The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 99
লাল একটি শাড়ি নিয়ে আসেন নীরা হামিদ।ওনার কাছে এ মুহূর্তে তেমন কিছু নেই।শাড়ী দেখে শেষ আশা টুকু ও ফুঁড়িয়ে গেলো সামায়রার।ও নীরা হামিদের তুলনায় বেশ লম্বা।ওনার শাড়ী ওর হয়না ঠিক মতো।সামায়রার মুখ কাঁদো কাঁদো হয়ে গেলো।নীরা হামিদ এগিয়ে আসেন মেয়ের কাছে।তারপর বললেন,
.
.
-”দেখ ঘরে লাল এটাই আছে।”
-”এটা আমার হবেনা।আর কলেজে শাড়ী পরে কিভাবে যাই?”
-”সব তো তুই বলিস।হঠাৎ কিড়া উঠলো লাল জামা পড়বি।এ রাতে লাল জামা কই পাবো?”
.
.
কিছু বলতে পারেনা সামায়রা।মনে মনে ফাহমিন কে হাজার খানেক গালি দিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগে।রুহী পাশে লোকটাকে দেখছে।কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে সে।কিছুক্ষন পর পরই চোখের কোনে পানি এসে জমা হচ্ছে।রুহী এসে জড়িয়ে ধরে রোয়েনকে।মন খারাপ করে বলতে থাকে,
.
.
-”কান্না করোনা প্লিজ।আমার ভালো লাগছেনা তোমাকে এভাবে দেখতে।কথা ও বলছো না।রোয়েন!!!বলো না কথা প্লিজ।”
-”কি বলবো রুহী?পুরোনো আগুনটা আবার জ্বলে উঠলো।নিভাবো কি করে?”
-”দেখো আমি আছি আমাদের বাবু আছে তোমার সাথে।প্লিজ মন খারাপ করোনা। আমি তোমার সাথেই থাকবো সবসময়।”
-”আমি জানি তুমি থাকবে।আমি ও চাই আমরা একসাথে থাকবো।জানো আমার মা ও চাইতো একসাথে থাকবো আমরা।বাবা দুজনে কাজ করে আমাকে সুন্দর ভবিষ্যৎ দেবে।কিন্তু হলো না।জানো কাজ থেকে ফিরতো খুব রাত করে।মা অপেক্ষা করতো বাবা কখন আসবে।দুজনে একসাথে ডিনার করবে।কিন্তু তা কখনো হতোনা।বাবা এসে খুব গালি গালাজ করতো।এমনকি মাঝো মধ্যে নিজের গার্লফ্রেন্ডদের এনে মায়ের সামনেই থাকতো তাদের সাথে।আমি জানি না মা কিভাবে সহ্য করতো?দিনের পর দিন এসব অত্যাচার চলতো জানো? বাবার এলিনা নামক একজন গার্লফ্রেন্ড ছিলো।সে সকালে মাকে এসে তার প্রেগন্যান্সির কথা বলল।আমার বাবার সন্তান ছিলো।মা খুব কেঁদেছিলো রুহী।খুব কষ্ট পেয়েছিলো।কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়েছিলো।জানো এগুলো সহজ না রুহী।তুমি পারবে?পারবেনা।”
-”তোমার ওপর নিজের থেকে বেশি বিশ্বাস আছে।এভাবে বলোনা।বুকে লাগে।”
-”আমার মায়ের ও লেগেছে জানো।জন্মের পর একটা মাস ও পাইনি মাকে।যখন আমার সবচেয়ে বেশি মাকে দরকার ছিলো।”
-” অনুভব করতে পারছি তোমার কষ্ট বুঝতে পারছি কেমন লাগছে তোমার।আমি ও মাকে হারিয়েছি জন্মের পরপরই।মায়ের সাথে কোন স্মৃতি নেই আমার।নানু মাঝে মাঝে মায়ের কথা বলতো।তোমার কাছে মায়ের স্মৃতি আছে আমার কাছে সেটাও নেই।তাই হয়ত কম কষ্ট হয়।”
-”রুহী কখনো যেও না আমাকে ছেড়ে প্লিজ।মরে যাবো আমি।তুমি আর আমাদের বাবু আমার একমাত্র বাঁচার উপায়।”
-”কই যাবো বলো?তুমিই সব আমার।আমি তোমাকে ছাড়া একটা মুহূর্ত ও ভাবতে পারিনা।একটা প্রমিজ করি।”
-”করো।”
-”তোমাকে দুনিয়ার সব ভালবাসা দিবো।সব সময় বুকের মাঝে রাখবো।”
.
.
