয়।তারপর হাসি থামিয়ে বলল,
”বোকা মেয়ে একটা।শাড়ী পরতে পারিস?”
”পারি তো।”
”নরম কোন শাড়ী আছে?”
”সব গুলো ভারি।নরম গুলো ভালো লাগেনা।”
”তোকে বিয়ের সময় একটা ড্রেস গিফট করেছিলাম সাদা রং এর।”
”ঐটা ভীষন লজ্জা লাগে দেখতে।তাহলে পরবো কেমন করে তাও আবার ওনার সামনে।”
”হাসবেন্ডের সামনে লজ্জা পেতে হয়না। আজকে রাতে এটা পরে নে।হালকা সাজবি।একদম হালকা সাজ কিন্তু।লিপস্টিক আর কাজল রাখ সাজে।”
”ওনি হাসবে।”
”ডিম করবে।কোন কথা বলবিনা।সেটা পরে নিবি।”
”আচ্ছা।”
”পারলে ভালো মতো শাওয়ার নেয়।গায়ে ঘামের গন্ধ যেন না থাকে।”
”আচ্ছা আপু।তোরা ভালো আছিস?”
”আলহামদুলিল্লাহ। তোদের কি খবর?”
”এইতো ভালো আপু।দ্রিধা কি করে?”
”তোর ভাইয়ার সাথে।”
”ওহ।আচ্ছা আপু রাখছি।রান্না চড়াতে হবে।”
”আচ্ছা যা।”
কথা শেষ করে ফিডারে দুধটুকু ঢেলে রুমে আসে রুহী।বিয়ের চারমাসে ও বোন টা কিছুই বুঝতে পারছেনা।তারমানে ফাহমিন ভাইয়ের সাথে তেমন সম্পর্ক স্থাপন হয়নি এখনো।হয়ত ওকে সময় দিয়েছে এতোদিন।রোয়েন মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে আছে।দ্রিধা বাবার আঙ্গুল খাচ্ছে একমনে।রোয়েন আঙ্গুলটা যতোবারই সরাচ্ছে দ্রিধা কেঁদে উঠে।রোয়েন আবার ও সেটা ওর মুখে পুরে দেয়।রুহী দুধটা নিয়ে খাটে এসে বসে।দ্রিধা মাকে দেখে একটু হেসে বাবার দিকে মন দেয়।রোয়েন ফিডারটা হাতে নিয়ে দ্রিধার মুখে ঢুকিয়ে দেয়।রুহী বলল,
”আশুর শরীরটা নাকি ভালো না।
”রামীন বলেছিলো?এখন কতোমাস চলে ওর?”
”পাঁচ মাস চলছে।”
”ওহ।তাহলে তো সময় ও বেশি নেই।”
”হুম।”
দ্রিধা খেতে খেতে ঘুমিয়ে গেছে।রোয়েন ওকে দোলনায় শুইয়ে দিয়ে খাটে এসে বসে।রুহী শুয়ে আছে।ল্যাপটপে কিছু কাজ সেড়ে নিতে থাকে রোয়েন।রুহী হঠাৎ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে রোয়েনকে তারপর কাঁধে মুখ গুঁজে দেয়।
রোয়েনের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই।রুহী বলল,
”কাজ না করলে চলে না এখন?”
”করতে হবে রুহী।”
মুখ মলিন করে বসে রইলো সেভাবেই।এদিকে রাতে ফিরে আসে ফাহমিন।নিচে টেবিলে দেখলো খাবার ঢেকে রাখা।ওদের রুমে কোন আলো নেই।ফাহমিন ফ্রেশ হয়ে খেয়ে রুমে যাওয়ার জন্য এগোয়।রুমে এসে দেখলো কেমন নীরব পরিবেশ। দরজার পাশে হাতিয়ে সুইচ খুঁজতে খুঁজতে একসময় পেয়ে ও গেলো।লাইট জ্বালিয়ে চমকে গেলো ফাহমিন।খাটে বসে আছে সামায়রা একদম নববধুর ভঙ্গিতে।গায়ের শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে এগিয়ে আসে খাটের পানে।সামায়রার গায়ে সাদা একটি নাইট গাউন।ও ভাবতেই পারেনি সামায়রা ওর জন্য এমন কিছু করবে।গায়ের শার্ট খুলে চেয়ারে মেলে দেয় ফাহমিন।গায়ে আরেকটি পাতলা গেঞ্জী আছে।খাটে এসে বসলো ও।সাথে সাথে সামায়রা পিছিয়ে গেলো একটু।ফাহমিন অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
”কি হলো?”
