The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 101
ফাহমিন আর সামায়রা সামনাসামনি বসে আছে।সামায়রা মেন্যু কার্ড দেখে ভাবছে কি খাওয়া যায়।কিছুক্ষন পর মাথা উঠিয়ে সামায়রা বলল,
.
.
-”চিজ বেকড পাস্তা।”
-”আচ্ছা আর?”
-”আর কি?”
-”ড্রিংকস খাবেনা?”
-”কোল্ড কফি।”
-“শিওর।এই ওয়েটার এদিকে এসো।”
.
.
লোকটা ওদের কাছে এসে দাঁড়ায়।ফাহমিন বলল,
.
.
-”একটা স্পাইসি চিকেন স্প্যাগেটি আর মালবেরি আর একটা চিজ বেকড পাস্তা আর কোল্ড কফি জলদি নিয়ে এসো।”
-”ইয়েস স্যার।”
.
.
লোকটা যেতেই ফাহমিন সামনে ফিরে।সামায়রা কে সত্যিই অসাধারন লাগছে।ফাহমিন পুরোটা দেখে নেয় ওকে।দুহাতের পিঠে সুন্দর করে মেহেদী আঁকা।ফাহমিন বলল,
.
.
-”খুব সুন্দর লাগছে।”
-”কোনটা?জামা নাকি আমাকে?”
-”অবশ্যই তোমাকে।জামাটা ও সুন্দর।”
.
.
সামায়রা একটু এগিয়ে আসে ফাহমিনের অনেকটা কাছে।সামায়রার শরীরের সুগন্ধ ফাহমিনের নাকে আসতেই শরীর মন জুড়িয়ে যায়।সামায়রার নিশ্বাসটা ও এতো শীতল ভাবতেই গা কেঁপে উঠে।সামায়রা ফাহমিনের কানের সামনে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
.
.
-”একটা সিক্রেট বলবো?”
-”বলো।”
-”এই জামাটা আসলে আম্মুর শাড়ী দিয়েই বানানো।”
-”সত্যি?”
.
.
সরে আসে সামায়রা।মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানায়।সামায়রা আবার ও বলল,
.
.
-”কাল যখন মাকে বলছিলাম লাল জামা লাগবে।মা অনেক্ষন খুঁজে এনে শাড়ীটা দিলো।আমি তো শাড়ী পরিনা তাই মা গাউনটা বানিয়ে দিলো।”
-”লাল জামা নেই তোমার?”
-”না।আমার একদম পছন্দ না।”
-”তাহলে পরে এলে যে?”
-”আপনিই তো বললেন।”
.
.
ফাহমিনের বেশ ভালো লাগে।ওর জন্য লাল জামা পরেছে মেয়েটা।ততক্ষনে পাস্তা আর বাকি খাবার ও চলে এলো।ফাহমিন স্প্যাগেটিতে চামুচ নাড়তে নাড়তে বলল,
.
.
-”বললে যে শাড়ী পরোনা বিয়ের দিন কি করবে?”
-”বিয়ে করবো নাকি?তবে জানেন বিয়ের সাজ দিতে ইচ্ছে হয় অনেক।আর খুব খুব ছবি তুলবো।”
-”ওহ।”
-”হুম।তা তোমার না খুব বাবু নেয়ার শখ?”
-”হুম তা তো নিবোই।”
-”তাহলে বিয়ে না করে কিভাবে?”
-”বোকা নাকি আপনি?বাচ্চা নিতে বিয়ে করতে হয় নাকি?”
-”তাহলে?”
-”আপনাকে ডাক্তার বানালো কে?সিনেমা দেখেননাই?”
-”দেখেছি তো।”
-”দেখেননা একটা ছেলে মেয়েটাকে আদর দিলে বাবু হয়।”
-”জানতাম না তো।”
-”হুম কিন্তু বাবুর বাবা কে কই পাবো।সে তো সামনেই আসছেনা।”
.
.
সামায়রার কথায় ফাহমিনের মাথা ভনভন করতে থাকে।মেয়েটা কি বলল এসব?কিছুই কি জানে না ও?বাবুর বাবাকে সারা দুনিয়া খুঁজে বেড়াচ্ছে যেখানে বাবুর বাবা ওর সামনে।আর বিয়ে ছাড়া বাবু সিরিয়াসলি?ফাহমিনের অতিদুঃখে হাসি পাচ্ছে।এতো সরল কেন মেয়েটা?
সামায়রা বলল,
.
.
-”জানেন আমাদের দুবাইতে একটা আপু ছিলো। ওকে ওর বয়ফ্রেন্ড আদর করতো।ওই আপুটা ও মা হয়েছে।কিন্তু বাবুটাকে না মেরে ফেলল আপুটা।এটা কি কোন কথা বলেন?”
-”না।সামায়রা এসব কথা রেখে খাও।ঠান্ডা হচ্ছে।”
-”আচ্ছা।”
.
.
সামায়রা খেতে থাকে।ফাহমিন খাওয়ার মাঝে অন্যমনষ্ক ভাবে সামায়রার হাতের ওপর হাত রাখে।সামায়রার মাঝে অন্যরকম অনূভুতি কাজ করছে।লোকটা যতোবারই ওর হাত ধরেছে এমন আগে লাগেনি।বাবার হাত ও ধরে কিন্তু এমন লাগেনি।এমন অনুভূতির কারন কি?ফাহমিন সামায়রা কে একবার দেখে নেয়।লজ্জা ফুঁটে উঠেছে মেয়েটার চেহারায়।ফাহমিনের ভালো লাগলো।এদিকে রুহী আশফিনার কল দেখে কিছুটা অবাক হয়।চটজলদি কল ব্যাক করে আশফিনার নম্বরে।অপরকাশ থেকে অাশফিনা বলল,
.
.
-”কিরে কাল কই ছিলি?”
-”ঘরেই ছিলাম।কেন?”
-”কল করেছিলাম বিরক্ত লাগছিলো।কিন্তু ফোন কেঁটে দিলি।”
.
.
রুহীর মুখখানা লাজ রাঙ্গা হয়ে যায়।কাল সেই সময়ে তো রোয়েনের মাঝেই একাকার হয়ে গিয়েছিলো ও।সেইসময়ে রিংটোন টাও অসহ্য লাগছিলো।রুহী কোনমতে বানিয়ে বলল,
.
.
-”চোখ লেগে এসেছিলো।ইদানীং খুব ক্লান্ত লাগে রে।”
-”হুম।কেমন আছিস তোরা?”
-”ভালো।তোর কি খবর?”
-”ভালো আবার ভালো ও না।”
-”কেন?”
-”ওনার বাবা মা আসবে আজ।ভয় লাগছে।ওনারা আমাকে যদি পছন্দ না করে?”
-”কেন করবেনা?তুই কি অপছন্দের মতো মেয়ে?”
-”জানিনা রুহী খুব ভয় লাগছে।”
-”তোর তো আগে ও কথা হয়েছিলো ওনাদের সাথে।বলেছিলি না?”
-”হুম।কিন্তু কেমন টেনশন লাগছে রুহী।আমার হাত পা ঠান্ডা হয় আসছে।”
-”গাঁধি একদম ভয় পাবিনা।রামীন ভাইয়ার মা বাবাও খুব ভালো।তোকে অনেক আদর করবে।আর আগে যেহেতু কথা হয়েছে তাহলে আর ভয় লাগবেনা ওনারা আসার পর।আর নিজের মা বাবা ভেবে নিস ভালো লাগবে।”
-”আচ্ছা থ্যাংকস রুহী।এখন না ভয় টা যেন কমে এসেছে”
-”গুড।কাল ফ্রি আছিস?”
-”ওনারা আসার পর বলতে পারবো।কেন রে?”
-”শপিংয়ে যাবো।”
-”ওহ।”
-”হুম।”
-”রাতে জানাচ্ছি।নিজের খেয়াল রাখিস।”
-”হুম।টেনশন করিসনা।”
-”দোয়া করিস রে।”
-”বলতে হয়না।”
.
.
কল কেঁটে শুয়ে থাকে রুহী।এদিকে রামীন ঘরে ফিরে আসে বাবা মাকে নিয়ে।কলিংবেলের শব্দে নিচে নেমে আসে আশফিনা।সুন্দর করে দুজন বয়স্ক দম্পতি ভিতরে এলো।আশফিনা নিচে নেমে আসে মাথায় ঘোমটা টেনে।দুজনকে গিয়ে পায়ে ধরে সালাম দেয়।শেখ আফজাল বললেন,
.
.
-”আশফিনা এতো শুকনো লাগছে কেন?বদের হাড্ডিটা খাওয়ানা তোকে?”
.
.
আশফিনার হাসি পায়।কিন্তু সেটাকে দমিয়ে বলল,
.
