Childhood marriage 3 !! Part- 29
হসপিটালের সরু বেডটায় শুয়ে আছে ছোঁয়া।হ্যাঁ সেদিন ওই লিফটের ইনসিডেন্টে মারা যায়নি ও,তবে সেদিনের পর থেকে চোখ মেলেও তাকায়নি।মস্তিষ্কে এক্সেসিভ ব্লিডিংয়ের জন্য সার্জারীর পর পরই কোমায় চলে গেছে,তাই গত এক বছর ধরে ওর নিথর দেহটা হসপিটালের এই বেডেই পড়ে আছে আর ওর সাথে সাথে সায়নেরও স্থায়ী ঠিকানা হয়ে গেছে এটা।সকাল নেই বিকেল নেই যখনই সময় পাচ্ছে এখানে চলে আসছে সায়ন আর আজকেতো আবার স্পেশাল একটা দিন তাই সকাল হতে না হতেই এখানে এসে হাজির হয়েছে।আর এখন বরাবরের মতোই ছোঁয়ার বেডের পাশে বসে ওর হাতে হাত রেখে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে।
সায়নঃ কেমন আছো ছোঁয়া?জানি তুমি মোটেও ভালো নেই,আমাকে ছাড়া ভালো থাকবে কিভাবে?জানো আজকে কোন দিন?আজকে আমার জন্মদিন,এই সেকেণ্ড টাইম তোমাকে ছাড়া এই দিনটা আসলো।আজকেও কি আমার সাথে কথা বলবে না?সেদিন সময়মতো তোমার কাছে যেতে পারিনি বলে এখনও অভিমান করে আছো?যত রাগ,যত অভিমানই থাকুক একবার চোখ মেলে তাকাও তারপর ইচ্ছেমতো আমাকে শাস্তি দাও কিন্তু এভাবে আর চুপ করে থেকো না প্লিজ…
ছোঁয়াঃ…..
সায়নঃ তুমি বলেছিলে বাবা-মায়ের দিকে খেয়াল রাখতে,বাবার বিজনেসের হাল ধরতে,আমি কিন্তু আমার কথা রেখেছি।তুমি ঠিকই বলতে আমার ভেতরে আসলেই একজন ভালো বিজনেসম্যান সুপ্ত ছিল তাইতো মাত্র এক বছরেই বিজনেসটাকে ন্যাশনাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল লেভেলে পৌঁছে দিয়েছি।আমি আর আগের মতো সেই ইরেসপনসিবল,নিজের সাথে সাথে সবার খেয়াল রাখতে শিখে গেছি,হেরে যাওয়ার ভয়ে আর আমি পালিয়ে যাই না,ভয়কে সামনাসামনি মোকাবিলা করি।এসব কিছুই কি তোমার দেখতে ইচ্ছে করে না?যদি করে,তাহলে এক্ষুণি চোখ মেলে তাকাও কাম অন ছোঁয়া…
ছোঁয়াঃ….
সায়নঃ আচ্ছা শোন,আজকে না আমাকে একটা জায়গায় ডিনারে যেতে হবে।আমার অবশ্য যাওয়ার কোন ইচ্ছে ছিল না,আজকের পুরোটা সময় তোমার সাথেই কাটানোর ইচ্ছে ছিল।কিন্তু বিজনেস ডিলের সাকসেস পার্টি বলে কথা,যেতেতো হবেই।পার্টিটা থ্রো করছে মিস রিয়া,এই মেয়েটা না খুব ইন্টারেস্টিং,বলা নেই কওয়া নেই হুট করে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসলো!মেয়েটা অবশ্য দেখতেও খুব একটা খারাপ না,বেশ সুন্দরীই বলা যায়।ভাবছি হ্যাঁ বলে দিব,তুমি কি বলো?
মাঃ কে কাকে হ্যাঁ বলে দিচ্ছে?আমাকেও একটু বল,আমিও শুনি…
সায়নঃ (চমকে উঠে)আরে মা,তুমি!এখানে!
মাঃ কি আর করব,আমার পোড়া কপাল,ছেলের জন্মদিন অথচ সে বাবা-মাকে ছেড়ে একা একা এখানে পড়ে আছে তাই বাধ্য হয়ে আমাকেই…
সায়নঃ উফ মা…তোমাকেতো বলেছি এসব জন্মদিনের কথা একেবারে ভুলে যাও,আমি আর ওসব সেলিব্রেট করতে চাই না
তানিঃ করব না বললেই হলো!আমরা আছি কি জন্যে
সায়নঃ তানি তুই!তুই এখানে কি করছিস?
তানিঃ কি আবার?তোর বার্থডে সেলিব্রেট করতে এসেছি।এক মিনিট,কি রে তোরা ভেতরে আয়…
সায়নঃ তোরা মানে!আবার কে?
(সায়নের প্রশ্নের উত্তর দিতেই বোধহয় লোপা আর বৃষ্টিকে সাথে নিয়ে ওর পুরো গ্যাঙ ভেতরে ঢুকলো)
সবাইঃ Surprise…Happy birthday…
সায়নঃ (অবাক হয়ে)এ..একি তোরাও!এ..এটা কার আইডিয়া শুনি…আসিফ…
আসিফঃ এই আমার কিন্তু কোন দোষ নেই,ওরা নিজে থেকেই…
মারুফঃ শুধু শুধু ওকে বকছিস কেন?আমরা কি তোর জন্য এসেছি নাকি,আমরাতো এসেছি তাসনিয়া ভাবির সাথে দেখা করতে
সায়নঃ রিয়েলি?
লোপাঃ হুম রিয়েলি,দেখি ভাইয়া একটু সরে দাঁড়ানতো,পাগলিটাকে কতদিন দেখিনি…
(সায়নকে এক রকম ধাক্কা দিয়েই সরিয়ে সবাই ভেতরে ঢুকে পড়লো,ওর অস্তিত্বের কোন তোয়াক্কা না করেই সবাই কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।মুহূর্তের মধ্যেই বেলুন,জরি ফিতা আর কালারফুল পেপার দিয়ে ঘরটাকে সাজিয়ে ফেললো আর মারুফ কোথা থেকে যেন একটা কেক নিয়ে এসে ছোঁয়ার সামনে রেখে দিল,অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যেন ওর না ছোঁয়ারই বার্থডে!)
সায়নঃ এ..এসব কি হচ্ছে!আমাকে কি কেউ বলবে?
মারুফঃ দেখতেইতো পাচ্ছিস তাহলে জিজ্ঞেস কেন করছিস?এখন ঝটপট এদিকে আয়,কেক কাটতে হবে
সায়নঃ আমাকে আবার কেন?ছোঁয়াকে দিয়েই কাটা না…
আসিফঃ সে আর তোকে বলতে হবে না,তোকে ডাকছে কেক খাওয়ার জন্য।এখন খেতে চাইলে আয় নাহলে…
সায়নঃ মানে!এটা কি আমার বার্থডে নাকি ওর?
মারুফঃ শেষ বারের মতো বলছি আসবি কিনা বল নাহলে কিন্তু…
সায়নঃ কি আশ্চর্য!তোরা…
সবাইঃ Happy birthday to you…Happy birthday to you…Happy birthday dear Sayan…Happy birthday to you…
মাঃ চলে আয় খোকা…হা কর,তোকে কেক খাইয়ে দেই…
তানিঃ আন্টি,ওসব দিন গেছে এখনকার ছেলেরা মায়ের চেয়ে বউয়ের হাতে খেতেই বেশি…
সায়নঃ তানির বাচ্চা…
মাঃ ব্যাপার না,এটার সল্যুশন আমার কাছে আছে।এক মিনিট,কি হলো খোকা এবারতো মুখ খোল…
(ছোঁয়ার হাত ধরে মা সায়নের দিকে কেকের একটা টুকরো বাড়িয়ে ধরলো,মুচকি হেসে সায়নও চুপচাপ খেয়ে নিল।সবাই আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠলো…)
ছয়তলা বিল্ডিংটার তৃতীয় তলা…
দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটা একটা লাক্সারিয়াস রেস্টুরেন্ট আর সেটাকে আজ অনেকটা পার্টি হলের মতো করে সাজানো হয়েছে।হ্যাঁ বিজনেস পার্টি,তাই পুরো রেস্টুরেন্টটাই বুক করা হয়েছে আর এস ইন্টারন্যাশনালসের নামে।এতো বড় পরিসরে অ্যারেঞ্জমেন্ট করা হয়েছে অথচ গেস্টের সংখ্যা অতি নগন্য,হাতে গোনা কিছু মানুষকে ইনভাইট করা হয়েছে।
সায়ন আর আসিফ একসাথেই ভেতরে ঢুকলো,মায়া অবশ্য আগেই চলে এসেছে
সায়নঃ তোর কিন্তু আসার কোন দরকার ছিল না,তুই বরং ছোঁয়ার কাছে থাকলেই পারতি
আসিফঃ হ্যাঁ তা পারতাম কিন্তু ওখানেতো আন্টি,মারুফ আর লোপা আছেই তাই ভাবলাম শুধু শুধু ভিড় না বাড়িয়ে বরং তোর সাথেই…আর তাছাড়া মিস মায়াও এখানে…একটু বোঝার চেষ্টা কর দোস্ত
সায়নঃ ঠিক আছে ঠিক আছে,চালিয়ে যা দোস্ত,দোয়া করি খুব তাড়াতাড়ি সফল হ…
আসিফঃ সেতো হতেই হবে কিন্থ সায়ন,আমি আবারও বলছি কাজটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।আজকের এই স্পেশাল দিনে তোর উচিত ছিল ভাবির সাথে থাকা
সায়নঃ চিন্তা করিস না,আমি খুব বেশিক্ষণ থাকবো না।জাস্ট হাই হ্যালো বলেই চলে যাবো,সোজা ছোঁয়ার কাছে…
আসিফঃ কিন্তু সাবধান,ওই রিয়া ম্যাডামকে কিন্তু আমার মোটেও সুবিধার ঠেকছে না তাই সাবধান…
(ওরা যখন এসব আলোচনায় ব্যস্ত তখনই রিয়াকে দেখা গেলো ওদের দিকে এগিয়ে আসছে।ওদেরকে ভেতরে যেতে বলেই একটা ওয়েটারকে ইশারায় কাছে ডাকলো)
ওয়েটারঃ ইয়েস ম্যাডাম?
রিয়াঃ এটা ধরো,ওই যে যেই ভদ্রলোককে দেখালাম উনি যেই ড্রিংকই খাবেন তারমধ্যে এটা মিশিয়ে দেবে ঠিক আছে?
ওয়েটারঃ ওকে ম্যাডাম কাজ হয়ে যাবে
রিয়াঃ এবার দেখি মি.সায়ন,আমার জাল কেটে তুমি কিভাবে বেরোও…
রাত প্রায় দশটা বাজতে চললো।মারুফ আর লোপা ক্যান্টিনে খেতে গেছে,মিসেস আসমা চৌধুরী কিন্তু যাননি,ছোঁয়ার বেডের পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছেন।কতদিন মেয়েটাকে এভাবে আদর করতে পারেননি,হাজার হোক ছোট থেকে নিজের মেয়ের মতো ওকে কোলে পিঠে করেতো উনিই মানুষ করেছেন…
মাঃ কি রে মা,আর কত ঘুমোবি?এই বুড়িটার জন্য না হোক,আমার ছেলেটার জন্য অন্তত চোখ মেলে তাকা।জানিস মা,খোকা এখন নিজ হাতে কোম্পানির সব দ্বায়িত্ব সামলাচ্ছে,আমারতো এতে খুশি হওয়ার কথা কিন্তু সবকিছু দেখে আমার না খুব কষ্ট হও।এক বছর আগের সেই দিনটার পর থেকে আমার ছেলেটা যেন হাসতেই ভুলে গেছে,সারাদিন শুধু কাজ কাজ আর কাজ,হয়তো কাজের মধ্যে ডুবে থেকে নিজের কষ্টগুলো ভুলে থাকার ব্যর্থ চেষ্টা করে।ওর যে একটা বাড়ি আছে সেটাও ভুলতে বসেছে,সারাদিন অফিস আর রাতে এখানে তোর কাছে,গত এক বছর ধরে এটাই ওর ডেইলি রুটিন।হ্যাঁ মাঝে মাঝে অবশ্য বাড়ি যায় কিন্তু সেটা হয়তো শুধুমাত্র বাবা-মাকে নিজের চেহারা দেখাতে।ছেলেটা ধীরে ধীরে মানুষ থেকে রোবটে পরিণত হয়ে যাচ্ছে,একমাত্র তুইই পারিস ওকে এই অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে।কি রে মা,পারবি না?
ছোঁয়াঃ….
মাঃ জানিস মা,ছেলেটা বাড়ি গেলেই তোর রুমে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকে।রুমটাকে নিজ হাতে সাজিয়েছে,অন্য কাউকে রুমে পা পর্যন্ত রাখতে দেয়নি এতদিন,এমনকি আমাকেও না।তুই ওর গান শুনতে খুব পছন্দ করতি না,তাই বাড়ি গেলেই তোর জন্য গানের রেকর্ডিং করে।সবগুলো গানের সিডি করে রেখেছে,যাতে তোর জ্ঞান ফিরলে তুই কিচ্ছু মিস না করিস।ওকে না জানিয়েই আমি আজকে তোর জন্য সিডিটা নিয়ে এসেছি,তুই বরং গানগুলো শোন,আমি একটু এহসান ভাইয়ের সাথে দেখা করে আসছি
মায়াঃ বদ মহিলা,কেমন চুইনগামের মতো চিপকে আছে দেখো!অসভ্যটার দেখছি লজ্জা শরমের বালাই নেই,ইচ্ছেতো করছে বেটির চোখ দুটো বরই কাটা দিয়ে গেলে দেই(বিড়বিড় করে)
আসিফঃ মিস মায়া…হ্যালো…কি আশ্চর্য!কোন জগতে হারিয়ে গেছে কে জানে?হ্যালো….Anybody there?
মায়াঃ (চমকে উঠে)হ্যাঁ!কিছু বল..ছিলেন?
আসিফঃ একা একা কি বিড়বিড় করছো?আর এভাবেই বা কি দেখছো?মনে হচ্ছে যেন কাউকে আস্ত গিলে ফেলবে!
মায়াঃ দেখছি?ওই যে দেখুন মায়া ম্যাডাম,কি পরিমান বেহায়া আর নির্লজ্জ আপনি ভাবতেও পারবেন না।ইচ্ছে করে যখন তখন স্যারের গায়ে হেলে হেলে পড়ছে!হ্যাংলামির একটা সীমা পরিসীমা থাকা উচিত কিন্তু এই বেটিতো…একবার যদি সুযোগ পাই না,তাহলে…
আসিফঃ (অবাক হয়ে)আমি কি ভুল কিছু শুনছি?তোমার মতো মেয়ে অন্য একজনের নিন্দা করছে!তোমাকে এতদিন ধরে দেখছি,তোমার ক্যারেক্টারে যে এই বৈশিষ্ট্য আছে জানতাম নাতো…
মায়াঃ দেখুন আপনি কিন্তু…
আসিফঃ এক মিনিট,মারুফ ফোন দিয়েছে,আমি কথা শেষ করেই আসছি।ততক্ষণ নাহয় তুমি তোমার গোয়েন্দাগিরি চালিয়ে যাও কেমন?
(আসিফ চলে গেল,মায়া দূরে দাঁড়িয়ে আবারও সায়ন আর রিয়ার দিকে নজর দিল)
(কিছুক্ষণ পর)
আসিফঃ সা..সায়ন কোথায় আর তুমি ওদিকে কোথায় যাচ্ছো?
মায়াঃ স্যারতো..একি আপনি এমন হাপাচ্ছেন কেন?
আসিফঃ আছে একটা কারণ,আগে বলো সায়ন কোথায়?জরুরী দরকার আছে
মায়াঃ আরে,এই জন্যেইতো ওদিকে যাচ্ছি।মায়া ম্যাডাম স্যারকে নিয়ে ওদিকেই গেছে,দেখেতো মনে হলো কোন গোলমাল আছে
আসিফঃ বল কি!আচ্ছা চলো দেখি ওরা কোথায় গেছে…
অরেঞ্জ জুসে চুমুক দেওয়ার পর থেকেই চোখের সামনে সবকিছু কেমন যেন ঝাপসা হয়ে আসছে সায়নের,ঘটনাটা ঠিক কি ঘটেছে বুঝে উঠতে পারছে না।এদিকে ফোনয়া যে ভাইব্রেট করেই যাচ্ছে সেদিকেও খেয়াল নেই,খেয়াল করলো রিয়া,কার ফোন না দেখেই ফোনটা পাশে থাকা অ্যাকুরিয়ামের মধ্যে ফেলে দিল!
রিয়াঃ Are you okay Mr. Sayan?I think এদিকটা একটু বেশিই Noisy.চলুন আপনাকে একটু নিরিবিলিতে নিয়ে যায়…
(কিছুক্ষণ পর)
রেস্টুরেন্টের দোতলায় আবাসিক হোটেল,তারই কর্ণারের দিকের একটা রুম,ভেতর থেকে লক করে বাইরে “Do not disturb” ট্যাগ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছেসায়ন সোফায় বসে ঝিমাচ্ছে,আশে পাশে এক্স্যাক্টলি কি হচ্ছে ঠিক বুঝতে পারছে বলে মনে হচ্ছে না।
আর রিয়া?একটু আগে পরে থাকা পার্টি গাউনটা ছেড়ে ঢিলে ঢালা শর্ট একটা ড্রেস পরে ফেলেছে।আর এখন সায়নের অজান্তেই ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে…
চলবে…
#নোটঃ বাব্বাহ স্যাড ইণ্ডিং দিব শুনেই এতো প্রটেস্ট,দিয়ে দিলে না জানি কি হবে!আমার বাবা অত সাহস নেই তাই হ্যাপি ইন্ডিংই দিব।কেমন লাগছে জানাতে ভুলবেন না…