প্রেমে পড়া বারণ

প্রেমে পড়া বারণ ( সিজন-2 ) Part- 03

কত হাসি,আনন্দ, মান,অভিমান, খুনসুটির মধ্য দিয়ে আমাদের বন্ধুত্বের দিনগুলো কেটে যাচ্ছে।।
এখানে আড্ডা শেষ করে তাহসিন আনিষার সাথে দেখা করতে গেছে আর আমরা গল্প করতে করতে ক্লাসে যাচ্ছি।
সদ্য কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ফার্স্ট ইয়ারে নতুন যারা ভর্তি হয়েছে তাদের দেখলেই চেনা যায়। আমরা ক্লাসে যাচ্ছি তখন আমাদের সামনে দিয়ে একটা গাড়ি একটু দূরে গিয়ে থামলো।
গাড়ি থেকে একটা সুন্দরী মেয়ে বেরিয়ে আসলো। মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দরী। তার উপর একটা ভাব আছে মেয়েটার।এই ভাবই বলে দিচ্ছে সে নতুন ভর্তি হয়েছে।
এতো বছরের গবেষণায় আমার একটা জিনিস বুঝেছি; যারা নতুন ভর্তি হয় তারা প্রধানত তিন ধরনের হয়ে থাকে।
• একদল আছে যারা একটু সংকোচ করে,গুটিসুটি হয়ে থাকে। নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে একটু সময় নেয়।।
• আরেক দল আছে তারা অত্যাধিক সিরিয়াস। কোনো ক্লাস জীবনেও মিস করে না এবং খুব গম্ভীর একটা ভাব নিয়ে চলে।।
• আর স্পেশাল একটা দল থাকে, যারা প্রয়োজনের থেকেও বেশি ভাব নেয়।তারা ভর্তি হবার পর রাতারাতি গেটআপ বদলে নিয়ে নতুন একটা ভাব নেয়। ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পরে তারা মনে করে অনেক বড় হয়ে গেছে। ইউনিভার্সিটিতে পড়ে! ড্যাম কেয়ার… এই ভাব নিয়ে চলে।
এই মেয়েটা তিন নাম্বারে। অর্থাৎ ড্যাম কেয়ার ভাব, ওভার স্মার্ট!
– দেখছিস!! মেয়েটা কত সুন্দরী! কত স্মার্ট।
রেহান মেয়েটাকে দেখেই ক্রাশ খেয়েছে।
– তুই এই জীবনে শুধরাবি না? এত ছ্যাচড়া ক্যান তুই? ঘণ্টায় ঘন্টায় ক্রাশ খাস!!
– দেখ হিয়া, আমি মোটেও ছ্যাচড়া নই।
– ছ্যাচড়া না! বিশ্ব প্রেমিক??
– তুই যে আমাকে, ছ্যাচড়া বললি,জীবনে আমি কোনো মেয়ের পিছনে ঘুরেছি,প্রপোজ করেছি? আমি সুন্দরের পূজারি।চোখের সামনে যা দেখি,সুন্দর লাগলে বলে দেই।ভিতরে পুষে রাখিনা।
আর আমি কয়টা প্রেম করেছি যে বিশ্ব প্রেমিক হবো?
এটা সত্যি যে রেহান ঘন্টায় ঘন্টায় ক্রাশ খায় আর সেই ক্রাশের খবর শুধু আমরাই জানি। কোনো দিন কোনো মেয়েকে প্রপোজ করে নাই,কারো পিছনে ঘুরঘুর করে নাই।
তবে ক্রাশে খবর যেহেতু আমরা জানি তাই আমরাই ওকে পচাই।।
তার আরও একটা কারণ আছে। রেহান কখনো কখনো ভাবে এবার একটা প্রেম করবেই। কাউকে ভালো লাগলে প্রপোজ করার সিদ্ধান্ত নেয়।কিন্তু তিন দিন পরে ওর আর প্রপোজ করার মুড থাকে না। কারণ তার অই ক্রাশের এত্তগুলা বেড সাইড ওর চোখে পড়ে!!
তাই বেচারা আজও প্রেমিক হয়ে উঠতে পারেনি।
– তুই ছ্যাচড়া ই।। আজ পর্যন্ত সিরিয়াসলি কোনো মেয়ের প্রতি তোর কোনো ফিলিংস আসছে?
– না।
– তাহলে? এই বারবার ক্রাশ খাস সেটা আমার কাছে ছ্যাচড়ামি মনে হয়।
– তুই এতো বেশি বুঝিস ক্যান? ছ্যাচড়ামি কি চিনিস?
– চিনি তো! তুই যেটা করিস সেটাই ছ্যাচড়ামি!
– ভালো হইছে করছি,তোর সমস্যা কি? আমি করলে তোর কি না খেয়ে থাকতে হয়?
– আমার সমস্যা হবে ক্যান?? চোখের সামনে ছ্যাচড়া দেখলে না বলে থাকতে পারিনা বুঝছিস?
– ওরে আমার ভালো মানুষ রে!! যা আমি ছ্যাচড়া। তো কি হয়েছে? আমার সাথে থাকতে তোর গায়ে ফোসকা পড়ে?
– ওরে ভাই, কি শুরু করছিস তোরা? একদিন শান্তিতে থাকতে দিবি না?
খুশবু বিরক্ত হয়ে গেছে এসব শুনতে শুনতে।।
– হা ফোসকা পড়ে। আর খুশবু…. ওকে বল… ও যে একটা ছ্যাচড়া এটা ওরে বুঝিয়ে দে।।
– খুশবু কি বুঝাবে? গায়ে এতো ফোসকা পড়লে থাকিস কেন? কথা বলিস কেন?? আর কথা বলবি না আমার সাথে।
– আমার ঠেকা পড়ছে তোর সাথে কথা বলতে।
– ঠিক আছে দেখবো।
– যা যা.. দেখিস।
– দেখবোই তো।এবার আমি সিরিয়াস। তোর মতো সাইকোর সাথে আমার ফ্রেন্ডশিপ রাখার কোনো প্রয়োজন নেই।।
– এই, রেহান….
তোর সাথে কথা না বললে আমার কি হবে? প্লিজ এমন করিস না!! তোর সাথে কথা না বললে,ফ্রেন্ডশিপ না থাকলে আমার দম বন্ধ হয়ে যাবে! আমি কান্নাকাটি করে চোখ ফুলিয়ে ফেলবো…. প্লিজ।প্লিজ ফ্রেন্ডশিপ ভেঙে দিস না…..!!
কি ভাবছিস এসব বলবো? আল্লাহ আমাকে বাঁচাবেন তোর সাথে না থাকলে। অন্তত আমাকে তোর এই রাবিশ বকবাস শুনতে হবে না।
– দেখবোনে আবার শুনতে আসিস কিনা!
– ক্লাসে আসছি…. এবার থাম।। কানের পোকা মরে গেছে তোদের ঝগড়া শুনে।
অনির কথায় রেহান আর আমি দুজনেই থেমে গেলাম।
আমাদের মধ্যে যা-ই হোক, অন্যদের শুনাবো কেন!!
রেহান ক্লাসে আমার পাশে না বসে একেবারে অন্য পাশে বসেছে।
বাসায় ফেরার সময় অন্যদের সাথে কথা বললেও রেহানের সাথে কথা বলিনি। রেহানও আমার সাথে কথা বলেনি। ও কি ভেবেছে? কথা না বললে মরে যাবো? আমি নিজে গিয়ে কথা বলবো?!! উহহহ….. আমার এতো ঠেকা পড়ে নাই।
বাসায় আসতে অন্যদিনের চেয়ে একটু দেরি হয়ে গেছে। রাস্তায় যা জ্যাম, দম তো জ্যমে পড়েই আটকে যায়।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিলাম।তারপর রুম থেকে বেরিয়ে আম্মুর কাছে গেলাম। আম্মু দিয়ার মাথায় এ্যলোভেরা ওয়েল দিয়ে দিচ্ছে আর দিয়া টিভি দেখছে। রিফাত গেইম খেলায় ব্যস্ত।
– আজ এতো দেরি হলো?
– বেশি দেরি হয়নি তো আম্মু। রাস্তার অবস্থা জানো না? একটা জ্যামে আটকা পড়লেই হলো।
– হুম। ভার্সিটিতে ক্লাসটাস হয় নাকি সারাদিন ঘুরাঘুরি করিস?
– ক্লাস তো হয়।মাঝেমধ্যে দু- একটা মিস হয়।
– আজ ক্লাস করেছিলি?
– হা করেছি।। কেন?
– না এমনি।।
– আম্মু! তুমি এমনি এমনি বলোনি সেটা আমি ভালো করেই জানি।
– আজকে আমার পরিচিত একজন বললো, তোর মতো কাকে দেখেছে একটা ছেলের সাথে, কোন রেস্টুরেন্টের পাশে।
– কে বলেছে?
– কে বলেছে সেটা ইম্পোর্টেন্ট না।তুই ছিলি কিনা সেটাই বল।
– ওহহ… হা ছিলাম তো,সিনেমা হলের পাশেও নিশ্চয়ই দেখেছে? তাহসিনের সাথে গিয়েছিলাম। সিনেমা হলের পাশের রেস্টুরেন্টে।
দিয়া মুখ টিপে হাসছে।
রিফাত আস্তে আস্তে কখন কেটে পড়েছে!
দিয়া ইশারা দিয়ে দেখালো রিফাতকে। দিয়া না বললেও আমি জানি রিফাত আম্মুকে এসব বলেছে।ও আম্মুকে বলবে জেনেই সকালে ওকে এসব বলেছিলাম। ও ঠিকই আম্মুর কানে পৌঁছে দিলো!
আম্মুর কাছে কিছু সময় বসে থেকে রিফাতের রুমে গেলাম।
– কি একটা অবস্থা চিন্তা কর!
– কেন আপু? কি হয়েছে?
– আরে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। আজ ক্লাস ফাঁকি দিয়েছি আর আম্মুর পরিচিত কে জানি আমাকে দেখে আম্মুকে বলে দিয়েছে!
– তাই নাকি? সাংঘাতিক কান্ড।
– হুম। অনেক সাংঘাতিক। তুই জানিস কে বলেছে? চিনিস?
– আমি কিভাবে চিনবো? আমি তো জানি ই না কে ফোন করে বলেছে!
– হুমম। সেটাও কথা। আচ্ছা থাক,যা সত্যি সেটাই তো বলেছে।
রিফাতের রুম থেকে বেরিয়ে দেখি দিয়া দরজা সামনে দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাবার অবস্থা!
– কিরে হাসছিস কেন?
– আপু তুই ওকে ডোজ দিলি… ও সেটাই খেলো।
ও নিজে এসব আম্মুকে বলেছে।আমি শুনেছি।
– জানি।
– জানিস?
– হুম।
– কিভাবে?
– কিভাবে আবার? আমি কি কোথাও গিয়েছি নাকি? সকালে খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলো। তাই এসব বলেছিলাম, জানতাম আম্মুকে বলে দিবে।
চলবে….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *