Childhood marriage

Childhood marriage ! Part- 07

#পর্ব-০৭
(সকালে)
সারারাত ঘুম হয়নি,ভোরের দিকে চোখদুটো লেগে এসেছিল।ভাবলাম আজ আর ক্যাম্পাসে যাব না,একটু বেলা করে ঘুমাব কিন্তু গরিবের দোয়া কি আর কবুল হয়?এই সাত-সকালে কাকিয়া দরজা ধাক্কানো শুরু করেছে😩
কাকিয়া : ছোঁয়া মা,কি রে দরজা খুলছিস না কেন?
ছোঁয়া : উফ!কাকিয়া আরেকটু ঘুমাতে দাও প্লিজ
কাকিয়া : দরজা খোল মা,দেখ কারা এসেছে…
(অগত্যা অনিচ্ছা সত্বেও দরজা খুলতে হল আর খুলেইতো আমার চোখ ছানা-বড়া,মা আর দিয়া দাঁড়িয়ে আছে)
ছোঁয়া : (অবাক হয়ে)মা তোমরা এখানে?
মা : কেন রে মা আসতে পারিনা?
ছোঁয়া : আমিতো তা বলিনি,আসলে এত সকাল সকাল তোমাদের দেখে আমি…
দিয়া : আপু আমরা তোকে নিতে এসেছি,তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়
ছোঁয়া : নিতে এসেছিস মাসে!!মা..কাকিয়া ও এসব কি বলছে?
কাকিয়া : ও ঠিকই বলছে রে মা,তুই ঝটপট ফ্রেশ হয়ে আয় তো
ছোঁয়া : কিন্তু…
মা : কোন কিন্তু না,আগে ফ্রেশ হয়ে কিছু মুখে দাও তারপর বাঁকিটা ভাবা যাবে
ছোঁয়া : কি আর করা,ফ্রেশ হয়ে মা আর দিয়াকে সাথে নিয়ে নাস্তা করে নিলাম তারপর ওরা আমাকে নিয়ে চলে আসলো…
ওহ্ আপনাদেরকে তো বলাই হয়নি,আমি এখন আমাদের বাড়ির পুকুরপাড়ে বসে আছি।কাল থেকে কি কি হয়েছে আমার সাথে সেসব নিয়েই ভাবছি।এ বাড়ির পুকুরপাড়টা আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় জায়গা,যতবারই এখানে বেড়াতে এসেছি বেশিরভাগ সময়ই আমি এই পুকুরপাড়ে বসে থেকেই কাটিয়ে দিয়েছি।
কিন্তু এবারের আসাটা অন্যবারের মত স্বাভাবিক নয়,এবারে মা আমাকে একটা উদ্দেশ্য নিয়ে নিয়ে এসেছে।হ্যাঁ উদ্দেশ্য আর সেটা হল আমার বিয়ে।আর দুদিন পরেই আমার আর সায়নের বিয়ে,ব্যাপারটাকে বিয়ে না বিয়ে পুনঃবিবাহ বলাটাই মনে হয় বেশি যুক্তিযুক্ত।
যাই হোক আসল ব্যাপারে আসি,যেহেতু গ্রামের বিয়ে তাই বর-কনেকে এক বাড়িতে রেখে বিয়ে দেয়া যাবে না।আর এই জন্যেই মা আমাকে সকাল সকাল ওখান থেকে নিয়ে এসেছে।না জানি ঐ এ্যানাকণ্ডাটা এখন কি করছে,সেতো এসবের কিছুই জানে না….

সায়ন : আজকে ঘুমটা ভাঙতে একটু বেশিই দেরি হয়ে গেল দেখছি,কি করব সারারাত তাসনিয়াকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে কখন ঘুমিয়েছি তা নিজেও জানিনা।সে যাই হোক অনেক ভেবে একটা উপায় পেয়েছি,বিয়েটা ভাঙতে হলে ছোঁয়ার হেল্প লাগবে,ওকে দিয়েই কাজটা করতে হবে কিন্তু তার আগেতো ওকে খুঁজে বের করতে হবে।বাইরে বেরিয়ে আসলাম,এসেইতো চোখ ছানাবড়া
মা : আরে খোকা,তুই উঠে পড়েছিস?যা ফ্রেশ হয়ে আয় আমি নাস্তা দিচ্ছি
সায়ন : মা তুমি একবার এদিকে আসোতো
মা : কি হয়েছে?
সায়ন : এসব কি হচ্ছে মা?বাড়িটাকে এভাবে সাজাচ্ছে কেন?
মা : বা রে বিয়ে বাড়ি বলে কথা,একটুকো সাজাতেই হবে
সায়ন : বিয়ে…ওহ্ শিট
মা : কি রে কি হল?
সায়ন : কিছু না মা,ছোঁয়া কোথায়?
মা : এখনই মা কে ভুলে বউ কে খুঁজছিস!দুদিন পরতো আমাকে ভুলেই যাবি
সায়ন : উফ মা ফাইজলামি কর না তো,ছোঁয়া কোথায় বল আমার খুব জরুরী একটা দরকার আছে
মা : কিন্তু ও তো নেই
সায়ন : নেই মানে?
মা : নেই মানে সকালে ওর মা আর বোন এসে ওকে নিয়ে গেছে।বিয়ে পর্যন্ত ও ওখানেই থাকবে
সায়ন : ওহ্ নো এখন কি হবে…
মা : কিছু বললি?
সায়ন : কই নাতো…
.
(বিকেলে)
কনক : ছি!দোস্ত শেষমেষ তুইও
সায়ন : আমি আবার কি করলাম?
কনক : কি করিসনি বল,ছোঁয়াকে আমার সাথে মিলিয়ে দেয়ার কথা বলে শেষমেষ তুইই ওকে…
সায়ন : আরে বাবা,আমি কি জানতাম নাকি যে ওর সাথে আমার ছোটবেলায়…
লিখন : তুই সত্যিই কিছু জানতি না?
সায়ন : আরে বাবা বলছি তো আমার কিছু মনে নেই।বাবার কাছে যা শুনলাম তাতেতো মনে হল তখন আমরা দুজনেই অনেক ছোট তাই হয়ত…
টগর : তাহলে এখন কি করবি?
সায়ন : আমিও সেটাই ভাবছি,এভাবে হুট করে কিভাবে সম্ভব…
কনক : শালা,না চাইতেই ছোঁয়ার মত সুন্দরী একটা মেয়েকে পাইতাছস তাও এত ঢং করছ কেন?তোর জায়গায় আমি থাকলেতো এতক্ষণে নাগিন ডান্স দিতাম
সায়ন : তাইলে এক কাজ কর,আমার জায়গায় বিয়েটা তুইই করে নে
কনক : ওই শালা হারামি,আমারে কি তোর এতটাই কামিনা মনে হয়?
সায়ন : মানে?
কনক : শোন আমি এতটাও খারাপ না যে বন্ধুর বউকে….
সায়ন : আরে…
কনক : যা তোর জন্য আমি ছোঁয়ার পথ থেকে সরে দাঁড়ালাম,যা সায়ন যা জিলে আপনি জিন্দেগী😎
সায়ন : আরে দোস্ত শোন না…
টগর : ও তো ঠিকই বলেছে,বিয়েটা যেভাবেই হোক হয়েছেতো এখন মন দিয়ে সংসারটা কর
লিখন : তুই অনেক লাকি রে সায়ন তাই ছোঁয়ার মত একটা মেয়েকে পেয়েছিস।মেয়েটা অনেক ভাল…
সায়ন : ভাল না ছাই,পুরাই একটা শাকচুন্নী(মনে মনে)
ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং
সায়ন : হ্যালো

মারুফ : শালা বউকে পেয়ে আমাদেরকেই ভুলে গেলি!
সায়ন : আবে ইয়ার শোন না…
মারুফ : কোন শোনাশুনি নেই,তুই শালা আসলেই একটা হারামি।যা তোর সাথে কোন কথা নাই,আমি মামীর সাথেই কথা বলব…
সায়ন : ওই শালা,আমি আছি নিজের জ্বালায় আর উনার মনে রং লাগছে😡
মারুফ : চেতস কেন দোস্ত,আচ্ছা বল কি বলবি
সায়ন : আমি এই বিয়ে করব না
মারুফ : কিন্তু কেন?আমিতো শুনলাম মেয়েটা নাকি খুব সুন্দরী?
সায়ন : হুম
মারুফ : তাইলে প্রবলেমটা কি?
সায়ন : প্রবলেমটা হল তাসনিয়া,আমার ওকেই চাই অন্য কাউকে না…
মারুফ : তাস…নিয়া…OMG তুই এখনও ওখানেই আটকে আছিস!দেখ দোস্ত,আমরা ওর সম্পর্কে কিছুই জানিনা তাই বলছি পাগলামি বন্ধ কর আর বিয়েটা করে নে
সায়ন : ইম্পসিবল,আমার ওকেই লাগবে…
মারুফ : দেখ সায়ন,আমরা ইনফ্যাক্ট এটাও জানিনা যে মেয়েটার নাম আসলেই তাসনিয়া কিনা…
সায়ন : মানে!!!
মারুফ : মানে তুই তখন খুব জ্বালাচ্ছিলি তাই হোটেলের একটা বয়ের থেকে কিছু ইনফরমেশন জোগাড় করেছিলাম।কিন্তু সেটা কতটা সত্যি তাওতো আমরা জানিনা…
সায়ন : হোয়াট!আর এটা তুই আমাকে এতদিনে বলছিস!! I just can’t believe this…
মারুফ : দেখ সায়ন,তুই চাস বা না চাস ছোঁয়া তোর স্ত্রী আর মেয়েটাকে আমি ছোটবেলা থেকেি চিনি।অসম্ভব ভাল একটা মেয়ে,যদিও অনেক বছর হল দেখা হয়নি কিন্তু সবার থেকে যা শুনলাম তাতে আমার মনে হয় She is just perfect for you so…
সায়ন : ওর সাথে কথা বললে অযথাই মেজাজ খারাপ হবে তাই ফোনটা কেটে দিলাম।কারোর কোন হেল্প পাওয়া যাবে না,যা করার নিজেকেই করতে হবে
মারুফ : যাব্বাবা ফোনটাই কেটে দিল!এই ছেলের মাথার তারছেঁড়া মনে হচ্ছে,যাই হোক বিয়ের পর ছোঁয়াই ওর মাথা ঠিক করে নেবে….

(রাতে)
ছোঁয়া : বালিশে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে আছি,মাথায় কোন কাজ করছে না।শরীরটাও বেশ খারাপ লাগছে,একটু ঘুমাতে পারলে ভাল হত কিন্তু সেটাও সম্ভব না।একটু আগেই সবাই মিলে দুই হাত ভর্তি করে মেহেদী পরিয়ে দিয়েছে তাই না শুকানো পর্যন্ত চাইলেও ঘুমাতে পারছি না।
যাই হোক প্রবলেম সেটা না,আমার প্রবলেমটা হচ্ছে ঐ এনাকণ্ডা আই মিন সায়নের সাথে আমাকে সারা জীবন থাকতে হবে।উনার সাথে কিভাবে থাকব ভাবতেই আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে…
সায়ন : সেই সন্ধ্যার পর থেকে রুমের এমাথা থেকে ও মাথা পায়চারী করে যাচ্ছি।কি করব মাথাটা ঠিকমত কাজ করছে না যে,তাসনিয়া ছাড়া আমার জীবনে অন্য কোন মেয়ের কোন জায়গা নেই।কিন্তু এই বিয়েটা হয়ে গেলে আর কোন কিছুই করা সম্ভব হবে না তাই…
তবে আমি আমার প্ল্যানিং করে ফেলেছি,আর কিছু্ক্ষণ পরেই সবাই ঘুমিয়ে পড়বে আর তখনই আমি…
এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝে ফেলেছেন যে আমি পালানোর প্ল্যানিং করে ফেলেছি।হ্যাঁ এটা ছাড়া এখন আমার হাতর আর কোন উপায় নেই,কেউই আমাকে কোন হেল্প করবে না তাই আমার রাস্তা আমাকেই বের করতে হবে…

