Childhood marriage

Childhood marriage 3 !! Part- 37

কেটে গেছে আরও দুটি মাস।সবকিছুই তার স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে,সেই কিডন্যাপিংয়ের ব্যাপারে ছোঁয়া এখনও কিছুই জানেনা কিন্তু ওর অজান্তেই সায়নের ঠিক করা দুজন লোক আড়াল থেকে ওর উপর নজর রেখে যাচ্ছে।রিয়ার আর কোন খবর নেই তবুও সায়ন কোন রিস্ক নিতে চায় না বলেই এই ব্যবস্থা।
আজকের ব্যাপারটা অবশ্য একটু আলাদা,আজ মারুফ আর লোপার হলুদ!হ্যাঁ ফাইনালি ওদের বিয়েটা হচ্ছে,তাও আবার যেনো তেনো জায়গায় নয়,একেবারে কক্সবাজারের একটা বীচ হাউজে!আসল ঘটনাটা হচ্ছে মারুফ আর লোপার বাড়ির ডিসটেন্সটা এতোটাই বেশি যে কোন একটা অলটারনেটিভ খুঁজতেই হলো,তাই কক্সবাজারের এই বীচ হাউজটাতেই ব্যবস্থা করতে হলো,অনেকটা ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের মতো।আর গেস্ট বলতে দুজনের ফ্যামিলি আর ক্লোজ কিছু ফ্রেন্ডস।
কথা মতো ছোঁয়াকে নিয়ে সায়নও হাজির হয়েছে দুদিন আগেই।সায়নতো বাইরের অ্যারেঞ্জমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত আর ছোঁয়া?নিজের রুমে গোমড়া মুখ করে বসে আছে।
ছোঁয়াঃ এ..এটা!এটা পরতে হবে!কিন্তু আমিতো শাড়ি পরতেই পারিনা,আর যদি না পরি তাহলেতো ওই বৃষ্টিটা আমাকে খুন করে ফেলবে।কে বলেছিল এক রকম শাড়ি কিনতে?আর কেনইবা ওই ছাতার স্পেশাল পারফর্মেন্সটা করতে হবে?এমনিতেই জীবনে শাড়ি পরিনি,এখন যদি নাচতে গিয়ে পায়ে বেঁধে আছাড় খাই…
সায়নঃ তুমি শিওর,জীবনে শাড়ি পরোনি?
ছোঁয়াঃ (চমকে উঠে)আরে আপনি!আপনি আবার কখন আসলেন?
সায়নঃ সেতো অনেক্ষণ

ছোঁয়াঃ তাহলে..তাহলে ডাকলেন না কেন?
সায়নঃ কি করে ডাকবো?ডাকলে যে এমন মজার একটা জিনিস মিস হয়ে যেতো…
ছোঁয়াঃ কি জিনিস?
সায়নঃ এই যে একা একা নিজের সাথে বকবক করছিলে,এটা মজার না?
ছোঁয়াঃ এদিকে আমি টেনশনে শেষ আর ওদিকে উনি..আপনি…আপনি আসলেই একটা খারাপ লোক..
সায়নঃ যাব্বাবা,আমি আবার কি করলাম?আচ্ছা ঠিক আছে কি সমস্যা বলো,দেখি আমি কোন সমাধান দিতে পারি কিনা…
ছোঁয়াঃ এই প্রবলেমের সমাধান আপনাকে দিয়ে হবে না
সায়নঃ আরে বাবা,বলেই দেখোনা…
ছোঁয়াঃ এই যে এটা,এটাই আসল প্রবলেম।এখন বলেন,পারবেন সমাধান করতে?
সায়নঃ ওহ এই ব্যাপার?নো প্রবলেম,এদিকে আসো…
ছোঁয়াঃ (অবাক হয়ে)মানে!আপনি শাড়ি পরাতে পারেন?
সায়নঃ এমন ভাব দেখাচ্ছো যেন কথাটা এই প্রথম শুনলে,আরে বাবা এর আগেওতো আমিই তোমাকে…
ছোঁয়াঃ (চমকে উঠে)আপনি আমাকে শাড়ি পরিয়েছেন!
সায়নঃ হ্যাঁ…ওই আমাদের বিয়ের পরে সবার সাথে যেদিন তোমার আলাপ করিয়ে দিয়েছিলাম সেদিন
ছোঁয়াঃ তাই বলে আপনি!
সায়নঃ কেন কি সমস্যা?নিজের বউকে শাড়ি পরিয়ে দেওয়াটা কি অপরাধ?
ছোঁয়াঃ না..মানে..আমি..আসলে..এই এক মিনিট,আচ্ছা শাড়ি পরানোটা শিখলেন কিভাবে!এর আগে কটা মেয়েকে শাড়ি পরিয়েছেন শুনি?ঠিক ধরেছিলাম,আপনিও ওসব লুজ ক্যারেক্টার ছেলেদের মতো…
সায়নঃ (অবাক হয়ে)কি আশ্চর্য!এতো দেখি কোনকিছু না শুনেই সব ডিসিশন নিয়ে নিচ্ছে!দেখো ছোঁয়া,তুমিতো আমাকে কোন কথাই…
ছোঁয়াঃ কি বলবেন আপনি?এখন আবার বলবেন না যে,কোন মেয়েকে না আপনারই কোন বন্ধুকে…রাকিব ভাইয়ার বার্থডেতে…ভাইয়াকে শাড়ি…
সায়নঃ (অবাক হয়ে)তুমি কিভাবে জানলে?
ছোঁয়াঃ তার মানে সত্যিই আপনি…হঠাৎ মনে হলো আপনিই আমাকে কথাটা বললেন…
সায়নঃ হ্যাঁ কিন্তু সেটাতো আমি বছর দুয়েক আগে বলেছিলাম
ছোঁয়াঃ দু…বছর…তাহলে আমি…কিভাবে…
(আর কিছু বলার আগেই ছোঁয়ার চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসলো,সায়ন ছুটে গিয়ে ওকে বুকে জড়িয়ে নিলো)

