Married To The Dark King- Mafia Boss- Season 3 !! Part- 14
সেদিন ঘরে ফিরে নিজেকে স্থির রাখতে পারছিলোনা রুহী।মনে হচ্ছিলো কি যেন ফেলে চলে এসেছে।খুব প্রিয় কিছু ফেলে চলে এসেছে।কি করবে সে?খুব অস্থির অস্থির লাগছে।সারাদিন দুচোখের পাতা এক করতে পারেনি রুহী।চোখের সামনে সেই শুটের দৃশ্যটা ভেসে উঠছে।গভীর রাতে শোয়া থেকে ধপ করে উঠে বসে রুহী।নাহ শান্তি পাচ্ছেনা ও।বুকের ভিতর কেমন ধুকপুক করছে রুহীর।জানালা দিয়ে তাকালো রুহী।দুরের বিল্ডিং গুলো দেখতে পাচ্ছে ও।এখানে আসার পর একটা দিন ও এমন ছিলোনা যে রোয়েনকে মিস করেনি রুহী।প্রত্যেকটা সময় ওর চিন্তা ধারনা কল্পনা স্বপ্ন রাগ কষ্ট কান্না সব কিছু জুড়েই ছিলো রোয়েন।
নির্ঘুমের কারন ও রোয়েন।কেন এমন হচ্ছে ওর।এসবের সমাধান কি সেটাও জানা নেই রুহীর।তাহলে কি ও,,,,,,, !!!!!! নাহ আর ভাবতে পারছেনা রুহী।মাথা ভার ভার লাগছে।লোকটা কেমন আছে?কিছু খেয়েছে?কি করছে সে কে জানি?ভাবতে ভাবতেই বালিশে মাথা রাখলো রুহী।চোখের কোনা চিকচিক করছে ওর।বুকে বালিশ চেপে ধরলো ও।একসময় রুহীর চোখে ঘুমন্ত পরী ভর করলো।।
সকালে নাস্তা সেড়ে চুপিচুপি রুমে চলে এলো রুহী।ফোনটা বের করে রোয়েনের পার্সোনাল বডিগার্ড ফাহিমের নম্বরে কল দিলো রুহী।দুতিনবার রিং হওয়ার পর অপরপাশ থেকে মোটা কর্কশ গলা দিয়ে কে যেন বলে উঠলো হ্যালো!!!
হ্যা ফাহিম ভাইয়া আমি রুহী!!!!
ওহ ম্যাম বলেন।ভালো আছেন?
হুম।স্যার কই আপনার?
ওনি হাসপাতাল থেকে চলে আসছেন আজকে।ওনার নাকি হাসপাতালে ভালো লাগছেনা।বলে উঠলো ফাহিম।
ওহ। ওনি খেয়েছেন কিছু?
স্যুপ খেয়েছেন।
ওহ,আচ্ছা।ভাইয়া ওনাকে বলবেননা আমি কল দিয়েছিলাম।
আচ্ছা বলবোনা।বলে হেসে উঠলো ফাহিম।
রুহী খানিকটা লজ্জা পেয়ে গেলো।
ফোন টেবিলের ওপর রেখে কলেজের জন্য প্রস্তুত হয়ে নিলো রুহী।
বাবা ওদের কলেজে দিয়ে অফিসে চলে গেলেন।দুপুরে খেতে বসেছে আজিজ রায়হান আর তার দুই মেয়ে।রুহী খাবার গুলো নাড়ছে।কিছু বলার চেষ্টা করে ও বলতে পারছেনা।
কিরে খাচ্ছিস না কেন?বলে উঠলেন আজিজ রায়হান।
বাবা কাল আমরা এভাবে চলে এলাম ওনাকে ছেড়ে।ওনার খবর নেয়া উচিৎ তাই না?লজ্জা ভরা কন্ঠে বলে উঠলো রুহী।হুম তা তো উচিৎ।বলে উঠলেন আজিজ রায়হান।ওনাকে দেখে আসলে হয়ত আরো ভালো হবে।ফোনে ওনার খবর না নিয়ে থেকে সরাসরি দেখে আসলে ভালো হবেনা?কারন ওনি খারাপ থাকলে ফোনে বলবেন ভালো আছে।
মেয়ের কথা শুনে হেসে উঠলেন আজিজ রায়হান।মেয়ের ও তাহলে মনে ধরেছে রোয়েনকে ভেবেই বেশ খুশি হলেন তিনি মনে মনে।
আচ্ছা মা যাবো।তা তোর ওনি কোথায় এখন?খানিকটা মজা করেই প্রশ্ন করলেন আজিজ রায়হান।
বাবার কথায় লজ্জায় লাল হয়ে গেলো রুহী।নিজেকে খানিকটা সামলে নিয়ে বলল ওনি বাসায়।হুম খেয়ে নে,বিকেলে দেখে আসবো ওনাকে।বলে খাওয়ায় মন দিলেন আজিজ রায়হান।রুহী খেয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।বাবার সামনে যাওয়ার অবস্থা নেই এখন।ওনার কথা ভাবতেই কেমন যেন খুব লজ্জা লাগে আর ভালো লাগা কাজ করে।বান্ধুবীদের সবারই বয়ফ্রেন্ড আছে।ওরা পুরা ক্লাশেই বয়ফ্রেন্ডদের নিয়ে আলোচনা করে।কার বয়ফ্রেন্ড কেমন?কিভাবে আদর করে ব্লা ব্লা।আর ওদের মুখের অবস্থা তখন বারোটা বেজে যায়।একেকজন লজ্জায় যেন মাটিতে মিশে যেতে থাকে।রুহীর ও অবস্থা ঠিক তেমনই কিছুটা লজ্জার মাঝে ও অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করছে মিঃকিলার প্রিন্স চার্মিং এর জন্য।এই নামটা অজান্তেই চলে এসেছে ওনার জন্য।ড্রেসিংটেবিলের আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো রুহী।লাল হয়ে যাওয়া গালদুটো ছুঁয়ে দেখলো।কেমন যেন গরম হয়ে উঠেছে গাল দুটো।নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি ফুঁটে উঠলো রুহীর।নিজে ও জানেনা অনুভূতির কারন।তবে সে উপভোগ করছে সময়টাকে।চারপাশে যেন রোয়েন ওর কিলার প্রিন্স চার্মিং কে দেখতে পারছে।সেদিন রোয়েনের পিঠের মাঝের কোব্রা ট্যাটুটা ওকে খুব আকর্ষন করেছিলো।ইচ্ছে হচ্ছিলো ছুঁয়ে দেখতে!!!! ইসসস কি লজ্জা!!!দুহাতে নিজের লজ্জায় মাখামাখি হয়ে যাওয়া মুখটা ঢেকে নিলো রুহী।
রোয়েন খাটের ওপর শুয়ে হাতের প্লাস্টার টাকে বারবার ছুঁয়ে দেখছে।রুহীর বারবার পিছনে ফিরে তাকানো কেঁদে বলা যাবোনা বারবার মনের মাঝে দাগ কেঁটে যাচ্ছে।মেয়েটা কেন তখন এমন করছিলো।হাতে শুট হওয়ার পর কেন ওর কাছে দৌড়ে আসতে চেয়েছিলো?এর কোনটারই উত্তর রোয়েনের কাছে নেই।মেয়েটা ওকে ভালোবাসেনা।সেটা শিওর।ভালবেসে এমন করলে তাও একটা কথা ছিলো।তাহলে কেন এমন করেছিলো?সহানুভূতি কাজ করছিলো ওর মাঝে।ভেবেই নিলো রোয়েন।হ্যা সহানুভূতিই হবে।ঠিক তখনই আজিজ রায়হান ওর পাশে এসে বসলো।
রোয়েনের ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুঁটে উঠলো।মিঃ আজিজ রায়হান।বলে উঠলো রোয়েন।
জি।স্যার কেমন লাগছে আপনার?বলে উঠলেন আজিজ রায়হান।
মাচ বেটার।সামনে তাকিয়ে বলল রোয়েন।
হুম।মেয়েটা খাওয়ার টেবিলে জোর করছিলো খুব।ইনডিরেক্টলি তোমাকে দেখতে আসার কথা বলছিলো।বলে উঠলেন আজিজ।
একটু হেসে উঠলো রোয়েন।মেয়েটা যেমনই হোক ওর মন খুবই নরম।বলে উঠলেন আজিজ।বড় একটা নিশ্বাস নিলো রোয়েন।
কিছু খেয়েছেন?প্রশ্ন করে উঠলেন আজিজ।
ইয়াহ।বলে উঠলো রোয়েন।স্যার খবর পেলেন স্করপিয়নদের সাথে কে যোগাযোগ করছে আমাদের বাসা থেকে?জিজ্ঞেস করলেন আজিজ।এবার নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসলো রোয়েন।আমি আপনাকে বলবো জি পেয়েছি।বাট সেটা আপনি নিতে পারবেন কিনা জানিনা।বলে উঠলো রোয়েন।কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়লেন আজিজ।কে সে? ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে উঠলেন ওনি।
আপনার ওয়াইফ।বলে উঠলো রোয়েন।স্যার যাই বলেন না কেন? আমার ওয়াইফ কখনোই এসব করবেনা নেভার।কিছুটা রেগে গেলেন আজিজ।হালকা হাসলো রোয়েন।আপনাদের তিনটে নম্বর ট্রেস করেছিলাম।যেখানকার একটা নম্বর আপনার ছোট মেয়ে মানে রুপন্তীর ছিলো।ঘামছেন আজিজ রোয়েনের কথা শুনে।কারোর নম্বরই মিলেনি রুপন্তীরটা ছাড়া।বলে উঠলো রোয়েন।আপনার বিশ্বাসের জন্য একটা প্রমান আছে আমার কাছে।এর পর হয়ত আপনার আর অবিশ্বাসের কারন থাকবেনা।
রোয়েন ফোন থেকে রুপন্তীর কথার রেকর্ড ছেড়ে দিলো।আজিজ রায়হানের গায়ের লোম গুলো খাড়া হতে লাগলো।পুরো শরীর ঘেমে গেছে ওনার।কি শুনছে ওনি?ওনার মেয়ের কথা মিথ্যা হতে পারেনা।রেকর্ডিং শেষ হতেই কেঁদে দিলেন আজিজ রায়হান।এতোদিন ভাবছিলাম আনিলা হয়ত রুহীকে ভালবাসে কিন্তু আজ মনে হচ্ছে সব মিথ্যা সব অভিনয় নিজের মেয়েটাকে ও ছাড়লেনা আনিলা।কাঁদতে কাঁদতে বললেন আজিজ রায়হান।নিজের মেয়ে মানে?রুহী আর রুপন্তী দুজনই আপনাদের মেয়ে না?কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো রোয়েন।না রুহী আমার আগের স্ত্রী আঁখির মেয়ে।আখি আনিলার বড় বোন।
আজিজ রায়হানের কথা শুনে মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেলো রোয়েনের।রোয়েনের বাসা থেকে বেরিয়ে ঘরে ফিরে নিজের রুমের দরজা আটকিয়ে বসে কাঁদতে লাগলেন আজিজ রায়হান।বাবাকে এভাবে রুমের দরজা লাগাতে দেখে চিন্তিত হয়ে পড়লো রুহী আর রুপন্তী।বাবাকে ওরা কখনোই এমনটা করতে দেখেনি।দুইবোন বেশ ভয় পেয়ে গেলো।বেশ খানিকটা সময় পার হয়ে গেলো কিন্তু আজিজ বের হচ্ছেননারুম থেকে।বাবার কি হয়েছে?ভাবতে লাগলো ওরা।কোন সাড়াশব্দ ও নেই বাবার।এবার কেঁদে দিলো ওরা।ঘন্টা খানিক পর আজিজ রায়হান বেরিয়ে এসে মেয়েদের দেখে চমকে উঠলেন।রুহী কি কিছু জেনে গেলো কিনা ভেবেই ভয় পেতে লাগলেন আজিজ।রোয়েন বলে ছিলো ঘরে ফিরে স্বাভাবিক থাকতে যেন কিছুই হয়নি।
কিরে কাঁদছিস কেন তোরা?নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে বললেন আজিজ।
বাবা তোমার কি হয়েছে?এভাবে দরজা বন্ধ করে রেখেছো।অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমরা।দুইবোন একসাথে বলে উঠলো।নারে মা ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাই।এভাবে কাঁদতে হয় নাকি পাগলিরা?মেয়েদের জড়িয়ে নিয়ে বললেন।
দুইবোন বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।মেয়েদের ছেড়ে।রুহীর দিকে তাকালেন আজিজ।তোর ওনি ভালো নেই অতোটা।বাবার কথা শুনে লজ্জা পেলে ও আতঙ্কিত হলো রুহী।সেদিন রাত আর ঘুমোতে পারেনি ও।ছটফট করছিলো বিছানায়।
পরদিন সকালেই লুকিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো রুহী।রোয়েনের বাসার উদ্দেশ্যে।বাবা আর রুপন্তীকে বললে ভীষন লজ্জায় পড়তে হতো। অন্যদিকে রুহীর এমন পাগলামো দেখে জানালার দিকে তাকিয়ে রুপন্তী আর আজিজ রায়হান হেসে উঠলো।
রোয়েন কিছু খেয়েছে কিনা কাজের লেকদের জিজ্ঞেস করতেই মাথা নাড়লো তারা।রুহী ভ্রু কুঁচকে উপরে তাকালো রোয়েনের রুমের দিকে।তারপর সেদিকে পা বাঁড়ালো।কারোর উপস্থিতি পেয়ে চোখের ওপর থেকে হাত সরিয়ে পাশে তাকিয়ে আবার চোখের ওপর হাত রাখলো রোয়েন।চলে যাও।কেন এসেছো এখানে?গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো রোয়েন।
রুহী শান্ত ভাবে রোয়েনের কাছে দাঁড়িয়ে আছে।কি হলো বললাম তো চলে যাও।আমি খুব খারাপ লোক।এখানে থেকোনা। আবার বলে উঠলো রোয়েন।রুহী শান্ত ভাবেই রোয়েনের কপালে হাত রাখলো।রোয়েন হাত সরিয়ে দিয়ে বলল চলে যাও।
রুহী নিচে চলে গেলো।রোয়েন এবার মাথা উঠালো।রুহী নেই।কিছুক্ষন পর আবার রুমে এলো রুহী এক বাটি সুপ নিয়ে।খাবোনা আমি, চলে যাও।বলে উঠলো রোয়েন।রুহী রোয়েনের পাশে খাটে উঠে বসলো।রোয়েনের কপাল থেকে হাত সরিয়ে দিলো রুহী।রোয়েন চোখ বড় করে রাগী লুক দিলো।ঠোঁটে মিষ্টি হাসি এনে চামচে স্যুপ নিয়ে রোয়েনের দিকে ধরলো।হাত দিয়ে চামচ সরিয়ে দিলো রোয়েন।রুহী আবার ও চামচ এগিয়ে দিলো।রোয়েন বারবারই সরাচ্ছে আর রুহী চামচ এগিয়ে দিচ্ছে।রোয়েন এমন তিনচারবার করার পর রুহী খাটের ওপর বাটি রেখে রোয়েনের মুখ চেঁপে ধরে চামচের স্যুপ গুলো ঢেলে দিলো।যা বলার পরে বলুন আগে খেয়ে নিন।বলেই বাটির দিকে চামচ এগোলো রুহী।
চলবে