The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 106
→ঘরে এসে রুমে প্রবেশ করতেই মন টা খুব ভাল হয়ে গেলো রোয়েনের।মা মেয়ের ভালবাসা বুঝি এমনই হয়?তাও আবার এমন একটা সময়ে যখন মাকে খুব বেশি দরকার পড়ে একটা মেয়ের।রুহী আনিলার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে দেখেই ভালো লাগে ওর।রোয়েন একটু হেসে রুমে প্রবেশ করতে আনিলা আচঁল টা ঠিক করে বলল,
”এসে গেছেন বাবা?আমি তাহলে যাই।”
রোয়েন ইতস্তত করে বলল,
”না আপনি বসুন।আমি তো কেবল এলাম।”
রুহী উঠার চেষ্টা করলে রোয়েন এগিয়ে এসে ওর পিঠের পিছে এক হাত আর অপর হাতে রুহীর হাত ধরে উঠিয়ে বসিয়ে দেয়।আনিলা পিছন থেকে রুহীর গায়ের উড়না ঠিক করে দেয়।রুহী বলল,
”তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও।মা আর আমি বের হচ্ছি।”
রুম থেকে বেরুতে বেরুতে বলছিলো রুহী।রুহীর কথায় রোয়েন অবাক হয় আবার রেগে গিয়ে ইশারা করলো ওকে যেন রুমে পায় বের হয়ে।রুহী হেসে মাথা নেড়ে বেরিয়ে যায়।এদিকে আনিলা বলল,
”এমন করলি কেন?তুই রুমে গিয়ে বস।ওনার কিছু লাগতে পারে।জামাই ঘরে আসলে বৌদের রুমে থাকতে হয়।যাহ রুমে গিয়ে বস।আমি শুতে যাই তাহলে।”
”আচ্ছা মা।”
রুহী হেসে রুমে ঢুকে খাটের কাছে আসতেই পিছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে রোয়েন।হঠাৎ এমন হওয়ায় তাল সামলাতে না পেরে পড়েই যাচ্ছিলো রুহী।রোয়েন অপর হাতে ওর হাত ধরে নিজের সাথে লাগিয়ে নেয়।রুহীর বুক কাঁপছে।লোকটাও না কি যে করে।ভয়ে তো জান চলে যাচ্ছিলো।রোয়েন ওর কানের মাঝে ঘন ঘন নিশ্বাস ছাড়তে থাকে যেটা রুহীর গলা ঘাড় স্পর্শ করে যায়।রুহী নিজের পেটে রোয়েনের হাতটা শক্ত করে ধরে বলল,
”ছাড়বেনা প্লিজ।এভাবেই আটকে থাকতে চাই।”
রোয়েন কেমন অস্থির হয়ে পড়ছে।রুহীর ঘাড়ে কাঁধে নাক বুলাতে বুলাতে বলল,
”এভাবে আর কতোদিন দূরে থাকবো?পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি।”
রুহীর ঠোঁটের কোনে স্মিত হাসি ফুঁটে উঠে।ও মাথা সরাতেই রোয়েনের নাকের সাথে ওর গাল ধাক্কা খেলো।রুহী বলল,
”আরো কয়েকটাদিন অপেক্ষা করো।”
”সেটাই পারছিনা আমি।”
”না পারলে নাই।কোন লাভ নেই।তার চেয়ে বরং খেয়ে নাও।আমার শরীরটা খুব খারাপ লাগছে।”
রুহীর কথায় আতংকিত হয়ে সরে আসে রোয়েন।তারপর রুহীর গালে হাত দিয়ে বলল,
”কি হয়েছে?”
