Love Right ! Part- 02
ইশু:ভাইয়া??(চিৎকার দিয়ে)
আয়াত দৌঁড়ে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো।বাথটাবের ওপর বসে আছে।
ইশু:তুই এখানে কেন?
নীল বসে আছে তো বসেই আছে।কোন জবাব দিচ্ছে না।আয়াত ওকে হালকা ঝাঁকি দিচ্ছে…Nil??Are you ok?
নীল উঠে বেরিয়ে গেলো।ও বেরোতেই নিশু খেয়াল করলো বাথটাবের ওপর রক্ত লেগে আছে।ওয়াশরুমের আয়নাটাও ভাঙা।
নিশু দৌড়ে গিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে ওর হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো….ইসসশ!
নীল ঝটকা মেরে হাতটা সরিয়ে নিলো।
আয়াত আস্তে করে ডাক দিলো…নীইইল?
নীল এবার মুখ খুললো….তুই যদি এখন আমার সাথে একটা কথা বলেছিস তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে!
নীল ধারনা আয়াতই ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়েছিলো তাই সব রাগ ওর ওপর।
আয়াত চুপ হয়ে গেলো।এখন কিছু বলে লাভ হবে না।ওর রাগ পড়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু নিশুকে চুপ করানো গেলো না।ও শুরু করে দিল।
নিশু:এত চিৎকার করে বলার কিছু নেই?জানো না এটা ভদ্র লোকের বাড়ি?
নীল ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।আয়াত আর। ইশু হাঁ??
নিশু:কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
নীল ইশুর দিকে তাকিয়ে দাঁতেদাঁত খিঁচে বললো…এই মাথা খারাপের মেশিনটাকে আমার সামনে থেকে সরা ইশু।আমার মেজাজ এমনিতেই খারাপ হয়ে আছে।
আয়াত:প্লিজ জরি।তুমি এখন এখান থেকে যাও!
নীল:(জরি??)
ইশু দৌঁড়ে এসে নিশুর হাত চেপে ধরে বললো…প্লিজ চল এখান থেকে!
নিশু:না যাবো না!
সিচুয়েশন খারাপ দেখে আয়াত নীলের কাছে গিয়ে বললো…সরি নীল!আসলে গল্প করতে করতে কখন যে সময় পেরিয়ে গেছে খেয়ালই করি নি!
নীল:আমি তোর কাছে কিছু শুনতে চেয়েছি?
আয়াত:সরি!
নিশু:তুমি ওকে বকছো কেন?দরজা তো লাগিয়েছি আমি!
ইশু এবং আয়াত দুজনেরই মাথায় হাত😱।বোকা মেয়ে কি সর্বনাশ করছে!
নীল রেগে গিয়ে ফুলদানিটা সোজা ড্রেসিং টেবিলের আয়না বরাবর মারলো।নিশু ভয়ে পেয়ে গেছে।নীল ওর দুবাহু চেপে ধরে বললো…কি বললে তুমি?
নিশু:সরি!আমি আসলে বুঝতে পারি নি।
নীল:এবার বুঝবে!
নীল আয়াত আর ইশুকে বের করে দিয়ে ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো।ওরা বাইরে থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছে কিন্তু নীল খুলছে না।নিশু ভয় পেয়ে গেছে।কি করতে চাইছে নীল??
নিশু:কিককি….হলো?দরজা বন্ধ করলে কেন??
নীল:কারন আমি এখন তোমাকে নাচাবো!
নিশু:মানে??
নীল:মানে যা শুনেছো তাই?
নিশু:কেন?
নীল:আমি বলছি তাই!
নিশু:আমি কেন তোমার কথা শুনবো!
নীল:ঠিক আছে নাচতে না চাইলে অন্য কিছু করবো!রাজি?
নিশু এবার নরম হয়ে এলো।
নিশু:দেখো ভুল তো মানুষই করে তাই না?আর সেই ভুল কয়জনে স্বীকার করতে পারে বলো?..আমি আমার ভুল স্বীকার করছি…প্লিইজ!
নীল:তাই নাকি?ঠিকই বলেছো তুমি ভুল তো মানুষই করে আর সেই ভুলের জন্য শাস্তি কয়জন দিতে পারে??…আমি এখন তোমাকে শাস্তি দিবো!
নিশুর ভয়ে কাঁদোকাঁদো অবস্থা।মনে মনে নিজেক গালি দিচ্ছেঠিক হয়েছে!সেধে সেধে কেন এই ছেলের সাথে ঝগড়া লাগতে গেলি?
নীল:তো??তুমি রেডি?
নিশু:না!
নীল:একমিনিট আমি রেডি করে দিচ্ছি!
নীল বলেছে ঠিকই কিন্তু একটুও নড়ছে না।নিশু ভালোই বুঝতে পারছে নীল ওকে কিছুই করবে না ভয় দেখাচ্ছে।তবুও একটু বাজিয়ে দেখতে চাইলো।
নিশু নীলের একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললো…কি হলো আমাকে রেডি করে দিবে না?
নীল থতমত খেয়ে গেছে।বলে কি এই মেয়ে?
নীল:দেখো আমি কিন্তু সত্যিই আজকে ছাড়ছি না।
নিশু:ধরেছো কখন যে ছাড়বে বলছো?
নীল:বুঝেছি!(এই মেয়ে আমাকে টিজ করছে?)
নীল এবার ওর দিকে এগোতে লাগলো।নিশু ভয় পেয়ে গেলো।
নিশু:কিককি….হলো?….তুততুমি….এদিকে আসছ কেন?
নীল কিছু বলছে না।বাধ্য হয়ে নিশু চিৎকার করে বলে উঠলো তুমি যা বলবে আমি শুনবো!
নীল মনে মনে হাসছে ওর কান্ড দেখে।
নীল:এবার লাইনে এসেছো!দেখি শুরু করো!
নিশু:কি শুরু করবো?
নীল:কেন নাচবে?
নিশু:😐
নীল:যতক্ষণ নাচবে ততক্ষণ শাস্তি মাফ।নাচ বন্ধ হলেই ওয়াশরুমের ভেতরে ঢুকিয়ে দেবো!
নিশু:😱
নীল:ওকে আমি গান প্লে করছি!
নিশু:(তোর বউয়ের কপাল আল্লাহ এত খারাপ কেন করলো?আহারে বেচারি!)
নীল দিলবার দিলবার শুরু করে দিলো।নিশু হাবলার মত ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে।বাইরে থেকে আয়াত আর ইশুও কিছু বুঝতে পারছে না গানের আওয়াজ শুনে।
আয়াত:কি হচ্ছে ভেতরে বলোতো?
ইশু বিরক্ত হয়ে বললো…আমি কি জানি?..তুমি যেখানে আমিও তো সেখানে!
আয়াত:সেটা ঠিক করে বলা যায় না?
ইশু এবার মুখ বাঁকিয়ে শুরু করলো..আমি কি করে জানিবো বলুন?..আপনি যেখানে অবস্থান করিতেছেন আমিও তো সেখানে অবস্থান করিতেছি!
আয়াত:😮
ও হাতদুটো জোড় করে বললো….আমার ভুল হয়ে গেছে তোমার সাথে কথা বলতে এসেছি!মাফ চাইছি!
নীলের চেহারার কোন পরিবর্তন নেই।ও গান চালিয়ে নিশুকে নাচার জন্য ইশারা করছে!
নীল:কি হলো?
নিশু:সুন্দর দেখে একটা গান প্লে করা যায় না!
নীল:অবশ্যই যায়।তবে তারজন্য মানুষটাকেও সুন্দর হতে হয়।তোমার চেহারার সাথে এটাই ভালো যায়!
নিশু:😐(এতবড় অপমান।শয়তানের চ্যালা,নীল, বিল,চিল)…..পাতিল (জোরেই বলে ফেললো)
নীল অবাক হয়ে বললো…পাতিল দিয়ে কি করবে?
নিশু:(তোর মাথায় বাড়ি মারবো!হারামি)..কিছু না!
নীল:কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন?
নিশু গানের তালে তালে হাতপাঁ ছুঁড়ছে।ঘামে ওর পুরো শরীর ভিজে চুবচুবে হয়ে গেছে।মনে মনে নীলের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে ছাড়ছে।নীল বসে বসে মজা নিচ্ছে।নিশুর হাতপাঁ ছোড়াছুঁড়িতে এতটাই ব্যস্ত যে ও সামনে থাকা ভাঙা কাঁচের টুকরোগুলোতে অল্পের জন্য পা দিয়ে ফেলতো যদি নীল দৌড়ে এসে ওকে সরিয়ে না দিত।দুজনেই একেবারে কাছাকাছি, নিশু ওর মুখের দিকে চেয়ে আছে।নীল ওকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ালো।ও কিছুটা ইতস্তত হয়ে বললো.. অল্পের জন্য তো কাচেঁর টুকরো পায়ে গেথে যেত!
নিশু ওর দিকে চেয়েই আছে।কোন কথা বলছে না।
নীল:কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন?শুরু করো?
নিশু:(যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততটা খারাপ তুমি নও!)
নীল এবার ধমক দিয়ে উঠলো….কি হলো কথা কানে যায় না?
নিশু বিরক্ত হয়ে বললো…মিউজিক অফ তো?
নীল:(😁তুমি কি ভেবেছো আমি এত সহজে তোমাকে ছেড়ে দেবো?…নেভার!)
ও এবার প্লে করলো….মাই নেইম ইজ শিলা!
নিশু:(😐তুই একটা শয়তান,খবিশ,হনুমান)
অনেক্ষনপর নিশু ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ছে।যা নাচান নাচিয়েছে এই বজ্জাত ছেলেটা ওকে।
নীল ওর সামনে হাটুমুড়ে বসে বললো….মনে থাকবে?আর আমার পিছনে লাগার চেষ্টা করবে?
নিশু:(তোকে তো আমি ছাড়বো না!)
ও মেজাজ টা কন্ট্রোল করে বললো…জীবনেও না!
নীল:গুড!….এবার যাও তো আমার খাবার নিয়ে এসো!
নিশু:আমি??
নীল:তো আর কে?
নিশু বিরক্ত হয়ে উঠে বেরিয়ে গেলো।ও বেরোতেই আয়াত আর ইশু ওকে ঘিরে ধরলো এতক্ষন ভেতরে কি হচ্ছিলো বলার জন্য।
নিশু:আমার মাথা হয়েছে!(রেগে গিয়ে)
ওরা দুজন এবার ভেতরে ঢুকে নীলের হাবভাব বোঝার চেষ্টা করছে।কিন্তু কোন লাভ হলো না এই ছেলেকে কিচ্ছু বোঝার উপায় নেই!
নীল ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বললো….তোরা কিছু বলবি?
ইশু:না মানে ভাইয়া!ভেতর থেকে গানের আওয়াজ শুনলাম।কি হচ্ছিলো ভেতরে?
নীল:তোরা বাইরে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছিলি কি হচ্ছিলো?
ইশু:না আয়াত আমাকে বলেছে!
আয়াত:😮
নীল আয়াতের দিকে তাকিয়ে আছে।
আয়াত:না মানে গানের আওয়াজ অনেক জোরে আসছিলো তো তাই!….কি করছিলি ওর সাথে তুই?
নীল:নাচিয়েছি!
আয়াত:মানে!তুই এতক্ষন ধরে ওকে নাচিয়েছিস?
নীল:কেন কি হয়েছে?…আমি যে চারঘন্টা ধরে ওর জন্য ওয়াশরুমে আটকে ছিলাম?
আয়াত:তাই বলে এতক্ষন?
নীল:কেন?…দরদ হচ্ছে বুঝি?
আয়াত চুপ করে গেলো।
নিশু যতই নীলের ওপর বিরক্ত হোক না কেন।বারবার তখনকার ঘটনাটা মনে পড়ে যাচ্ছে।নীল ওর কতটা কাছাকাছি এসেছিলো।নীল কাছে আসতেই কেন ওর অন্যরকম একটা ফিল আসলো ও বুঝতেই পারছে না।
যাই হোক এসব বাদ দিয়ে ও নীলের জন্য খাবার নিয়ে গেলো।
খাবার সামনে রেখেই নিশু চলে যাচ্ছিলো।নীল ওকে ডেকে দাঁড় করালো।
নিশু:কি?
নীল:এদিকে এসো!
নিশু কাছে আসতেই নীল বললো…বসো!
নিশু অবাক হয়ে যাচ্ছে ওর কান্ড দেখে।তবুও নীল কি করতে চাইছে বোঝার জন্য ওর সামনে বসে পড়লো।
নীল:আগে তুমি টেস্ট করবে সব!
নিশু:কেন?…আমি তো খেয়েছি!
নীল:তোমাকে বিশ্বাস নেই যদি খাবারে কিছু মিশিয়ে দাও তখন?
নিশু:😐😐
চলবে