আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর !! Part- 07

যা আছে কপালে তাই তো হবে,,
এর থেকে বেশী কিছু হবে না।
এসব ভাবতে ভাবেতে রিমাদের বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে রাস্তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে দেখছে, বাড়িতে যাবার জন্য কোনো গাড়ি পাওয়া যায় কি না।
অনেক রাত হবার জন্য কোনো গাড়ী পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না।।
আজ বাড়ি থেকে গাড়ী তো আনি নাই,
তা ঠিক কিন্তু সাথে মরার মোবাইল
টাও অানতে ভুলে গেছি।।

আজ যদি একটা প্রেমিক থাকতো।
তাহলে কোনোদিন মোবাইল
বাড়িতে ভুলে রেখে আসতাম না😭😭

অনুরে আজ যদি তোর পাঁচ দশটা বয়ফ্রেন্ড থাকতো তাহলে একটা না একটা তো ঠিকি
কাজে আসতো।😩😩

এমন সময় পেছনে কোনো শব্দ শুনতে পায়,
পেছনে তাকিয়ে দেখে কয়েকটা ছেলে অনুর দিকে এগিয়ে আসছে।

অনু মনে মনে ভাবছে ,,এতো রাতে এমন খারাপ পোলাপান মোটেই সিচুয়েশন সুবিধের নয়
আল্লাহ বিয়ে এখনো করি নাই,,
দশ পাঁচটা বাচ্চা হলো না,,,
এখুনি মরতে চাই না,,
সাহায্য করতে কেউ আসবে না,,
নিজেকে নিজের সাহায্য করতে হবে ।

আবার অনু বিড়বিড় করে বলে,,
ওরা এসে আমার সাথে খারাপ কিছু করার আগে, আমাকে এখান থেকে পালিয়ে যেতে হবে।

___”যেই ভাবনা অনুর সেই কাজ ”

অনুর দৌড় দেওয়া দেখে ছেলে গুলাও অনুর পিছনে দৌড় দেয়।
আর বলতে থাকে, ঐ সুন্দরি দাঁড়াও পালাই যাও কেনো।আমাদের সাথে একটু মজা করে যাও,,,
মাঝ রাতে এমন ফাঁকা রাস্তা আর কখনো পাবে না।

অনু মনে মনে কতো দোয়া দুরুদ যে পড়ছে তা আল্লাহ জানে।
আল্লাহ এই রাতে আমার কি হবে😭কে বাঁচাবে আমাকে।
আমি তো কোনো গল্পের নায়িকা না,
যে হিরো এসে আমাকে বাঁচাবে😭😭
আল্লাহ্ আজ আমার যদি একটা হিরো থাকতো তাহলে কি খুব বেশি ক্ষতি হতো?😥

অনু নিজের কাঁধের ব্যাগ টা জড়িয়ে ধরে,
মরি বাঁচি দৌড় দেয়,চোখ কান সব যেনো সে আকাশে উঠাইয়া রাখছে।
বেচারি খুব ভয় পেয়েছে।

আর হাঁপাতে হাঁপাতে রাস্তার মাঝে চলে আসে,
তারপর
হঠাৎ করে একটা গাড়ির সাথে অনু ধাক্কা খায়।
খুব একটা জোড়ে ধাক্কা লাগে না তারপর ও নিজের ব্যালেন্স রাখতে না পেরে রাস্তায় সিটকে পড়ে গিয়ে একটু কপাল কেটে যায়।

গাড়ি থেকে মানুষটা নেমে এসে অনুর হাত ধরে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দেয়।

অনু কোনো কিছু না দেখে না বুঝে ভয়ে সামনের মানুষ টাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে,,
“প্লিজ আমাকে বাঁচান “।

অনুর পেছনের ছেলে গুলা সামনে এসে বলে,,
ঐ মাইয়ারে আমাগো দিয়ে দিন।
ঐ টা আমাদের ভাগের,,,
তুই বেডা মাঝখান থাইকা আইসা বুকে আগলায় রাখছিস।

আরিয়ান :মেয়েটা কি তোদের সম্পত্তি?? আমার বুকে আছে, “যদি সাহস থাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যা “।

ছেলে গুলো এগিয়ে আসে,
একজন অনুর হাত ধরতে যাবে তার আগেই,
আরিয়ান তার হাত ধরে ফেলে,,
বলে আমি থাকতে ওকে স্পশ্য করা এতো সোজা হবে না।
সেই ছেলেটিকে খুব জোড়ে আরিয়ান ধাক্কা দেয়।
এতে ছেলেটি দূরে সিটকে পড়ে যায়।
অন্য ছেলেরা মারামারি করতে এগিয়ে আসবে,
ঠিক সে সময় সে রাস্তায় পুলিশের গাড়ী চলে আসে।
রাস্তার মাঝে এতো রাতে এতো ছেলে দেখে তারা গাড়ী থামায়।
পুলিশের গাড়ি দেখে ছেলে গুলা পালিয়ে যায়।
একজন পুলিশ আরিয়ান কে বলে এখানে কি হয়েছে?
আরিয়ান বলে, “ছেলে গুলো মেয়েটাকে ডিস্টার্ব করছিল”।

তখন পুলিশ গুলা অনুকে বলে,”মেম আপনি আমাদের সাথে চলেন আপনাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবো”।

এতো সময় পর অনুর খেয়াল হয় সে কাউকে জড়িয়ে ধরে আছে।

তাড়াতাড়ি আরিয়ান কে ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে সরে দাঁড়ায়।
এবার অনু আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে স্যার আপনি।

আরিয়ান :ওহ আপনি, আমার বোঝা উচিৎ ছিলো এতো রাতে,,
আপনি ছাড়া আর অন্য কেউ বিপদে পড়বে না।

অনু :দেখুন আমি কিন্তু ইচ্ছে করে বিপদে পরি নাই,,,
বান্ধবীর বাড়ি থেকে যাবার পথে ওরা আমার পিছু নেয়,,
তাতে কি আমার দোষ।
কই খারাপ কোনো ড্রেস তো পরি নাই,,
যাতে কোনো রাস্তার মানুষ আমার প্রতি আকৃষ্ট হয়।
শুধু একা কাউকে অসহায় অবস্থায় পেলেই হয়,তার সুযোগ নিতে হবে তাই না।

আরিয়ান :এই মেয়ে চুপ থাকতে পারো না।একবার কথা বলা শুরু করলে আর চুপ করার নাম নাই।
আল্লাহ জানে এর বাড়ির মানুষ কি ভাবে এই আনলিমিটেড ঝামেলাকে সহ্য করে।

অনু :আমার বাড়ির মানুষ কে নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না।
তাদের নিয়ে ভাবার জন্য আমি আছি।

আরিয়ান :হাঁ,আপনি আছেন, তার নমুনা তো দেখতে পাচ্ছি।
আমার স্থানে অন্য কেউ থাকলে, আজ ছিলো আপনার কপালে শনি,রবি,সোম।

অনু :😕 শনি,রবি,সোম এগুলা আবার কী?

অারিয়ান :জানি না,,,ঐ আপনি যেদিন থেকে আমার জীবনে আসছেন,
সেদিন থেকে কোনোনা কোনো বিপদে নিজেও পরেন,আমাকেও ফেলেন।

এবার পুলিশের একজন বলে,স্যার এটা তাদের ব্যক্তি গত বেপার আমাদের যাওয়া উচিৎ।
তাই বলে তারা চলে যায়।

অনু : ঐ পুলিশ থামেন আপনারা আমাকে নিয়ে যান,,,😭😭

আরিয়ান :ঠিক হয়েছে,,,আল্লাহ তোমার বিচার করেছে।।

অনু : ঐ শয়তান,বজ্জাত,খচ্চর বস,তোর জন্য আমার গাড়ী চলে গেছে,,আমি এখন বাড়ি যাবো কি করে,কে দিয়ে আসবে।

আরিয়ান :just mind you language, ok
ঐটা আপনার বাবার গাড়ী ছিল না যে আপনাকে না নিয়ে চলে গেছে।

অনু :আমার বাবার গাড়ী না, কিন্তু সরকারি গাড়ী তো ছিলো।এখন বাড়ী যাবো কেমনে আমি😭😭

আরিয়ান :আমি ছাড়া আর তো কোনো রাস্তা নেই। আপনাকে আমি বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসছি,,আমার গাড়ী তে গিয়ে বসুন।

অনু সোজা গাড়ির কাছে গিয়ে পেছনের সিটে বসে পরে।

আরিয়ান এসে বলে,,আমাকে কি আপনার ড্রাইভার মনে হয়??

অনু :না তো,আপনি তো আমার বস,,ড্রাইভার কেনো হতে যাবেন।

আরিয়ান :তাহলে সামনের সিট রেখে পেছনে কেনো বসেছেন??

অনু :oh sorry , বুঝতে পারি নাই।
তারপর পেছন থেকে নেমে গাড়ির সামনে এসে বসে।
তারপর আরিয়ান গাড়ি ড্রাইভ করে আগে অনুকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

আরিয়ান :মেম সাহেব আপনি কষ্ট করে একটু নামবেন?