”কামড় দিবেননা তো?”
ফাহমিন খাটে উঠে বসে সামায়রাকে টেনে কাছে এনে বলল,
”বললাম না প্রতিশোধ নিবো।এখন যা করবো একদম মানা করতে পারবেনা।”
”ভয় লাগছে আমার।”
”কিছু হবেনা।”
সামায়রা ফাহমিনের চোখের দিকে তাকাতেই সব কেমন সহজ হয়ে গেলো।ফাহমিন সামায়রার পিছনে হাত দিয়ে পিঠের ওপর থেকে চেইনটা খুলে দেয়।সামায়রা বড় বড় চোখ করে বলল,
”কি করছেন?”
”শশশ।তোমার না এলিসনের বেবিকে ভালো লাগে?”
”সেটা তো লাগেই কিন্তু,,,,!!”
”এমন একটা বাবু যদি আমাদের ও থাকে।”
সামায়রা লজ্জায় নিচে তাকায়।ফাহমিন সামায়রাকে বুকে জড়িয়ে নেয় শক্ত করে।ভরিয়ে দিতে ভালবাসায়।সামায়রা ও আপত্তি করতে পারেনা।ভারি হয়ে আসে ওর শরীর।ব্যালেন্স রাখতে না পেরে শুয়ে পড়ে দুজনেই।ফাহমিন সামায়রাকে নিয়ে সুখের সাগরে পাড়ি জমায়।এসময়টাতে ও সামায়রা হাজারটা প্রশ্ন করেছিলো ওকে।ফাহমিন খুব কষ্টে উত্তর করেছিলো তারপর আর প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়নি। দুজনেই এক হয়ে গেলো পবিত্র ভালবাসার বন্ধনে।রামীন আশফিনার যত্নে কোন প্রকার ত্রুটি রাখছেনা।সার্বক্ষনিক আশফিনার পাশেই থাকছে।রামীন কাজে গেলে ভাবি আশফিনার সাথে থাকে।অনেক গুলো সময় পার হতে থাকে।আশফিনার ডেলিভারি ডেট যতোটা এগিয়ে আসছে রামীন ভয়েই শেষ।সব ঠিক থাকবে তো?ওর আশফিনা ভালো থাকবে তো?শেষমেষ সময় চলে এলো।আশফিনা দুটো রাজপুত্র কে জন্ম দিয়েছে।রোয়েন দুজনকে চেইন আর টাকা দিয়েছে।ওদের নাম রাখা হয়েছে অনিক আর শ্রাবন।ছেলে দুটো একবারেই রামীনের মতো হয়েছে।খবরটা ফাহমিনের কাছে চলে গেলো।সেখান থেকে ফাহমিন বাবুদের প্রয়োজনীয় জিনিস পাঠিয়ে দিয়েছে।
পাঁচবছর পর
অনিক আর শ্রাবনের জন্মদিন। রোয়েন রুহী আর দ্রিধা রামীনের বাসায় চলে আসে।রুহীকে দেখে আনিলা দৌড়ে আসেন।তারপর ওকে সোফায় বসিয়ে বললেন,
”একদম হাঁটা চলা করবিনা।বসে থাক।”
”কি হয়েছে মা।এটা প্রথম বার নয়।”
”তো কি হয়েছে?সাবধান থাকতে হবে তোকে।”
”উফ মা।তুমি ও না।”
”হুম।জুস এনে দেই তোকে?”
”দাও।”
আনিলা চলে গেলো সেখান থেকে রুহী সোফায় আরাম করে বসলো।দুমাসের গর্ভবতী ও আবার ও মা হবে।তবে মনে কোন শান্তি নেই ওর।
সবাই একটা জিনিস খেয়াল করছে রোয়েন আর আগের মত নেই অনেক পাল্টে গেছে।সবার থেকে দূরে থাকে।তেমন কথাই বলে না কারোর সাথে।সেটা কি একবছর আগে রাভীন চৌধুরীর মৃত্যুর জন্য নাকি অন্য কোন কারন।দ্রিধা অন্য বাবুদের সাথে খেলছে।রুহী ও বেশ রাগ স্বামীর ওপর এমন করছে কেন সে?হুটহাট রেগে যায়।কথা বলতে চায়না।ঘরে আসে দেরি করে।
রুহী অনেক বার প্রশ্ন করতে গিয়ে ব্যার্থ হয়েছে আর পেয়েছে গালা গালি।প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে ও।এসবের মানে হয়নাকি?