(কিছুক্ষণ পর)
চোখে মুখে পানির ছিটা পড়তেই জ্ঞান ফিরে আসলো ছোঁয়ার,চোখ মেলতেই সায়নের উদ্বিগ্ন মুখটা দেখতে পেলো।
ছোঁয়াঃ আপনি..এখানে!কি হয়েছিল আমার?
সায়নঃ (অবাক হয়ে)কেন?তোমার কিছু মনে নেই!
ছোঁয়াঃ কি মনে পড়বে বলুনতো?এমনিতেই এই শাড়ির ভেজাল তার উপর আপনি…কি যে করি?
সায়নঃ (নাহ এখন আর ওকে বেশি ঘাঁটানো ঠিক হবে না)নো টেনশন,এক কাজ করো,চুপটি করে এখানে দাঁড়িয়ে থাকো,আমি সব ঠিক করে দিচ্ছি
ছোঁয়াঃ সত্যিতো?
(সায়ন আর কথা না বাড়িয়ে শাড়ি পরানোয় মন দিলো,ছোঁয়া অবাক হয়ে পুরো ঘটনা দেখছে কিন্তু মুখে কিছুই বলছে না)
ছোঁয়াঃ আরে!হয়ে গেলো!আনবিলিভেবল…
সায়নঃ উহু এখনও বাঁকি আছে
ছোঁয়াঃ আবার কি?
সায়নঃ বলছি,আগে এখানে চুপটি করে বসো…
(ছোঁয়াকে এক রকম জোর করেই ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দিল সায়ন।নিজ হাতে ওকে সাজিয়ে দিচ্ছে আর ছোঁয়া অবাক হয়ে ওকে দেখছে)
সায়নঃ এভাবে দেখো না সুন্দরী,হার্ট ফেল হয়ে যাবে যে…
ছোঁয়াঃ উফ আপনিও না…শেষ?এবার আমি যাই?
সায়নঃ ছোঁয়া…
ছোঁয়াঃ হুম?কিছু বলবেন?
(চোখ থেকে একটু কাজল আঙুলে মুছে নিয়ে ছোঁয়ার চুলের আড়ালে লাগিয়ে দিলো সায়ন তারপর ছোঁয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো)
সায়নঃ খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে,কারো নজর না লেগে যায়…
ছোঁয়াঃ উনার কথা শুনে লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলাম,মাঝে মাঝে এমন কথা বলেন না…
সায়নঃ ওর কপালে আলতো করে ভালোবাসার পরশ বুলিয়েই সরে দাঁড়ালাম।All the best dear wife…
(সায়নের দিকে আর তাকানোর সাহস পেলো না ছোঁয়া,ছুটে পালালো ওখান থেকে)

নাহ মারুফ আর লোপার বিয়েতে কোন ঝামেলায় হয়নি,ভালোই ভালোই সবকিছু মিটে গেছে,বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা গতকালই শেষ হয়ে গেছে।বড়রা গতকাল রাতেই ফিরে গেছেন কিন্তু বর বউ আর ওদের বন্ধুরা এখানেই থেকে গেছে আর আগামী কয়েকদিন এখানেই থাকবে।ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের এই একটাই মজা,বিয়ে প্লাস হানিমুন বলতে গেলে একই সাথে হয়ে যাচ্ছে।
পার্থক্য একটাই হানিমুনের দিনগুলো নরমালি কাপলরা একা একাই স্পেণ্ড করে কিন্তু এক্ষেত্রে পুরো গ্যাঙ আছে ওদের সাথে!অবশ্য মারুফ বা লোপার এসব নিয়ে একটুও মাথা ব্যাথা নেই,বরং অকেশনটা ওরা বেশ এনজয় করছে আর করবে নাই বা কেন?একেতো লাভ মেরেজ তার উপর সাথের মানুষগুলোর সবাইকেই খুব কাছ থেকে চেনে দুজনে।তাই হানিমুনের বদলে অনেকটা ট্যুর ট্যুর ফিলিং হচ্ছে।একটা দিন ঠিকভাবে কাটলেও গণ্ডগোলটা বাঁধলো দ্বিতীয় দিন।
এখন ভর দুপুরবেলা…
স্থানঃ লাবনী পয়েন্ট সি-বীচ…

সায়ন,মারুফ,আসিফ,রাকিব ওরা সবাই অলরেডি সমুদ্রে নেমে পড়েছে আর ওদের সঙ্গী হিসেবে আছে একটা ফুটবল।নিজেদের মধ্যে বল ছোড়াছুড়ি করতে করতেই ওরা সমুদ্রস্নানে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।আর মেয়েগুলো?ওরা এখন বীচ-ভলিবল নিয়ে ব্যস্ত,দুটো টিমে ভাগ হয়ে ওরা খেলায় মেতে উঠেছে।এক দিকে আছে লোপা আর বৃষ্টি আর অন্যদিকে তানি আর মায়া কিন্তু অদ্ভূত ব্যাপার হচ্ছে ছোঁয়া বা সায়নের সিকিউরিটি টিমের দুজনের কাউকেই কোথাও দেখা যাচ্ছে না!আর বাঁকিরা নিজেদের নিয়ে এতোটাই বিজি যে ব্যাপারটা কেউ খেয়ালই করেনি।
(কিছুক্ষণ আগে)
নিজের দিকে আসা বলটা নেটের অন্যপাশে পাস করে দিলো ছোঁয়া,অপজিট পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বৃষ্টি বলটাকে টাচও করতে পারলো না,ব্যাস ছোঁয়াদের টিমের পক্ষে পয়েন্ট চলে গেল।ঠিক তখনই ছোঁয়ার ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো,ফোনটা হাতে তুলে নিয়েই সাইড লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মায়ার দিকে এগিয়ে গেলো ছোঁয়া
ছোঁয়াঃ মায়া,বলছি যে তুমি একটু আমার হয়ে তানি আপুর সাথে খেলবে প্লিজ?
মায়াঃ হ্যাঁ কিন্তু…
ছোঁয়াঃ আসলে আমার ফোনের চার্জ শেষ আর মা ফোন দিয়েছিল দেখলাম।যদি জরুরি কিছু বলার থাকে?
মায়াঃ তো আমার ফোন থেকে কথা বলে নিন না…
ছোঁয়াঃ সে নাহয় বললাম কিন্তু এভাবে ফোন বন্ধ থাকলে যদি অন্য কেউ ফোন করে তখন?তার থেকে বরং আমি রুম থেকে পাওয়ার ব্যাংকটা নিয়েই আসি।তুমি বরং ততক্ষণ তানি আপুর সাথে…
মায়াঃ কিন্তু ম্যাডাম…
(মায়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ছোঁয়া চলে গেলো।সিকিউরিটির লোক দুটোও চললো ওর পিছু পিছু)
ছোঁয়াঃ আরে আরিফ ভাই,বলছি যে আমিতো জাস্ট যাবো আর আসবো।আপনারা শুধু শুধু কেন কষ্ট করছেন?
আরিফঃ না ম্যাডাম,ছোট স্যারের অর্ডার আপনাকে কিছুতেই একা ছাড়া যাবে না
ছোঁয়াঃ আপনি আর আপনাদের ছোট স্যার,উফ!অসহ্য…
আরিফঃ বলছি কি ম্যাডাম,কি আনতে হবে আমাদের বললেইতো হতো।আপনি আবার শুধু শুধু…
ছোঁয়াঃ চলে যখন এসেইছি তখন…আপনারা বরং এখানেই দাঁড়ান,আমি জাস্ট যাবো আর আসবো…
(ছোঁয়ার কথামতো ওরা দুজন ওখানেই দাঁড়িয়ে পড়লো আর ছোঁয়া দরজা খুলে রুমের ভেতরে চলে গেলো)

