The Cobra King Mafia Boss- Season 4

The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 111

লোকটার নাম রাভীন রুশান চৌধুরী।তার কথা গুলো রোয়েনের মতো লাগছিলো রুহীর কাছে।এমনকও রোয়েনের প্রিয় খাবার গুলো ও তার বেশ পছন্দ।কথা গুলো ও রোয়েনের মত।খুব সুন্দর করে কথা বলছিলো সে।রুহীর ভালই লাগছিলো।দ্রিধাকে ও যেন খুব আপন করে ভাবতে শুরু করেছেন ওনি।বিপত্তি ঘটে তখনই যখন রোয়েন ঘরে ঢুকে। রোয়েনকে আসতে দেখে রুহী দৌড়ে এলো ওর কাছে।তারপর হাত ধরে রোয়েনের গালে চুমু খেয়ে বলল,
”একজন গেস্ট এসেছে।চলো দেখা করবে।”
”কাকে ঢুকিয়েছো ঘরে আবার?”
”শশ এভাবে বলছো কেন?একটুপরই বের হয়ে যাবেন ওনি। ”
”এত করে বলছো।তাহলে দেখা করি।”
”থ্যাংক ইউ।”
মিষ্টি হেসে রোয়েন কে লোকটার সামনে নিয়ে আসে।রোয়েন এখনো ঠিকমতো খেয়াল করেনি।রুহী রোয়েনকে ছেড়ে লোকটার সামনে গিয়ে বলল,
”আঙ্কেল আমার হাসবেন্ড এসেছে।”
”ওহ তাই।”
রাভীন লোকটা সামনে ফিরে দাঁড়ায়।রোয়েন কে দেখে কিছুক্ষনের জন্য মনে হলো ছোট বেলার রুশকে দেখছে।রুশ যখন দাঁড়িয়ে থাকতো তার সামনে।বাবা বলে ডাকতো তাকে।ওনি ও তো সন্তানকে বুকে টেনে আদর করতেন।রুশ যখন কেঁদে দৌড়ে ওনার কাছে আসতো।ছেলের চোখ মুছে দিতেন ওনি। এদিকে রুহী খেয়াল করলো রোয়েন প্রচন্ড রেগে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে।রাভীন কিছু বলতে যাবে তখনই রোয়েন দৌড়ে এসে লোকটার শার্টের কলার চেঁপে ধরলো।তারপর গলা ফাঁটিয়ে চিৎকার করে বলল,
”সাহস হলো কি করে আমার ঘরে পা রাখার?”
রুহী বুঝতে পারছেনা লোকটা কেন এমন করছে?তাপ আবার ঘরে আগত মেহমানের সাথে।রুহী দৌড়ে এসে রোয়েনকে সরাতে চেষ্টা করে।রোয়েন রুহীকে সরিয়ে চোখ রাঙ্গিয়ে ধমক দিয়ে বলল,
”রুমে যাও।”
”প্লিজ এমন করবেনা।কি হয়েছে বলো?”
”রোয়েনকে জিজ্ঞেস করে রুহী।লোকটা বলল,
”বাবা তুই।রুশ আমার রুশ।”
রোয়েন তখনই লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল,
”এই নাম বর্জন করেছি আপনাকে জানার পর।না আমি আপনার ছেলে না আপনি আমার বাবা।”
”এভাবে বলো না রুশ।আমাকে কথা বলতে দাও।সব জানো না তুমি।”
”একটা কথা ও শুনতে চাইনা।বেরিয়ে যান।আমার মাকে মেরে এখন আমার ঘরে এসেছেন আমাকে শেষ করতে।আমার পরিবার শেষ করতে। ”
”কি বলছো তুমি বাবা এসব?তোমার বাবা আমি।”
”বাবা নামের কলঙ্ক আপনি।নিজেকে বাবা বলবেননা।আর কখনো যেন আপনার এই মুখ না দেখি।কখনো সামনে আসবেননা আমার।আপনার জন্য আজ থেকে মরে গেছে এই রোয়েন।”
রাভীন আর কিছু বলতে পারেননা।ছেলের মুখে এত বড় কথা শোনার পর আর কিছু বলার মতো পাননি। বুক টা ছিড়ে যাচ্ছে।কখনো নিজের সন্তানের মৃত্যু দেখতে চাননা।উনত্রিশ বছর পর নিজের রুশ কে দেখছেন। ছেলের সংসার হয়েছে।লক্ষী বৌ আছে মেয়ে আছে।চারদিকে চোখ বুলিয়ে রোয়েনের গালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে যান চোখ মুছতে মুছতে।রোয়েন চোখ বড় করে দাঁড়িয়ে আছে।রুহী দেখতে পায় রোয়েনের বাবাকে কাঁদতে। কেন যেন ভীষন খারাপ লাগে রুহীর।রোয়েনের পাশে এসে দাঁড়িয়ে কাঁধ জড়িয়ে বলল,
”কেন এমন করলে?ওনার কথা কেন শুনলেনা?কান্না দেখলে না কেন ওনার?বাবা তোমার।জানি তোমার অনেক রাগ ওনার ওপর……”
