Childhood marriage 3 !! Part- 38
হাড় হিম করা কারো তীক্ষ্ণ হাসির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল ছোঁয়ার কিন্তু তীব্র মাথা ব্যথার জন্য চোখ মেলতে পারলো না।তখনই একটা মেয়ের ঝাঁঝালো কণ্ঠ শুনতে পেলো,পুরো ঘটনাটা বোঝার জন্য ঘাপটি মেরে পড়ে রইলো
রিয়াঃ এতো বড় সাহস,আমার রিস্ট ওয়াচে জিপিএস ট্র্যাকার!আর তাও আবার আমারই বাবাকে দিয়ে!ছাড়বো না,কাউকে ছাড়বো না।বার বার বলেছিলাম কোন চালাকি না করতে তারপরেও…অনেক বাড় বেড়েছে,এবার ওকে বোঝাতেই হবে আমার সাথে চালাকি করার মজা।এই কে আছিস?
(রিয়ার ডাকে গুণ্ডামার্কা দুজন লোক ছুটে আসলো)
রিয়াঃ এই যে এই মেয়েটা,ভেবেছিলাম রাত বারোটা পর্যন্ত ওকে বাঁচিয়ে রাখবো কিন্তু নাহ এখন আর তা করব না,যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে এই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হবে
– তাহলে কি ম্যাডাম,এখনই…
রিয়াঃ না…এখন না,আগে ওর জ্ঞান ফিরুক তারপর।এতো সহজেতো ওকে মারবো না,মরার আগে ওর অসহায় চেহারাটা যে আমার দেখতে ইচ্ছে করছে।ও যখন বাঁচার জন্য কাকুতি মিনতি করবে তখন আমি…তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে ওকে মারবো হাহাহা…
– তাহলে ম্যাডাম…
রিয়াঃ এর দিকে নজর রাখিস,জ্ঞান ফিরলেই আমাকে খবর দিবি
– জ্বি ম্যাডাম
(আস্তে আস্তে ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে গেলো রিয়া,পা দিয়ে ওর দেহটাকে কয়কবার নাড়িয়ে দেখলো তারপর ওর কানে কানে বললো…)
রিয়াঃ ঘুমাচ্ছো?বেশতো ঘুমাও না,যত পারো ঘুমিয়ে নাও তারপরেইতো…একবার খালি ঘুমটা ভাঙুক তারপর…এতো সহজে মারবো না তোমাকে,জাস্ট পায়ের গোড়ালির একটু উপরে একটা রগ কেটে দিব ব্যাস তাতেই হবে,দরদর করে রক্ত ঝরবে আর তুমি তিলে তিলে…হাহাহা….
(হাসির শব্দটা আস্ত আস্তে মিলিয়ে আসছে,তার সাথে ওই দুটো লোকের পায়ের শব্দও।ধীরে ধীরে চোখ মেললো ছোঁয়া)
ছোঁয়াঃ এ আমি কি শুনলাম!এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না,একটা মেয়ে এতোটা ভয়ংকর হতে পারে”আর কে ওই মহিলা?চিনি বলেতো মনে হচ্ছে না তাহলে উনি কেন আমাকে…যাই হোক যেভাবেই হোক এখান থেকে পালাতে হবে কিন্তু কিভাবে?
সমুদ্র সৈকতের বাইরের কক্সবাজারে যে ছোটো খাটো কিছু পাহাড়ী এলাকাও রয়েছে ব্যাপারটা অনেকের কাছেই অজানা।সায়ন,রাকিব,আসিফ,মারুফ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে সাথে নিয়ে এখন যেখানটায় দাঁড়িয়ে আছে এটাও তেমনই একটি পাহাড়ি রাস্তা।খেপুপাড়া আবহাওয়া অফিসের অদূরে এই এলাকা থেকেই কিছুক্ষণ আগে রিয়ার হাতঘড়িতে লাগানো জিপিএস ট্র্যাকারের সিগনাল দেখাচ্ছিল।হ্যাঁ মাস দুয়েক আগে ছোঁয়ার কিডন্যাপিংয়ের ঘটনার পর রিয়ার বাবাকে দিয়েই কাজটা করিয়েছিল সায়ন।
– মি. চৌধুরী,সিগনালটাতো বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত লোকেশনটা এখানেই দেখাচ্ছিল
মারুফঃ কিন্তু এখানেতো কিছুই দেখা যাচ্ছে না
– আসপাশে একটু খুঁজে দেখি,কিছু পাওয়া যায় কিনা,এক কাজ করুন আপনারা ওদিকটায় যান আর আমরা এদিকে।কোনকিছু দেখতে পেলেই ওয়াকিটকিতে ২ নম্বর চ্যানেলে জানাবেন কেমন?
(কিছুক্ষণ পর)
একটা ভাঙ্গাচুরো কারখানার মতো কিছু একটা দেখা যাচ্ছে,এমন একটা জায়গায় এটা কি করছে!উত্তর মিললো ভেতরে ঢোকার পর,দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটা একটা পরিত্যক্ত কাঠের মিল।ঠিক এই জায়গাটায় ভিডিওতে দেখেছিল সায়ন তাহলে কি ছোঁয়া…
– সবকয়টাই পালিয়েছে,এখানে কেউই নেই তবে মনে হচ্ছে উনাকে এখানেই রাখা হয়েছিল
(ইন্সপেক্টরের কথা কানে আসতেই সায়ন ওদিকে ছুটে গেল।একটা সেণ্ডেল আর একটা ওড়না পড়ে আছে মেঝেতে আর তার পাশেই বেশ খানিকটা রক্ত)
সায়নঃ (ভয়ে ভয়ে)এ..এগুলো ছোঁয়ার…আর এই রক্ত?তবে কি ওরা ওর সাথে খারাপ কিছু…
রিয়াঃ ছোঁয়া…ছোঁয়া…কোথায় লুকিয়ে আছো বেবি…বেরিয়ে এসো…দেখো এখন যদি বেরিয়ে আসো তাহলে তোমাকে একটু কম কষ্ট দিব নাহলে কিন্তু…ছোঁয়া…লক্ষ্মীসোনা…এতো দুষ্টুমি করতে হয় না,বড়দের কথা শুনতে হয়…বেরিয়ে আসো বলছি…
(একটু অদূরেই একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে ছোঁয়া,রিয়ার অগোচরে ওর গতিবিধির দিকে লক্ষ্য রাখছে আর ভয়ে থরথর করে কাঁপছে)
ছোঁয়াঃ নাহ আগে কখনও দেখিনি এই মহিলাকে,বুঝতে পারছি না উনি কেন আমার পেছনে পড়ে আছেন।প্রচণ্ড ভয় লাগছে,আর কতক্ষণ এভাবে পালিয়ে বেড়াবো?এমনিতেও পালানোর সময় সেণ্ডেল জোড়া কোথায় জানি ফেলে এসেছি,খালি পায়ে আরতো ছুটতেও পারছি না।এখন যদি উনি এখানে থাকতেন…
রিয়াঃ ছোঁ…য়া…অনেক জ্বালাচ্ছো কিন্তু…অনেক হয়েছে,একবার খালি তোমাকে হাতের কাছে পাই তারপর বুঝবে আমার কথা না শোনার ফলাফল কি।বেরিয়ে আসো বলছি…ছোঁ…য়া…ছোঁয়া…
ছোঁয়াঃ একি!উনিতো এদিকেই আসছেন দেখছি!আর এখানে থাকা যাবে না,পালাতে হবে..
রিয়াঃ ওদিকটায় কিছু একটা নড়লো মনে হচ্ছে,বুঝেছি ছোঁয়া…কোথায় পালাচ্ছো,এবার তোমায় পেয়েছি…
(খানিকটা দৌঁড়েই মাটিতে বসে পড়লো ছোঁয়া,আসলে খালি পায়ে ছুটছিল তাই ধারালো কিছুতে লেগে পায়ের তালুতে বেশ অনেকখানি কেটে গেছে)
ছোঁয়াঃ হে আল্লাহ,এখন কি হবে?আমিতো ঠিকমতো হাঁটতেও পারছি না!বুঝতে পারছি কেউ পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে কিন্তু ভয়টার মুখোমুখি হওয়ার সাহস হচ্ছে না
রিয়াঃ এখন কোথায় যাবে সোনামণি?এদিকে ঘোরো বলছি,তোমার চোখের ভয়টাকে যে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে…
ছোঁয়াঃ অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ালাম,নাহ এখন ভয় পেলে চলবে না।কে আপনি?আর আমার পেছনে কেন লেগেছেন?আমার অপরাধটা কি?
রিয়াঃ ওমা,মুখে দেখছি বুলি ফুটেছে!ঠিক আছে,একটু পরেতো এমনিতেও মরবে তার আগে নাহয় তোমার প্রশ্নের উত্তরটা দিয়েই দেই।আমি রিয়া আর তোমার অপরাধ?তুমি আমার আর সায়নের মাঝে চলে এসেছো,মরতে যখন বসেছিলে তখন মরে গেলেই পারতে,সায়নের লাইফে আবার ফিরে আসতে গেলে কেন?
ছোঁয়াঃ নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না,আমি জানি সায়ন শুধু আমাকেই ভালোবাসেন আর কাউকে না তাহলে উনি কেন…
রিয়াঃ আমি জানি সায়ন কখনও আমার হবে না।আমি যাকে পাবো না,তাকে পাওয়ার অধিকার আর কারো নেই।প্রথমেতো ভেবেছিলাম ওকেই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিব কিন্তু তাতে কি লাভ হতো?ওতো মরে গিয়ে বেঁচেই যাবে তাই ভাবলাম যার জন্য আমাকে রিজেক্ট করলো তাকেই সরিয়ে দেই,তোমাকে অনেক ভালোবাসে না ও?তোমাকে না পেলে ও পাগল হয়ে যাবে,তিলে তিলে মরবে হাহাহা…
ছোঁয়াঃ এবারে স্পষ্ট বুঝতে পারছি ইনি একটা সাইকো,মেন্টালি সিক।একে কিছু বলে বোঝানো যাবে না পালাতে হবে কিন্তু…
রিয়াঃ অনেক হয়েছে,Your time is up,get ready to die dear…
(হাতের রিভলবারটা ছোঁয়ার দিকে তাক করে ধরলো রিয়া,ঠিক তখনই দূরে শোনা গেল কেউ ছোঁয়ার নাম ধরে ডাকছে)
ছোঁয়াঃ এটাতো উনার কণ্ঠ!নাহ হাল ছাড়া যাবে না,আমাকে পারতেই হবে
(হুট করে রিয়ার হাতটা চেপে ধরলো ছোঁয়া,ধস্তাধস্তিতে আকাশের দিকে একটা গুলিও চললো তারপরই রিভলবারটা ছিটকে গিয়ে দূরে ঝোপের মধ্যে পড়লো।পালানোর চেষ্টা করলো ছোঁয়া কিন্তু পারলো না,তার আগেই রিয়া ওকে ধরে ফেললো।পাগলের মতো এলোপাথাড়ি চড় থাপ্পড় দিতে লাগলো মেয়েটাকে)
রিয়াঃ আমার থেকে পালাবি!তোকে পালাতে দিলেতো!এতোক্ষণ ভালোভাবে বলছিলাম শুনলি না,এখন বুঝবি রিয়া কি জিনিস…
(ছোঁয়ার চুলের মুঠি ধরে সামনের একটা গাছের দিকে ছুড়ে দিলো রিয়া।মুহূর্তেই কপাল কেটে দরদর করে রক্ত বেরোতে লাগলো তারপরেই চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসলো ছোঁয়ার)
(কিছুক্ষণ পর)
একটু আগে চলা গুলির শব্দকে ফলো কিরেই এদিকটায় চলে এসেছে সায়নরা,রিয়ার সহযোগী কয়জনকে অলরেডি পুলিশ কাস্টোডিতে নেওয়া হয়েছে।টিলার মতো জায়গাটায় আসতেই চিৎকার দিয়ে উঠলো সায়ন,একটু দূরেই দেখলো সেই ভয়ংকর দৃশ্য।সূক্ষ্ম একটা বাঁশের ফলা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রিয়া,ওদেরকে আসতে দেখেই অপ্রকৃতিস্থের মতো একবার হাসলো তারপরই ছোঁয়ার বুকের দিকে তাক করলো)
ছোঁয়াঃ হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার নাম ধরে ডাকছে,তারপরই ঝাপসাভাবে পরিচিত কয়েকটা মুখটা ভেসে উঠলো।ওরা সবাই আমার দিকেই ছুটে আসছে,এটা সত্যি নাকি পুরোটাই আমার কল্পনা জানিনা কিন্তু তবুও গায়ে যেটুকু শক্তি অবশিষ্ট ছিল তা দিয়েই রিয়াকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম তারপরই সেই নিস্তব্ধ নিরবতা…
ছোঁয়াঃ আমি…কোথায়?
তানিঃ আরে,থ্যাঙ্ক গড তোমার জ্ঞান ফিরেছে।এখন কেমন লাগছে?সব ঠিক আছেতো?
ছোঁয়াঃ আ..মি ঠিক আছি।এ..এটা..আমি কোথায়?
তানিঃ হসপিটালে চিন্তা করো না সব ঠিক আছে
ছোঁয়াঃ উনি কোথায়?উনাকেতো কোথাও দেখতে পাচ্ছি না
(ছোঁয়ার প্রশ্নের উত্তর দিতেই বোধহয় সায়ন ঘরে ঢুকলো,ওকে দেখেই তানি বাইরে চলে গেল।কিন্তু ওকে দেখেই ছোঁয়া আঁতকে উঠলো)
ছোঁয়াঃ এ..একি!কি হয়েছে আপনার?মাথায় ব্যাণ্ডেজ কেন?
সায়নঃ ও কিছু না,আচ্ছা শোন কালই আমরা ফিরে যাচ্ছি
ছোঁয়াঃ এ..এসব আমার জন্য হয়েছে তাই না?ওই মহিলা আমাকে মারার চেষ্টা করছিল,আপনি নিশ্চয়ই আমাকে বাঁচাতে গিয়ে…
সায়নঃ আহ ছোঁয়া,থাক না ওসব…
ছোঁয়াঃ কেন করছেন এসব?আমার সাথে যা হচ্ছিলো হতে দিলেই পারতেন,শুধু শুধু নিজেকে এসবের মধ্যে কেন জড়াতে গেলেন?
সায়নঃ কি করে তোমার কোন ক্ষতি হতে দিব বলো?তোমার কিছু হলে যে আমিও…অনেক ভালোবাসি তোমাকে তাই তুমি ছাড়া…
ছোঁয়াঃ কিন্তু আমিতো কিছুই মনে করতে পারছি না,কোনদিন পারবো কিনা তাও জানিনা…আপনি এমন করলে যে আমার খুব গিল্টি ফিল হয়
সায়নঃ লাগবে না,তোমাকে কিচ্ছু মনে করতে হবে না,তুমি যেমন আছো তেমনই থাকো।আমি তোমাকে ভালোবাসি,তোমার ভালো-মন্দ সবটাকেই।বিনিময়ে শুধু আমার পাশে থেকো,আমার আর কিচ্ছু চাই না…
ছোঁয়াঃ দেখুন আমি জানি আপনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন কিন্তু তাই বলে আমিতো নিজের চাওয়া পাওয়ার সাথে কম্প্রোমাইজ করতে পারব না,আমার একটু সময় লাগবে।হয় আমার পুরনো স্মৃতিগুলো ফিরে আসুক,নয়তো এই নতুন আমি মন থেকে আপনাকে ভালোবেসে ফেলি।তার আগে প্লিজ আমার সামনে ভালোবাসার দাবি নিয়ে দাঁড়াবেন না…
(রাকিব আর তানি দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিল,আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না,চুপচাপ সরে পড়লো)
রাকিবঃ আমাকে বিয়ে করবি?
তানিঃ (চমকে উঠে)মা..ম্ম..মানে?
রাকিবঃ দেখ,জীবনটাতো অনিশ্চয়তায় ভরা,ভবিষ্যতে কখন কি হবে কেউই তা জানে না তাই।ওই যে ওদেরকে দেখছিস,ওরাতো আর কম কষ্ট পায়নি তবুও দেখ এতো অনিশ্চয়তার মাঝেও কেমন দুজন দুজনকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে।আমি আর এক মুহূর্তও দেরি করতে চাই না,কোনকিছু হওয়ার আগেই তোকে আপন করে পেতে চাই,তোর সাথে ভবিষ্যতটা সাজাতে চাই।অনেক ভালোবাসি তোকে,যা কিছুই হয়ে যাক না কেন তোকে কিছুতেই হারাতে পারবো না…
(তানির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো রাকিব,তারপর নিজের হাত থেকে একটা আংটি খুলে তানির একটা হাত ধরে বললো…)
রাকিবঃ আমি জানি তুইও আমাকে ভালোবাসিস।আমি সবই জানতাম কিন্তু বুঝেও না বোঝার ভান করতাম কিন্তু আর না।বলনা,বিয়ে করবি আমাকে?
রাকিবের সামনে বসে পড়লো তানি তারপর ওর বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।এই কান্না কিন্তু কষ্টের কান্না নয়,এই কান্না আনন্দের,এতো বছরের ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাওয়ার আনন্দ…
চলবে…