(কিছু্ক্ষণ পর)
সায়ন : সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে,আমি ব্যাগটা কাঁধে নিয়েই চুপচাপ বেরিয়ে আসলাম।অমাবস্যার রাত,চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার,ভয়ে গা ছমছম করছে কিন্তু তবুও চুপচাপ হেঁটে যাচ্ছি।সবাই জেগে যাওয়ার আগেই যেভাবেই হোক এখান থেকে পালাতে হবে না হলে আর কিছুই করার থাকবে না।
সবে মেইনগেট ক্রস করেছি তখনই কারো সাথে ধাক্কা লাগল
-এই কে রে?
রাকি্ : দোস্ত…সারপ্রাইজ
সায়ন : আ..আরে তো..তোরা?
দিপু : হ্যাঁ আমরা,কেন তাতে কি তোর কোন প্রবলেম আছে?
সায়ন : না মানে কিছু না জানিয়ে এভাবে চলে আসলিতো তাই…
তন্ময় : বলে আসলেতো আর সারপ্রাইজ থাকতো না তাইনা?
সায়ন : সালা তোদের সারপ্রাইজের ঠেলায় আমার প্ল্যানিংয়েরতো ১২টা বাজিয়ে দিলি(মনে মনে)
দিপু : শালা তুই বিয়ে করছিস আর একবার আমাদের জানালিও না!!
সায়ন : আর বিয়ে..আমিতো…
রাকিব : ওই শালা,এখানেই দাঁড় করিয়ে রাখবি নাকি ভেতরে নিয়ে যাবি?এত্ত লম্বা জার্নি করে আসলাম আর তুই কিনা…
সায়ন : আ..আসলে আমার একটু কাজ ছিল,তোরা ভেতরে যা আমি আসছি…
(হঠাৎ)
মা : ফুলি দেখতো কে আসলো?
ফুলি : জ্বি দেখতাছি
সায়ন : ধেত্তেরি কে,এই মেয়ে এবার সব গুলিয়ে দেবে
ফুলি : খালাম্মা সায়ন ভাইজানের লগে কারা জানি কতা কইতাছে
মা : তাই নাকি?সায়ন…কে এসেছে রে?
সায়ন : মা তন্ময়,দীপু আর রাকিব এসেছে
মা : ও…তা বাবারা আসতে কোন অসুবিধে হয়নি তো?
রাকিব : জ্বি না আন্টি
মা : তা বাবা মারুফ কই?ও তোমাদের সাথে আসেনি?
দিপু : না আন্টি ও একটু বিজি ছিল তাই…
মা : ও বুঝেছি ও ওর বাবা-মার সাথে আসবে
তন্ময় : জ্বি আন্টি
মা : এই সায়ন,তুই এত রাতে এখানে কি করছিস?
সায়ন : না মানে মা আমি আসলে…
মা : কি বলছিস পরিষ্কার করে বল না…
সায়ন : না মানে ওরা এসেছে তাই…
মা : আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি,এখন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে না থেকে ওদেরকে ভেতরে নিয়ে যা,এত দূর থেকে এসেছে…
সায়ন : আচ্ছা মা যাচ্ছি…
(শালারা তোদের জন্য আজকে আমার এত কষ্ট করে বানানো প্ল্যান ধুলায় মিশিয়ে দিলি,তোদেরকে তো আমি ছাড়ব না)

সায়ন : রুমে ঢুকেই হারামীগুলোকে আচ্ছামত ধোলাই দিতে শুরু করলাম
তন্ময় : আরে আরে কি করছিস এসব?মাখা খারাপ হয়ে গেল নাকি?
সায়ন : শালা হারামীরা তোরা আমার সাথে কি করেছিস জানিস?
দিপু : কেন কি করেছি আমরা?
সায়ন : তোদের জন্য আজ তোদের জন্য আজকে আমার এত বড় সর্বনাশ হয়ে গেল,এখন আমার কি হবে…
রাকিব : ওই শালা মেয়ে মানুষের মত কান্না করছিস কেন?
সায়ন : তো কি করব?কান্না ছাড়া যে আমার আর কিছুই নেই
রাকিব : শালা চুপ করবি নাকি কানের নিচে দুইটা লাগাব?
সায়ন : আমার এত বড় সর্বনাশ করে আবার আমাকেই ঝাড়ি দেওয়া হচ্ছে😧
দিপু : তো কি করব,তোকে কোলে তুলে নাচব?
তন্ময় : মেয়েদের মত ন্যাকা কান্না না করে কি হয়েছে চুপচাপ বলে ফেলতো
সায়ন : কি বলব?কত কষ্ট করে বাড়ি থেকে পালালাম আর তোরা কিনা সব প্ল্যান ভেস্তে দিলি!ওই শালারা আর দশ মিনিট দেরি করলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেত শুনি?
দিপু : ওয়েট ওয়েট ওয়েট কি বললি তুই?পালাচ্ছিলি মানে?
সায়ন : হ্যাঁ সারাদিন ধরে চিন্তা করে করে এত্ত প্ল্যানিং করে বাড়ি থেকে বের হলাম আর তোরা…
রাকিব : কেন তুই পালচ্ছিলি কেন?
তন্ময় : তারমানে তুই বিয়েটা করতে চাইছিস না?
সায়ন : হুম😩
রাকিব : কিন্তু কেন?

সায়ন : কেন আবার I just love Tasnia
সবাই : হোয়াট!!!
সায়ন : তোরা এমন করে রিয়্যাক্ট করছিস কেন?
রাকিব : দেখ সায়ন ওই মেয়ের কথা ভুলে যা আর চুপচাপ বিয়েটা করে নে
সায়ন : ইম্পসিবল আমার শুধু তাসনিয়াকে চাই
রাকিব : You have gone mad man…
সায়ন : হোয়াট!!!
তন্ময় : ও তো ঠিকই বলেছে এসব পাগলামি বাদ দে
সায়ন :….
দিপু : বাদ দে তন্ময়,ওকে এসব বুঝিয়ে কোন লাভ হবে না।ও পাগল হয়ে গেছে
রাকিব : এই চল তো,ওর যা ইচ্ছে ও করুক…
To be continued….
ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন…