আলোছায়া

আলোছায়া !! Part- 28

মুবিনের ব্যাপারে গতকাল আলোচনা করার ইচ্ছে থাকলেও আলাউদ্দিন শেখের শরীর সুস্থ না থাকায় একদিন অপেক্ষা করাই শ্রেয় মনে করে চুপচাপ ছিল মেসবাহ। তবে পরদিন সকালে আলাউদ্দিন সরকার নিজে থেকেই কল করে মুবিনের ব্যাপারে জানতে চাইতেই মুখ খুললো সে। বাবাকে একেএকে সব কথা বলে বাড়ির সবাইকে একত্রিত হবার জন্য সামান্য সময় দিয়ে সে আবারও বাবার নাম্বারে কল করে লাউডস্পিকারে দেয়ার কথা বলতেই অপরপাশ থেকে আলাউদ্দিন শেখ বললেন,
“এখন যা করার সেইডা তো মুবিন কইরা ফালাইছে। পাড়ায় যা দুর্নাম ছড়ানোর তা ছইড়া গেছে। এর জন্যই আমি বিয়াটা আগেভাগে দিতে চাইতেছিলাম। আসলে কখন কার উপর কোন আলামত আসে তা বোঝা মুশকিল!”
আলাউদ্দিন শেখের কথায় সম্মতি জানিয়ে মাজহারুল বললেন,
“মুশকিল.. তবে আমাদের মনে হয় না মুবিনের কাছ থেকে বিষয়টি লুকিয়ে লাভ হয়েছে। অন্তত চৈতালির বিষয়টি আমাদের মাধ্যমে জানতে পারলে অবশ্যই আমাদের উপর ওর ভরসা থাকতো। কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আমাদের সম্মানের কথা তখন ও দশবার ভাবতো।”
“আল্লাহ মালুম! কিন্তু এহন যা হয়নাই তা নিয়া বইলা আর কী লাভ! ও মেসবাহ? মুবিন কি বিয়া কইরা ফালাইছে?”
আলাউদ্দিন সরকারের আক্ষেপ কানে পৌঁছাতেই লম্বা একটি দম ফেললো মেসবাহ। তাকে আস্বস্ত করার চেষ্টায় বললো,
“আব্বা আপনি চিন্তা করবেন না.. বিয়েশাদি যাই করুক না কেন মুবিন আমায় না জানিয়ে করবে না।”
দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন আলাউদ্দিন শেখ। কাঁপা হাত মাথায় হাত রেখে ব্যর্থ গলায় বললেন,
“আমি চৈতালিরে অনার মতোই দেখতাম। মাইয়াটারে দেখলেই আমার বুক কাঁইপা উঠতো। মনে হইতো আজ আমার অনা বাঁইচা থাকলে হয়তো এত বড়ই হতো। এমন একখান ছাওয়াল ওর কোলে থাকতো! কিন্তু চৈতালি এইটা কী করলো? একবার বাপমায়ের কথা ভাবলো না! ও যদি আমার কাছে আসতো.. আমারে সব খুইলা বলতো! কিন্তু না.. নিজের নাক কাঁইটা ও আমাদের সবাইরে ভাসাইয়া দিল।”
“আপনি ওর কথা শুনেই মেনে নিতেন?”
মাঝ থেকে জ্যোতি প্রশ্ন করে উঠতেই কপাল কোঁচকালেন আলাউদ্দিন শেখ।
“মেনে না নিলেও ভাবতাম.. কোনো পথ বাইর করতাম।”
“ভাবতেনও না আব্বা। আপনাদের কাছে পাড়াপড়শি কী বলবে এটাই বড়। যা করে করে অনাকেও একদিন হারিয়েছিলেন..”
ঘরের পরিস্থিতি ক্রমশ ভারী হয়ে উঠতেই মুখ খুললেন মোরশেদা বেগম। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সে জ্যোতির দিকে চেয়ে বললো,
“তো তুমি কী বলতে চাও? পাড়াপড়শিদের কথার দাম না দিতে? চৈতিরে এই বাড়ির বউ করে আনতে?”
“আমার চাওয়া দিয়ে যদি সব হতো তাহলে তাই চাইতাম৷ তাছাড়া আমি বারবার বলেছিলাম বিয়েশাদি যাই ঠিক করুন আগে মুবিনকে বিষয়টি জানান। দেখলেন তো এবার কী হলো? এখন পুষ্প নামের মেয়েটির কথা ভাববেন নাকি চৈতালির?”
“চৈতালির প্রশ্নই উঠে না। ও যে কাজটা করেছে তাতে ওকে আমার থুতু মারতে ইচ্ছে করে। এমন চরিত্রের বউ বাড়িতে আসলে কখনোই সেই বাড়িতে সুখ শান্তি থাকেনা। কেন সবুজ মরলো বুঝো না? শান্তিতে ছিল সবুজ? সবুজরে ছাইড়া এ ও করলে জামাই বাঁইচা করবেটা কী?”
“কী আশ্চর্য! কী ভুল করেছে ও আম্মা? আপনি ওকে এতটা নীচু চোখে কেনো দেখছেন?”
“তুমি এখন ওর জন্য আমার সাথে ঝামেলা করতে চাইছো?”
পাশ থেকে মাজহারুল জ্যোতির হাত চেপে ধরতেই তার দিকে তাকালো সে। মুখে আসা কথা গিলে ফেলে শান্ত সুরে বললো,
“যাই করার দ্রুত করো মেসবাহ। ওরা নিজেরা বিয়ে করে নেয়ার আগেই করো।”
ফোনের ওপরপাশের সবটা কানে আসায় একমুহূর্ত ভাবলো মেসবাহ৷ তারপর উদ্বিগ্ন স্বরে বললো,
“স্যারকে আমি কীভাবে কী জানাবো? বিয়ের আর বাকি দশদিন! কার্ড ছাপানো থেকে শুরু করে বিলানো সব শেষ। এখন এই মুহূর্তে আমি কী করে স্যারকে বলি আমরা বিয়েটা ভাঙ্গতে চাচ্ছি?”
জ্যোতি বললো,
“এত কিছু না ভেবে সত্যটাই বলে দাও।”
“সত্যটা কি এত ইজিলি বলা সম্ভব?”
“অবশ্যই সম্ভব.. আমার মতে ইনিয়েবিনিয়ে কথা না বলে ক্লিয়ার কাট কথা বলা উচিৎ।”
পাশ থেকে খেঁকিয়ে উঠলেন মোরশেদা বেগম।
“সত্যটা বলবে মানে? আমি চৈতিকে কখনোই এই বাড়ির বউ হিসেবে মানবো না। আর কেউ না দেখুক আমি নিজে দেখেছি ও কতটা বেহায়া! কতটা চরিত্রহীন! বাচ্চা পেটে নিয়ে যে আসে পালিয়ে যাবার কথা বলতে তার বুক-পিঠ আছে বলে তুমি মনে করো?”
“মনে করিনা। আর না আমি চৈতালির বর্তমানে এভাবে কাওকে কিছু না জানিয়ে শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে যাওয়াকেও সাপোর্ট করি। যে ভুল আমি করেছিলাম আমি চাইনা দ্বিতীয়বার সেই ভুল অন্যকোনো মেয়েও করুক! তাছাড়া ওদিকে পুষ্প মেয়েটা তো মুবিনের পথ চেয়ে বসে আছে। এসবের মাঝে তার তো কোনো দোষ নেই। তবে কেনো শাস্তি পাবে সে?”
“হুম.. তাইলে বড় বৌমা তুমিই কও আমরা এহন কী করবো? আমাদের এহন কী করা উচিৎ?”
অসহায় গলায় আলাউদ্দিন শেখ জ্যোতির উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়তেই সোফা ছেড়ে উঠে তার পায়ের কাছে এসে বসলো জ্যোতি। এই লোকটির জন্য খুব মায়া হয় তার। একসময় যে লোকটিকে চোখের দেখাও দেখতে ইচ্ছে করতো না আজ তার অনুপস্থিতি ব্যথিত করে তোলে হৃদয়কে। মনে হয় মাথার উপর তার হাত নেই মানে পৃথিবীর আর কারোই আশীর্বাদ নেই তার উপরে।
“তোমার কথা তহন আমার শোনা লাগতো.. না শুইনা যা ভুল করার তাতো কইরাই ফালাইছি। এবার একখান সমাধান দাও। এই অসুস্থ শরীর নিয়া আর কারো ঝামেলা মাথায় নিতে মন চায় না। কিন্তু ছেলে বইলা ফালাইয়াও দিতে পারিনা।”
“আব্বা আমি মনে করি আপনি মুবিনের সাথে সামনাসামনি বসে কথা বলুন। আপনার ওর মনটা বোঝা দরকার। ও যা চাচ্ছে তাতেই নিজেদের সুখ খুঁজে নেয়া দরকার৷ কারণ সবশেষে জীবন তো মুবিনের। সংসার করবে মুবিন, বউ নিয়ে থাকবে মুবিন। তাহলে এখানে আমাদের অতিরিক্ত নাকগলানোর দরকারটা কী! অভিভাবক হিসেবে পাশে থেকে যতটা সাপোর্ট দেয়া যায় ততটা দিলেই তো হয়.. তাই না?”
“তাইলে আমি ঢাকাই যাই? কী বলো?”
জ্যোতির কথার সাথে একমত পোষণ করে ফোনের এপাশ থেকে মেসবাহ বললো,
“আমি তাহলে কাল গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি.. বড়ভাই তাহলে আব্বাকে সাথে নিয়ে চলে আসুন।”
ফোনে চলা কথোপকথনের মাঝে মেসবাহর কথাগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেও ফোনের লাইন কাটার পর থেকেই মেসবাহর মনমেজাজ খারাপ দেখে তার দিকে এগিয়ে এল উল্লাসী।
“আপনার মন খারাপ?”
“উহু..”
“তবে আপনার চেহারা তো বলছে আপনার মন খারাপ। কী সিদ্ধান্ত হলো? আব্বা কী বললেন?”
হাতের স্টিক ড্রেসিং টেবিলের একপাশে রেখে উল্লাসী মেসবাহর পাশে এসে বসতেই কপাল কোঁচকালো মেসবাহ। গম্ভীরমুখে বললো,
“তুমি টেস্ট করালে?”
“হ্যাঁ.. আমার মন মানছিল না।”
“কী এল রেজাল্ট?”
“নেগেটিভ..”
উঠে দাঁড়িয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগুতে এগুতে মেসবাহ বললো,
“জানতাম.. একবার যেই ঝামেলায় পড়েছিলাম তোমার মনে হয় তারপর আবারও একই ঝামেলায় পড়তে আমি রিস্ক নেবো? উহু.. নো চান্স!”
“আপনি খুশি হচ্ছেন কেনো এভাবে? প্রেগন্যান্সি টেস্ট নেগেটিভ আসা মোটেও সুখকর কোনো ব্যপার নয়।”
তীক্ষ্ণ সুরে বললো উল্লাসী।
মেসবাহ ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা আটকে জোর গলায় বললো,
“কজ দিস ইজ নট আ রাইট টাইম।”
“একটা প্রশ্নের জবাব দেবেন?”
“কী প্রশ্ন?”
“আপনি চৈতালি আপুকে মুবিন ভাইয়ের জীবনে মানতে পারছেন না কেনো?”
“কজ সি ইজ অলসো নট আ রাইট পারসন ফর হিম।”
“কেনো রাইট নয়? বিধবা বলে? একবাচ্চার মা বলে? নাকি পুষ্পর মতো বড়লোক নয় বলে?”
আয়নায় নিজের মুখের প্রতিচ্ছবি দেখে ছোট কিছু শ্বাস ছাড়লো মেসবাহ। একদন্ড সময় নিয়ে পেছন ফিরে দরজা খুলে উল্লাসীর ভাজে খেলানো মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“বাচ্চাদের মতো কথা বলো না.. এসব কী ধরনের কথা? আর এমন আজেবাজে কথা তুমি কোত্থেকে পাও?”
“আজেবাজে নয়.. এটাই উচিৎ কথা। আপনারা কেউ কেনো একবার দেখছেন না চৈতালি আপুর ভালোবাসার গভীরতা? কোনো কিছু পরোয়া করেনি সে। কেনো করেনি বলুন তো? আচ্ছা থাক! কিছুই বলতে হবে না। আপনি শুধু আমার একটা প্রশ্নের জবাব দিন। একজনকে ঠিক কতখানি ভালোবাসলে এতটা বেহায়া হওয়া যায়?”
“প্লিজ ডন্ড টক শিটি.. আবেগে গা ভাসিয়ে দিলে জীবন চলে না। চৈতালিকে বুঝতে হবে সে এখন আর আগের চৈতালি নেই। এরমাঝে পাঁচটা বছর পেরিয়ে গেছে। সময় বদলেছে, বদলেছে তাকে নিয়ে মুবিনের ফিলিংস। ওর বুঝতে হবে ও যেভাবে যা রেখে গিয়েছিল এখন আর সেসব সেভাবে নেই। অনেককিছু বদলে গেছে.. হয়তো মুবিনের মনেও এখন আর আগের মতো জায়গা নেই তার জন্য।”
“জায়গা নেই? নাকি আপনি নিজেই নিজের মতো করে বানিয়ে নিচ্ছেন? জায়গা না থাকলে অবশ্যই মুবিন ভাই উনাকে গ্রাম থেকে আনতো না।”
কয়েক কদম এগিয়ে এল মেসবাহ।
“অপরাধবোধ বোঝো? বোঝো দায়িত্ববোধ?”
“ওসব আপনিই বুঝুন। আমাকে এসব নিয়ে আপনার জ্ঞান দিতে আসতে হবে না। তুমি হইলা এক কাউয়া আর খুঁইজা বেড়াও শাউয়া.. যত্তসব!”
বকবক করতে করতে উল্লাসী বেরিয়ে এল শোবার ঘর ছেড়ে। মাথার ভেতরটা দপদপ করছে তার। ইচ্ছে হচ্ছে এখনি চৈতালি এবং মুবিনের চার হাত এক করে দিতে। তবে কে শুনবে তার কথা? তাছাড়া টাকাই কি সব? ভালোবাসা কিছু নয়?
মাথার ভেতরটায় হঠাৎ করেই টাকা, ধন-সম্পদের কথা গুরুতর ভাবে চেপে বসতেই উল্লাসী এগুলো মুন্নি সরকারের ফ্ল্যাটের দিকে। তাকে বলে পিংকি রহমানের নাম্বার নিয়ে তাকে কল করে দু’দন্ড অপেক্ষা করেই কটমটে গলায় বললো,
“কী সমস্যা আপনার? শীতল ভাইয়ের কী কমতি আছে? মেনে নিচ্ছেন না কেনো আপনারা?”
ওপর পাশ থেকে পিংকি রহমান ফোন রিসিভ করতে না করতেই এমন ঝাড়ি শুনে থতমত খাবার উপক্রম হতেই এপাশ থেকে উল্লাসী আবারও বললো,
“নিজে থেকে মেসবাহর জন্য প্রস্তাব নিয়ে এলে শীতল কী দোষ করেছে? শীতলের গায়ে কি গু লেগে রয়েছে?”
“কী আশ্চর্য! তুমি উল্লাসী না?”
“যেই হই! তা দিয়ে আপনার কাজ কী? আপনি আমার কথা মন দিয়ে শুনুন। শীতলের যা আছে তা মেসবাহর বাপ দাদার চোদ্দগুষ্টিরও নেই। বুঝেছেন?”
“কী আছে শীতলের?”
“কী নেই সেটা বলুন! শীতলের বাবারই আছে গ্রামে একশ বিঘা জমি, দশদশটা কারখানা, কয়কত বাড়ি-গাড়ি। ঢাকায় শীতলের নামে কয়টা ফ্ল্যাট আছে জানেন? না জানলে নেই.. ওসব হিসেব আপনার না জানলেও চলবে। আর দাদার হিসেবটা তুলে রাখুন। পরে সময় করে বলে দেব। আর শীতলের সবচেয়ে বেশি যা আছে তা হলো ভালোবাসা বোঝার মতো একটি মন। এখন বলুন আপনাদের কী আছে?”
“আমার বোন আস্ট্রেলিয়া থেকে..”
পিংকি রহমানকে মাঝপথেই থামিয়ে দিল উল্লাসী।
“ওসব রাখুন। টাকা থাকলে ওসব সার্টিফিকেটের ওভাব হয়না। কিন্তু আপনাকে দেখুন! বোনের খুশিতে খুশি না হয়ে আপনি গাইছেন শেয়ালের গীত?”
একমুহূর্ত থেমে পিংকি রহমান উদ্বিগ্ন স্বরে বললেন,
“ঠিকাছে। আমরা সন্ধ্যার পর আসছি।”
ফোনের লাইন কেটে মুন্নি সরকারের ধারালো দৃষ্টির দিকে তাকালো উল্লাসী। সবকিছু স্বাভাবিক আছে এমন ভান করে বললো,
“সন্ধ্যায় আসবে.. তোমার কোনো সমস্যা নেই তো?”
সে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে মুন্নি সরকার বললেন,
“তুই মিথ্যা বললি কেনো?”
“কারণ মানুষ এখন টাকার গোলাম। টাকার লোভে মানুষের আজ এত লালা ঝরে যে তা জমালে একখানা মহাসাগর না হোক উপসাগর হয়েই যেত!”
ব্যাংক থেকে বেরিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হলো মুবিন। চৈতালির বিষয়টি নিয়ে তার ফোনে এক উকিলের সাথে কথা হয়েছে। যা চৈতালিকে জানানো প্রয়োজন। তবে চৈতালির অস্বাভাবিক ব্যবহার আজকাল বেশ পীড়া দিচ্ছে তাকে। মন অস্বাভাবিক হারে খারাপ হয়ে আসছে। কখনোবা হতবিহ্বল হয়ে নীরবে বসে থাকতে হচ্ছে তার সামনে। তাই সব ভেবে খানিকক্ষণের স্বস্তি খুঁজতে হাসপাতালে যাবার সিদ্ধান্ত বদলে ফেললো মুবিন। হাসপাতালের বিপরীত দিকে হাটা ধরে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে নিল নোটিফিকেশন। না.. সারাদিনে একবারও ফোন দেয়নি পুষ্প। তবে কি সত্যিই তাদের মাঝে শুধুই ছিল দু’দিনের পরিচয়, আর কিছু মলিন স্মৃতির পাতা? গায়ে উষ্ণ এক বাতাস ছুঁয়ে যেতেই হাটার গতি বাড়িয়ে দিল মুবিন। সহ্য হচ্ছে না তার পুষ্পর এড়িয়ে চলা.. সহ্য হচ্ছে না পুষ্পর নীরবতা। নীরবতা ভেঙে কেনো আবারও হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে না পুষ্প? অস্থির মনে পুষ্প শব্দটি ব্যকুল স্বরে বারেবারে ডেকে উঠতেই পুষ্পকে কল করলো সে। একেএকে তিনবার কল করার পর চতুর্থবারে কল রিসিভ করে পুষ্প বেশ স্বাভাবিক সুরে বললো,
“জ্বি.. বলুন।”
থেমে দাঁড়িয়ে চোখজোড়া বুজে লম্বা একটি নিঃশ্বাস ফেললো মুবিন। ক্ষীণ স্বরে কোনোমতে বললো,
“কী করছিলে?”
“কিছু না.. কিছু বলবেন?”
“জরুরী কিছু ছাড়া কি কল করা যাবে না?”
“দরকার কী বলুন.. মায়া বাড়িয়ে আর কী লাভ?”
বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠলো মুবিনের।
“আসলে এভাবে হয় না..আমি মেনে নিতে পারছি না। তুমি আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছো পুষ্প। আমি চাইলেও তোমার সাথে না কথা বলে থাকতে পারছি না।”
একদমে কথাগুলো বলে মুবিন একটি শ্বাস ফেলতেই পুষ্প মৃদুস্বরে বললো,
“অভ্যাস আর ভালোবাসা কি এক? অভ্যাসটা হয়তো সময়ের সাথেসাথেসাথে একসময় ঠিকই কেটে যায়। কিন্তু ভালোবাসা? বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও কিন্তু এটি ঠিকই রয়ে যায় মনের কোণায়।”
“তুমি বলছো তোমাকে আমি খুব দ্রুত ভুলে যাবো?”
“যদি অভ্যাস হয়ে থাকি তাহলে অবশ্যই যাবেন।”
“আর যদি ভালোবাসা হও?”
সে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ম্লানমুখে পুষ্প বললো,
“জানেন? আমার বাবা বলে কাউকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইলে তাকে খুব বেশি ভালোবাসবি। আর কাওকে দূরে সরিয়ে দিতে না চাইলে তাকে ভালোবাসবি না। উপরওয়ালা হয়তো আপনাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চেয়েছে বলেই আমাকে দিয়ে আপনাকে এতটা ভালোবাসিয়েছে.. যে ভালোবাসার ব্যর্থতায় বুকের ভেতরটা জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যায় আমার।”
“চলবে”