রোয়েনের মুখে হাসি ফুঁটে উঠে।রুহী মুখ বাড়িয়ে রোয়েনের কপালে চোখের পাতায় চুমু খায়।রোয়েন ম্লান হাসে।রুহী সরে এসে নিজের ওষ্ঠের দিকে ইশারা করে।রোয়েন হেসে রুহীকে বুকে টেনে নেয়।দীর্ঘ চুম্বনের সৃষ্টি হয়।কতক্ষন এভাবে চলতে থাকে কারোর জানা নেই।এদিকে আশফিনা মুখ ফুলিয়ে বসে আছে খাটের এক কোনায়।রামীন ঘরে আসার পর থেকেই এটা ওটায় ব্যাস্ত।বিয়ের দুমাস হতে চললো।লোকটার মাথায় জ্ঞান ট্যান নেই নাকি?বৌকে সময় না দিয়ে ল্যাপটপ আর ফোনকেই সময় দিচ্ছে।আশফিনা রেগে রুহীর নম্বরে কল দেয়।এদিকে রোয়েন আর রুহী নিজেদের মাঝে মেতে আছে।ফোনের শব্দে বিরক্ত হয় ও।পাশের ছোট্ট বালিশটা ফোনের ওপর ছুড়ে মারে রোয়েন।ফোনটা কার্পেটের ওপর পড়ে যায়।আশফিনা কান থেকে ফোন সরিয়ে নেয় প্রচন্ড রেগে।ফোন টা ছুড়ে ফেলে ফ্লোরের ওপর।যার কারনে ব্যাটারি খুলে যায়।এদিকে শব্দে রামীনের ঘোর ভাঙ্গে।
.
.
-”একটু কর কল করছি আপনাকে।ব্যাপারটা কাল রোয়েনকে বলে আপনাকে জানাচ্ছি।আর আই ডোন্ট থিংক রোয়েন এই কোম্পানীর গ্রেনেড নিবে।”
.
.
কল কেঁটে বৌকে দেখে ফোনের দিকে তাকায় রামীন।তারপর একটু হেসে নেয়।কারন বুঝতে পারছে কেন রেগে আছে বৌটা।তারপর ও মজা করার জন্য বলল,
.
.
-”হায় হায় আশফিনা কি করলে?এতো দামি সেটটাকে ভেঙ্গে দিলে।”
.
.
আর সহ্য করতে পারেনা আশফিনা।রেগে চেঁচিয়ে বলল,
.
.
-”চাইলে আপনার মাথা ও ভেঙ্গে দেখাতে পারি।”
-”তাহলে রাগ ঝাড়বে কার ওপর?”
-”রামীন চুপ থাকেন একদম চুপ থাকেন।রাগ লাগছে।দেখুন গিয়ে আপনার বন্ধু রুহীকে আদর করছে।শুদু আপনিই এমন করেন।”
-”আস্তাগফিরুল্লাহ নাউজুবিল্লা কি বলো এসব?ওসব দেখতে কেমনে যাবো?”
-”কথার কথা বুঝেননা?আসার পর থেকেই কাজে ব্যাস্ততা গিরি দেখাচ্ছেন।আমি তো থেকে ও নেই তাইনা?”
.
.
প্রচন্ড হাসি পায় রামীনের।আশফিনার দিকে এগুতে এগুতে বলল,
.
.
-”ভালবাসা চাই?”
-”একদম না।গিয়ে ভালবাসুন ফোন আর ল্যাপটপকে।আমার কাছে আসবেননা।”
-”তাহলে ওদেরই ভালবাসা দেই দশ মাশ পর পর ওরা আমাকে নিউবর্ন ল্যাপটপ আর ফোন পয়দা করে দিবে।”
.
.
বলে চলে যেতে থাকে সামীন।তখনই আশফিনা দৌড়ে ওকে পছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
.
.
-”আচ্ছা লোক তো আপনি?যেতে বললাম বলেই চলে যাবেন?”
.
.
রামীন পিছনে ফিরে আশফিনার কপালে চুমু খেয়ে জড়িয়ে নেয় বুকে।আশফিনা একদম মিশে যায় রামীনের বুকে।কিছুক্ষন পর সরে আসে রামীন।তারপর কোলে তুলে নেয় আশফিনাকে।বিছানায় শুইয়ে ওর গলায় মুখ ডোবায়।পুরো পরিবেশ থম থমে হয়ে উঠে।দুজোড়া দম্পতি ভালবাসার সাগরে মেতে আছে।
এদিকে আনিলা আর রেজোয়ান ঘোরাঘুরি করছেন মালোয়াশিয়াতে।বিভিন্ন বিচ আইল্যান্ডে ঘুরছেন।আর অবসর সময়ে রুহী সহ বাকি সবার জন্য শপিং করেছেন।রুহীর সময়ে বেশ সজাগ আনিলা।কোনটায় কম্ফোর্ট ফিল করবে ও?কোনটায় ওর কষ্ট হবেনা চলতে।রুহীর পছন্দের প্রতি বিশেষ খেয়াল আনিলার।
রেজোয়ান ও খুব খুশি।আনিলাকে বেশ কিছু জিনিস গিফট করেছেন।রাতে ফিরে আসেন তারা।দুজন হোটেলের সামনের বাগানটিতে গরম দুমগ কফি নিয়ে বসেন।রেজোয়ান লজ্জা বোধ করছেন আনিলার তাকানোয়।আনিলা একদৃষ্টে রেজোয়ানকে দেখছেন।
.
.
-”তা কালকের কি প্ল্যান?”
.
.
আনিলার ঘোর কাঁটাতে জিজ্ঞেস করেন রেজোয়ান।আনিলা বেশ বুঝলো।তাই বলল,
.
.
-”কালকের প্ল্যান হলো তোমাকে খুব আদর করবো।”
-”মাথা খারাপ হয়েছে তোমার।”
-”আপন বৌ তোমার।”
-”তাই বলে এই বয়সে এসব ভাল শোনায়না।”
-”তুমিইতো বিরক্ত করলে।আমার মনযোগ কাঁটালে।”
.
.
উঠে দাঁড়ান রেজোয়ান।মগ হাতে বললেন,
.
.
-”রুমে চলো রাত হয়ে গেছে।”
.
.
বলেই আর অপেক্ষা করেননা রেজোয়ান।দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমে চলে যান।আনিলা মলিন হেসে চায়ের মগে চুমুক দেয়।রোয়েনের বুকে শুয়ে আছে রুহী।রুহীর লম্বা চুল গুলো নিয়ে খেলায় মজে আছে রোয়েন।রুহীর ভালো লাগছে।রোয়েনের আঙ্গুল গুলো ওর ঘাড়ে হালকা দাগ টানছে।আর তাতেই শিউরে উঠছে ও।রোয়েন হঠাৎ বলল,
.
.
-”তোমার চুল গুলো এত বড় করলে কিভাবে?”
-”মামী একটা তেল পাঠাতো স্পেশালী আমার জন্য।সেটা খুব ভালো ছিলো।চুল বেড়ে উঠেছিলো আর পেয়াজের রস ও দিয়েছিলাম।হঠাৎ এমন প্রশ্ন?”
-”তোমার চুল গুলো খুব ভাল লাগে।আমাদের মেয়ে হলে ওর চুল গুলো তোমার মতো হবে।”
-”আর দেখতে তোমার মতো হবে।মেয়েরা তো বাবার দিকটাই পায়।”
-”আর তোমার মতো লক্ষী হবে।”
-”সে ছেলে হোক মেয়ে হোক রোয়েন আমি চাই ও সৎ একজন মানুষ হবে ঠিক তোমার মতো।”
-”ইনশাল্লাহ।বাবা মায়ের দোয়া সন্তানের জন্য খুব বেশি কাজ করে।”
-”হুম।”
-”ঘুমোতে হবে।ঘুমিয়ে পড়ো।”
-”হুম।একটু পর ফজরের আজান দিবে রোয়েন।”
-”ডেকে দিও।”
-”আচ্ছা।আর তুমি জাগনা পেলে আমায় ডাকবে।”
-”হুম।”
.
.
এদিকে সকালেই নীরা হামিদ লাল একটা গাউন নিয়ে মেয়ের রুমে আসেন।সামায়রা গাউনটা দেখে চিনে ফেললো।আর বলল,
.
.
-”মা শাড়ীটা কেঁটে ফেললে?তোমার তো খুব শখের শাড়ী ছিলো।”
-”তোর শখ চেয়ে আমার শখ বেশি না।মা হলে বুঝবি।”
-”মা তো হতেই চাই।”
-”ধুর বাদর মেয়ে।যা ফ্রেশ হয়ে কলেজের জন্য রেডি হয়ে নিচে আয়।”
-”ওকে।”
.
.
নীরা হামিদ যেতে নিয়ে থেমে পিছে ফিরে।তারপর ভ্রু কুঁচকে বললেন,
.
.
-”ক্লাশে যাবি? নাকি অন্য কোথাও?
-”অন্য কই যাবো মা?”
-”জানিনা হঠাৎ তোর লাল জামা পরার এতো শখ হলো তাই বললাম।”
-”পরতে ইচ্ছে হলো মা হঠাৎ করেই।বিশ্বাস করো না আমাকে?”
-”করি অবশ্যই করি।আচ্ছা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।
-”ঠিক আছে।”
.
.
সামায়রা ফ্রেশ হতে চলে যায়।এদিকে নির্দিষ্ট সময়ে নিচে নেমে আসে ফাহমিন।সামায়রাকে খুঁজতে থাকে এদিক ওদিক তাকিয়ে।হঠাৎ চোখের সামনে পড়লো লাল গাউনে আচ্ছাদিত সামায়রা।মেয়েটাকে কতোটা সুন্দর লাগছে তা বলে বুঝানো মুশকিল।সামায়রা হেসে হাত নাড়ায়।ফাহমিন রাস্তা পার করে সামায়রার কাছে চলে আসে।দুজনের মুখে হাসি।
চলবে