দাওয়াত থেকে ঘরে ফিরে আসে ওরা।দ্রিধাকে এনেই ব্রাশ করিয়ে দিয়েছে রুহী।তারপর জোর পূর্বক ঘুম পাড়াতে নিয়ে আসে। দ্রিধা বলল,
”মা বাবা কি আমাদের ওপর রাগ?”
রুহীর চোখ ভরে আসে।ও বলল,
”কেন আম্মু?বাবা তোমাকে তো খুব ভালবাসে।”
”বাবা কেমন যেন হয়ে গেছে মা।”
”ওটা নিয়ে ভেবোনা।হয়ত কোন টেনশন আছে ওর।তুমি ঘুমাও মা।সকালে স্কুল আছে।”
”মা স্কুলে যেতে ভালো লাগেনা।”
”যেতে হবে আম্মু।ঘুমাও তুমি।”
”ওকে।”
রুহী মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে ওর কপালে চুমু খেয়ে রুমে চলে আসে।রোয়েন জানালার দিকে মুখ করে বসে আছে।রুহী খাটে এসে বসে একটু দূরত্ব রেখে বলল,
”তোমার কি হয়েছে?কেন এমন করতেছো?অন্য কাউকে মনে ধরেছে তোমার?”
রোয়েন রুহীর দিকে একবার তাকিয়ে আবার ও মুখ সরিয়ে নেয়।
রুহী অবাক।আজ ও যা বলেছে রোয়েন রেগে যাওয়ার কথা।কিন্তু রাগছেনা সে।কি হয়েছে লোকটার।
”মেয়েটা বলছে তুমি কি আমাদের ওপর কোন কারনে রাগ।ছাড়া পেতে চাচ্ছো আমাদের থেকে?”
এবার মুখ খুলে রোয়েন।দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বলল,
”এভাবে বলোনা।”
”তো কিভাবে বলবো?কেমন পাল্টে গেছো বুঝতে পারছো তুমি?কারোর সাথেই ভালো ব্যাবহার করছোনা।কেন এমন করছো?”
”রুহী কিছু বলতে পারবোনা আমি। কোন প্রশ্ন করোনা।”
”যদি কোন উত্তর না দাও তাহলে জেগে কাজ নেই আমার।”
শুয়ে পড়ে রুহী তবে ঘুম নেই চোখে। কিছুক্ষন পর অনুভব করলো পেটে অসংখ্য চুমু পড়ছে।রুহী বলল,
”কেন এমন করছো বলো তো?”
”মাফ করে দিও রুহী।শুধু আজকের রাতটা তেমাকে চাই।”
”শুধু আজকের রাত মানে?”
রোয়েন ওপরে উঠে এসে রুহীর ঠোঁটের ওপর আঙ্গুল রেখে বলল,
”প্রশ্ন করোনা।”
”বলো না।কি বলছিলে শুধু আজকের রাত।মানে কি এর?”
রোয়েন কোন জবাব দেয়নি।রুহীর অধরে গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিয়ে রুহীর শাড়ীটর আঁচল খুলে দেয়।ওর গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয় রোয়েন।রুহী অনূভব করছে ওর গলায় ফোঁটা ফোঁটা পানি পড়ছে।কিন্তু কি সেটা জানে না ও।জানতে ইচ্ছে হচ্ছেনা নাকি সময় টাই দিচ্ছে না জানতে।সকাল হয়ে আসে।রুহী রোয়েনের বুকে শুয়ে থাকে।সকাল আটটায় এলার্ম বেজে উঠে।শোয়া থেকে উঠে খেয়াল করলো লোকটা নেই পাশে।রুহী বাথরুমের দিকে তাকালো সেখানে ও নেই।নিচে গেলো ভেবে উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখলো রামীলা নাস্তা বানাচ্ছে।ঘরে লোকটা নেই ।রুহী অনেকটাই অবাক।কখনো না বলে ঘর থেকে যায়না সে।
চলবে