The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 09
→একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে রুহী।জালাল উদ্দীন ওর পেটে গলায় গালে ঠোঁটে পায়ে হাতে হাত ছোঁয়াচ্ছিলো।গলা ফাঁটিয়ে চিৎকার করে কাঁদছিলো রুহী।কিন্তু কেউ শুনেনি।কাঁদতে কাঁদতে একসময় নেতিয়ে পড়ে ও।তারপর ও চিৎকার করতে চেয়েও পারেনি ও।ডুকরে কাঁদছিলো বারবার আর অস্ফুট স্বরে রোয়েনের নাম নিতে নিতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।এদিকে রোয়েন লন্ডনে নিজের বাড়িতে উঠে এখানকার লোকদের একজন কে কল করে।অপরপাশ থেকে দুটো রিং হতেই একজন কল রিসিভ করে,
.
.
-সালাম স্যার।
-সাঈদ তোমাকে আমার লাগবে এখন।
-জি স্যার বলুন।
-বাংলাদেশে একজন পলিটিশিয়ান আছেন জালাল উদ্দীন নামে।
-জি স্যার।
-তোমাকে দুটো ছবি দিচ্ছি।এদের খুঁজে বের করো।আর লন্ডনে জালাল উদ্দীনের অফিসের ঠিকানা আমাকে দাও।যতো দ্রুত পারো।ইটস আর্জেন্ট।
-জি স্যার আমি ট্রাই করছি।
-শিওর।
.
.
রোয়েন ফোন কেঁটে রুহী আর সামিরের ছবি পাঠায় সাঈদের নম্বরে।রেজোয়ান মাহবুব লুকিয়ে চোখ মুছে নিচ্ছেন।শামীম কার সাথে যেন কথা বলছে।কিন্তু রোয়েন সে তো রুহীর ছবি সামনে নিয়ে বসে আছে।মায়াবতী আমি এসে গেছি।কিছু হবে না তোমার।তুমি যতো কষ্ট পাচ্ছো তার অনেকগুন কষ্ট ওরা পাবে। শুধু তোমাকে বাহুডোরে বন্দী করে রাখতে চাই।কখনো নিজের থেকে আলাদা করবোনা।বুকের মাঝে ছিলে আছো থাকবে।এদিকে জালাল উদ্দীন একসময় খেয়াল করে রুহী কাঁদছেনা।জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে মেয়েটা।জালাল উদ্দীন সরে এসে ওর নাকের নিচে হাত রাখেন।শ্বাস প্রশ্বাস চলছে।সামির ও দৌড়ে এলো রুহীর কাছে।তারপর রুহীর দিকে তাকিয়ে জালাল উদ্দীন কে বলল,
.
.
-কি হলো বস?
-জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে ও।
-সামির তুমি থাকো।আমি আমার পার্সোনাল ডক্টরকে আসতে বলি।
-ওকে স্যার।
.
.
জালাল উদ্দীন নিজের একজন পাকিস্তানি ডাক্তার কে কল দিয়ে আসতে বলেন।কিছুক্ষনের মাঝে ডাক্তার চলে আসে।রুহীকে চেকআপ করে জানায় কয়েকদিন ঠিক মতো খায়নি আর আজও সারাদিন কিছু খায়নি।আর এতো টর্চারের কারনেই এমন হয়েছে।ঠিকমতো খাওয়ালে আর কিছুদিন বেডরেস্টে থাকলে ঠিক হবে।
কিছু ঔষধ লিখে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন ডাক্তার।রুহী অজ্ঞান অবস্থায় বিছানার মাঝামাঝি পড়ে আছে।সে রাতে ও ওকে কিছু খাওয়ায়নি ওরা।সকালে রোয়েনের ঘুম ভাঙ্গে ফোনের রিংটোনের শব্দে।ঘুম থেকে উঠে বসে ফোন রিসিভ করে কানে ধরে রোয়েন।অপরপাশ থেকে সাঈদ জালাল উদ্দীনের অফিসের ঠিকানা দিলো আর জানায় রুহীকে জালাল উদ্দীনের অফিসের পাশের বাড়িটায় রেখেছে।সেই এলাকায় একটাই বাড়ি আর সব দোকান পাট আর অফিস।রোয়েন ফোন কেঁটে রেজোয়ান মাহবুব আর শামীমকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।সেই সাথে ওর এখানকার লোকেরা ও আছে।এদিকে রুহীর জ্ঞান ফিরে চোখ আধো খুলতেই সামির আর জালাল উদ্দীনকে দেখতে পায়।তারা সোফায় বসে আছে।রুহী আবার চোখ বন্ধ করে অজ্ঞানের মতো পড়ে রইলো।জালাল উদ্দীন আর সামির গল্প করছে রুহী শুনতে পাচ্ছে। সামির বলছে,
.
.
-বস ওর জ্ঞান ফিরলে আরো অনেক কষ্ট দিয়ে করবেন।আর পারলে কাল নিজের কাজ সাড়বেন।
-ঠিক বলেছো সামির।আমার আর তর সইছেনা।তবে তুমি সত্যি কিছু করোনি তো ওর সাথে?
-না বস একদম ফ্রেশ।আমি স্পর্শ করিনি।
-তাহলেই হবে।
-বস আমি নাস্তা নিয়ে আসি।আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।
-ঠিক আছে সামির।
.
.
জালাল উদ্দীন আর সামির দুজনেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।রুহী চোখ খুলে তাকানোর চেষ্টা করে।তারপর ধীরে ধীরে উঠে দরজা লাগিয়ে দিয়ে খাটে বসে পড়ে।কিছুসময় পার হতেই দরজায় জোরে জোরে নক শুনতে পায় রুহী।জালাল উদ্দীন বাহির থেকে চিৎকার করে ডাকছেন,
.
.
-এই দরজা খোল!!!!জলদি খোল।নাহলে খুব খারাপ হবে কিন্তু।
.
.
রুহী কাঁদতে শুরু করেছে।ভীষন ভয় লাগছে ওর।জালাল উদ্দীন যতো জোরে দরজায় বাড়ি লাগাচ্ছেন ততো জোরে কাঁদছে রুহী।হঠাৎ খুব জোরে শব্দ পেলো ও।যেন কিছু ভাঙ্গার শব্দ।তারপর আর নকের শব্দ পায়নি রুহী।ও জানেনা বাহিরে কি হচ্ছে কিন্তু বের হবে না ও।এদিকে সামির রোয়েন আর তার লোককে জালাল উদ্দীনের বাড়ির ভিতরে দেখে।জালাল উদ্দীনকে ছয়জন ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে বন্দুক হাতে। দৌড়ে পালিয়ে যায়।রোয়েন দরজা ভেঙ্গে ঢুকে যায় যখন জালাল উদ্দীন রুহীর রুমের দরজায় নক করছিলেন।তারা জালাল উদ্দীনকে ঘিরে ধরে।রেজোয়ান মাহবুব দরজায় নক করতে থাকেন।কিন্তু দরজা খুলে না রুহী।
.
.
-রুহী দরজা খোল।আমি তোর বাবা।
.
.
কথাটা শুনতেই আর অপেক্ষা করতে পারেনা রুহী।খাট থেকে নেমে দরজা খুলে দেয়।রেজোয়ান মাহবুব এসে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নেন।রুহী বাবাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে।রোয়েন জালাল উদ্দীনকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে নিজের এলাকার জেলে বন্দী করে রাখতে বলে রুহীর রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়।রুহী কাঁদছে রেজোয়ান মাহবুবকে ধরে।রোয়েন পলকহীন দৃষ্টিতে মায়াবতী কে দেখে নেয়। তারপর সরে যায় সেখান থেকে।জালাল উদ্দীনকে রোয়েনের আরো কিছু লোক সহ বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যাবস্থা করে।রুহীকে হাসপাতালে আনা হয়েছে।স্যালাইন দেয়া হয় রুহীর হাতে।কারন বাবাকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাবার কোলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ও।রোয়েন অস্থির হয়ে যায়।রুহীকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।রুহীর হ্যাতে স্যালাইন দেয়া হয়েছে।ওর প্রেশার অনেক লো।জ্ঞান ফেরার পর পাশে তাকিয়ে বাবা শামীম আর আলাদা একটা সোফায় রোয়েনকে দেখতে পায় রুহী।রেজোয়ান মেয়ের মাথার কাছে এসে দাঁড়ান।
.
.
-কেমন লাগছে তোর?
-মাথাটা ভীষন ঘুরাচ্ছে বাবা।
-স্যালাইন দেয়া হয়েছে।আস্তে আস্তে ভালো লাগবে।কিছু খাবি মা?
-জি বাবা।খুব খিদে পেয়েছে।
-আমি দেখছি।
-জি।
.
.