.
-”তেমন কিছুনা বাবা।আপনারা বসুন।”
-”হুম।তা বৌমা কিন্তু ভিডিও থেকে ও খুব সুন্দর।আমার ছেলেটার চয়েজ আছে বলতে হবে।”
.
.
কিছুটা অপমানিতো বোধ করে রামীন।মাকে বলল,
.
.
-”দেখো মা বাবা কিন্তু আবার ও শুরু হয়ে গেছে।”
-”তোদের বাপ ছেলের ঝগড়া শেষ হবার নয়।তোরা ঝগড়া কর।আমি বৌমাকে একটু দেখি। আশফিনা কেমন লাগছে এই বাসায়?”
-”খুব ভালো মা।ভাই ভাবি খুব ভালো।”
.
.
রামীন তৎখনাৎ বলল,
.
.
-”আর আমি?”
.
.
আশফিনা লজ্জা পেলো।লোকটা ও না।কি যে বলে?বাবা মায়ের সামনে ও কি করে বলবে ভাগ্য গুনে এমন স্বামী পেয়েছে।রামীনের বাবা মা খুব ভালো।খুব আদর করে নিজেদের পাশে বসিয়ে দুই বৌকে খাওয়ালেন।এদিকে সামায়রার সামনেই হঠাৎ একটা মেয়ে এসে ফাহমিনকে জড়িয়ে ধরে বলল,
.
.
-”ভালো আছো ফাহমিন?কই ছিলে তুমি এতোদিন?কতো খোঁজার ট্রাই করেছিলাম জানো?”
.
.
ফাহমিন ভড়কে যায়।কিন্তু মেয়েটাকে দেখে হেসে বলল,
.
.
-”ছিলাম।শুনো মনের টান থাকলে খুঁজে পাওয়া যায়।তুমিতো হারিয়ে গিয়েছিলে।”
-”তা বেশ বলেছো।তা কেমন চলছে ডাক্তারি?”
-”ভালো।”
.
.
মেয়েটার সাথে কথা বলতে বলতে ফাহমিনের সামায়রার কথা মনে পড়ে।সামনের চেয়ারের দিকে চোখ পড়তেই চিন্তিত হয়ে পড়ে ফাহমিন।কই গেলো মেয়েটা?এখানেই তো ছিলো।ফাহমিন তার ছোট বেলার ফ্রেন্ড লীনা কে বিদায় দিয়ে সামায়রাকে খুঁজতে বের হয়।এদিকে সামায়রা কাঁদতে কাঁদতে ঘরে চলে আসে।লোকটা এমন কেন করলো?কেন ওর সামনে ওই মেয়েকে জড়িয়ে ধরলো?তার কি একবার মনে পড়েনি সামায়রা সেখানে আছে।সামায়রার অজান্তেই খুব খারাপ লাগছে।ভীষন খারাপ কেন তা ও জানেনা।এদিকে রোায়েন ঘরে এসে দেখলো একটা কাগজে কিছু লিখছে রুহী।রোয়েন এসে পিছন থেকে দেখার ট্রাই করে।দেখতে না পারায় আরেকটু ঝুঁকতে গেলেই রুহীর পিঠে ওর বুক লাগতেই রুহী উঠে দাঁড়িয়ে পেজটাকে সরিয়ে বলল,
.
.
-”খুব খারাপ।লুকিয়ে দেখো কেন?”
-”দেখলেকি হবে?”
-”অনেক সমস্যা আছে।”
-”কেমন সমস্যা?”
.
.
রুহীর দিকে একটু ঝুঁকে রোয়েন রুহী বলল,
.
.
-”সব জানতে হবেনা।কেমন গেলো সারাদিন?”
-”ভালোই।তোমার কেমন গেলো?”
-”তোমাকে মনে পড়ছিলো খুব।আর এমনিতেই ভালো গিয়েছে।রামীলার সাথে গল্প করলাম।”
-”হুম।আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”
-”আচ্ছা।”
.
.
রোয়েন ফ্রেশ হতে চলে যায়।রুহী কাপড় বের করে খাবার গরম করে নেয়।খাবার শেষে দুজনে বিছানায় এসে বসে।রুহী রোয়েনের কোলে চড়ে বসে ওর মাথার চুল হাতিয়ে দিচ্ছে।রোয়েন রুহীর কোমড় জড়িয়ে ধরে আছে।রুহী হঠাৎ বলল
.
.
