The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 110
খাটের ওপর বসে তীক্ষ্ম নজর ছুড়ে দিয়েছে রোযেনের দিকে।পাশে দ্রিধা শুয়ে হাত পা নেড়ে খেলছে।ত্রিশমিনিট যাবৎ দুজনে এভাবে আছে।রুহী অনেক বার জানতে চেয়েছিলো কি হয়েছে?একটা বার ও কিছু বলেনি রোয়েন।এতক্ষন চুপ থাকলেও এখন আর চুপ থাকতে পারেনি ও। উঠে রোয়েনের শার্ট চেঁপে ধরে জিজ্ঞেস করলো,
”কি হলো সেই কখন থেকে চুপ করে আছো?এভাবে নিয়ে এলে কেন?কি হয়েছে বলছো ও না। কেন এমন করো বলো তো?”
রোয়েনের শার্ট ছেড়ে সরে এলো রুহী। ওকে থামিয়ে দিলো রেয়েনের বলা একটি কথা।ও শিউরে উঠতে থাকলো যখন রোয়েন বলল,
”সেখানে কেউ ছিলো।যার সামনা সামনি কখনো
আসতে চাইনা।তার চেহারা ও দেখতে চাইনা। আমার পুরো শরীর জ্বলে তাকে দেখলে।”
রুহীর দুকাঁধ দুহাতে চেঁপে ধরে রোয়েন তারপর বলতে থাকে,
”আমার মাথা ঠিক থাকেনা রুহী। তাকে সামনে দেখলে কখনো নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনা।সে আমার জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে আমার ছোট বেলা কেড়ে নিয়েছে।আমার ওপর থেকে মায়ের ছায়া কেড়ে নিয়েছে।”
রুহীর চোখ জোড়া ভিজে এসেছে।কাঁপন ধরা কন্ঠে বলল,
”তোমার বাবা?”
রোয়েন রুহীকে বুকে টেনে নেয়।তারপর ওর মাথায় চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
”বাবা বলো না তাকে। বাবা হবার যোগ্যতা রাখেনি সে।আমার পৃথিবী বলতে শুধু তুমি আর আমাদের মেয়ে দ্রিধা আর আমার মা।”
রুহী আর কিছু বলতে পারেনা।এদিকে ফাহমিন প্রত্যেক রাতেই সামায়রা কে ভিডিও কল দিয়ে ওর হ্যামস্টারদের দেখে।অবশ্য ভিডিও কল গুলো শুধু সামায়রা কে দেখার জন্য।হ্যামস্টার গুলো বাহানা।সামায়রা ও খুশি ফাহমিনের ওপর।কারন ফাহমিন মিমি আর বাকি দের খুব পছন্দ করে।এদিকে আরমান হামিদ শুক্রবারের দিনটিকে ঠিক করলো দাওয়াতের জন্য।রোয়েন সহ বাকি সবাইকে দাওয়াত দিলো রোয়েনের বন্ধুরা ও আমন্ত্রিত।দুপুরের দাওয়াত। তাই বের হতে হবে সবাইকে।
রোয়েন বাবুকে নিয়ে আছে। রুহী নাস্তা ছেঁকে রুমে আসে। তারপর রোয়েনের সামনে বসে পড়ে।রোয়েন মেয়ের সাথে দুষ্টুমি করছে।রুহীর ভীষন ভালো লাগে বাবা মেয়ের দুষ্টুমি দেখতে।রুহী হেসে দেয় আনমনে।রোয়েন রুহীকে দেখে মেয়েকে বুকে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
”কি হলো?”
”না কিছুনা।বন্ধ করলে কেন?আমার ভালো লাগছিল।”
”বেশি হাসালে প্রবলেম হবে ওর।তুমি কিছু বলতে চাচ্ছিলে?”
”নাস্তা রেডি। আসো খেয়ে নিই।”
”হুম।দ্রিধার খিদে পেয়েছে।ওকে নাহলে খাইয়ে দাও।”
”আচ্ছা তুমি নিচে যাও।আমি আসছি খাইয়ে।”
রোয়োন উঠে দরজার কাছে গিয়ে বলল,
”ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিও।তোমার সাথে বিশেষ কাজ সম্পাদন করতে চাই।ও কান্না করুক সে মুহূর্তে আমি চাইনা।”
রুহী প্রথমত না বুঝলে ও পরে ঠিকই বুঝে বলল,
”অসভ্যতা করবে জানি। আমি ও দেখবো কি করে করো।”
মিনমিন স্বরে বলল রুহী। বাবুকে খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে নিচে চলে আসে রুহী।খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে রোয়েন। ওর পাশে এসে বসলো রুহী।তারপর বলল,
”খাওনি কেন এখনো?”
