Mafia Boss- Season- 3

Married To The Dark King-  Mafia Boss- Season 3 !! Part- 82

রায়না রাহমানকে পরদিন রিলিজ দেয়া হয়।রোয়েন আর সাইফ রাহমান রায়না রাহমানকে নিয়ে ঘরে ফিরে আসে।
রোয়েন নিজের কাজ সম্পাদন করার পাশাপাশি মার ভীষন খেয়াল রাখছিলো আর মায়ের সাথেই সময় কাঁটাচ্ছিলো।
আর রুহীর খেয়াল রাখতে ও ভুল করছিলো না।দূরে থেকে ও রুহীর প্রত্যেক সময়ের খেয়াল রেখেছিলো।
কখন কি খাবে,কিভাবে শুবে?হাঁটতে যাওয়া নিয়ে প্রত্যেকটা বিষয় খেয়াল রাখছিলো রোয়েন।
কখনো রুহী ফোন না ধরলে ও রেহান রুপন্তীকে কল দিয়ে রুহীর খবর নিচ্ছিলো।
সবার সামনে হাসি মুখে থাকলে ও রুহীকে খুব বেশি মিস করতো রোয়েন।
সারারাত রুহী রোয়েন এক অপরকে অপলক চোখে দেখে যেতো ল্যাপটপের স্ক্রীনে।রুহীর ছলছল চোখ জোড়া রোয়েনের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করতো।
এভাবে সময় গুলো কেঁটে যেতে থাকে ওদের।
রোয়েনের লন্ডনে ফিরার সময় চলে আসে কাছাকাছি।
এদিকে প্রনয় খান রোয়েনের খবর নিতে উঠে পড়ে লাগছিলো।রোয়েনকে নিঃশেষ করার জন্য হন্য খুঁজতে থাকেন প্রনয় খান।রোয়েন কে পেলেই যেন নিজ হাতে শেষ করে দিবেন।
রায়না রাহমানের কোলে শুয়ে ছিলো রোয়েন।ছেলের চুলে হাত বুলিয়ে কথা বলছিলেন।
-জানিস রোনু আমরা যখন অস্ট্রিয়া ছিলাম সেখানে এলিজাবেথ নামের একটা মহিলা ছিলো।কি যে ভালো ছিলো বিশ্বাস করবিনা।
-এলিজাবেথের একটা মুসলিম ইয়েমেনের ছেলের সাথে বিয়ে হইছে।জামাইয়ের নাম ছিলো শেখ আমির।বিয়ের পাঁচমাস পর ঐ মহিলা মুসলিম ধর্ম গ্রহন করে।
-দুজনেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন।রোজাও রাখতেন।
-বিয়ের একবছরের মাথায় এলিজাবেথ প্রেগন্যান্ট হয়।
প্রেগন্যান্সিতে এলিজাবেথ জানতে পারে ওর হাজবেন্ড একজন টেরোরিস্ট।
-আসলে অস্ট্রিয়ানরাই বলতো আমির টেরোরিস্ট।
-মেয়েটা খুব কাঁদতো সারাদিন কাঁদতো।আমার কাছে এসে কষ্টের কথা গুলা বলতো।
-একটা জিনিস কি ছিলো জানিস বাবা?
-কি মাম্মা?মাথা তুলে তাকায় রোয়েন।
-আমির এলিজাবেথ কে ভীষন ভালোবাসতো।কখনো কষ্ট দেয়নি এলিজাবেথকে।
-ওরা যেন একে অপরের জন্যই তৈরি ছিলো।কেউ কাউকে ছাড়া এক দন্ড ও
টিকতে পারতোনা।
-আমির না ভালোই ছিলো কিন্তু ওকে টেরোরিস্ট কেন বলতো বুঝলাম পরে।
-এলিজাবেথের বাবা নিজেই টেরোরিস্ট ছিলেন পাশাপাশি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।
-আমির মুসলিম হওয়ার কারনে এলিজাবেথের বাবা বিয়েতে একেবারেই রাজি ছিলেননা।
-এলিজাবেথ আর আমিরকে আলাদা করার জন্য উঠে পড়ে লাগেন।
-শেখ আমির ইয়েমেনে চলে যায় তার মা বাবার সাথে দেখা করতে।
-এলিজাবেথ অসুস্থ থাকায় ওকে আর নিতে পারেনা আমির।
-আমিরের ইয়েমেনে থাকা কালীন এলিজাবেথের বাবা মেয়েকে জোর করে বিয়ে দিতে চান।
-ভাগ্যক্রমে আমির জেনে যায়।এবং অস্ট্রিয়ায় ফিরে আসে।এলিজাবেথ কে চার্চ থেকে তুলে নিয়ে যায় আমির।
-কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটে গাড়িতে।আমিরের পিছে এলিজাবেথের বাবার লোকেরা ধাওয়া করে।আমির খুব স্পিডে ড্রাইভ করতে থাকে।
-হঠাৎ গাড়িটা একটা ট্রাকের সামনে চলে যায়।ট্রাক ড্রাইভার গাড়ির ব্যালেন্স হারায় ফেলে।
-অতি উত্তেজনায় আমির কি করবে ভেবে পাচ্ছিলোনা।হঠাৎ খুব জোরে শব্দ হয়ে সব নিস্তেজ হয়ে যায়।দুটো পোড়া লাশ বের করা হয় গাড়ি থেকে।
-গাড়িতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে।এলিজাবেথ আর আমির মারা যায় একে অপরকে জড়িয়ে ধরেই। কথা গুলো বলেই কেঁদে দেন রায়না রাহমান।
রোয়েনের বুক কেমন যেন ধক করে উঠে।খুব অস্থির লাগতে শুরু করে ওর।মাকে সামলানো উচিৎ কিন্তু পারছেনা ও।
কোন মতে উঠে বসে মায়ের চোখ জোড়া মুছে দিয়ে বেরিয়ে যায় রায়না রাহমানের রুম থেকে।রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে রোয়েন।
চোখজোড়া বন্ধ করতেই কেমন যেন গভীর নিদ্রার দেশে তলিয়ে যায় রোয়েন।
ঘড়ির কাঁটার সাথে তাল মিলিয়ে রাত বাড়তে থাকে সেই সাথে রাত ও বাড়তে থাকে।প্রত্যেকটা সেকেন্ড যেন রোয়েনের অস্থিরতা কে জানান দিচ্ছে।
মাঝরাতে রোয়েনের চোখের সামনে ভেসে উঠে মায়াবতীর মায়া ভরা মুখ খানি।
সাদা একটা শাড়ী পরে রুহী রোয়েনের কাছে হেঁটে হেঁটে আসছে।ওর মুখখানি মিষ্টি হাসিতে প্রজ্জ্বলিত।
রোয়েন ও হাত বাড়ায় রুহীর দিকে।ওকে ধরার চেষ্টা করছে রোয়েন।হঠাৎ একদলা রক্ত রোয়েনের মুখে ছিটিয়ে পড়ে।
বাম হাত দিয়ে রক্ত মুছে নিয়ে সামনে তাকাতেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনা রোয়েন।
জোরে চিৎকার দিয়ে রুহীর পাশে বসে পড়ে রোয়েন।রুহীর রক্তে মাখামাখি হয়ে যাওয়া মুখ ধরে কাঁদতে শুরু করে রোয়েন।
রুহীর পেট থেকে গড়িয়ে পড়া রক্তে রোয়েনের কালো শার্ট মাখামাখি হয়ে যাচ্ছে।রুহী রোয়েনের শার্টের কলার চেঁপে ধরে ওর কাঁধে মাথা রাখে।
হঠাৎ বাস্তব জগতে ফিরে আসে রোয়েন।ধপ করে উঠে বসে।এ কি দেখলো ও এতক্ষন?নাহ হতে পারেনা। রুহী কখনোই ওকে ছেড়ে যাবেনা।
ওরা কখনোই আলাদা হবেনা।রুহী কেবল রোয়েনের। কখনোই আলাদা হতে দিবেনা নিজ থেকে।কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই শুয়ে পড়ে রোয়েন।