-”আশফিনার শ্বশুর শাশুড়ি এসেছে শুনলাম।”
-”কে বলল?”
-”ও নিজেই বলল।”
-”রামীন ও কিছু বলল না কেন?”
-”হয়ত ভাইয়ার খেয়াল ছিলো না।”
-”হুম হতে পারে।ওনাদের সাথে দেখা করে আসবো।”
-”আমি ও যাবো?”
-”যেতে হবে। কিন্তু এ অবস্থায় বের করতে মন চায়না।ভয় পাই।”
-”যতক্ষন তুমি আছো আমি ভালো থাকবো।”
-”রুহী!!”
-”জি?”
-”আমি একজন মাফিয়া।কখনো কিছু হয়ে গেলে থাকতে পারবেনা?”
-”কি হবে? ”
-”ধরো যদি আমি চলে যাই।”
-”বাজে কথা বলবেনা একদম।তুমি জানো এসব কথা নিতে পারিনা।তারপর ও কেন বলো?”
-”রুহী এখন ও কতোটা দূর্বল তুমি।আমার বৌ তুমি।সে হিসেবে অনেক স্ট্রং থাকতে হবে তোমাকে।এতটাই স্ট্রং আমার লাশকে হাসি মুখে বিদায় দিবে।”
-”তোমার কি মাথা গেলো?কি বলছো এসব?আমি এতো শক্ত হতে পারবোনা।মরেই যাবো কিন্তু তোমাকে হারাতে পারবোনা।আমি কি নিয়ে বাঁচবো?”
-”আমাদের বাবু!!”
-”না তোমাকেই লাগবে।আমার তোমাকেই চাই সারাজীবন।”
-”রুহী আমি ও তোমাকে চাই।খুব করে চাই।কিন্তু বাস্তবতা মেনে নিতে হবে।”
-”এতো মানতে পারবোনা।এসব কথা বলে আমাকে কাঁদিয়ে কি মজা পাও বলো তো?”
-”সরি।আর বলবোনা।”
-”অনেক বার বলেছো এমন?খুব খারাপ তুমি।”
-”আচ্ছা।”
.
.
রুহীর কপালে ঠোঁট চেঁপে চুমু খেয়ে ওকে বুকে নিয়ে শুয়ে পড়ে রোয়েন।পরদিন সকালে রুহী রোয়েনের পিছে এসে দাঁড়ায়।অফিসের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে রোয়েন।রুহী বলল,
.
.
-”আমি আর আশফিনা মার্কেটে যাবো।”
-”কি লাগবে?আমি এনে দিবো।”
-”না আমাকে যেতে হবে তুমি বুঝবেনা।”
-”কি বুঝবোনা?”
-”কথা বাড়াবেনা।আমি বের হচ্ছিই মানে হচ্ছে।”
-”ওকে।তা কই যাবে”
-”পিংক সিটি।”
-”ওকে।বাট সাবধানে যেও।আর একা কোথাও যেওনা।”
-”আচ্ছা।”
.
.
রোয়েনকে উষ্ণ চুম্বন দিয়ে বিদায় জানায় রুহী।আশফিনা কে নিয়ে শপিংমলে চলে যায় ও।খুব একটা স্পেশাল দিন আজ।শপিং করার মাঝেই একজন লম্বা সুদর্শন লোককে দেখতে পায় রুহী।সে কি যেন খুঁজছে।রুহীকে দেখে লোকটা ওর দিকে হেঁটে আসে।লোকটার চেহারায় বয়স্কের ছাপ থাকলে ও তা কিছুটা লুকিয়ে ফেলেছে তার ফিটনেস।লোকটা এসে রুহী কে বলল,
.
.
-”রুশ চৌধুরী কই থাকে জানো?শুনলাম এই এলাকায় থাকে।”
-”না চিনিনা।”
-”আসলে একটু দরকার ছিলো।মা তোমার কছে পানি হবে?অনেক সময় ধরে ঘুরছি।ক্লান্ত লাগছে।”
-”জি আঙ্কেল দিচ্ছি।”
.
.
রুহী পানির বোতল লোকটার দিকে এগিয়ে দেয়।এদিকে রোয়েন কাজে বিভোর হঠাৎ ওর এক লোকের কল পেয়ে মনযোগ কাঁটে ওর।ফোন রিসিভ করে কানের সামনে ধরে।কিছু কথা শোনার প্রচন্ড জোরে চিৎকার করে উঠে রোয়েন।
চলবে