রুহী কে পুরো কথা শেষ করতে দেয়না রোয়েন।ওর চুল চেঁপে ধরে একহাতে ভীষন শক্ত করে।তারপর চিৎকার করে বলতে শুরু করলো,
”তোমার সাহস কি করে হলো এই নরপশুকে ঘরে এনে তার সাফাই গাওয়ার?তাকে চিনো না তুমি।যা জানো না বুঝোনা কথা বলতে এসোনা।”
বলেই রুহীকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে বেরিয়ে যায় রোয়েন।রুহী মাথায় হাত দিয়ে পুরো দৃশ্যটাকে ভাবতে থাকে।রোয়েন কি করছিলো সব ভাবছে।চোখে পানিটা ও আসছেনা।কিছু সময়ের জন্য অনুভূতিহীন হয়ে রইলো।দ্রিধার কান্নায় হুঁশ হয় ওর।দৌড়ে রুমে এলো রুহী।বাবু কাঁদছে জোরে জোরে।রুহী মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলতে থাকে,
”কাঁদেনা।মা এসে গেছি।”
এদিকে আশফিনার মেডিসিন চলছে।ডাক্তাররা অপারেশের ডেট দিয়েছিলেন আরো আগে।কিন্তু আশফিনার শারীরিক কিছু দুর্বলতা থাকার দরুন ডেট পিছাতে হলো।মেডিসিন গুলো নিয়মিত নিচ্ছে আশফিনা।মেডিসিন গুলোর জন্যই মাঝে মাঝে মাথা ঘুরায় বমি পায়।ডাক্তার বলেছিলো এমন হবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।বাহির থেকে খাবার কিনে হোটেলে ফিরে রামীন। আশফিনা চুপচাপ ডাইনিং রুমের চেয়ারে বসে আছে।রামীন ডাইনিংরুমে এসে টেবিলের ওপর ঔষধ রেখে আশফিনার পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রেখে বলল,
”ঠিক আছো?”
”ভালো লাগছেনা।দূর্বল লাগছে অনেক।”
”ঔষধের কারনে এমনটা হচ্ছে।চিন্তা করোনা।তোমার প্রিয় খাবার এনেছি।”
”স্প্যাগেটি??”
রামীনের দিকে হেসে জিজ্ঞাস করলো আশফিনা।রামীন হেসে সায় দিলো।আশফিনা রামীনের হাতের ওপর হাত রেখে বলল,
”বসো প্লেট নিয়ে আসি।”
রামীন ওকে থামিয়ে বলল,
”তুমি বসো।নড়বেনা একদম।আমি এনে দিচ্ছি।”
”মাত্র ঘরে ফিরলে?”
”তাতে কি হয়েছে?বসো।আর একটু বের হবো আজ।”
”কই যাবে?”
”শপিং করবো।”
”ঠিক আছে।”
রামীন প্লেট আনতে চলে গেলো।ওরা আজ অনেকদিন যাবৎ লন্ডনে আছে। আশফিনার চিকিৎসা সম্পন্ন হলেই দেশে ফিরতে পারবে ওরা। দুটো প্লেট নিয়ে ফিরে আসে রামীন।তারপর দুজনের জন্য স্প্যাগেটি বেড়ে নেয়। খেতে শুরু করে ওরা।সামনের সপ্তাহের শেষের দিকে অপারেশনের তারিখ হতে পারে।তবে সেটা আশফিনার শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে।একটা গাড়ি এসে থামে সামায়রার সামনে।হাসি ফুঁটে উঠে সামায়রার মুখে।গাড়ির দরজা খুলে দেয় ফাহমিন।তারপর মাথা বের করে বলল,
”ভিতরে এসো।”
সামায়রা চুপচাপ গাড়িতে ঢুকে বসলো।আজ লোকটার গেট আপ ভিন্ন।সবসময় লাইট কালার শার্ট আর সাদা এ্যাপ্রোন পরে আসে।কিন্তু আজ রেড কালার শার্ট আর কালো ডেনিম প্যান্ট পরে আছে।লাল রংটা খুব সুন্দর লাগছে ওনাকে।একদম ফুঁটে উঠেছে ওনার ওপর।সামায়রাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফাহমিন বলল,
”এভাবে দেখোনা প্রেমে পড়ে যাবে।”
ফাহমিনের কথায় লজ্জায় পড়ে যায় সামায়রা।কি বলল লোকটা?প্রেমে পড়ে যাবে মানে কি?লোকটাকে ভালো লাগে ওর ভীষন ভালো লাগে তাই বলে প্রেম?কখনো তো ভাবাই হয়নি এমন কিছু।সামায়রা কে চিন্তায় পড়ে যেতে দেখে ফাহমিন হেসে উঠলো শরীর কাঁপিয়ে।তারপর কোনমতে নিজেকে সামলে বলল,
”চিন্তায় পড়ে গেলে?ফাজলামো করছিলাম।”
ফাহমিনের কথায় লজ্জা পড়ে যায় সামায়রা আবার ও।ও বলল,
”না চিন্তায় পড়ে যাইনি।আমি ঠিক আছি।”
”সেটাই ভালো।তা মিমিরা কেমন আছে?”