”কোমড় আর পা পেইন করছে অনেক।”
রোয়েন সাথে সাথে রুহীকে কোলে নিয়ে খাটে বসিয়ে ওর পিঠের পিছনে বালিশ রেখে বলল,
”এভাবে বসে থাকো।আমি খেয়ে তেল নিয়ে আসি।”
”আচ্ছা।কিন্তু পেট ভরে খাবে কিন্তু।”
”ওকে তুমি চিন্তা করোনা।আছি আমি।”
রুহী হেসে রোয়েনকে টেনে ওর দুগালে চুমু খেয়ে বলল,
”এখন ঠিক আছে।”
রোয়েন রুহীর সারামুখে পাল্টা চুমু খেয়ে বলল,
” বসো আমি আসি তাহলে।”
”হুম।”
রামীন ঘরে প্রবেশ করে দেখলো আশফিনা মন খারাপ করে খাটে বসে আছে।ঘরে ঢুকার সময় মা আর ভাবি বলছিলো সারাদিন কিছু খায়নি।রামীন শুধু একবার বলেছিলো আমি ওকে সাথে নিয়ে খাবো।আশফিনা রামীনকে দেখে চোখ সরিয়ে বলল,
”আপনি আবার বিয়ে করেন।”
ঘরে ঢুকে এমনটা আশা করেনি।একে তো মন খারাপ তারওপর রাগিয়ে দিলো মেয়েটা।রামীন প্রায় দৌড়ে এসে আশফিনাকে ঝাঁকিয়ে রেগে বলল,
”কিসব ভাবো সারাক্ষন বলো তো?আমাকে বিয়ে দেয়ার কে তুমি?গার্জিয়ান আমার?”
আশফিনার চোখজোড়া আবার ও জলে ভরে গেলো।রামীনের দুগালে হাত রেখে বলল,
”আপনার সাথে আমার ফিউচার নেই রামীন।আপনাকে বাবা হওয়ার সুখ দিতে পারবোনা আমি।”
”কে বলল ভবিষ্যৎ নেই তোমার সাথে?খুব বেশি বুঝো তুমি।বাচ্চাই কি সব?আমরা দুজনেই ভালো থাকতে পারি আশু।”
”আপনি ভাল থাকবেননা।”
”কে বলল ভাল থাকবোনা?তোমাকে না পেলে ভাল থাকতে পারবোনা।”
আশফিনা রামীনকে ছেড়ে মাথা নিচু করে কাঁদতে থাকে।রামীন জোর পূর্বক ওর গালে কপালে চুমু দিয়ে বলল,
”মাকে কিছু বলেছো?”
”না।কিছু জিজ্ঞেস করেনি।”
”ভালো হয়েছে।”
কথাটা বলে রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো রামীন। আশফিনা দৌড়ে গিয়ে ওকে থামায়।
”কই যান আপনি?”
”মার কাছে।ছাড়ো আমাকে।”
”কি বলবেন?”
”বিয়ে করাতে চেয়েছো।তাই নতুন বিয়ের কথা বলতে যাচ্ছি।”
”মিথ্যে বলছেন।বলুন কি বলবেন?”
”য়া বলার বলবো। ছাড়ো আমার হাত।”
”আমি ও যাবো আপনার সাথে।”
”দরকার নেই।তুমি গেলে সব ওলটপালট হবে মাকে আমি বুঝাবো।”
আশফিনা তখন ও রামীনকে ছাড়েনি।ও জানে রামীন কি কি বলতে পারে।তাই আশফিনা বলল,
”মিথ্যা বলবেন জানি।পুরো সমস্যা আপনার সেটা বলবেন বুঝতে পারছি আমি।রামীন এটা ঠিক হবেনা।সামনে সত্যিটা আসলে সবাই কষ্ট পাবে।এর চেয়ে ভাল সত্যিটাই বলবো।যা হবার হবে।”
রামীন কিছু বলতে পারেনা।তারপর একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল,
”চলো আমার সাথে।”
আশফিনা আর রামীন দুজনেই মায়ের কাছে আসে।আশফিনা বলল,
”মা আজ হাসপাতালে গিয়েছিলাম।”
”ওহ হ্যা ভুলেই গিয়েছিলাম।কি বলল ডাক্তার?”
রামীন আশফিনার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে নিলে আশফিনা বলল,
”সরি মা।মাফ করবেন আমি কখনো মা হতে পারবোনা।”
ধাক্কাটা সামলাতে অনেকটা সময় লাগে রামীনের মায়ের।আশফিনাকে ওনি দেখেছিলেন মনমরা হয়ে বসে থাকতে।আজ এখানে যদি ওনার রামিসা থাকতো তখন ওনি কি করতেন?এত কিছু ভেবে ও ভীষন খারাপ লাগছে ওনার।ছোট ছেলের নাতি পুতি দেখবেনা ভেবে।কিন্তু আশফিনা আর রামীন হয়ত আরো বেশি কষ্ট পাচ্ছে।অনেকটা সময় নিয়ে ওনি বললেন,
”আশু এদিকে আয়।”
এতক্ষন ভয় লাগলে ও এবার একটু সাহস পেলো আশফিনা।ধীর পায়ে মায়ের সামনে এসে বসলো।ওনি আশফিনার চুল হাতিয়ে বললেন,
”একদম মন খারাপ করবিনা।আল্লাহ চাইলে একদিন তোর কোল পরিপূর্ন হবে।তুই আমার মেয়ে আগে পরে বৌ।একদম আমাদের কথা ভেবে মন খারাপ করবিনা।বুঝলি?”
আশফিনার চোখে পানি এসে গেছে।শাশুড়ী কি আদৌ এমন হয়?আশফিনা মাকে জড়িয়ে ধরলো।এদিকে রামীন হাসছে।ওর মা এতোটা ভালো আগে কেন বুঝলোনা।এদিকে সামায়রার মনটা কেমন করছে।ক্লাশে বসে ও কলম কামড়ে যাচ্ছে।অস্থিরতা কাজ করছে কেমন যেন।আজ লোকটার সাথে দেখা হবে।টিচার থেকে আড়াল করে ছোট্ট আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিলো সামায়রা।নাহ ভালোই তো লাগছে।ও শুধু শুধু ভয় পাচ্ছিলো।ছুটির ঘন্টা বাজতেই দৌড়ে ওয়াশরুমে এলো সামায়রা চোখে কাজল আর একটু লিপস্টিক লাগিয়ে বেরিয়ে এলো।ফাহমিনকে না দেখে মনটা খারাপ হয় ওর।কয়েক মিনিট পর ফাহমিনের হাসপাতালের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আশেপাশে খুঁজতে থাকে।হঠাৎ পিছন থেকে কেউ বলল,
”কাউকে খুঁজা হচ্ছে বুঝি?”
”না কাউকে না যান তো।”
বলেই থেমে গেলো সামায়রা।তারপর পিছু ফিরে দেখলো ফাহমিন হাসছে ওর দিকে তাকিয়ে।সামায়রা তাকাতেই বলল,
”চলে যাবো?”
”উফ।এতক্ষন ওয়েট করিয়েছেন।আর এখন এসে নাটক জুড়ে দিলেন।”
”খুব ওয়েট করিয়েছি?”
সামায়রা রেগে মুখ ফিরিয়ে নেয়।ফাহমিনের বেশ ভালো লাগছে ওর টমেটোর মতো গাল দুটো।ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।হঠাৎ সামায়রা কে টেনে অফিসের ভিতর ঢুকিয়ে নিজের কেবিনে এনে ওকে দেয়ালে চেঁপে ধরে।সামায়রা চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে ফাহমিনের দিকে।ফাহমিন কিছু বলছেনা।ভারি ভারি নিশ্বাস ছাড়ছে।হঠাৎ সামায়রার যেন সব বন্ধ হয়ে এলো।চারদিক থেকে ঠান্ডা বাতাস ওর শরীর মন ছুঁয়ে দিলো।নিশ্বাস বারবার আটকে আসছে।চোখজোড়া বন্ধ হয়ে এলো আপনা আপনি।এ কেমন ছোঁয়া।ওর গাল দুটো কে সিক্ত করে দিলো এ মনোমুগ্ধকর মিষ্টি ছোঁয়া।
অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলো।আরো এক সপ্তাহ পর রুহীর ডেলভারি।এরই মাঝে রামীন আর আশফিনা অনেক হাসপাতালে ঢুঁ মেরে এসেছে।কোন ভালো রেজাল্ট পায়নি।তবে ওরা হাঁল ছাড়বেনা।এগিয়ে যাবে।রামীন কাজ ছেড়ে এসে বলল,
”চলো রুহীর সাথে দেখা করে আসি
মা ও দেখা করুক।”
”ও ভালো আছে তো রামীন?”
”নরম হয়ে গেছে।একটু বেশিই অসুস্থ।”
”ওহ।চলুন তাহলে। মাকে রেডি হতে বলি।”
”যাও।”
তিনজনে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো রোয়েনের বাসার উদ্দেশ্যে।রুহীর চেহারা কেমন যেন ভেঙ্গে গেছে।আশফিনা এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো।রামীন আসলো নিজের মাকে নিয়ে।রোয়েন রামীনের মাকে সালাম দিয়ে বলল,
”রুহী ওনি রামীনের মা।”
”আসসালামু আলাইকুম আন্টি।ভালো আছেন?”
”এইতো মা।তোমার মনে হয় শরীর বেশি খারাপ।”
”হুম।একটু তো খারাপ লাগেই।রোয়েন নাস্তা রেডি করাতে বলো প্লিজ।”
রামীনের মা বলল,
”অস্থির হবানা।আমরা তোমাকে দেখতে এসেছি।”
”ভালো লাগলো আন্টি।”
রোয়েন আর রামীন কিছুক্ষন কথা বলে বেরিয়ে গেলো ওরা।আশফিনা রুহীর পাশে বসে আছে আর সামনে ওর শাশুড়ী।রুহী বলল,
”আপনি একটু শুবেন আন্টি?”
”না মা।ঠিক আছে।তোমরা গল্প করো।তোমাদের বাসা দেখি আমি।”
”অবশ্যই আন্টি।”
রামীলা এসে ওনাকে ঘর দেখাতে নিয়ে গেলো।রুহী আশফিনাকে জিজ্ঞেস করলো,
”ভালো আছিস?”
”ভালো আছি।”
”তোর চেহারা বলছেনা।”
”রুহী মা হতে ইচ্ছে করে খুব।”
”দেখ ভেঙ্গে পড়িস না।আল্লাহ তোদের পরীক্ষা নিচ্ছে হয়ত।দেখিস তোর ও বাবু আসবে।আর আমার বাবু ও তোরই বাবু।তুই ও ওর মা হবি।”
”রুহী দোয়া করিস রে।”
”এটা বলতে হয়?”
”না তারপরও।”
”হুম।”
এদিকে রামীন কে রোয়েন কিছু ডাক্তারের পরামর্শ দিলো।রামীন তাদের যাবে জানায়।সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে যায় ওরা।রোয়েন রুহীকে খাইয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে।আনিলা বারবার বলছিলো রুহীর অবস্থা ভালো না একটু সজাগ থাকতে।যার দরুন রোয়েন ঘুমাতে পারছেনা।রুহী ও কেমন ছটফট করছে রোয়েনের বুকে।রোয়েন রুহীকে জড়িয়ে ধরে ঘুম আসানোর চেষ্টা করতে থাকে।ফজরের আজান শোনা যাচ্ছে।রোয়েন রুহীকে ডেকে তুলে।আজ মসজিদে যায়নি রোয়েন।রুহী সালাম ফিরিয়ে কেঁদে দিলো।রোয়েন দৌড়ে এসে ওকে ধরলো।তারপর জিজ্ঞেস করে,
”কি হয়েছে রুহী?কাঁদছো কেন?”
”বাঁচাও আমাকে খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।”
চলবে