Married To The Dark King- Mafia Boss- Season 3 !! Part- 53
বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে রুহীর মাথা হাতিয়ে দিলেন আজিজ রায়হান।রুহী মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।রুহী তোর কিছু একটা হয়েছে।বল না মা?কিছুদিন ধরে তোকে খুব বেশি ডিপ্রেসড মনে হচ্ছে।বল রুহী কি হয়েছে তোর?জোর করতে লাগলেন আজিজ রায়হান।না বাবা তেমন কিছুনা।তোমাদের ছাড়া থাকতে হবে তাই খারাপ লাগছে।ফুঁপাতে ফুঁপাতে বলল রুহী।
রুহী তুই আমার মেয়ে।তোর মনে অন্য কিছু চলছে যেটা তুই আমাকে বলছিস না।বল রুহী কি হয়েছে তোর?বাবা সত্যি কিছু হয়নি।আজিজ রায়হানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলে রুহী।মাথায় হাত দিয়ে রুহীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলেন আজিজ রায়হান।মেয়েটাকে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।কিছু একটা হয়েছে মেয়েটা বলছেনা আমাকে।
রুহীর পথ আটকালো রায়না রহমান।রুহীর চোখ মুছে দিলেন ওনি।কিরে মা কাঁদছিস কেন?জিজ্ঞেস করলেন রায়না রহমান।
রুহী কিছু বলতে পারছেনা।ওর নাক ফুলে ফুলে উঠছে কান্নায়।রায়না রহমান রুহীকে নিজের রুমে নিয়ে এলেন।
রুহী বল মা কি হয়েছে তোর?আবার জিজ্ঞেস করলেন রায়না রহমান।
মামী রোয়েনকে বিয়ে করতে পারবোনা আমি।বলেই কেঁদে দিলো রুহী।
কেন মামনি কি হয়েছে তোর?তোরা তো একে অপরকে ভালোবাসিস তাহলে এখন না করছিস কেন?কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন রায়না রহমান।রুহী চুপচাপ কেঁদে যাচ্ছে।রুহীকে নরমাল করতে রায়না রহমান বললেন গল্পটা তো শেষ করলিনা।কোন গল্প মামী?জিজ্ঞেস করলো রুহী।
ঐযে মেয়েটার হাজবেন্ড মারতো ওকে।বললেন রায়না রহমান।
স্ত্রী তার বড় ছেলেক নিয়ে একদিন শুয়ে ছিলো।সেদিন ও তার বর খুব মারে তাকে।ছেলেটা মাকে বলছিলো আমরা কোথাও চলে যেতে পারিনা?মা বলল তার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।কারন সে যে পালিয়ে বিয়ে করেছে।তার বাবা মা তাকে মেনে নেবেননা।কিছুক্ষন পর লোকটি এসে তার ছেলেকে ফেলে দিয়ে স্ত্রীকে রুমে নিয়ে আবারো ধর্ষন করে।তারপরদিন ওনি নিজের ছেলেকে তার বাবার বাসায় পাঠায় দেয়।তারপর,,,,,হঠাৎ রুহীর ফোন বেজে উঠে।Royen is calling,,,,,,রুহী নিজেকে সামলে নিয়ে ফোন কেঁটে দিয়ে ফোন অফ করে দিলো।রোয়েন আবার ও কল দিতেই ফোন বন্ধ পেলো।আজিজ রায়হানকে কল দিয়ে ও লাভ হলোনা।ফোন পাশে রেখে শুয়ে পড়লো রোয়েন।
তারপর ছেলেটা তার নানা কে বলে দিলো কিভাবে তার বাবা মাকে অত্যাচার করে।মলিন কন্ঠে বলে ফোনের দিকে তাকালো রুহী।চোখের কোনা বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে যাচ্ছে।
,
,
,
,
কথা বলে নে রুহী।বলে উঠলেন রায়না রহমান।মাথা নাড়লো রুহী।না মামী পরে বলবো নে।আবার ও গল্প বলতে লাগলো রুহী।মেয়ের কষ্টের কথায় বাবা নিজেকে আটকাতে পারলেননা।চলে গেলেন মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে।কিন্তু!!!!বলতে গিয়ে গলা ধরে এলো রুহীর।তারপর কি রুহী?রুহীকে ঝাঁকালেন রায়না রহমান।
বাবা ফিরে তো এলো কিন্তু লাশ হয়ে।ধরা গলায় বলল রুহী।রায়না রহমানের চোখ দেখে মনে হচ্ছে ওনি যেন সব চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন।ওনার চোখজোড়া জলে ভরে গেছে।তারপর বাচ্চাটার মায়ের আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।ছেলেটাকে ওর বাবা অর্ফানেজে দিয়ে দেয়।সেখান থেকে বারো বছর বয়সে ছেলেটার মামা ওকে অস্ট্রিয়া নিয়ে যায়।সেখানে ডাক্তারি করে ছেলেটা।ঘরে ফিরে জানতে পারে তার মামা আর নেই।
ক্যান্সার ওনার জীবন কেঁড়ে নিয়েছে।ছেলেটা ভাঙ্গা হৃদয় নিয়ে দেশে ফিরে আসে।
ওর মা কই ছিলো?জিজ্ঞেস করলেন রায়না রহমান।ওর মা কে এসাইলামে দিয়ে আসে তার বাবা।সেখানে মা একটা ছেলে সন্তানের জন্ম দেয়।তারপরের অংশটুকু জানানেই রুহীর।মামী আর কিছু মনে আসছেনা আমার।আমি জানি ও না বাকিটুকু।মন খারাপ করে বলল রুহী।
রুহী আমার কেমন জানি লাগছে।ঘুমোতে হবে।বলে উঠলেন রায়না রহমান।জি মামী ঘুমান আপনি।আমি যাচ্ছি।রুহী বেরিয়ে আসে রুম থেকে।সাতদিনের মাঝে রুহীর টিকিট রেডি হয়ে যায় লন্ডনের জন্য।রাতে টেবিলে বসে কিছু একটা লিখে নিলো রুহী।সকালে পাঠিয়ে দিবে এর পাওনাকারীকে।চিঠিটা ভাজ করে খামে ঢুকিয়ে নিলো।খাটে এসে শুয়ে পড়লো রুহী।কাল ওকে চলে যেতে হবে সবাইকে ছেড়ে।ভালোবাসার মানুষ গুলোকে ছেড়ে যেতে হবে।রোয়েনকে ছেড়ে থাকতে হবে।কিন্তু সে তো আমাকে ছাড়া বেশ ভালো আছে।রুহীর চোখের অশ্রুতে বালিশ ভিজে যাচ্ছে।চোখের পানি দিয়েই সেই রাত কেঁটে যায় রুহীর।পরদিন সকালে চিঠিটা পাঠিয়ে দিলো ওদের কাজের ছেলেটাকে দিয়ে।সন্ধ্যায় প্যাকিং শেষ করে নিলো রুহী।
,
,
,
,
রুপন্তী সেই কতক্ষন ধরে কেঁদে যাচ্ছে রুহীকে ধরে।বাচ্চাদের মতো কাঁদছিস কেন রুপন্তী?আমাদের তো কথা হবেই।কাঁদতে কাঁদতে বলল রুহী।আপি কেন যাচ্ছিস?তোকে ছাড়া কেমনে থাকবো বল।আপি যাসনা।সব ঠিক হয়ে যাবে।রুহীকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো রুপন্তী।রুহী ও বোনকে জড়িয়ে ধরেছে।ক্লাশে বসে আছে রোয়েন।আচমকা ওর চোখের কোনা বেয়ে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।রোয়েন আঙ্গুল দিয়ে মুছে নিলো সেটিকে।কিছু স্তব্ধ হয়ে যায় রোয়েন।কানে বেজে উঠে রুহীর বলা কথা গুলো, “তুমি না আমাকে সময় দাও?সব সময় তোমার বন্ধুদের।আমি তো থেকে ও নেই তোমার দুনিয়ায়।কেন রোয়েন?কেন এমন করছো?প্লিজ আমার এসব ভালো লাগছেনা।এতো অবহেলা নিতে পারছিনা আমি।”বুক থেকে ভারি নিশ্বাস বেরিয়ে আসে রোয়েনের।
Dr Royen You are not attentive in class.Why?প্রফেসর অাহমেদ চেঁচিয়ে উঠলেন।
কিছুটা রাগ হলে ও নিজেকে সামলে নিলো রোয়েন।Sorry sir.It won’t happen again.দাঁড়িয়ে বলল রোয়েন।
Sit down.কিছুটা কর্কশ ভাষায় বললেন প্রফেসর আহমেদ।
Thanks,রোয়েন বসে পড়লো।
রুহীকে এয়ারপোর্ট নিয়ে এলো আজিজ রায়হান,সাইফ রহমান আর রেহান।রুহী কেঁদে কেঁদে পাগল পাগল অবস্থা।কোনমতে ওকে সান্তনা দিয়ে ভিতরে পাঠানলেন ওনারা।রুহী ইমগ্রেশন কমপ্লিট করে একটা চেয়ারে এসে বসলো।বারবার পিছে তাকাচ্ছে, এই তো রোয়েন আসলো ওকে নিতে।কিন্তু আসেনি রোয়েন।সময়মতো সকল যাত্রী প্লেনে উঠে পড়লো।সেদিন রোয়েন ঘরে ফিরেনি।সারারাত সাজিদ রায়হানের বাসার সামনে গাড়ি নিয়ে বসে ছিলো।আজ রোবট গুলো সক্রিয় মনে হচ্ছে।বের হওয়া মানেই মৃত্যু অনিবার্য।রোয়েন দূর থেকে পর্যবেক্ষন করছে কি করে যাওয়া যায় সাজিদ রায়হানের ঘরের ভিতরে।।গেইটের ভিতর বাহির সবজায়গায় কড়া সিকিউরিটি। হঠাৎ জানালায় নক পড়তেই পাশে তাকালো রোয়েন।একটা কালো শার্ট ওয়ালা লোক দাঁড়িয়ে কিছু বলার ট্রাই করছে।বয়স হয়েছে কিন্তু বডিফিটনেস এতোটাই ভালো যে বয়স বুঝা যাচ্ছেনা।
,
,
,
,
রোয়েনের চোখের সামনে ভেসে উঠে সেদিন পার্টির কথা।সেই চোখ তাকানোর ধরন হুবুহু মিল।পিছনে খেয়াল করলো রোয়েন।কোন ধরনের গার্ড নেই।এখন মেরে দেয়াটা বাঁ হাতের কাজ।তবে এই খেলায় মজা লাগবেনা।মারার প্ল্যানটা স্থগিত করলো রোয়েন।জানালাটা নামালো, ইয়েস বলে উঠলো রোয়েন।
এখানে কি করছেন আপনি?লোকটা জিজ্ঞেস করে উঠলো।
এক্চুয়ালি কারোর ওয়েট করছিলাম।বলে উঠলো রোয়েন।ওহ,হালকা হাসলো সে।আমার বাসায় এসে অপেক্ষা করতে পারেন।বলে উঠলো সে।
নাহ আরেকদিন আসবো।আজ যেতে হবে।বলে উঠলো রোয়েন।
আচ্ছা ঠিক আছে তবে এসো।ঐতো আমার বাসা এটাই।সাজিদ রায়হানের বাসার দিকে ইশারা করলো লোকটা।ওকে আসবো আমি।বলে উঠলো রোয়েন।
লোকটা ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেলো।রোয়েন সকাল ভোরেই বাসায় ফিরে এলো।কিছুক্ষন ঘুমিয়ে নিলো। আজ রুহীর সাথে দেখা করবে আর বিয়ের কথা বলবে।