”ভালো আছে ওরা।জানেন মিমি আবার ও মা হবে।”
”ওহ।কংগ্রাচুলেশনস। ভালো লাগলো শুনে।”
”নাম রেডি করে ফেলেছি আমি”
”নাম ও ঠিক করেছো?তা বলেই ফেলো কি নাম ঠিক করেছো?”
”পিকি আর পিপিং।সুন্দর না?”
”হুম সুন্দর।”
হাসি সামলে নেয় ফাহমিন।আজ দুজনে গাড়ি দিয়ে ঘুরবে ঢাকা শহর।
সামায়রাকে অবাক করে দিয়ে ফাহমিন গলা ছেড়ে গান গাইতে শুরু করে,
Jeene laga hoon, pehle se zyada
Pehle se zyada, tumpe marne laga hoon
Main mera dil aur tum ho yahaan
Phir kyun ho palkein jhukaye wahaan
Tum sa haseen pehle dekha nahin
Tum is.sey pehle thhe jaane kahaan
Jeene laga hoon pehle se zyada
Pehle se zyada tumpe marne laga…
hmmmmm… ho.
Rehte ho aake jo tum paas mere
Tham jaaye pal yeh wahin
Bas main yeh sochun…
সামায়রা অবাক।লোকটা ভীষন ভালো গায়।কিন্তু হঠাৎ এমন গান?ভাবে সামায়রা।গানটা কি ওকে ডেডিকেট করে গাওয়া?নাহ এমন কেন হবে?কখনোই না।
সেদিন সারাটা সময় রুহী অপেক্ষা করে রোয়েনের। দ্রিধা ও ভীষন কাঁদছে।খেতে ও চাচ্ছিলোনা।কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে গেছে ওর।এমনিতেই লোকটা ঘরে ফিরছেনা তারওপর মেয়েটা কাঁদছে।পাগল হবার উপক্রম রুহীর। না পারতেই চড় বসিয়ে দিলো দ্রিধার নরম তুলতুলে গালে
আর বলতে লাগলো,
”সমস্যা কি তোদের?মেরে ফেলবি আমাকে?কি পেয়েছিস তোরা?”
এবার থেমে গেলে দ্রিধা।রামীলা কোথা থেকে যেন ছুটে এলো দৌড়ে।তারপর বলতে লাগলো,
”এডি কি করলেন আফু?মাইয়াডারে মারলেন?”
”তুই যা এখান থেকে।গিয়ে খেয়ে নে।”
”ছুডো মানুষ।কেমনে মারলেন?হাত কাঁফে নাই আমনের?”
”বের হবি তুই? যা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।”
চিৎকার করে উঠে রুহী।রামীলা চুপচাপ চলে যায়।রুহীর বুক ফেঁটে যাচ্ছে।কি করে মারলো ছোট্ট মেয়েটাকে?কি দোষ ওর?মেয়েকে বুকে নিয়ে কাঁদতে শুরু করে রুহী।কেঁদে কেঁদে বলতে থাকলো,
”মাকে মাফ করে দাও মামনি?আর কখনো এমন টা হবেনা।মা আর কখনো মারবোনা তোমাকে।মাফ করে দাও সোনা।”
শেষমেষ মেয়েকে খাইয়ে দুপায়ের ওপর শুইয়ে হালকা দুলিয়ে ঘুম পাড়াতে থাকে রুহী।কখন যে ওর চোখ লেগে আসে বুঝতে পারেনি।রাত বারোটায় ঘরে ফিরে রোয়েন।রুমে এসে দেখলো রুহী ঘুমাচ্ছে।বাবু রুহীর পায়ের ওপর রাখা বালিশে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।রোয়েন হাত মুখ ধুয়ে এসে খাটে বসে মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে ঠিক মতো শুইয়ে দিয়ে রুহীর পাশে বসে।রুহীর চুলে হাত রাখতেই মনে পড়ে কিভাবে চুল টেনে ধরেছিলো।তখন এতো টাই রেগে গিয়েছিলো বুঝতে পারেনি কি করছিলো ও।রুহীর কপালে গালে চুমু দিয়ে ওকে ঠিকমতো শুইয়ে আলো নিভিয়ে দেয় রোয়েন।তারপর শুয়ে বুকে টেনে নেয় রুহীকে।বিরবির করো বলতে থাকলো,
”মাফ করো মায়াবতী।আমার এমন আচরন একদমই ঠিক হয়নি।তবে ওনাকে চিনো না তুমি।না জেনে বিশ্বাস করে ফেলেছিলে।সে ভালো না।আমাকে শেষ করে দিতেই ফিরে এসেছে সে।তোমাকে বুঝতে হবে রুহী।সে আমাদের জন্য নিরাপদ না।তার থেকে দূরে থাকাটাই ভালো আমাদের জন্য।
চলবে