The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 104
প্যাকিং সেড়ে স্বামীর পাশের চেয়ারটায় এসে বসেন আনিলা।পাশেই রেজোয়ান যেন একটু সরে বসলেন।তারপর বাহিরের প্রকৃতি দেখায় মন দেন।আনিলা একটু মজার ছলেই রেজোয়ানের হাতের চামড়া ধরে হালকা ভাবে টান দিতেই রেজোয়ান লাফিয়ে উঠে একটু আর্তনাদ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে হাতের পিঠ মুছতে মুছতে আনিলার দিকে তাকিয়ে বললেন,
”কি করছো এসব?”
আনিলা একটু হেসে বললেন,
”কই কি করলাম?”
”হাতে চিমটি দিলে কেন?”
”আমার ইচ্ছা।আমার বরের হাত আমি দিয়েছি।তোমার লাগছে কেন?”
”দেখো আমরা বয়স্ক এসব কাজ আমাদের মানায়না।নিজের বয়স অনুযায়ী চলতে চেষ্টা করো।আমাদের এখন সেই বয়স নেই খুঁনসুটির।”
ব্যাপারটা খারাপ লাগে আনিলার।লোকটা এভাবে কথা গুলো বলল।যতোই হোক ওরা স্বামী স্ত্রী।একে অপরকে ভালবাসে।আর খুঁনসুটি করতে কি বয়স টা কি খুব বেশি প্রয়োজন?আনিলা নিজেকে সামলে বলল,
”ভুল বললে রেজোয়ান।তুমি জানো এই কয়দিন তোমার কথায় কাজে তোমার ভালবাসা আর আদর খুঁজে পেয়েছি আমি।আমি তোমার স্ত্রী তোমার সাথে খুঁনসুটি করার অধিকার আছে।আর রইলো বয়স।এটা কিছুনা রেজোয়ান।তুমি কি আমাকে ভালবাসো না? ”
”হুম বাসি কিন্তু….”
”কোন কিন্তু না।আমি ও তোমাকে ভালবাসি।আর আমাদের ভালবাসায় বয়স কোন মেটার করেনা।আমি তোমার কাছে এমন কিছু চাইনি যেটা দিতে পারবেনা আমায়।আমি শুধু চাইছি পাশাপাশি বসে একটু কথা বলবো শুধু এতোটুকুই।কিন্তু বয়স তোমাকে পেয়ে বসেছে।বরাবরই খেয়াল করেছি তোমার হাত ধরলে তুমি সরে যাও।জানো আমার কষ্ট হয় তোমার অবহেলা পেলে।তোমাকে বলে লাভ নেই।কাল ফ্লাইট আমাদের।জলদি ঘুমোতে হবে।তুমি ও শুয়ে পড়ো।আমি যাই।”
কথা গুলো বলে আনিলা আর দাঁড়ালো না রুমে এসে ফ্লোরে কাঁথা বিছিয়ে শুয়ে পড়লো।রেজোয়ান মাহবুব চেয়ে ও না করতে পারেননি।সেখানেই দাঁড়িয়ে সিগারেটে লম্বা টান দিতে থাকেন।
রুহী সরাটা সময় খুব অস্থিরতায় কাঁটিয়ে দিয়েছে।লোকটার সাথে কথা বলেনি ও?কেন?তার অতীত জেনে নাকি কোন সংকোচ বোধের কারনে।সবারই কি অতীত থাকেনা?রুহীর নিজের ও তো অতীত ছিলো সামির।তাই বলে কি লোকটা তাকে ভালবাসেনি?আপন করে নেয়নি ওকে?লোকটার অতীত হয়ত কোন কিছু ভুলানোর জন্য ছিলো।আর সেটা যেমনই হোক ওদের দেখা হওয়ার আগের।লোকটাতো ওদের সম্পর্কের পর এমন কিছুই করেনি।তাহলে কিসের শাস্তি পাচ্ছে সে?সত্যি বলার?রুহী নিজেই তো জানতে চেয়েছিলো তাহলে কি এমন হয়ে গেলো যে লোকটার সাথে কথা বলেনি ও ভালো ভাবে?খুব খারাপ লাগা কাজ করছে ওর।সে নিশ্চই নিজেকে দোষারোপ করছে।যেখানে রুহীর তার প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি অনেকটাই বেড়ে গেছে।কারন এমন সত্য বলার সাহস সবার থাকেনা তাও আবার নিজের স্ত্রীকে বলার।না রুহী কথা বলবে তার সাথে।ভালবেসে বুকে টেনে নিবে।তার সব কষ্ট দুঃখ গুলো নিজের মাঝে ভাগ করে দেবে।ওরা তো আলাদা কেউ নয়।হতে পারে দুটো আলাদা শরীর কিন্তু মন আর হৃদয় এক।তাহলে দুঃখ গুলো ও দুজনের।চোখের কোনা বেয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রু গুলো হাতের কোনা দিয়ে মুছে নেয় রুহী।এদিকে রোয়েনের কথায় অবাক হয়ে গেলো রামীন।তারপর বলল,
”বলে দিয়েছিস রুহীকে?”
”হ্যা বলেছি।আমার স্ত্রী ও। জানার অধিকার আছে ওর।
”জানার অধিকার থাকে কিন্তু কিছু জিনিস গোপন রাখা উচিৎ নিজেদের সুখের জন্য।তা রুহী কি বলল?”
”কিছুই বলেনি।”
”তার স্বামী এতো ভাল কাজ করেছে বিয়ের আগে কিছুই বলেনি?”
রাগ হলো রোয়েনের।তারপর দাঁত খিঁচে বলল,
”ফাজলামো করছিস তুই?সেদিকে ও আমার সাথে কথা বলছেনা।আর তোর ফাজলামো পাচ্ছে।তুই জানিস আমি এসব নিজের একাকী রাত গুলো কাঁটাতে করতাম।”
”আচ্ছা সরি।বাট রুহী কথা বলেনি?”
”নাহ।”
”আই থিংক ওর সময় লাগবে।বুঝিসই তো কেউই এই ব্যাপার গুলো সহজে নিতে পারেনা।কষ্ট হয়ে যায়।তুই ওকে সময় দেয়।
”হুম।কিন্তু ও কেন বুঝেনা আমি এখন এসবে নেই।শুধু ওকে ভালবাসি?”
”বুঝবে।বুঝা নিজের কাজে।আরো অনেক বেশি বুঝা।ও বুঝবে।”
আর কিছু বলতে পারেনা রোয়েন।অন্যদিকে ফিরে চিন্তায় থাকে রুহীর।
রাতে ঘরে ফিরে এলে রুহীকে দেখতে পায়।রুহী কিছু না বলে কাপড় বের করে দিয়ে খাবার গরম করতে চলে যায়।রোয়েন ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে খেতে বসে।পাশে রুহী দাঁড়ানো।রোয়েন ওর দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
“বসো।”
”তুমি খেয়ে নাও।তোমার সাথে কিছু কথা আছে।”
”হুম।”
খাবার শেষে রুমে এলো ওরা।দুজনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়।দুজনেই চুপচাপ।রুহী রোয়েনকে একবার দেখে বলল,
”কাল ওসব বলার পর কেন জানি মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিলো।কারন আপনার পাশে কাউকে দেখার সাহস আমার নেই।”
”রুহী ওসব আমার……”
”আমাকে বলতে দাও প্লিজ।”
”বলো।”
”অতীত সবার থাকে। আমার ও ছিলো তেমনি তোমার ও ছিলো।সব ভুলে তুমি ও আমাকে ভালবেসে বিয়ে করেছো।তাহলে কেন স্বার্থপর হবো আমি?আমি ও তোমাকে ভালবাসি বিশ্বাস করি।তোমার থেকে দূরে থাকা মানে তোমাকে অবিশ্বাস করা।সেটা কখনো পারবোনা আমি।তোমার প্রতি আমার শ্রদ্ধা ভক্তি অনেকটাই বেড়ে গেছে।আমাকে পারলে মাফ করে দিও।না ভেবে তোমার সাথে কথা বলিনি সারাদিন।বুঝতে পারি তোমার কেমন খারাপ লেগেছিলো কারন সেটা আমি ও অনুভব করতে পারি।”
রুহীর কথায় হাসি ফুঁটে উঠে রোয়েনের ঠোঁটে।ও বলল,
”মাফ চেওনা রুহী।তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে কথাই বলতো না।কারন এটাসবাই মেনে নিতে পারেনা।তুমি পেরেছো।এতেই খুশি অামি।অনেক বুঝদার হয়ে গেছো ভাল লাগছে জেনে।”
রুহী রোয়েনকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে।রোয়েন রুহীর চুলে হাত বোলাতে থাকে।হঠাৎ রোয়েন বলল,
”এই ছোট ছোট বিচ্ছেদে কষ্ট পেওনা কারন এগুলো আমাদের ভালবাসাকে মজবুত করে।”
”তুমি বুঝি কষ্ট পাওনা?”
”মিথ্যে বলবো না কষ্ট পাই তবে নিজেকে শক্ত রাখি কারন তোমাকে ভেঙ্গে পড়তে দিতে চাইনা।”
রুহী রোয়েনকে দেখে একটু হাসলো।রুহীর চেহারাটা জ্বলজ্বল করছে চাঁদের আলোয়।ব্যাপারটা এতোটাই মোহনীয় আর নেশা যুক্ত যে নিজেকে আটকাতে পারেনা রোয়েন রুহীকে ছুঁয়ে দিতে।রুহীকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। দুজোড়া ওষ্ঠে দীর্ঘ চুম্বন ঘটিত হয়।কতটাসময় এভাবে কেঁটে যায় বলতে পারেনা কেউই।এদিকে ফাহমিন বান্ধুবী নীলার কথায় বেশ অবাক।নীলা কি বলছে এসব?আবার ওর স্বামী ফাহমিনকে পাগল ও বলল।নাহ এই অপমান নেয়া যায়না।ফাহমিন নীলা কো বলল মেসেজ এা ওকে ফরোয়ার্ড করতে।আর মেসেজ টা আসতেই ফাহমিন হাসি আটকাতে পারেনা।
”ডাইনি তুই কালা। তোর চুল শেঁওড়া গাছের পাতার মতো। হাসলে মনে হয় যেন ভাঙ্গা রাস্তায় কোন ট্রাক যাচ্ছে।আমার কাছে আর কখনো আসবিনা।তোকে দেখলে সুন্দর পৃথিবীটাও কয়লার মতো কালো লাগে ডাস্টবিনের মতো লাগে।গেট আউট কালি ভূত।”
মেসেজটা দেখে ফাহমিনের বুঝতে দেরী হলো না কাজ টা কার।তাই নীলা কে সরি বলে কল কেঁটে দিলো।সেরাতটা পুরো হেসেই কাঁটায় ফাহমিন।এত পাগল মেয়ে নিয়ে কই যাবে ও?অবশ্য পাগলীটা তো ওরই কিন্তু কাজটা কেন করেছে সেটা ফাহমিনের অজানা।
পরদিন সামায়রাকে কলেজের সামনে ধরে বসে ফাহমিন।সামায়রা কে আজ খুব সুন্দর লাগছে।শুনেছে আজ কলেজে কোন একটা ফাংশন ছিলো তাই সেজেছে। ফাহমিন সেদিকে তোয়াক্কা না করে ওকে গাড়িতে বসিয়ে ড্রাইভে মন দেয়।একটা রেস্টুরেন্টে এসে থামলো ওরা।সেখানে ঢুকে খাবার অর্ডার করে ফাহমিন নিজের ফোনের সেই মেসেজ বের করে সামায়রার সামনে ধরলো।সামায়রার মুখ ভয়ে কালচে হয়ে উঠে।ফাহমিন বলল,
”কেন পাঠালে এই মেসেজ।”
”কে বলল আমি পাঠিয়েছি?”
”তোমার ভীত চোখ।সামায়রা আমি জানি পাঠিয়েছো তুমি এখন বলো কেন পাঠালে?”
সামায়রা মন খারাপ করে নিচে তাকিয়ে বলল,
”আপনার পাশে ওনাকে ভালো লাগেনা দেখতে।আমার পছন্দ না।”
ফাহমিন কিছু বলতে পারলো না শুধু হেসে সামায়রার দিকে চেয়ে থাকলো।
ঢাকায় ফেরার পর থেকেই রেজোয়ান মাহবুব খেয়াল করেন আনিলা দূরত্ব অবলম্বন করছেন তার থেকে।ব্যাপারটা বেশ কষ্ট লাগে ওনার।এমনকি রোয়েন সহ সবাই খেয়াল করছে ওনাদের এই দূরত্ব।দুদিন তিনদিন চারদিন কেঁটে যায় কিন্তু আনিলা কোন রকমেই স্বাভাবিক হচ্ছেননা।কথা বলার সাহস পাচ্ছেননা ওনি।কোন মুখে কথা বলবেন?আনিলাকে পান ও না বেশি সময়।রাত হলেই অন্যঘরে চলে যায়।একা খায়।রেজোয়ান মাহবুব যেন আবার একা হয়ে গেলেন।সেদিন অফিস থেকে ফিরে আনিলার হাত ধরে রুমে নিয়ে বলেন,
”কি হয়েছে জানতে পারি?”
”কিছু হয়নি।এভাবে আনলে কেন?আমাদের বয়সের সাথে এসব যায়না।যেতে দাও আমাকে।”
”দেখো আমি বুঝতে পারিনি ঐদিন কেন বলেছিলাম?একটা সত্যি কথা বলি? নির্ঝরার মতো তোমাকে কখনো ভালবাসতে পারবোনা।মাফ করে দিও।”
”আমি কখনো নির্ঝরা আপার জায়গা নিতে চাইনি।আমি চেয়েছিলাম স্ত্রী হিসেবে আমার সম্মান আর একটু ভালবাসা।আর কিছুনা।”
”আর হবেনা এমন।প্লিজ এভাবে দূরে দূরে থেকোনা।”
”ইটস ওকে।তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও।আমি ও ফ্রেশ হয়ে খাবার গরম করে নেই।এরপর অনেক গল্প করবো দুজনে।”
”অবশ্যই।যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।
এদিকে রামীন আর আশফিনা মা বাবা হওয়ার প্রচেষ্টা চালাতে থাকে কিন্তু কোব কাজ হয়না।দুজনেই ভীষন চিন্তায় পড়ে যায়।তিনমাস পেরিয়ে চারমাস হতে চলল।কিন্তু কেন কোন ফলাফল পাচ্ছেনা।এদিকে রামীনের মাও তাড়া দিচ্ছেন আশফিনাকে।কাউকে কিছু না বলতে পারলে ও অশ্রুতে ভিজে যায় বালিশ আর রাত গুলো কেঁটে যায় গুঁমড়ো কান্নায়।
চলবে