The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 105
অন্তিম মুহূর্ত যেন চলেই এলো।দুষ্টুটা আজকাল একটু বেশি খেলাধুলা করছে।ও কি বুঝতে পারেনা মায়ের কষ্ট হয়?যখন তখন কষেও লাথি মেরে দেয়।সে সময়টায় ব্যাথা পেলেও সেটা সামায়িক।কিন্তু মনের প্রশান্তিটাই যে অনেক বড়।এটা ভেবে মন ভাল হয়ে যায় বাচ্চাটা ভেতরে ভাল আছে খুশি আছে, মাকে খুব ভালবাসে।মা ও তোকে খুব ভালবাসি বাচ্চাটা। তোর আসার অপেক্ষায় দিন গুনছি।নয়মাস যে হয়েই গেলো আর হয়ত একমাস কিংবা আরো অল্প কিছুদিনের মাঝেই তুই আমার কোলে চলে আসবি।তোর বাবা ও খুব ভালবাসে তোকে।কতোটা খেয়াল রাখছে জানিস?তুই এভাবে তোর প্রিয় মানুষের খেয়াল রাখবি তো?পেটে হাত বুলাতে থাকে রুহী।অনেকটাই বড় হয়ে গেছে।আজকাল খুব কষ্ট হয়ে যায় হাঁটতে।কোমড় পিঠ ধরে যায়।লোকটা কতোদিক সামলাবে?ঘরেই তো থাকে বেশির ভাগ সময়।কাজে ও যেতে হয়।সে যতোটা সময় ঘরে থাকে ওকে ধরে এ রুম থেকে ওরুম কিংবা ওয়াশরুমে নিয়ে যায়।রাতে ওর কোমড় চেঁপে আবার পা ম্যাসাজ করে দেয়।রুহীর খুব খারাপ লাগে নিজের কাছে।নিজের বর ওর পা চাঁপছে কিন্তু সে তো কথাই শুনেনা জোর করে পা চেঁপে দেয়। এমন জীবনসঙ্গী পাওয়াটাও বড় সৌভাগ্যের।চোখজোড়া জ্বলজ্বল করে উঠে।ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুঁটে উঠে।
সেজন্য তার মানুষটাকে এতোটা ভালবাসে।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই রামীলা পাশে এসে দাঁড়ায়।তারপর মাথায় হাত রেখে অবাক হয়ে বলল,
”আফু এতক্ষন খাড়ায় রইছেন কিল্লাই?”
”সমস্যা হচ্ছে না তো।”
”ভাইয়ে কইছে না বেশিক্ষন না খাড়াইতো।”
”এতো ভাই ভাই করিস কেন বদ কোথাকার?বসতেছি আমি।”
”মাগো মা এতো ডরান কিল্লাই?ব্যাডা তো আফনেরই।হেরে আঙ্গুলের ডগায় রাখতো হারেননা?”
”বাজে বকিস না তো।যা এখান থেকে।”
”আফু খাইবেননি কিছু?”
”নাহ খিদা নাই।”
”দুফুরের ফর কিছুই তো খান নাই।ভাইয়ে জিগাইলে কি কমু?”
”তোর কিছু বলতে হবেনা আমিই বলবো।”
”আফনের কথা না মাইনা আমারে আয়া জিগায়।তহন আমি কি কমু?”
”দুধ খেয়েছে বলিস।”
”কি মিথ্যুক।আমি ফারতামনা কইতে।আফনারে আইন্না দেই আফনে খান।”
রুহী আর না করলোনা।কারন রোয়েন যদি জানতে পারে ও এখন ও কিছু খায়নি তাহলে সারা বাড়ি মাথায় তুলবে।তাই রুহী রামীলা কে বলল,
”দুটো বিস্কুট ও দিস।”
”সুরুজ কোন দিক দিয়া উঠছে আফু?”
”মানে?”
”আফনেরে জোর কইরা খাওয়াইতাছি দুধ আর আফনে বিস্কুট চাইতাছেন।ভালোই তো।”
”বেশি কথা বলিস।”
”আইচ্ছা আর কমুনা।অহন কন কোনডা আনুম?”
”তোর ভাই আনছিলো গতমাসে নীল প্যাকেট?”
”ওরিও নি?”
”হুম যাহ নিয়ে আয়।”
”আইচ্ছা অহনই আনতাছি।”
রামীলা দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।এদিকে রোয়েন সব গুছিয়ে বের হতে নিবে তখন আনিলা ওর সামনে এসে দাঁড়ায়।রোয়েন একটু হেসে বলল,
”জি মা বলুন।”
”স্যার রুহীর এখন অনেক কষ্ট হচ্ছে তাইনা?আপনি কতোটা সময় ওর খেয়াল রাখবেন?”
”চলছে।আমি করছি তো।”
”ভাবছিলাম আমি গিয়ে থাকি কয়েকদিন।আপনি অফিসে থাকলে আমি ওর খেয়াল রাখবো।”
”জি অবশ্যই আসেন।আর আমার বাসায় তো কখনো থাকেননা এই সুযোগে থাকলেন।রুহীর ও তো ডেলিভারির সময় কাছে এসে গেছে।”
”আচ্ছা আজ রেজোয়ানের সাথে কথা বলে নি কাল সকালেই হয়ত চলে আসবো।আর সকালে না হলে ও বিকেলে আসবো।”
”আচ্ছা।তাহলে আপনার ছুটি আজ থেকে।আপনার পরিবর্তে আমি সোনিয়াকে রাখছি টেম্পোরারিলি।”
”আচ্ছা স্যার।তাহলে আপনি বাসায় যান।”
”হুম।”
রোয়েন হাতে ফোনটা নিয়ে বেরিয়ে এলো।কয়েকদিন যাবৎ রামীনকে ও তেমন দেখা যায়না।রুহীকে নিয়ে কয়েকমাস এতোটাই ব্যাস্ত হয়ে পড়েছিলো যে রামীনের খবর নিতে পারেনি।
কথা গুলো ভেবে রামীন কে কল দিয়ে গাড়িতে ঢুকে বসে রোয়েন।দুবার রিং হওয়ার পর রামীন কল রিসিভ করে।রোয়েন ধমকে বলল,
”বেঁচে আছিস?”
”না থাকার মতো।তোর কি খবর?রুহী কেমন আছে?”
”সব ভালো আছে।তোর কি হলো?”
”কাল অফিসে এসে বলবো দোস্ত। শুধু দোয়া করিস আমাদের জন্য।”
”ইজ এভ্রিথিং ফাইন?”
”এখন ও পর্যন্ত জানিনা।”
”কালই বলিস নাহলে।”
”ওকে রাখছি দোস্ত।”
”শিওর।”
রোয়েন ফোন রেখে একটু চিন্তায় পড়ে যায়।আটাশ বছরের বন্ধুত্বে রামীনকে কখনোই এমন দেখেনি।কি হলো ওর?কথা গুলো ভাবার মাঝেই ঘরে পৌছে গেলো রোয়েন।এদিকে নীরা হামিদ আর আরমান হামিদ অনেকটাই অবাক আবার খুশি ও কারন মেয়েটা যেন বড় হয়ে গেলো কয়েক মাসে।বাচ্চামো করেনা বলতে গেলেই চলে।এইতো আরমান হামিদ সেদিন যখন মেয়েকে কাছে ডেকে বলছিলেন,
”সামু ভাবছি কাল তোকে একটা টেডি বিয়ার কিনে দেবো।তোর না অনেক পছন্দ?”
”বাবা টেডিবিয়ার লাগবেনা।পারলে একটা এলার্ম ঘড়ি নিয়ে এসো।ছুটিতে উঠতে দেরি হয়।মা সব কাজ করে।”
”তুমি কেন করবে আম্মু।বুয়া আছে তো?”
”বুয়ার কাজ বুয়া করবে।আমার কাজ আমি করবো।”
”হঠাৎ তোর কাজ করতে হচ্ছে কেন?”
”বাবা আমি মাকে হেল্প করবো নয়তো কে করবে বলো।”
”হুম তাও ঠিক।আচ্ছা কাল তোর জন্য একটা এলার্ম ক্লক আরেকটা সারপ্রাইজ গিফট নিয়ে আসবো।”
আরমান হামিদ খেয়াল করেন আগে সারপ্রাইজের কথা বললে খুশিতে লাফাতো মেয়েটা আর এখন হালকা হেসে জিজ্ঞেস করলো,
”বাবা চা দিবো”
”ঠিক আছে।চা খাই এক কাপ।”
সামায়রা বেরিয়ে গেলো বাবার সামনে থেকে।পরদিন ফাহমিন দেখা করতে বলেছে ওকে।লোকটাকে ছয়মাস যাবৎ দেখছে ও।ওর প্রতি তার ব্যাবহারের কোন পরিবর্তন নেই।খুব সুন্দর করে কথা বলে।কখনো রেগে যায়না।ওকে বুঝতে চেষ্টা করে।ওর নিজের ও ভালো লাগে লোকটার সময় কাঁটাতে।বড় অাপন মনে হয় তাকে।সেটার কারন বরাবরই অজানা সামায়রার কাছে।
বাবার চা দিয়ে পড়ায় মন দিলো সামায়রা।এদিকে ঘরে ঢুকে রামীলার কাছে রুহীর পুরোদিনের খাবারের খবর নিয়ে রুমে আসলো রোয়েন।রুহী রোয়েনকে দেখে উঠে এসে ওর গালে চকলেট মাখানো ঠোঁট লাগিয়ে চুমু খেলো।রোয়েন রুহীর ঠোঁটের ওপর থেকে চকলেট আঙ্গুলে লাগিয়ে সেটা মুখে পুরে বলল,
”ঘরে আসতেই চকলেটি কিস।সেটা ঠোঁটে হলে জমতো।”
”এহ শখ কতো।যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।তোমার খাবার গরম করে রেখেছি।”
”ওকে।তুমি বসো।অস্থির হতে হবেনা।আমি ফ্রেশ হয়ে নিচ্ছি।”
”খাবার রুমে পাঠাতে বলি?”
”কি দরকার রুহী?”
”আমার সামনে খাবে।”
”নিচে গিয়ে খেতে কতো সময় লাগবে বলো?এখানে আনিও না।”
”আচ্ছা। ”
ফ্রেশ হয়ে নিচ থেকে খেয়ে উপরে আসে রোয়েন।রুহী পেটে হাত বোলাচ্ছে শুয়ে। রোয়েন এসে পেটের ওপর হাত রেখে অনূভব করতে থাকে বাবুর পদচারনা।এতোটা মধুর কি করে হয়? জানেনা কেউই।রোয়েন রুহীর পেটে অনেক গুলো চুমু খেয়ে বলল,
”জলদি চলে আয় বাবা।তোর মাকে অনেকদিন মন ভরে আদর দেইনা।”
”ছি কি বলছো ওর সামনে?কি ভাববে ও?বাবার মুখে কোন কথা আটকায়না।”
”কখনো বলিনি এর আগে কিন্তু আজকাল খুব করে চাই তোমাকে।”
”আমি ও খুব চাই। ওকে আসতে দাও তারপর…….”
লজ্জায় দুহাতে মুখ ঢেকে নিলো রুহী।রোয়েন দুষ্টু হেসে মুখ বাড়িয়ে দুহাতের পিঠে চুমু খেলো।
এদিকে পাশে শুয়ে থাকা আশফিনার দিকে তাকায় রামীন।ওর শরীরটা কেঁপে কেঁপে উঠছে।বুঝতে দেরি হয়না মেয়েটা কাঁদছে।রামীন হাত বাড়িয়ে আশফিনার মাথাা হাত বুলিয়ে বলল,
”কাল হাসপাতালে যাবো।প্লিজ কেঁদোনা।”
অবশ্য এর চেয়ে বেশি কিছু বলার মতো পায়নি রামীন।ওরা এতোটা মাস বাবুর জন্য চেষ্টা করেও ব্যার্থ।ওপরওয়ালা কি ওদের কান্না দেখছেনা?খালি হাতে ফিরবে ওরা?দুজনেই তো রোজ রাখছিলো তাহাজ্জুদ ও পড়েছে সব নামাজের সাথে।তাহলে কেন কিছু হচ্ছেনা?পরদিন দুজনে হাসপাতালে চলে এলো।ডাক্তার আশফিনা আর রামীন দুজনকেই টেস্ট করাতে বলল।দুজনে বেরিয়ে পড়লো টেস্ট করাতে। সেটার রিপোর্ট হাসপাতালে আনার পর ডাক্তার যা বলল তা শোনার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলোনা।ডাক্তার জিজ্ঞেস করেই বসলো,
”মিসেস আশফিনা আপনার ইউটরাসতো খুব আঘাতপ্রাপ্ত। কখনো ইন্টার্নাল ব্লিডিং হয়েছিলো?”
”কিন্তু কেন কি হয়েছে?”
”হয়েছে অনেক কিছুই।আপনারা গত চারমাস যাবৎ ট্রাই করেছেন রাইট?”
”জি।”
”রিপোর্ট তো ভালো না।আপনি কখনো কনসিভ করতে পারবেননা।”
আশফিনা যেন জমে গেলো।চোখে ভারি হয়ে উঠলো অশ্রুতে।রামীন বলল,
”কোন উপায় নেই।”
”আমার কাছে এখন নেই।আপনারা বাহিরে যেতে পারেন।তবে মনে হয়না কোন ফল আসবে।”
রামীন আশফিনাকে নিয়ে বেরিয়ে এলো।আশফিনা কান্না করতে শুরু করেছে।রামীন ওকে জিজ্ঞেস করলো,
”তোমার ইন্টার্নাল ব্লিডিং হয়েছিলো আশু?”
”ক্লাশ টেনে হয়েছিলো।”(কেঁদে কেঁদে)
”কিভাবে?”
”ম্যাথে ফেল এসেছিলো।বাবা প্রচন্ড মেরেছিলো সেদিন।পেটে ও লাথি দিয়েছিলো।বাবাকে কখনো মাফ করতে পারবোনা আমি কখনো না।”
আশফিনা জোরে কাঁদতে শুরু করে।রামীন ওকে জড়িয়ে নেয় বুকে।তারপর বাসায় দিয়ে কাজে আসে রামীন।রোয়েন আজ আনিলার কাছে রুহীকে রেখে এসেছে।বেশ নিশ্চিন্ত লাগছে।রামীনকে দেখে কাল রাতের কথা মনে পড়লো ওর।রামীন রোয়েনের সামনে এসে বসলো।ভালো দেখাচ্ছেনা রামীনকে।কপালে গালে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম জমে আছে।রোয়েন জিজ্ঞেস করে বসলো,
”কি হলো তোর?”
”আল্লাহ সবাইকে সব দেয়না তাইনা?”
বেশ অবাক হয় রোয়েন।কি বলছে রামীন এসব।রোয়েব বলল,
”কি হয়েছে রামীন?”
”গত চারমাস যাবৎ বাবুর জন্য ট্রাই করছিলাম আমরা।আম্মার শখ নাতি পুতি দেখবে।চারমাসে কোন ফল না পেয়ে হাসপাতালে গেলাম আজ।অনেক টেস্ট করিয়ে জানতে পারলাম বাবা হবার সৌভাগ্য কখনো হবেনা আমার রোয়েন কখনো হবেনা।”
কথাগুলো বলে রোয়েনের হাতের ওপর কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো রামীন।
চলবে