সকাল ভোরেই ঘুম ভাঙ্গে রোয়েনের।দেরি না করেই নিজের এক লোককে কল দেয় রোয়েন।
অপর পাশ থেকে কথা বলে উঠে লোকটা।
-জি স্যার বলেন।
-আমার ইমার্জেন্সি টিকিট লাগবে ইমেডিয়েটলি।অনেক দরকার।রাগী গলায় বলে উঠে রোয়েন।
-ওকে স্যার দেখছি।বলে উঠে লোকটা।
রোয়েন খাটের ওপর জোরে ফোনটা ছুড়ে মারে।রোয়েন কোন কিছুতেই শান্তি পাচ্ছেনা।ভীষন অস্থির লাগছে।
যতক্ষন না পর্যন্ত রুহীকে বাহুডোরে বন্দী করতে পারছে ততক্ষন পর্যন্ত শান্তি হচ্ছে না ওর।
যতক্ষন না পর্যন্ত ওর মায়াবতীর সিক্ত ঠোঁট জোড়া ছুঁয়ে দিতে পারছে ততক্ষনে শান্তি পাচ্ছে না ও।
নাস্তা সেড়ে কাজে বেরিয়ে পড়ে রোয়েন।
একঘন্টা পর
লোকদের সামনে বসে আছে রোয়েন।
-স্যার আপনার লন্ডনে যাওয়ার ডেট পিছাতে হবে।আমতা আমতা করে বলে উঠে রফিক।
-মুখ শক্ত হয়ে আসে রোয়েনের।হোয়াই?রাগী গলায় বলে উঠে রোয়েন।
-স স স্যার খবর পেলাম প্রনয় খানের লোকেরা আপনাকে খোঁজার জন্য ছড়িয়ে পড়েছে।আপনাকে দেখলেই শুট করে দেবে।বলে উঠে রফিক।
-আই ডোন্ট কেয়ার!!!কিছু হবেনা।জলদি টিকিটের ব্যাবস্থা করাও।দাঁতে দাঁত চেঁপে বলল রোয়েন।
-স্যার বুঝার ট্রাই করেন।আপনার সেফ্টি ইম্পরট্যান্ট। বলে উঠে রফিক।
-আর আমার রুহী আমার বাবু।রক্তচক্ষু দিয়ে বলে উঠে রোয়েন।
-স্যার বুঝতে পারছি বাট,,,,,, কথা বলতে গিয়ে রফিককে থামিয়ে দেয় রোয়েন।
-আমি যাবো দ্যাটস ফাইনাল।আর কোন আর্গুমেন্টস চাইনা,শক্ত মুখে বলে উঠে রোয়েন।
-ওরা কিছু বলতে পারেনা।মাথা নোয়ায় সবাই।
-ওকে স্যার দেখছি।মাথা নিচু করে বলল রফিক।
-দেখছিনা করতেই হবে।আমাকে লন্ডনে ফিরতেই হবে।(আমার রুহীর কাছে ফিরতেই হবে)মনে মনে বলতে থাকে রোয়েন।
রোয়েনের সামনের থেকে লোকেরা চলে যায়।রোয়েন ফোন বের করে রুহীর নম্বরে কল দিলো।
প্রথম তিনবার রিং হওয়ার পর ও রিসিভ হয়নি।রোয়েন আতঙ্কিত হয়ে বারবার কল করতে থাকে রুহীর নম্বরে কিন্তু অপরপাশ থেকে রিসিভ না হওয়ায় ঘাবড়ে যায় রোয়েন।
রেহানের নম্বরে দুবার কল দেয়ার পর তিনবারের সময়ে রিসিভ হয়।
অপরপাশ থেকে কথা বলে উঠে রেহান।
-হ্যালো ভাইয়া!!
-রুহী কই?জিজ্ঞেস করে উঠে রোয়েন।
-ভাবি তো রুমেই আছে।কেন ভাইয়া?জিজ্ঞেস করে রেহান।
-প্রশ্ন করবিনা।ওকে ফোন দে।রাগী গলায় বলে উঠে রোয়েন।
-Is Everything ok? (রেহান)
-প্লিজ রেহান।চিৎকার করে উঠে রোয়েন।
-ওকে দিচ্ছি।বলে সিড়ির দিকে পা বাড়ায় রেহান।
রুহী বিছানায় শুয়ে চোখ বুজে আছে।মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রনা।তিনমাস পেরিয়ে চারমাস হলো।
কিছু একটা অনুভব করতে পারে রুহী ছোট্ট হৃদয়ের ধুকপুকানি শুনতে পায় ও।কেউ যেন ওকে মা মা করে ডাকে।পেটে হাত বুলিয়ে হালকা হেসে রুহী বলে উঠে,
-বাবা আছিস?মাকে শুনতে পাচ্ছিস?জানিস মা তোর জন্য অনেক অপেক্ষা করছি তবে তোর বাবাই খুব বেশি এক্সাইটেড তোর জন্য।
জানিস তোর খালামনি আমার অনেক খেয়াল রাখে তবে তোর বাবার মতো পারেনা।আমি সত্যি অনেক লাকি রে এমন একটা হাজবেন্ড পেয়ে।
কথা গুলো বলতে বলতে রুহীর চোখ পড়ে দৌড়ে আসা রেহানের দিকে।
-ভাবি!!ভাবি!!ভাইয়ার কল।বলে উঠে রেহান।
রুহীর সারা মুখ জুড়ে হাসি ফুঁটে উঠে।
চলবে