”একসাথে খাবো তাই।”
রুহী হেসে দুজনের প্লেটে রুটি নেয়। খাবার শেষে রোয়েন রুহীকে কোলে তুলে আরেকটি রুমে আসে।তারপর রুহীকে নামিয়ে দিতেই রুহী সরে আসে একটু দূরে।রুহীর হাত টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে।রুহীর দিকে মুখ আনতেই ও বলল,
”দ্রিধা রুমে একা। ”
”তোমার কি মনে হচ্ছে ওকে একা রুমে দিয়ে তোমার সাথে প্রেম করতে এসেছি।”
রুহীর ওষ্ঠে আলতো করে ওষ্ঠ ছুইয়ে দিতেই রুহী সুধালো,
”মানে?”
রোয়েন একটু বিরক্ত হয়ে রুহীকে ভালমতো জড়িয়ে নিয়ে বলল,
”রামীলা কে ওর পাশে থাকতে বলে এসেছি।এরপর আর কিছু বলার দরকার মনে করছিনা।”
রুহীর গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয় রোয়েন।রুহী আর কিছু বলতে পারেনা।নিশ্বাস ভারি হয়ে আসছে দুজনের।আবার ও একে অপরের নেশায় জড়িয়ে পড়ছে।আবার ও দুটি আত্মা পবিত্র মিলনে বেঁধে যাচ্ছে। ভালবাসা গুলো আবার ও নতুন প্রান ফিরে পাচ্ছে।দুপুরে গোসল সেড়ে রেডি হয়ে নেয় রুহী।দ্রিধা কে নরম একটি ফ্রক পরিয়ে রেডি করায়।রোয়েন মসজিদে গেছে নামাজ পড়তে।কিছুক্ষনের মাঝেই ফিরে আসবে।রুহী গাঢ় নীল রং এর শাড়ী পরেছে সাথে মানিয়ে নেয়া নীল পাথরের গয়না আর মোহনীয় সাজ।মেয়ের জামাটি ও নীল বর্নের।রামীলা ও যাবে ওদের সাথে।ও রেডি হয়ে নেয়।একটা পঞ্চাশে ফিরে আসো রোয়েন।রুমে ঢুকেই থমকে গেলো।রুহীর দিকে তাকিয়ে খাটে শুয়ে থাকা দ্রিধার দিকে তাকায়।কি অপরুপ লাগছে দুজনকে। রুহীকে সবসময়ই সুন্দর লাগে রোয়েনের চোখে।রুহীর কাছে এসে দাঁড়িয়ে ওর কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে সরে আসে রোয়েন।তারপর কপালের সাথে কপাল লাগিয়ে বলল,
”অপরুপা লাগছে তোমাকে।”
”থ্যাংক ইউ। যাও রেডি হয়ে নাও তুমি।”
”হুম।”
মেয়ের পাশে বসে মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে অনেক গুলো চুমু খেয়ে বলল,
”আমার আম্মুটাকে তো কতো কিউট লাগছে।আম্মুটা কই যাবে আজকে?”