সকাল দশটায় আজিজ রায়হানের ঘরে গিয়ে পৌছায় রোয়েন।ওকে দেখে সবাই কিছুটা অবাক হয়ে যায়।আজিজ রায়হান রোয়েনকে বসতে বললেন।
বিয়ের কথা বলতে এসেছিলাম।আমি চাচ্ছি বিয়েটা খুব জলদি হোক।এই সপ্তাহেই।বলল রোয়েন।
রুহী এই বিয়ে করবেনা স্যার।বলে উঠলেন আজিজ রায়হান।মানে কি?রুহী কই?ওকে আমার কাছে পাঠান?অস্থির হয়ে গেলো রোয়েন।
স্যার প্লিজ অস্থির হবেননা।রুহী নেই,বলে উঠলেন আজিজ রায়হান।নেই মানে কি?চিৎকার করে উঠলো রোয়েন।ও চলে গেছে একেবারে।বলে উঠলেন আজিজ রায়হান।কই গেছে জিজ্ঞেস করলো রোয়েন। স্যার আমি জানিনা।মাথা নিচু করে বললেন আজিজ রায়হান।
আপনি বললেন আর আমি বিশ্বাস করবো।বেকুব মনে হয় আমাকে?চিৎকার করে উঠলো রোয়েন।বলেন রুহী কই?আবার ও ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করলো রোয়েন।
(বাবা আমাকে কসম দাও আমি যেখানেই যাইনা কেন কাউকে বলবানা তুমি।বিশেষ করে রোয়েন কে বলবানা।প্রমিজ করো)মেয়ের কথা গুলো কানে বেজে উঠায় আর কিছু বলতে পারলেননা আজিজ রায়হান।আমি বলতে পারবোনা।যা করার করেন আপনি।কথাটা বলে রুমে চলে আসলেন আজিজ রায়হান।আজিজ রায়হানকে থামাতে গিয়ে ও পারলোনা রোয়েন।নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছেনা।কিছু না বলে চুপচাপ ঘরে ফিরে এলো রোয়েন।রুমে আসতেই কাজের লোক রোয়েনের হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দিলো।লোকটা চলে যেতেই চিঠি খুলল রোয়েন।রুহীর
চিঠি আর সাথে ওদের এংগেজমেন্টের আংটিটা।
,
,
,
,
অনেকদিন ধরেই চলছিলো এসব।আর সহ্য করতে পারছিলামনা।তোমার অবহেলা গুলো আর নিতে পারছিলাম না।নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো।তুমি পাল্টে গেছো রোয়েন।সব পাল্টে গেছে।আমাদের মাঝে আর কিছুই স্বাভাবিক নেই।ভালোবাসাটা ও হয়ত নেই।তোমার সারা পৃথিবী জুড়ে তোমার পড়াশুনা আর তোমার ফ্রেন্ডসার্কেল।তুমি খুশি আছো এসব নিয়ে ভাবতেই ভালো লাগছে।শুধু অবহেলিত রয়ে গেলাম আমি।তোমাকে ভালবেসেছি, ভালবাসি, ভালবেসে যাবো।মামীকে তুমি তোমার জানা গল্পটা বলে ওনার স্মৃতিশক্তি ফেরানোর চেষ্টা করো।আর যেও এই হতভাগিনী রুহীকে।
ইতি
রুহী।
রোয়েন চিঠিটাকে মুঠ করে ধরলো।ড্রয়িং রুমে রোয়েনের চারজন বডিগার্ড ফাহিম রাজু রাহাত বসে আছে।হঠাৎ উপর থেকে একটা বিকট শব্দে রোয়েনের চিৎকার শোনা গেলো।তারপর সব নিস্তব্ধ হয়ে গেলো।
ফ্লোরে বসে পড়লো রোয়েন।কতোবার কথা বলতে চেয়োছে কিন্তু আমি কি করলাম?কথা দিয়েছিলাম আর কষ্ট দিবোনা কিন্তু দিয়ে ফেললাম।রুহী যেখানে আছো ফিরে আসো।প্রমিজ আর কষ্ট দিবোনা।কাঁদতে কাঁদতে বিড়বিড় করে বলছে রোয়েন।
|
|
|
|
চলবে