Childhood marriage 3 !! Part- 26
কেটে গেছে আরও কয়েকটি মাস।নিজের অজান্তেই সায়নকে ভালোবেসে ফেলেছে ছোঁয়া কিন্তু মনের কথাটা এখনও খুলে বলা হয়নি ওকে।আজ ছিল সায়নের ফাইনাল ইয়ারের শেষ এক্সাম,ওর গ্রাজুয়েশন শেষ এখন শুধু রেজাল্টের অপেক্ষা।নাহ ছোঁয়ার কথাটাকে ফেলতে পারেনি সায়ন,এই কয় মাসে সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেছে আর হবে নাই বা কেন?ও যে মহসিন সাহেবের একমাত্র সন্তান তাই ও যদি ব্যবসার হাল না ধরে তাহলেতো সবকিছু একেবারে লাটে উঠে যাবে!ছোঁয়ার কথামতো একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভাবতেই সবকিছু ক্লিয়ার হয়ে গেছে।
এক্সাম শেষ তাই কালই বাড়ি ফিরে যাবে সায়ন,বাবার কথামতো ব্যবসার হাল ধরবে,মাস্টার্সটাও তাই ওখানেই করতে হবে।আজকে সায়নের জন্য তাই ছোঁয়ার স্পেশাল প্ল্যানিং রয়েছে আর তাই বিকেল হতে না হতেই বৃষ্টিকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে।
বৃষ্টিঃ কি রে অনেক্ষণতো হলো আর কতো?
ছোঁয়াঃ আরে বাবা স্পেশাল জিনিস কি এতো সহজে পাওয়া যায়?একটু ধৈর্য্য দরতে হয় বুঝলি?
বৃষ্টিঃ কখন থেকেতো এই একটা ডায়লগই শুনে যাচ্ছি।আচ্ছা কি কিনবি সেটাতো বল…
ছোঁয়াঃ সে যখন কিনবো তখনই দেখিস,আগে থেকে শুনে কি করবি?(আমি জানলেতো বলবো,আমিতো নিজেই ঠিক করতে পারছি না উনার জন্য কি নেওয়া উচিত)
বৃষ্টিঃ হুহ,তা এখন আমরা কোথায় যাচ্ছি?
ছোঁয়াঃ ছয় তলায়,ওখানে একটা পরিচিত দোকান আছে।তুইওতো চিনিস দোকানটা…
বৃষ্টিঃ তা যাবিই যখন আগে গেলেই হতো,শুধু শুধু দু ঘণ্টা ধরে এ ফ্লোর ও ফ্লোর ঘোরার কোন মানে হয়?
ছোঁয়াঃ বকবক পরেও করতে পারবি এখন লিফটে উঠ
বৃষ্টিঃ ইয়ে মানে তাসু,বলছিলাম কি আমার না একটু ওয়াশরুমে যেতে হবে।ইমার্জেন্সি…
ছোঁয়াঃ এখন!তুই আর সময় পেলি না?আচ্ছা ঠিক আছে চল
বৃষ্টিঃ আরে না না,তোকে আমার সাথে আসতে হবে না।তুই বরং চলে যা,আমিতো দোকানটা চিনি আমি ঠিক চলে যাবো।এতে অন্তত কিছুটা হলেও টাইম সেভ হবে
ছোঁয়াঃ সত্যিতো?আচ্ছা ঠিক আছে তাই হবে।তুই কিন্তু বেশি দেরি করিস না,দেখিস আবার ভুলে যাস না যেন…
বৃষ্টিঃ ঠিক আছে ঠিক আছে,এখন যা নাহলে লিফট আবার তোকে রেখেই চলে যাবে…
(কিছুক্ষণ পর)
ফোর্থ ফ্লোর,ডোর ওপেন হতেই ছোঁয়া বাদে লিফটে থাকা বাঁকি তিনজনও নেমে গেলো,এখন লিফটে থাকলো শুধু ছোঁয়া।আর মাত্র একটা ফ্লোর,তারপরেই…কিন্তু একি লিফট যে থেমে গেলো,প্রবলেম?পাওয়ার কাট,তাছাড়া আর কিই বা হতে পারে…
চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার,ঠিক কত তলায় এসে আটকেছে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না,মোবাইলের হালকা আলো যেন সেটাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।ভয়ের একটা শীতল স্রোত বয়ে গেলো ছোঁয়ার মধ্য দিয়ে
ছোঁয়াঃ হে..হেল্প…কে..কেউ আছেন?আমি এখানে আটকে পড়েছি…হে..ল্প..প্লিজ…
লিফটের মধ্যকার অক্সিজেন সাপ্লাই ধীরে ধীরে কমে আসছে আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ছোঁয়ার ক্লস্ট্রোফোবিয়ার সিন্ড্রোম।নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে,দম বন্ধ হয়ে আসছে,পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে,ঠিকমতো দাঁড়িয়েও থাকতে পারছে না,আস্তে আস্তে চোখের সামনে থেকে সবকিছুই অন্ধকার হয়ে আসছে…
সেন্ট্রাল ক্যাফেটেরিয়া…
সায়নের পুরো গ্যাঙ একসাথে জড়ো হয়েছে আর সবার মধ্যমণি হয়ে আছে সায়ন।এমন গেদারিং ওদের জন্য নতুন কোন ব্যাপার না তবে আজকের ব্যাপারটা একটু স্পেশাল দুটো কারণে।একতো গ্রাজুয়েশন শেষ আর অন্য কারণটা সায়নের ফেয়ারওয়েল,সবার মধ্যেই তাই আনন্দ-বেদনার মিশ্র একটা প্রতিক্রিয়া কাজ করছে
মারুফঃ কি রে,মুড অফ করে বসে আছিস কেন?আরে বাবা,তুই কি আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে যাচ্ছিস নাকি?আমাদের মধ্যে যোগাযোগতো হবেই…
সায়নঃ আরে সেজন্য না,ব্যাপারটা আসলে…
মারুফঃ তা যদি নাই হয় তাহলে আবার কি?
রাকিবঃ আরে এই সহজ ব্যাপারটা বুঝলি না!ও কি আর আমাদের জন্য মন খারাপ করে আছে?ওতো আমাদের ভাবিকে ছেড়ে যাওয়ার দুঃখে…
দীপুঃ কি করে বুঝবে বল,সবাই কি তোর মতো লাভগুরু নাকি?
রাকিবঃ তা যা বলেছিস,প্রেমের ব্যাপারে সব সমস্যার সমাধান পাবি এই আমার কাছে।যার যা প্রবলেম হবে,এই আমার কাছে চলে আসবি কেমন?
আসিফঃ জো হুকুম জাহাপনা
তানিঃ সবার সব সমস্যারতো সমাধান করে দিস,আমারটা কেন করিস না?কেন আমার মনের কথাটা বুঝিস না?(মনে মনে)
মারুফঃ আচ্ছা এখন ওসব বাদ,আজকে একটা স্পেশাল অকেশন সো লেটস রক গাইজ…
রাকিবঃ রাইট,আর সায়ন তুই শুধু শুধু টেনশন নিস না আমরাতো আছিই,ভাবির কোন অসুবিধা হবে না
তানিঃ তা নয়তো কি?তোর অবর্তমানে ভাবির দেখাশোনার সব দ্বায়িত্ব আমাদের,সো জাস্ট চিল ইয়ার…
সায়নঃ Okay then lets rock the flore guys…Turn on the music please…
সায়ন সিগনাল দিতেই মিউজিক সিস্টেমে হাই বিটের ডিজে সং বাজতে শুরু করলো আর ওরাও তার সাথে শুরু করলো নাচানাচি আর লাফালাফি
(কিছুক্ষণ পর)
ফোনটা ভাইব্রেট মুডে ছিল তাই এতো সাউণ্ডের ভেতরেও বুঝতে অসুবিধা হলো না যে একটা কল এসেছে।ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো বৃষ্টি
সায়নঃ ও আবার এখন ফোন দিল কেন?ওতো কখনও…নিশ্চয়ই জরুরী কোন দরকার,এক কাজ করি বাইরে চলে যাই…
আসিফঃ কি রে,কোথায় যাচ্ছিস?
সায়নঃ এইতো এক মিনিট,একটা কল এসেছে এক্ষুণি আসছি…
বৃষ্টিঃ হ্যা…হ্যালো ভাইয়া…
সায়নঃ হ্যাঁ বৃষ্টি,বলো…আরে তোমার কণ্ঠটা এমন লাগছে কেন?কোন প্রবলেম?
বৃষ্টিঃ ভা..ভাইয়া..আ..আপনি এক্ষুণি চলে আসুন প্লিজ…আ..আমার প্রচণ্ড ভয় লাগছে..
সায়নঃ কি হয়েছে বলিবেতো…তুমি এমন করছো কেন?
বৃষ্টিঃ ভাইয়া তাসনিয়া…ও..
সায়নঃ কি হয়েছে ওর?তোমরা কোথায় আছো?অনেক্ষণ ধরে ওকে ট্রাই করছি কিন্তু পাচ্ছি না,ও ঠিক আছেতো?
বৃষ্টিঃ ঠিক নেই ভাইয়া,ও ঠিক নেই।সব দোষ আমার,কেন যে ওকে একা একা ছাড়তে গেলাম!আমি সাথে থাকলে হয়তো…
সায়নঃ কি হয়েছে বলবেতো…হেঁয়ালি না করে পরিষ্কার করে বলো প্লিজ…
বৃষ্টিঃ লিফট…আমরা শপিংমলে এসেছিলাম আর হঠাৎ করেই পাওয়ার কাট হয়ে গেছে!তাসনিয়া…ও লিফটের মধ্যে…
দীপুঃ কি রে,সায়ন কই?ওকেতো কোথাও দেখতে পাচ্ছি না…
আসিফঃ বেটা এখনও আসেনি!আমাকেতো বললো কলটা রিসিভ করেই চলে আসবে…
রাকিবঃ নির্ঘাত বউয়ের ফোন,শালা হারামিটা…
মারুফঃ দাঁড়া আমি দেখছি,সায়ন…
(মারুফ যখন বাইরে আসলো সায়ন তখন সিঁড়িতে বিধ্বস্ত অবস্থায় বসে আছে,দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভয়ংকর কোন দুর্ঘটনা ঘটেছে।মারুফ ছুটে গেল ওর দিকে)
মারুফঃ কি রে এভাবে বসে আছিস কেন?কি হয়েছে?
সায়নঃ….
মারুফঃ কি আশ্চর্য!কথা বলছিস না কেন?সায়ন…এই সায়ন…
সায়নঃ (চমকে উঠে)মারুফ…তুই…ওকে বাঁচা দোস্ত,আমি যে ওকে…
মারুফঃ কাকে বাঁচাবো?তুই আবার কার কথা বলছিস?আর তুই এমন করছিস কেন?
সায়নঃ দোস্ত ছোঁয়া…ও হসপিটালে
মারুফঃ (চমকে উঠে)মানে!কি যা-তা বলছিস?লোপাতো বলছিল ও এখন তোর জন্য গিফট কিনতে গেছে তাহলে এসব…
সায়নঃ ওটাইতো প্রবলেম,ও যদি শপিংমলে না যেতো তাহলে হয়তো…
মারুফঃ কি হয়েছে সেটাতো বলবি…
সায়নঃ ছোঁয়া ক্লস্ট্রফোবিক,ছোটবেলায় গাড়ির ডিকিতেই…তাহলে লিফটের মধ্যে এতোক্ষণ…ওর কিছু হবে নাতো…বল না দোস্ত ও আমাকে ছেড়ে…
মারুফঃ অনেক হয়েছে আর না,এবার উঠে দাঁড়াতো দেখি…
সায়নঃ কেন?
মারুফঃ কেন মানে?হসপিটালে যেতে হবে না…
সায়নঃ যাবো?হ্যাঁ তাইতো,আমাকেতো যেতেই হবে নাহলে…
মারুফঃ তুই এখানেই দাঁড়া,আমি এক্ষুণি আসছি…
রাত প্রায় দশটা…
ওটির সামনের ওয়েটিং জোনে বসে আছে ওরা ক’জন আর সায়ন ননস্টপ করিডোরে পায়চারী করে যাচ্ছে।ভেতরে ছোঁয়ার সার্জারী চলছে,প্রায় ঘণ্টা তিনেক হতে চলেছে কিন্তু ভেতরের কোন খবরই পাওয়া যাচ্ছে না।মস্তিষ্কে লং-টার্ম অক্সিজেন ডেফিসিয়েন্সির জন্য ব্রেইন হেমারেজ হয়েছে ওর,তার জন্যই অপারেশন চলছে এখন।মিস্টার এণ্ড মিসেস মহসিন চৌধুরীকে খবর পাঠানো হয়েছে,খবর পেয়েই উনারা রওনা দিয়েছেন,যেকোন সময় চলে আসবেন।
লোপা বৃষ্টিকে সামলাতে ব্যস্ত,মেয়েটা কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে,ছোঁয়ার এই অবস্থার জন্য নিজেকেই দোষারোপ করে যাচ্ছে
লোপাঃ তুই একটু শান্ত হ প্লিজ, এমনিতেই ছোঁয়ার এই অবস্থা তারপর যদি তুইও অসুস্থ হয়ে যাস তাহলেতো…
বৃষ্টিঃ কি করে শান্ত হবো তুইই বল,আমি যদি ওকে একা একা না ছাড়তাম তাহলে হয়তো…
লোপাঃ তোর থাকা না থাকাতে কিছুই বদলাতো না।সবকিছু হয়েছে ওর ক্লস্ট্রোফোবিয়ার জন্য,তুই ওর সাথে থাকলেও কোনকিছু বফলাতো না
বৃষ্টিঃ হ্যাঁ কিন্তু ওকে সাহসতো যোগাতে পারতাম,তাহলে অন্তত ওর প্যানিক এ্যাটাকটা হতো না
লোপাঃ বাদ দে না বৃষ্টি,যা হবার হয়ে গেছে এখন ওসব ভেবে কি লাভ?এখন আমাদের মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে,সায়ন ভাইয়ার কথাটা একবার ভাব…
বৃষ্টিঃ ওটাইতো আমাকে আরও বেশি কষ্ট দিচ্ছে,ভাইয়ার দিকে তাকানোর সাহসই পাচ্ছি না।এসে পর্যন্ত উনি কারো সাথেই কোন কথা বলেননি,একবার জানতেও চাননি তাসু কি কণ্ডিশনে আছে!
লোপাঃ আমিও সেটাই ভাবছি,একটু যেন বেশিই স্ট্রেঞ্জ বিহেভ করছেন উনি।আমারতো উনাকে নিয়েই এখন বেশি ভয় লাগছে,তাসুর যদি কিছু একটা হয়ে যায় তাহলে উনি…আমি আর ভাবতে পারছি না…
বৃষ্টিঃ ও কথা বলিস না লোপা,তাসুর কিছু হতে পারে না।ওকে ফিরে আসতেই হবে,অন্তত এই মানুষটার ভালোবাসার জন্য..
(অবশেষে সবার অপেক্ষার অবসান হলো,ওটির দরজা খুলে গেলো।সার্জন ডক্টর ইব্রাহিমকে বেরোতে দেখেই সবাই উনার দিকে ছুটে গেলো)
ডক্টরঃ আপনাদের মধ্যে মি. সায়ন,আই মিন পেসেন্টের গার্জিয়ান কে?
সায়নঃ আ..আমি ডক্টর,ছোঁয়া আমার স্ত্রী।ও এখন কেমন আছে?ও ঠিক আছেতো?আমি জানতাম ও আমাকে একা ফেলে যেতেই পারে না,আমি কি ওকে একবার দেখতে পারি?
ডক্টরঃ সরি মি. সায়ন…আমি একটু…
সায়নঃ হ্যাঁ ডক্টর বলুন…আ..আপনি কিছু বল..ছিলেন…
ডক্টরঃ সরি মি. সায়ন,অনেক চেষ্টা করেও আমরা আপনার স্ত্রীকে…
চলবে….