রেজোয়ান মাহবুব বেরিয়ে গেলেন।রুহী শামীমের দিকে তাকায়।তারপর মুখে মলিন হাসি টেনে বলল,
.
.
-থ্যাংক ইউ ভাইয়া আমাকে সেভ করার জন্য।
-রুহী এসব বলো না।আমি তোমার বড় ভাই আর এটা আমার দায়িত্ব ছিলো।আর যা করেছে বসই করেছেন।আমি তো জাস্ট হেল্প করেছি।
-তারপর ও ভাইয়া।
-হুম।
.
.
রুহী এবার রোয়েনের দিকে তাকায়।তারপর ভিতরে কিছুটা সাহস যুগিয়ে বলল,
.
.
-থ্যাংকস!!!
.
.
রুহীকে আশ্চর্য করে দিয়ে রোয়েন চুপচাপ ওর সামনে থেকে উঠে চলে গেলো।রোয়েনের যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলো রুহী।
,
,
,
,
এদিকে থেকে রুহী ডাক্তাদের দেখলে ভয়ে চিৎকার করে উঠে।ওর মনে হতে থাকে ডাক্তারগনের বেশে জালাল উদ্দীন ওকে ধরতে আসছে।ভূষন ভয় পেতে শুরু করে রুহী।যার কারনে ডাক্তাররা ওর কাছে আসতে পারেনা।রুহী নিজেও ডাক্তারদের কাছে আসতে দেয়না।যার কারনে রেজোয়ান মাহবুবকে সব করতে হচ্ছে।রোয়েন রুহীর সাথে কথা বলেনি একবার ও।শুধু দেখে গেছে ওকে।সাতটা দিনে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছে রুহী।রোয়েন এবার ওদের প্লেনের টিকিটের ব্যাবস্থা করে।রুহীকে রোয়েনের লন্ডনের বাড়িতে অানা হয়।রোয়েন চুপচাপ রুমে দাঁড়িয়ে সিগারেটে ফুঁক দিচ্ছে।রেজোয়ান মাহবুব রোয়েনকে সবসময় কাজের মাঝে দেখেছেন।কিন্তু কখনো একান্ত ভাবে দেখেননি।রেজোয়ান মাহবুব বলে উঠেন,
.
.
-স্যার আসবো?
-হুম।আসুন।
-স্যার আপনাকে চিন্তিত মনে হচ্ছে।
-হুম।আপনি জানেন রুহীকে ভালোবাসি আমি।ওকে হারানোর কথা ভাবতে পারিনা আমি চাই এখন থেকে ও আমার সাথে থাকবে।ওর সব দায়িত্ব আমার।
.
.
রেজোয়ান মাহবুব আর কিছু বলতে পারলেননা।এদিকে রুহী বিছানায় আধশোয়া হয়ে একটা বালিশ বুকে চেঁপে ধরে আছে।রাত হলেই ওর চোখের সামনে ভেসে উঠে জালাল উদ্দীনের দানবের মতো হাসি আর সামিরের করা ব্যাবহার।বুকটা কেঁপে উঠে ওর।বাবা মা ছাড়া বড় হয়েছে ও।ছোটবেলা থেকে নানা নানুকেই দেখে আসছে।বড় হয়ে সামির কে ভালবাসার মানুষ হিসেবে।কিন্তু সে এতো বড় ধোঁকা দিবে ভাবতে পারেনি রুহী।আর কাউকে কিভাবে বিশ্বাস করবে রুহী???রোয়েন!!!! বুক ভেঙ্গে বড় নিশ্বাস বেরিয়ে এলো রুহীর।অশ্রুসজল চোখ কিন্তু ঠোঁটে ফুঁটে উঠে অশ্রু মিশ্রিত হাসি।কিন্তু তারপর ও চোখে মুখে অজানা ভয় ফুঁটে উঠে রুহীর।ওনি তো মাফিয়া। ওনার কাজ মানুষকে মেরে ফেলা।কি করে ভালোবাসবেন ওনি?আর কিছু ভাবতে পারেনা রুহী।আর ভালোবাসবেনা কাউকে বিশ্বাস ও করবেনা।পরদিন রাতের ফ্লাইটে বাংলাদেশের জন্য রওনা হয় ওরা।দুদিন পর বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখে সবাই।রেজোয়ান মাহবুব মেয়েকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রোয়েনের বাসায় পাঠিয়ে দেয়।
লন্ডন থেকে ফেরার পরদিন সবাই কাজে চলে আসে।রামীন বসে আছে রোয়েনের পাশে।রোয়েনের মুড কেমন সেটা দেখে রামীন জিজ্ঞেস করে,
.