অনু :আপনি হাসপাতালে কেনো আসছেন? আমি তো বাড়ি যাবো।

আরিয়ান :আপনি মাথায় যে গুতা খাইছেন তা বুঝি ভুলে গেছেন,,, কিন্তু আমি ভুলি নাই।

অনু :ওহ তাই তো আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।

আরিয়ান :আমি তো আর ভুলতে পারি না,,
কারণ আমার পিএ অসুস্থ থাকলে তো আমার ক্ষতি।

অনু :আপনি নিজের ভালোর জন্য আনছেন।
আমার জন্য না।(আল্লাহ এ তো দেখি পুরা খচ্চর এ বেডার কপালে কোনোদিন ভালা হইবো না)

তারপর অনু আরিয়ান হাসপাতালের ভেতরে যায়
সেখানে অনুর মাথায় ডাক্তার ড্রেসিং করে দেয়।আর বলে বেশী লাগে নাই,,
একটু বিশ্রাম করলেই ঠিক হয়ে যাবে।

তারপর আরিয়ান অনুকে নিয়ে আবার গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করে,,

অনু চুপচাপ গাড়িতে বসে আছে।
আরিয়ান বলে,,তা মেম সাহেব আপনি কোথায় যাবেন?

অনু :আপনার বাড়িতে তো অবশ্যই যাবো না!!

আরিয়ান :এই মেয়ে সোজাভাবে উওর দিতে পারো না।না কি সোজা কথার মেয়ে না।

অনু :সোজা গিয়ে বামে যাবেন তারপর ডান পাশের মোড়ে।বলে আবার চুপ করে বসে থাকে।

আরিয়ান অনুর কথা মতো মোড়ে এসে গাড়ী দাঁড় করাই।
অনু গাড়ী থেকে নামতে যাবে তখন,

আরিয়ান :এটা তো বড় বিজনেসম্যান দের এলাকা। তুমি বড়লোক দের এলাকায় থাকো?

অনু :না স্যার এর পেছনের বস্তি তে থাকি,,,
আর আমাকে নামিয়ে দিতে আসার জন্য ধন্যবাদ।

আরিয়ান আর কিছু বলবে তার আগে অনু চলে যায়।

আরিয়ান, আর যাই হোক মেয়েটার মাঝে কোনো একটা বেপার আছে,,দেখতে সাধারণ কিন্তু কাজ করার স্টাইল,, কথা বলার স্টাইল সব কিছু কেমন যেনো অন্য রকম এসব ভাবতে ভাবতে আরিয়ান বাড়িতে চলে আসে।

আরিয়ান বাড়িতে আসতেই ওর মা এসে দরজা খুলে দেয়।

আরিয়ান :মা তুমি এখনো জেগে আছো ঘুমিয়ে গেলেই তো পারতে।

আরিয়ানের মা :কি যে বলিস বাবা,,,যে মায়ের ছেলে এতো রাতে বাড়িতে আসে সে মা কি রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারে।

আরিয়ান :ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,আরে মা আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা করো না আমি ভালো আছি।

আরিয়ানের মা :হঠাৎ দেখে আরিয়ানের শার্টে রক্ত লেগে আছে,,তাড়াতাড়ি ছেলেকে বলে এই তোর কি হয়ছে,,রক্ত কেনো শার্টে?

আরিয়ান :আমার কিছু হয়নি,,রাস্তায় একটা মেয়ে গাড়ীর সাথে ধাক্কা খায়,, সেই মেয়ের রক্ত।

আরিয়ানের মা :তা মেয়েটা ভাল আছে তো,,বেশী ব্যাথা পায়নি তো?

আরিয়ান :আরে মা just cool down, মেয়েটা ভাল আছে,,তাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসছি।

আরিয়ানের মা :আচ্ছা তাহলে যাও অনেক রাত হয়েছে,,ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরো,,সকালে কথা হবে।

আরিয়ান রুমে এসে আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে দেখছে,,
তার বুকে অনুর রক্তের দাগ।
এ দাগ হয়তো ধুয়ে দিলে চলে যাবে,,
“কিন্তু মনের মাঝে যে দাগ আছে সে দাগ কি কোনো কিছু দিয়ে মুছা যাবে”।


এদিকে অনু এতো রাতে বাড়িতে আসছে কেউ বুঝতে পারে নাই।
দরজায় হালকা নক করতে রহিমা দরজা খুুলে দেয়।
রহিমা জোড়ে কথা বলবে তার আগে অনু তার মুখ চেপে ধরে বলে,
আমি ভালো আছি, আমার কিছু হয়নি,,,
যা কথা সব সকালে হবে।
তা বলে অনু নিজের রুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে ঘুমোতে বিছানাতে যায়।
আর ভাবতে থাকে
সকালে যা আছে কপালে তা তো ভোগ করতেই হবে,,
অনু সকালের কথা চিন্তা করে রাতের ঘুম কেনো নষ্ট করবো,
আগে ঘুম তারপর বাকী কথা হবে।
ওদের চিন্তা করে ঘুম নষ্ট করতে আমি রাজী নাই😏
ঘুম ভালোবাসি আমি ঘুম ভালোবাসি,,,
গভীর ঘুমের সাগরে অনু ডুবে যায়।
আর আরিয়ান?? কে রাখে তার খোঁজ??
কেউ না,,সে একা, তাকে বোঝার কেউ নেই।😢

(সকালে যা হবার তাই হবে,,আপনারা আর অনু,আরিয়ান বুঝবেন 😷।আমার কি😁)



চলবে….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *