Love Right ! Part- 03
নিশু:আমি পারবো।।খেতে হলে খাও না হলে নাই।
নীল:তাই নাকি?….তখনকার ডোজ মনে হয় কম পড়ে গেছে?
নিশু:মানে?
নীল:মানে তুমি টেস্ট করবে নাকি আমি অন্য কিছু টেস্ট করবো?(দুহাতের তালু ঘষে)
নিশু:কি টেস্ট করবে তুমি.?
নীল ওর দিকে হালকা একটু এগিয়ে বললো….মুখে বলবো নাকি প্র্যাক্টিকালি দেখাবো?(শয়তানি হাসি দিয়ে)
নিশু:(এই ছেলের বিশ্বাস নেই!আস্ত শয়তান এই ছেলে)
ঠিক আছে!
নীল ওর নাকটা টিপে দিয়ে বললো….দ্যাটস লাইক আ গুড গার্ল!
নিশুর টেস্ট করা শেষ হলে ও উঠে গেলো।নীল আপন মনেই হাসছে।সোজা কথা বললে এই মেয়ের কানে যায় না।
নিশু:হয়েছে?
নীল:হবে কি করে এখনোতো বিয়েই করি নি!অবশ্য তুমি অনুমতি দিলে বিয়ের আগেই….
নিশু রেগে গিয়ে বললো…😱অসভ্য,বদমাশ একটা!
ও আর দাঁড়ালো না।দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।নীল আপন মনেই আবার হেসে উঠলো।
বিকেলবেলা ছাদে উঠতেই আয়াত আর নীল হাঁ?ইশু নিশু দুটোই ছাদের কার্নিশের ওপর বসে গল্প করছে।
নীল দিলো ইশুকে জোরে এক ধমক।
নীল:এই ইশু??? পাঁজি মেয়ে!শয়তানে আছর করেছে নাকি তোর ওপর?…নাম তাড়াতাড়ি??(জোরে ধমক দিয়ে)
নীলের ধমক খেয়ে ইশু তাড়াতাড়ি নেমে গেলো।কিন্তু নিশু ঠায় বসে আছে।নীলকে ওর দিকে রাগি লুকে তাকাতে দেখে আয়াত বললো…দাঁড়া আমি দেখছি!
আয়াত নিশু কাছে গিয়ে আস্তে করে ডাক দিলো…এই জরি??এই সময় এখানে দাঁড়িয়ে থাকাটা ভালো নয়।নেমে যাও প্লিজ?
ইশু:দাঁড়া একমিনিট তুমি বারবার ওকে জরি বলে ডাকো কেন?
আয়াত:তো কি বলে ডাকবো?…জরিনা??ওটা আমার ভালো লাগে না।তারচেয়ে জরিই সুন্দর!
ইশু:মানে??
আয়াত:মানে আমি ওকে জরি বলেই ডাকবো।আর তুমি এমন জেরা করছো কেন?
নীল:হ্যাঁ ঠিকই তো!তুই এমন জেরা করছিস কেন??তাছাড়া ওর সাথে এই নামটাই ভালো যায়।
ইশু নিশুর কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো…এই নিশু ওরা এসব কি বলছে?
আয়াত:নিশু??
ইশু:হ্যাঁ ওর নাম নিশিতা জামান।নিকনেইম নিশু!
নীল:😂কি বললি??হিসু??
নিশু একঝটকায় কার্নিশের ওপর থেকে নেমে নীলের সামনে এসে বললো…কি বললে তুমি?
নীল উল্টো দিকে ফিরে বললো…ইশু আমি গেলাম!
নিশু চিৎকার দিয়ে বললো..নীল,বিল,চিল,পাতিল!
নীল থমকে গেলো।তারপর নিশু সামনে এসে বললো…কি বললে?
নিশু এবার ভাব নিয়ে বললো…ইশু আমি গেলাম!
নীল কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আয়াত ওর পিঠে চাপড় মেরে বললো…দোস্ত সি ইজ ড্যাম কিউট!
আয়াতের কথা ওর কানে গেছে কি না কে জানে?ও বিড়বিড় করে বললো…আচ্ছা বিচ্ছু তো এই মেয়ে!
আয়াত হাসছে ওর কথা শুনে।
ইশু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের দুজনকে পর্যবেক্ষণ করছে।আর বোঝার চেষ্টা করছে এদের মনের ভেতর কি চলছে।
রাতের বেলা খেতে বসে নিশু এলো না।নীল আর আয়াতও টেবিলে এসে বসেছে।নিশ সন্ধ্যের দিকে খেয়ে নিয়েছে তাই রাতে খাবে না বলেছে।
নীল:কি রে ইশু বিচ্ছুটা এলো না?
ইলারা বেগম অবাক হয়ে বললো…কে বিচ্ছু?
ইশু উৎসাহের সহিত বললো…তুমি তো জানো না মা এর মধ্যে কত কান্ড হয়ে গেছে!
ইলারা বেগম:মানে?
ইশু কিছু বলার আগেই নীল ধমক দিয়ে ঠান্ডা করে দিলো।
নীল:মানে এখন আমার প্রচুর ক্ষিদে পেয়েছে!
ইলারা বেগম স্বাভাবিক হয়ে বললেন..হ্যাঁ তাইতো!এক্ষুনি দিচ্ছি।
রুমে এসেই নীল লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো।আয়াত ওর পাশে এসে বসলো।
আয়াত:নীল??
নীল:হুঁ?
আয়াত:আমরা কি সত্যিই আবার ফিরছি?
নীল:না মিথ্যে মিথ্যে!
আয়াত:তোদের দুইভাইবোনের এক প্রবলেম।সবসময় খালি ত্যাড়া উত্তর।ঠিক করে কথা বলা যায় না?
নীল একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো…এবার কি ইশুর মত আমিও তোর সাথে সাধু ভাষায় কথা বলবো নাকি?
আয়াত:ধুরর!
ও বিরক্ত হয়ে শুয়ে পড়লো।নীলের ঘুম আসছে না ও বারান্দায় গিয়ে বসলো।বারান্দায় বসতেই দেখলো ইশুর ঘর অন্ধকার কিন্তু আবছা আলোতে বারান্দায় একজনকে দেখা যাচ্ছে।নীল আস্তে করে ডাক দিলো…ইশু নাকি?
নিশু:না আমি!
নীল:ওহ!…এতরাতে বারান্দায় কি করছো তুমি?
নিশু:আলুভর্তা খাচ্ছি!….খাবে?
ওর এমন উত্তরে নীল হতবম্ব হয়ে গেলো।
নীল:😐বাদঁর মেয়ে!
নীল বিড়বিড় করতে করতে রুমে ঢুকে গেলো।কি ফাজিল মেয়ে??ইচ্ছে করে তুলে আছাড় মারি!
পরেরদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই দেখলো আয়াত নেই।নিশ্চই নিচে নেমে গেছে।ও তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে গেলো।সোফায় আয়াত একা বসে আছে।
নীল:কি রে একা বসে আছিস কেন?
আয়াত:তো কি করবো?
নীল:ইশু কোথায়?
আয়াত:ওদের নাকি পরীক্ষা চলছে ভার্সিটিতে গেছে।
নীল:আর মিস শিশি, বতল?
আয়াত:সেইম!
নীল:সে জন্যই বুঝি এমন ক্যাবকান্তের মত বসে আছিস?
আয়াত:মোটেও না!
নীল:না হলেই ভালো।
ব্রেকফাস্ট শেষে দুজনে সোফায় বসে আড্ডা দিচ্ছে এর মধ্যে কলিংবেল বেজে উঠলো।
আয়াত:কে আসলো?
নীল:দরজা খুললেই দেখবি?
বুয়া দরজা খুলতেই রুশা এসে হাজির।আয়াত চোখমুখ কুচঁকে ফেললো ওকে দেখে।নীল হাসছে।রুশা এসেই নীলকে জড়িয়ে ধরল।
রুশা:কেমন আছো সুইটহার্ট?
নীল:ভালো…তুমি কেমন?
রুশা:এতদিন ভালো ছিলাম না।এখন অনেক বেশি ভালো।তুমি আমাকে বলো নি কেন তুমি আসছো?..আমি তোমাকে রিসিভ করতে যেতাম!
নীল:আই এম সো সরি!…আসলে তাড়াহুড়োতে সব ভুলে গেছিলাম।সব দোষ আয়াতের ওই তো বারবার তাড়া দিচ্ছিলো।
রুশা আয়াতের দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো…হাই?
আয়াত:হাই!
রুশা সোফাতেই বসে ছিলো কিন্তু নীলের গায়ের ওপর হেলান দিয়ে।আয়াত বিরক্ত হতে টিভি অন করল।
ইশু তানিমের রুমে বসে আছে।পাশে নিশু।দুজনেই নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
তানিম:কি লিখেছো খাতায় তোমরা?
ইশু,নিশু দুজনেই চুপ।
তানিম:বলো কি লিখেছো?(ধমক দিয়ে)
ইশু:আপনি খাতা দেখেন নি স্যার?
তানিমের মেজাজ এবার আরো চটে গেলো।
তানিম:দাঁড়াও???….দাঁড়াও তুমি?
ইশু দাঁড়িয়ে গেলো।
তানিম:এবার চেয়ারের ওপর দাঁড়াও?
নিশু:😮
ইশু দাঁড়াতেই তানিম বললো….এবার কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে তুমি?
ইশু ভাবছে কানে যখন ধরাবেই তখন উনাকে আরেকটু জ্বালানো যাক!
ইশু:কার কান ধরবো স্যার?
তানিম:😐😐
ইশু:না থাক ধরছি!
প্রায় আধঘণ্টা হয়ে গেছে ইশুকে চেয়ারের ওপর দাঁড় করিয়ে রেখছে।পায়ে টনটন করছে।তানিম একমনে বই পড়ছে।
ইশু:স্যার?
তানিম ওর দিকে না তাকিয়েই বললো…বলো?
ইশু:না মানে..মা আপনাকে আমাদের বাসায় যেতে বলেছে!…ভাইয়া দেশে ফিরেছে তো তাই!
তানিম:তাই নাকি?…কবে ফিরলো?
ইশু:গতকালকে!
তানিম:ঠিক আছে আন্টিকে বলবে আমি যাবো!
ইশু:কবে!
তানিম:আজ কালকের ভেতরই যাবো!
ইশু:(শালারব্যাটা আয় খালি একবার তুই!!)
তানিম:ঠিক আছে তোমরা এখন আসতে পারো!
বাসায় এসে দেখলো রুশা এসেছে।ইশু এগিয়ে গেলো।
রুশা:এই ইশু কেমন আছিস?
ইশু:ভালো…তুই কেমন?
রুশা:আমি ভালোই!
নিশু আড়চোখে রুশাকে দেখছে।মেয়েটা একেবারে নীলের গায়ের ওপর বসেছে।আর নীল???অসভ্য একটা!
নিশু ওপরে উঠার জন্য পা বাড়াতেই আয়াত বললো…দাঁড়াও নিশু আমিও যাবো!
রুমে এসেই নিশু ফ্রেশ হয়ে নিলো।হঠাৎ রুশার কথা মনে পড়তেই ভাবছে নিশ্চই ওদের ঘনিষ্ঠ কেউ হবে নইলে নীলের সাথে এত ক্লোজ হয়ে বসতো না।যাই হোক!প্রচন্ড টায়ার্ড লাগছে।ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিলো।রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়লো।
নীল রুশাকে নিয়ে ওপরে আসছিলো।ইশুর রুম ক্রস করতেই দেখলো দরজা খোলা।
নীল রুশার দিকে তাকিয়ে বললো…তুমি রুমে যাও আমি একটু আসছি।রুশা যেতেই ও ইশুর রুমে ঢুকলো।নিশু ঘুমাচ্ছে।নীল কি মনে করেই কাঁথাটা ওর গায়ের ওপর জড়িয়ে দিয়ে আবার বেরিয়ে যেতে নিলেই ঘুমের ঘোরে নিশু ওর হাত চেপে ধরলো।নীল মুচকি হেসেই ওর হাতটা ছাড়িয়ে আবার বেরিয়ে গেলো।
বিকেলবেলা নিচে নামতেই দেখলো আয়াত আর ইশু বসে বসে মুভি দেখছে।
নিশুকে দেখেই আয়াত বললো…ঘুম ভাংলো?
নিশু:হুম!বেশ ভালো ঘুম হয়েছে!…কি করছো তোমরা?
আয়াত :মুভি দেখছি!উপরে এক মুভি চলছে আর নিচে এক মুভি।উপরের মুভি দেখার সৌভাগ্য আমাদের নেই তাই নিচে বসেই মুভি দেখছি!
নিশু:মানে?
ইশু আয়াতের দিকে তাকিয়ে বললো…যতসব বাজে কথা!
নিশু:আমি কিছুই বুঝতে পারছি না তোরা কি বলছিস!
আয়াত:মানে নীল এখন ওর হবু বউকে নিয়ে রোমান্স করতে ব্যস্ত!
নিশু:হবু বউ মানে?
ইশু:ঠিক তা না।আসলে রুশা আমার ফুপাতো বোন।ফুপা ফুপির ইচ্ছা ওকে ভাইয়ার বউ করার জন্য।বাবা মারও অবশ্য তেমন একটা অমত নেই।তবে মা বলেছে ভাইয়া সাথে আলাপ করে ফাইনাল ডিসিশন জানাবে!
নিশু:ওহ!…তারমানে বিয়েটা মোটামুটি ফাইনাল?
ইশু:উহুঁ!…এখনো তো ভাইয়াকে জানানোই হয় নি!মাকে জিজ্ঞেস করতেই বললো…সবে দেশে ফিরেছে কিছুদিন যাক তারপর এসব নিয়ে আলোচনা করা যাবে!
নিশু:কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এ ব্যপারে নীল কোন আপত্তি করবে না!
ইশু:আমরা সবাই সেটাই ভাবছি!
আয়াত আর ইশু হঠাৎ কথা বন্ধ করে টিভির দিকে মনোযোগ দিলো।লাস্ট সিন চলছে।নিশু বিরক্ত হয়ে ম্যাগাজিন নিয়ে বসলো।ইলারা বেগম এসে ইশুকে ঠেলছে নীলের ঘরে কফি নিয়ে যাওয়ার জন্য।ইশু নড়তে নারাজ।
ইশু:বুয়া কোথায়?
ইলারা বেগম:ছুটি নিয়েছে।তাছাড়া নীলের ঘরে আমি বুয়াকে দিয়ে কফি পাঠাবো নাকি?…যা না মা!
ইশু:এই নিশু তুই যা না।প্লিজ!
ইলারা বেগম নিশুর দিকে তাকিয়ে বললেন…যাবি?
নিশু:আমি??
ইলারা বেগম:আচ্ছা থাক আমিই যাচ্ছি।
নিশু:তোমার কষ্ট করতে হবে না আমিই যাচ্ছি।
নিশু কফি হাতে দরজার বাইরে দাঁড়াতেই ভেতর থেকে হা্সাহাসির আওয়াজ আসছে।ও বাইরে দাঁড়িয়ে ভাবছে ভেতরে ঢুকবে কি না?…অনেকক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে শেষে দরজায় টোকা দিলো।
নীল:কাম ইন!
নিশু ভেতরে ঢুকতেই দেখলো রুশা নীলের গেঞ্জি আর ট্রাওজার পরে বসে আছে।ছি!ছি!বিদেশে পড়ালেখা করে এসে এই শিখেছে ওরা??
রুশা ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে নীলকে জিজ্ঞেস করলো…ও কে?..তোমাদের নতুন মেইড?
নীল হাসছে নিশুর দিকে তাকিয়ে।নিশুর রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে।
নীল:হ্যাঁ!
রুশা:ঠিক আছে তুমি কফি রেখে যাও।
নিশু রাগে ঠাস করে ট্রে টা রেখে বেরিয়ে গেলো।নীল হাসছে ওর কান্ড দেখে।
রুশা:ও এমন করলো কেন??
নীল:আসলে ও মায়ের বান্ধুবীর মেয়ে।ওর বাবা বদলি হওয়াতে কিছুদিন আমাদের এখানে থাকবে।
রুশা:তুমি আমাকে আগে বলো নি কেন??
নীল:ওকে রাগানোর জন্য।তুমি ভাবতেও পারবে না রাগি এই মেয়ে!
রুশা:কিন্তু মামি কি ভাববেন বলো তো?
নীল:আমার মনে হয় না ও মাকে গিয়ে কিছু বলবে!এর শোধ আমার ওপরই তুলবে।
রুশা:তোমার ওপর তুলবে মানে?(এই মেয়েটার সাথে কি নীলের মেলামেশা আছে নাকি!)
নীল:আর বলো না।এসেছি থেকেই ওর সাথে আমার ঝগড়া লেগে আছে।
রুশা:(তাহলে তো ভালোই)
চলবে?