.
-কেমন আছে ভাবি?
.
.
রামীনের প্রশ্নের ওর দিকে আড় চোখে তাকায় রোয়েন।তারপর সামনে তাকিয়ে বলল,
.
.
-হুম ভালো।
-যেভাবে তাকাস।কবে হার্ট ফেল করি তোর চোখের ঐ চাহনি তে।
.
.
রোয়েন এবার রাগী চোখে তাকায়।এদিকে শামীম রেজোয়ান মাহবুবের সামনে এসে বসে।
.
.
-একটু কথা ছিলো।
-বলো শামীম।
-স্যার রুহীর সাথে কথা বলুন।ওর এখন আপনার সাপোর্ট অনেক দরকার।
-শামীম এ নিয়ে পরে কথা হবে।
-না স্যার আজই।রুহী ছোট বেলা থেকে ওর নানা নানুর কাছে মানুষ হচ্ছে।জানি বলা ঠিক হবেনা কিন্তু রুহী আপনার ভালোবাসা একদম পায়নি।
-আমি তো ওর জীবনে কোন কমতি রাখিনি শামীম।
-স্যার আমি জানি।কিন্তু টাকা ছাড়া ও ভালোবাসাটা খুব দরকার যেটা দেন নি আপনি।জানি আন্টি মারা যাওয়ার পর সব ছেড়ে দিয়েছেন আপনি।তাই বলে আন্টির রেখে যাওয়া স্মৃতিটাকে তো ফেলে দিতে পারেননা।রুহীর জীবনে একজন ভালোবাসার মানুষ সামির ছিলো।যার সাথে ও অনেক কিছু শেয়ার করতে পারতো,যা আপনার সাথে পারেনি কখনো।
যাকে ভালবেসেছে সেই ধোঁকা দিয়েছে ওকে।আজ যদি আপনি ওকে সাথে রাখতেন ভালবাসতেন।আপনার ভালবাসা মাখা হাতটা ওর মাথায় রাখতেন তাহলে কখনোই এমন হতোনা।ও বিশ্বাস করতে পারেনি আপনাকে।এটা তো স্বাভাবিক স্যার।যে মানুষটাকে ভালোবেসেছে ও যাকে পাশে পেয়েছে তাকেই তো বিশ্বাস করবে তাই না?স্যার এখনো সময় আছে।বেচারী আসার পর থেকেই চুপচাপ।কথা বলেনা কারোর সাথে। আমি গিয়েছিলাম কিন্তু কথা বলেনি।আমি এটা সহ্য করতে পারছিনা স্যার।আমার বোনটা আমার চোখের সামনে এভাবে কষ্ট পেয়ে পেয়ে মরে যাচ্ছে মানতে পারবোনা স্যার।প্লিজ কথা বলেন।
.
.
শামীমকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রোয়েনের কাছে আসেন রেজোয়ান মাহবুব।
.
.
-রেজোয়ান আপনি?
-স্যার আমি একটু বাহিরে যাবো।
-আপনি ঠিক আছেন?
-জি স্যার।
-ওকে গো।
.
.
রেজোয়ান মাহবুব আর অপেক্ষা করলেননা।রোয়েনের বাসায় এলেন।রুহী রুমে বসে জানালার বাহিরে দেখছে।লোকরা আসা যাওয়া করছে।রুহীর চোখজোড়া অজান্তে ভরে এলো।
.
.
-রুহী মা আমার!!!
.
.
কান্না জড়িত কন্ঠে কারোর ডাকে পিছে তাকায় রুহী।বাবা কাঁদছে।
.
.
-ব ব বা বাবা তুমি!!!
-মাফ করে দে মা। আমাকে মাফ কর।
.
.
রুহী দৌড়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে।
.
.
-কি বলছো এসব বাবা?মাফ চাইছো কেন?দোষ আমার ছিলো আমি বোকা।শয়তান কে চিনতে পারিনি বাবা।
-না মা আমি তোকে কখনো ভালোবাসিনি সাপোর্ট করিনি।
.
.
রুহী বাবাকে ধরে কান্না করতে থাকে।রেজোয়ান মাহবুব ও মেয়েকে ধরে খুব কাঁদছেন।আজ যেন বাবা মেয়ের ভালোবাসার নতুন জাগরন সৃষ্টি হলো।
চলবে