Childhood marriage

Childhood marriage 3 !! Part- 39 (Last-Part)

বন্ধ দরজাটার সামনেই গত আধা ঘণ্টা যাবত চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে ছোঁয়া।রুমটায় তালা লাগানো,চাবিটা অবশ্য ছোঁয়ার হাতেই আছে কিন্তু তবুও ভেতরে যাবে কি যাবে না সেটা নিয়েই ভেবে ভেবে মাথা খারাপ করে ফেলছে।
ফুলিঃ আরে!আপামনি,এইখানে দাঁড়ায়ে কি করো?ভেতরে যাইবা না?
ছোঁয়াঃ (চমকে উঠে)ও..তুই!
ফুলিঃ হ আমিইতো,আচ্ছা তুমি কি ভেতরে যাইবা?গেলে যাওনা,সেই কক্ষণ থেইকা দেখতাছি এইখানে খাড়ায় আছো
ছোঁয়াঃ যাবো কি যাবো না সেটাইতো বুঝতে পারছি না
ফুলিঃ এতে এতো বুঝাবুঝির কি আছে?এইডাতো তোমারই ঘর!জানো তোমার ওই অ্যাক্সিডেন্টটার পর থেইকা ভাইজান কাউরে এই ঘরে ঢুকবার দেয় নাই?
ছোঁয়াঃ অ্যাক্সিডেন্ট!আচ্ছা ফুলি,তুই কি জানিস আমার এক্স্যাক্টলি কি হয়েছিল?আসলে আমাকেতো কেউই ঠিক করে বলেনি…
ফুলিঃ ওমা,আপনে দেহি কিছুই জানেন না।ওই যে লিফট না কি জানি কয় ওইহানে আটকা পইড়াইতো…
ছোঁয়াঃ লিফট!কিন্তু আমারতো ক্লস্ট্রোফোবিয়ার…তারমানে কি…আহ…
ফুলিঃ (ভয় পেয়ে)ও আপা মনি,তোমার আবার কি হইলো?খালাম্মারে ডাকুম?
ছোঁয়াঃ না না,কাউকে ডাকিস না আমি ঠিক আছি তুই যা…
ফুলিঃ তুমি ঠিক কইতাছোতো?
ছোঁয়াঃ হ্যাঁ হ্যাঁ তুই যা।লিফট!ক্লস্ট্রোফোবিয়ার!উফ মাথাটা যন্ত্রণায় ছিড়ে ফেলছে কিন্তু না এখানেই আমি থামবো না।অনেক প্রশ্ন জমে আছে আমার মনে,হয়তো এই ঘরেই তার কয়েকটার উত্তর পেলেও পেয়ে যেতে পারি…

(কিছুক্ষণ পর)
ছোঁয়াঃ তাহলে এটাই ছিল আমার,আই মিন আমাদের রুম?কিন্তু কিছুইতো চিনতে পারছি না!আচ্ছা ওটা কি?
(মাঝারী সাইজের একটা বক্স,খুব যত্ন করে তুলে রাখা হয়েছে।কৌতূহল মেটাতেই বক্সটা খুলে ফেললো ছোঁয়া তাতেই ওর চক্ষু চড়কগাছ।একটা কাপল টি-শার্ট,দুটো চিঠি আর ছোটো খাটো আরও কিছু জিনিস।চিঠি দুটো পড়তে যাবে তখনই থমকে দাঁড়াতে বাধ্য হলো )
ছোঁয়াঃ আরেহ!এটা আবার কি?এতো দেখি একটা অডিও রেকর্ডার আর এতেতো আমার নাম লেখা!কি আছে এতো?আর এতো যত্ন করেই বা কেন রাখা হয়েছে?প্লে করে দেখবো?

(সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই প্লে বাটনটা প্রেস করে ফেললো ছোঁয়া,প্রায় সাথে সাথে একটা মেয়ের ফুপিয়ে ফুপিয়া কান্না আর ভয় জড়ানো কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো।নিজের কণ্ঠস্বর চিনতে এক মুহূর্তও দেরি হলো না ছোঁয়ার…)
“সায়ন…আপনি কোথায়?আপনার জন্য গিফট কিনতে এসেছিলাম কিন্তু লিফটটা হুট করেই বন্ধ হয়ে গেলো!আপনিতো জানেন আমার ক্লস্ট্রোফোবিয়া,কতক্ষণ হলো জানিনা কিন্তু আমি আর পারছিনা,দম বন্ধ হয়ে আসছে,কথা বলতেও খুব কষ্ট হচ্ছে।এই অবস্থায় শুধু একজনকেই মনে পড়ছে,আপনি।খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছে আপনাকে কিন্তু ফোনের সিগনালও পাচ্ছে না”
(রেকর্ডার থেকে হঠাৎ বেশ কয়েকবার কাশির শব্দ ভেসে আসলো,স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে বক্তার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।কিছুক্ষণ পর আবারও কণ্ঠটা শোনা গেল কিন্তু এবারে সেটা আরও দুর্বল,কথা বলতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে)
“বুঝতে পারছি আমার সময় শেষ হয়ে আসছে কিন্তু আমিতো এমন মৃত্যু চাইনি?যদি জানতাম জীবনটা এতো ছোট হবে তাহলে মোটেও এভাবে নষ্ট করতাম না,অপূর্ণ সব ইচ্ছেগুলো পূরণ করতাম,যেভাবে বাঁচতে ইচ্ছে সেভাবেই বাঁচতাম,মনের না বলা কথাগুলো মন খুলে বলে দিতাম।আজ যখন মন থেকে সত্যিটা আপনাকে জানাতে চাইছি তখন…”

(আবারও ননস্টপ কাশির শব্দ ভেসে আসলো আর তার সাথে তীব্র শ্বাসকষ্ট)
“অনেক ভালোবাসি আপনাকে,ভেবেছিলাম আজ রাতেই মনের কথাগুলো আপনাকে খুলে বলবো কিন্তু…আমি মরতে চাই না,আপনার সাথে জীবনটা কাটাতে চাই কিন্তু সেই স্বপ্ন বোধহয় আর পূরণ হলো না।আমি চলে যাচ্ছি,আমি যাওয়ার পর পারলে জীবনটাকে নতুন করে সাজাবেন,ভালো কোন মেয়েকে…অনেক ভালোবাসি আপনাকে তাই আমি চাইনা আমার বিরহে আপনি…”
(আর কিছু শোনা গেল না,রেকর্ডিংটা এখানেই শেষ,তার বদলে এবার শোনা গেল সায়নের কণ্ঠ)
“চলে যাবো বললেই হলো!আমার ভালোবাসার কোন প্রতিদান না দিয়েই আমাকে একা করে দিয়ে এভাবে চলে যাবে ভেবেছিলে?আর অন্য কাউকে খুঁজে নিব ভাবলে কোন সাহসে!না ম্যাডাম,এতো সহজে ছাড়ছি না তোমায়,ফিরে তোমাকে আসতেই হবে আর যখন আসবে সবকিছু ঠিক আগের মতোই পাবে।এই রুমটার উপর একমাত্র তোমার অধিকার আছে,আর কারো না,কেউ পাবেও না কখনও।আমার জীবনে তুমি ছিলে,তুমি আছো আর তুমিই থাকবে।একবার শুধু ফিরে আসো,এই রেকর্ডিং শুনিয়ে প্রতিদিন টর্চার করবো তোমাকে তখন বুঝবে মজা…”
(রেকর্ডারটা হাতে নিয়েই ধপ করে মেঝেতে বসে পড়লো ছোঁয়া,হাতের চিঠিদুটো পড়তে লাগলো।একটাতো নিজের আর অন্যটা সায়নের লেখা,চিঠিদুটোতে ওদের সেই বান্দরবান ট্রিপের কথা লেখা।মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো ছোঁয়া,যন্ত্রণাটা বেড়েই চলেছে,আর সহ্য করা যাচ্ছে না।উঠে দাঁড়ালো ছোঁয়া,কিছু একটা ভাবতে ভাবতেই বেরিয়ে পড়লো ঘর থেকে।

দুপুর থেকে ছোঁয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না,এখন প্রায় মাঝরাত কিন্তু তবুও ওর কোন খবর নেই!ওক খুঁজে না পেয়ে সায়নের অবস্থা যখন পাগলপ্রায়,তখনই ফুলির মুখে ওর ও ঘরে যাওয়ার কথা শুনলো।ঝটপট নিজের রুমের দিকে দৌড় দিল সায়ন,একটু পরেই ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেলো বাইকটা নিয়ে…
ভোর ৫টা..
পুরো হসপিটালটাই বলতে গেলে একটা ঘুমন্তপুরী,নরমালি কোন রোগীরই এতো সকালে ঘুম থেকে উঠার কথা নয় কিন্তু ছোঁয়া এই সাত সকালেই নিজের রুম থেকে বেরিয়ে পড়েছে।ওর রুমের ঠিক তিনটা রুম পরেই রিয়াকে এডমিট করা হয়েছে,গতকাল রাতেই কাউকে বলতে শুনেছিল।এখান থেকে চলে যাওয়ার আগে তাই একবার ওকে দেখে যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করলো না।রুমে ঢুকতেই রিদওয়ান সাহেব কথা বলে উঠলেন
– তোমাকেতো ঠিক চিনতে পারলাম না মা…
ছোঁয়াঃ আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।আমার নাম ছোঁয়া,আপনি আমাকে চিনবেন না
– ও…তুমিই তাহলে ছোঁয়া!দেখো মা,আমার মেয়েটা তোমার সাথে যা করেছে তারপরতো আর তোমাকে কিছু বলার মুখ আমার নেই,তবুও ওর হয়ে আমি তোমার কাছে মাফ চাইছি,পারলে ক্ষমা করে দিও
ছোঁয়াঃ না না আঙ্কেল ওভাবে বলবেন না,এতে আপনারতো কোন দোষ নেই।আচ্ছা উনি এখন কেমন আছেন?
– কেমন আবার থাকবে?ওর পাপের ফল ও হাতে নাতে পেয়ে গেছে
ছোঁয়াঃ মানে?আরেকটু ভালো করে খেয়াল করতেই কথাটার মানে বুঝতে পারলাম।রিয়ার একটা পায়ের ঠিক হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়েছে!
– তোমাকে মারার জন্য যেই ট্র‍্যাপটা ও তৈরি করেছিল তাতে নিজেই ফেসে গেছে।একটা ধারালো কাঠের ফলা ওর পা কে এফোঁড় ওফোঁড় করে বেরিয়ে গেছে।ইনফেকশন এতো বেশি হয়ে গিয়েছিল যে…
ছোঁয়াঃ সো স্যাড!চিন্তা করবেন না আঙ্কেল,সব ঠিক হয়ে যাবে
– ঠিক আর কি হবে মা,ছোট থেকেই আমি যদি ওকে শাসন করতাম তাহলে হয়তো এদিন আর দেখতে হতো না,আমার মেয়েটাও হয়তো আবার আগের মতো পাগল হয়ে যেতো না
ছোঁয়াঃ (চমকে উঠে)মা..ম্ম..মানে?
– আসলে এতো বড় ধাক্কাটা ও সামলাতে পারেনি তাই মানসিকভাবে…
ছোঁয়াঃ তুমি আমার সাথে যা করেছো,ভেবেছিলাম কখনও তোমাকে ক্ষমা করবো না কিন্তু তোমার অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেছি।তোমার অপরাধের চেয়েও বেশি শাস্তি তুমি পেয়ে গেছো তাই তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।আশা করি,তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে আর পরিস্থিতিটা মেনে নিয়ে সব ভুল শুধরে জীবনটাকে নতুন করে সাজবে যেমনটা আমি করতে যাচ্ছি…ভালো থেকো রিয়া…
(কিছুক্ষণ পর)
হাঁপাতে হাঁপাতে রিয়ার কেবিনে ঢুকলো সায়ন,ওকে দেখেই রিদওয়ান সাহেব উঠে আসলেন
– ও এখানে নেই,চলে গেছে
সায়নঃ চলে গেছে মানে!কোথায় গেছে?
– এটা ধরো,ছোঁয়া বলে গেছে চিঠিটা দেখলেই তুমি বুঝতে পারবে ও কোথায় গেছে…

কুমিল্লা শহরের অদূরে এই জায়গাটাতেই সায়নের সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল ছোঁয়ার,বাস থেকে তাই এখানেই নেমে পড়েছে ও কিন্তু এখান থেকে ঠিক কোনদিকে যাবে বুঝতে পারছে না তাই চুপচাপ ওখানেই বসে পড়লো।তখনই সেই পরিচিত কণ্ঠ…
সায়নঃ এই যে ম্যাডাম,কি করছেন এখানে?
ছোঁয়াঃ (চমকে উঠে)আ..আপনি!এতো তাড়াতাড়ি!কিন্তু কিভাবে?
সায়নঃ কি করব বলো,আমার বাইকের স্পীড যে আপনার বাসের চেয়ে বেশি।এখন কি বলবেন কাউকে কিছু না বলে এখানে আসার মানে কি?
ছোঁয়াঃ উত্তর খুঁজতে এসেছিলাম,ভাবলাম জায়গাটাতে আসলে হয়তো স্মৃতির পাতাটা…
সায়নঃ (রেগে মেগে)তোমাকে না বলেছি,কিচ্ছু মনে করতে হবে না তোমাকে।তুমি যেমন আছো সেভাবেই ভালোবাসি তোমাকে…
ছোঁয়াঃ কিন্তু আমিতো সবকিছু মনে করতে চাই,যাকে এতোটা ভালোবাসতাম,মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও একমাত্র যাকে নিয়ে ভেবেছি তার সাথে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলোকে কিভাবে ভুলে যেতে পারি!মনেতো আমাকে করতেই হবে…
সায়নঃ ঠিক আছে,তাহলে চলো
ছোঁয়াঃ কোথায়?
সায়নঃ তোমার স্মৃতিগুলোকে খুঁজতে,এখন থেকে নাহয় এই দ্বায়িত্বটাও আমিই নিলাম…
ছোঁয়াঃ কিন্তু যদি ফেরাতে না পারেন?
সায়নঃ তাহলে নাহয় আবারও স্মৃতিগুলোকে নতুন করে সাজাবো…
(সায়নের বাড়িয়ে দেওয়া হাতটাকে আঁকড়ে ধরলো ছোঁয়া,আর কোন পিছুটান নেই ওর,এই মানুষটাকেই মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে।এখন স্মৃতির পাতাটাকে উদ্ধার করার পালা আর যদি নাও পারে তাহলে নাহয় উনার কথামতোই সবকিছু পুনরায় সাজাবে…)
ছোঁয়াঃ হঠাৎ থমকে দাঁড়ালাম।শুনুন…
সায়নঃ কি হলো কিছু বলবে?
ছোঁয়াঃ ভালোবাসি…
সায়নঃ (চমকে উঠে)কি বললে?
ছোঁয়াঃ ভালোবাসি..অনেক ভালোবাসি আপনাকে।আগেও বাসতাম আর এখনও বাসি…
(আনন্দে আত্মহারা হয়ে ছোঁয়াকে কোলে তুলে নিলো সায়ন,আনন্দের আতিশয্যে ওকে কোলে নিয়েই ঘুরতে শুরু করলো)
ছোঁয়াঃ আরে কি করছেন!পড়ে যাবোতো…
সায়নঃ পড়তে দিলে তো!ভালোবাসি..ভালোবাসি..ভালোবাসি…I love you Chowa….
ছোঁয়াঃ (হাসতে হাসতে)Love you too dear husband…
(সমাপ্ত)

#নোটঃ এট লাস্ট গল্পটা শেষ,এখন শান্তি।কেমন লাগলো সায়ন আর ছোঁয়াকে?জানাতে ভুলবেন না কিন্তু…
এবার আসি অন্য প্রসঙ্গে,আমার দেরিতে গল্প দেওয়ার কারণ ব্যক্তিগত ব্যস্ততা।অনার্স শেষ,মাস্টার্সেরও শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি তাই ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনাটাও বেড়ে গেছে তাছাড়া একটা বই বের করার কথা চলছে,সেটার পেছনেও অনেক সময় দিতে হয়।তাই চাইলেও লেখালেখিটা ঠিকমতো করতে পারিনা,আশা করি প্রবলেমটা আপনারা বুঝতে পারছেন।তারপরেও যারা সাথে থাকবেন,তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ আর যাদের প্রবলেম হবে তারা সিম্পলি আমাকে এণ্ড আমার গল্পকে এভয়েড করে যাবেন কেমন?
নতুন গল্প কয়েকদিন পরেই শুরু করবো,সেই পর্যন্ত টা টা।আশা করি শীঘ্রই দেখা হবে…

 

এক পলকে দেখে নিন সহজে গল্প খুঁজে পাওয়ার সুবিধার্থে দেওয়া হল