পাওয়ার ব্যাংকটা টেবিলের উপরেই ছিল,ফোনটা কানেক্ট করতেন ফোনটা অন হয়ে গেল।ঝটপট মায়ের নাম্বারটা ডায়াল করলো ছোঁয়া,প্রায় সাথে সাথেই রিসিভও হয়ে গেল কিন্তু কেন জানি ছোঁয়ার মনে হচ্ছে ওর ঠিক পেছনে কেউ আছে আর তারপরওই সবকিছু অন্ধকার…
(ঘণ্টা খানেক পর)
চেঞ্জ করে বাইরে বেরিয়ে আসলো সায়ন,
সায়নঃ ছোঁয়া…কোথায় তুমি?আশ্চর্য!এখনও ফেরেনি নাকি?কিন্তু তানিদেরতো দেখলাম অনেক্ষণ আগেই চলে এসেছে তাহলে…ছোঁয়া…ছোঁয়া…এই দেখো নেকলেসটাও খুলে রেখেছে,বার বার করে বলেছিলাম এটা সবসময় পরে থাকতে তারপরেও!এই মেয়ে আমার কোন কথা শুনলেতো…ছোঁয়া..ছোঁয়া…
ছোঁয়ার খোঁজে বেলকোনির দিকে যেতেই আঁতকে উঠলো সায়ন।সিকিউরিটি টিমের লোক দুজন অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে,ওদের মাথায় ভারি কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।আবারও রুমের দিকে ছুটলো সায়ন,তখনই ফোনে একটা মেসেজ আসলো,একটা ভিডিও।
দেখে মনে হচ্ছে কোন একটা কারখানা,দুটো বড় বড় কাঠ কাটার ধারালো করাত আর তার পাশেই হাত-পা আর মুখ বাঁধা অবস্থায় ছোঁয়া অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।আর তারপরই রিয়ার মুখটা ভেসে উঠলো
রিয়াঃ কি ভেবেছিলেন,এতো সহজেই জিতে যাবেন?উহু ভুল…আমার নাম রিয়া আর এই রিয়া কখনও হারতে শেখেনি।জিপিএস ট্র‍্যাকার?আমি জানি আপনি কোনদিনও আমার হবেন না তাই ভাবলাম…যে আমার হবে না তাকে আমি অন্য কারো হতে দিব না।আপনার স্ত্রীকে চাইলে আমি এক্ষুণি শেষ করে দিতে পারি কিন্তু আমি তা করবো না,আসলে আপনার অসহায়ত্বটা দেখার লোভ কিছুতেই সামলাতে পারছি না।রাত বারোটা পর্যন্ত সময় আছে আপনার হাতে,যদি পারেন খুঁজে বের করুন আপনার স্ত্রীকে আর যদি না পারেন তাহলে ঠিক রাত বারোটায় ওই যে কাঠ কাটার মেশিনটা দেখছেন ওটার নিচে কাঠের জায়গায় ছোঁয়া…
কথা শেষ না করেই বিশ্রীভাবে হাসতে শুরু করলো রিয়া,সেই হাসি স্বাভাবিক কোন মানুষের হাসি নয়,একজন মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত মানুষের হাড় হিম করা শীতল হাসি…
(ভিডিওটা দেখেই সায়নের পায়ের নিচের মাটি যেন সরে গেল তবে একটু পরেই নিজেকে সামলে নিল,হাতের ফোন থেকে কাউকে ডায়াল করলো)
সায়নঃ আপনাকে যেই কাজটা করতে বলেছিলাম সেটা কি করেছিলেন?
চলবে…