রুহী তাড়া দিয়ে বলল,
”দেরি হচ্ছে যাও রেডি হও।”
”আচ্ছা।”
রোয়েন কালো একটি পাঞ্জাবী পরে নেয়।যেহেতু শুক্রবার তাই পাঞ্জাবী পরা।”
চারজনে বেরিয়ে আসে।দ্রিধাকে বেবি কারে শুইয়ে দিয়েছে।রোয়েন গাড়ি ঠেলে বেরিয়ে আসে রামীলা আর রুহীকে নিয়ে।রামীলা প্যাসেঞ্জার সিটে বাবুকে নিয়ে আর রুহী রোয়েনের পাশে ড্রাইভিংসিটে।
এদিকে নীরা হামিদ আর কাজের লোকেরা মিলে রান্না বান্না শেষ করেছে।সামায়রা ও কিছু ডেজার্ট আইটেম বানালো বিশেষ করে ফাহমিনের জন্য।কাল রাতে লোকটার সাথে কথা হয়েছিলো ওর। লোকটার কথা বার্তা ওকে কাছে টানে তার।সামায়রা নিজেকে আটকাতে পারেনা কোন মতে।লোকটার সাথে কথা বলতে তার পাশে থাকতে খুব ভালো লাগে ওর অজানা কোন এক কারনে।
সামায়রা গোসল সেড়ে নেয় কাজ সেড়ে।গেস্টরা আসতে শুরু করেছে।রুহীরা আগে এলো।
সামায়রা দ্রিধা কে পেয়ে খুব খুশি।কোলে নিয়ে ভীষন আদর করতে শুরু করে।রুহী মাীর সাথে গল্প করছে।আরমান হামিদ বাহিরে গেছে।চলে আসবেন কিছু সময়ের মাঝেই।আনিলা রেজোয়ান আর বাকি সবাই চলে এলো।বাড়িটি লোকজনে পরিপূর্ন।দ্রিধা ভয় পেয়ে কেঁদে উঠছে বারবার।বাচ্চাটা এর আগে এতো মানুষ দেখেনি আর সবার কথা বার্তা খুব ভয় পাইয়ে দিচ্ছিলো ওকে।রুহী মেয়েকে নিয়ে আলাদা রুমে আসে।ওকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে দরজা আটকে বেরিয়ে আসে।এরই মাঝে রোয়েনের বন্ধুরাও এসে পড়েছে।ফাহমিন ও ছিলো সবার মাঝে।সামায়রার সাথে চোখাচোখি হতেই দুজনের মুখে হাসি ফুঁটে উঠে।সবাই গল্প করছে।হাসাহাসির শব্দ ও শোনা যাচ্ছে।দুপুরের খাবার শেষে মিষ্টান্নের ব্যাবস্থা করা হলো।খাওয়ার আইটেম দেখে ফাহমিন অবাক।হঠাৎ নীরা হামিদ বললেন,
”কাস্টার্ড, ক্ষীর,আর গরুর কোরমা কিন্তু সামায়রা করেছে।”
নীরা হামিদের কথায় সামায়রার দিকে তাকায় ফাহমিন।কারন এগুলো ওর খুব প্রিয়। সামায়রা মিষ্টি হেসে সরে যায়।আরমান হামিদ বুঝতে পারেন তাই ওনি রোযেনের সাথে কথা বলার জন্য উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
”রোয়েন আমার সাথে একটু এসো।”
”জি আঙ্কেল।”
রোয়েন আরমান হামিদের সাথে আলাদা কক্ষে এলো।আরমান হামিদ ওকে বসতে দেন।নিজেও বসে পড়েন রোয়েনের পাশে।
ওনি জিজ্ঞেস করলেন,
”নতুন বাবা হবার অনুভূতি কেমন?”
”মুখে বলে বোঝাতে পারবোনা।এ এক অসাধারন অনুভূতি।”
”হুম। তোমাদের সময় কেমন যাচ্ছে।রাত বিরাতে উঠে বাবু কাঁদে না?”
”কাঁদে।আপনি ডেকেছিলেন?কারন জানতে পারি?”
”আসলে রোয়েন অনেকদিন যাবৎ খেয়াল করছি সামায়রা তোমার বন্ধু ফাহমিনের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক তৈরি করেছে।একটু আগে দেখলে প্রিয় খাবার ও রান্না করলো ফাহমিনের। ফাহমিন কেমন বন্ধু তোমার?”
”আঙ্কেল এই ব্যাপারটা জানতাম।চেয়েছিলাম আপনাকে জানাতে
আজ যখন জানলেন আমার বলতে সমস্যা নেই। ফাহমিন সামায়রাকে ভালবাসে।সামায়রা ও হয়ত স্বাচ্ছন্দ বোধ করে ফাহমিনের সাথে দেখেছি আমি।আর আপনি জানেন অস্ট্রিয়ায় আমার জন্ম। বাংলাদেশে আসার পর ও আমার আরেক বেস্ট ফ্রেন্ড।খুব ভালো ও।পরিবারের একটা মাত্র ছেলে কোন বদ অভ্যাস নেই।ওর বড় বোন ও ডাক্তার।রুহীর ডেলিভারি ওরাই করিয়েছিলো।আমার মনে হয় ফাহমিন সামায়রার জন্য পার্ফেক্ট।সেটা হয়ত আপনি সামায়রাকে দেখে বুঝতে পেরেছেন।এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই।”
কথা গুলো বলে চলে আসে রোয়েন।এদিকে রোয়োনকে দেখে রুহী ওর কাছে দৌড়ে এলো।জানতে চাইলো আরমান হামিদ কি বলেছেন।রুহীকে নিয়ে দ্রিধার রুমে আসে ওরা।তারপর রোয়েন বলল,
”সামায়রা আর ফাহমিনকে ওনি হয়ত অবজার্ভ করেছিলো তাই সেটা জিজ্ঞেস করলো।”
”তুমি কি বললে?”
”বললাম ফাহমিন সামায়রার জন্য পার্ফেক্ট আমার মতে।সামায়রাকে খুব বুঝতে পারে ও।সামায়রা ও খুশি থাকবে ফাহমিনের সাথে।”
”আমার ও তাই মনে হয়।”
রুহীর কথায় রোয়েন ওর দিকে তাকিয়ে একটু হাসে।সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে আসে ওরা।বাবুর সাথে অনেকটা সময় পর্যন্ত খেলে দশটার মধ্যে ওকে খাইয়ে ঘুম পাড়ায় রুহী।তারপর দুজনে দুকাপ কফি নিয়ে বারান্দায় এসে বসে।দুষ্টু মিষ্টি আর কিছু সাংসারিক কথা দিয়ে কফির পর্ব শেষ করে ওরা।রুহীকে নিয়ে রুমে এসে আবার ভালবেসে কাছে টেনে নেয় রোয়েন।রুহীর মাতাল করা ঘ্রানে আবার মিশে যেতে থাকে ও।কয়েকটা দিন পেরিয়ে যায়।এরই মাঝে দ্রিধার ভীষন সর্দি লাগলো।বাচ্চাটা নিশ্বাস নিতে পারছেনা।রোয়েনের কাজের চাপ খুব বেশি ছিলো তাই রুহী নিজেই হাসপাতালে চলে আসে মেয়েকে নিয়ে।বাবুকে ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ কিনতে আসার সময়ে ঐ লোকটির সাথে আবার দেখা হয় রুহীর।যার সাথে পিংক সিটিতে দেখা হয়ে ছিলো।রুহী কে দেখে একটু হাসলো সে।রুহী জিজ্ঞেস করলো,
”ভালো আছেন?”
”হ্যা তুমি?”
”জি ভালো।আঙ্কেল যাকে খুঁজছিলেন পেয়েছেন?”
”না পাইনি।তাই তো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি।”
”ওহ।সে কি হয় আপনার?”
”আমার ছেলে।”
”ওহ।”
লোকটি বলল,
”তোমার মেয়ে?”
”জি। রুজাইনা চৌধুরী দ্রিধা।”
”খুব সুন্দর নাম।খুব ইউনিক।”
”হ্যা ওর আব্বু রেখেছে।”
”ওহ আই সি।”
রুহী বুঝতে পারলো লোকটি তেমন কথা বলেননা।একটু গম্ভীর স্বভাবের।লোকটি যখন ওর পিছে দাঁড়িয়েছিলো মনে হচ্ছিলো রোয়েন এসেছে।লোকটিকে সাইড থেকে একদম রোয়েনের মতোই লাগে।তাকে অবশ্য বেশ ক্লান্ত ও লাগছে।রুহীর মায়া লাগলো।ও বলল,
”আমার বাসা এখানেই।আপনি এসে রেস্ট নিন।”
”না মা কি বলছো এসব?”
”আঙ্কেল এভাবে খুঁজে পাবেননা।বরং অসুস্থ হয়ে যাবেন।আর আমি তো বলছিনা এসে থাকেন।কিছুক্ষন গল্প করবো আপনার সাথে চলুন।”
”তোমার হাজবেন্ড রাগ করবে না তো?”
”ও ভীষন ভাল মনের মানুষ।কিছুই মনে করবেনা।চলুন। ”
”আচ্ছা চলো তাইলে।”
চলবে