Childhood marriage

Childhood marriage 3 !! Part- 25

সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে সায়নের রুমে ঢুকলো ছোঁয়া,সায়নের রুম বলছি কারণ এখানে আসার পর থেকেই ওরা দুজন আলাদা রুমে থাকছে।সায়ন অবশ্য আপত্তি তুলেছিল কিন্তু শেষমেশ ছোঁয়ার জেদের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছে।কিন্তু যার জন্য এখানে আসা,সেই সায়নেরই কোন নাম নিশানা নেই!উত্তর মিললো ওয়াশরুম থেকে আসা পানির শব্দে
ছোঁয়াঃ তারমানে জনাব ওয়াশরুমে।ঠিক আছে আমি নাহয় এখানেই ওয়েট করি,বের হলেই মজা দেখাবো বাবার সাথে এভাবে মিসবিহেভ করা!
(কিছুক্ষণ পর)
ছোঁয়াঃ অনেক্ষণতো হয়ে গেলো,উনারতো বের হওয়ার কোন নামই দেখছি না।কিন্তু এতক্ষণ উনি করছেনটা কি আর পানির শব্দটাওতো বন্ধ হওয়ার নাম নেই!দেখতে হচ্ছে ব্যাপারটা,এই যে শুনছেন?
সায়নঃ (আরে এটাতো ছোঁয়ার গলা!ও আবার এখন এখানে কি করছে?)কি হয়েছে?
ছোঁয়াঃ আচ্ছা আপনি কি করছেন বলুনতো,আমি সেই কখন থেকে ওয়েট করছি…
সায়নঃ কেন কিছু বলবে?
ছোঁয়াঃ বলবো বলেইতো এতক্ষণ…যাই হোক তাড়াতাড়ি বের হোন প্লিজ…
সায়নঃ এইতো হয়েই গেছে জাস্ট টু মিনিটস
ছোঁয়াঃ ওকে…
সায়নঃ এই যা টাওয়েলটা আনতেতো ভুলেই গেছি,এখন কি করি?ছোঁয়া…ছোঁয়া…
ছোঁয়াঃ কি?কিছু বলছেন?
সায়নঃ না মানে…আমি আসলে…বলছি যে আমার টাওয়েলটা একটু দেবে?আনতে ভুলে গেছি
ছোঁয়াঃ কিহ টাওয়েল!তারমানে এতো রাতে আপনি…এই নিন ধরুন
সায়নঃ মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি এসেছে,হালকা করে দরজাটা খুলে দিলাম।নিজে আড়ালে থেকেই এক হাত বাড়িয়ে দিলাম,কই দাও…
ছোঁয়াঃ ও হ্যাঁ এই যে।কাঁপা কাঁপা হাতে টাওয়েলটা উনার দিকে বাড়িয়ে দিলাম,আসলে সিচুয়েশনটা একটু অড তাই…
সায়নঃ খপ করে ওর হাতটা চেপে ধরলাম,দরজাটা খুলে দিলাম একটা হ্যাঁচকা টান ব্যাস ওতেই হয়ে গেল,সোজা বাথটাবে
ছোঁয়াঃ কিছু বুঝে উঠার আগেই সোজা বাথটাবের পানিতে!এটা কি হলো?
সায়নঃ এটাকে বলে বৃষ্টি স্নান উফ সরি এখানেতো বৃষ্টি নেই তাহলে কি বলা যায়?পেয়েছি টাব শাওয়ার হাহাহা
ছোঁয়াঃ ইয়ার্কি হচ্ছে?(দাঁতে দাঁত চেপে)

সায়নঃ উহু এটাকে বলে দুষ্টুমি,তুমিই বলো বউয়ের সাথে একটু আধটু দুষ্টুমি না করলে কি চলে?
ছোঁয়াঃ দেখুন আপনি কিন্তু…হঠাৎ করেই দেখলাম আমি উনার বুকের উপর,দুজনেই একেবারে ভিজে গেছি আর উনি আমাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন।মনে পড়ে যাচ্ছে সেই সাতদিনের চ্যালেঞ্জ,কটেজের লেকে দুজনে একসাথে…
সায়নঃ আমি কি?এই যে ম্যাডাম…হ্যালো…
ছোঁয়াঃ (চমকে উঠে)হ্যাঁ..কি..কিছু বলছিলেন?
সায়নঃ (অবাক হয়ে)তারমানে তুমি এতক্ষণ…
ছোঁয়াঃ হঠাৎ হ্যাণ্ড নজেলটা চোখে পড়তেই দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় আসলো,ওটা উনার দিকে তাক করে শাওয়ার ছেড়ে দিলাম
সায়নঃ আরেহ এটা…ছোঁয়া…কি করছো এসব…বন্ধ করো প্লিজ…
ছোঁয়াঃ মোটেও না,আপনাকে কি এতো সহজেই ছেড়ে দিব!আমার সাথে শয়তানির শাস্তিতো আপনাকে পেতেই হবে
সায়নঃ তাই নাকি!ঠিক আছে,কে কাকে শাস্তি দেয় দেখা যাক,আমিও সেম টেকনিক এ্যাপ্লাই করতে লাগলাম
ছোঁয়াঃ আরে আপনি আবার আমার দিকে পানি ছুড়ছেন কেন?বন্ধ করুন…বন্ধ করুন বলছি…
সায়নঃ কি এখন কেমন লাগছে?Tit for tat বলে একটা কথা আছে শোননি কখনও?

ছোঁয়াঃ দেখুন খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু…ওটা আমাকে দিয়ে দিন বলছি…
(সায়নের থেকে হ্যাণ্ড শাওয়ারটা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে ছোঁয়া আর সায়নও এতো সহজে ছাড়বে না বলে পণ করেছে।এসবের মাঝে ওরা যে কখন দুজন দুজনের এতোটা কাছে চলে এসেছে খেয়ালই করেনি,বুঝলো যখন সায়ন ছোঁয়ার হাতদুটো ওর পেছনের দিকে পেঁচিয়ে ধরলো)
সায়নঃ হঠাৎ বুঝলাম সিচুয়েশনটা আমার কন্ট্রোলের বাইরে চলে গেছে।ছোঁয়ার ভেজা চুল,তার থেকে টপ টপ করে গড়িয়ে পড়া পানি,ভয়ার্ত চোখের চাহনি,থরথর করে কাঁপতে থাকা ঠোঁট সবকিছুই যেন আমাকে…
ছোঁয়াঃ উনি ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন।আমার এখন উচিত নিজেকে উনার থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া কিন্তু কেন জানি পারলাম না,কোন এক অজানা শক্তি যেন আমাকে উনার থেকে দূরে সরে যেতে বাঁধা দিচ্ছে আর সেই শক্তিকে উপেক্ষা করা আমার পক্ষে সম্ভব না…
(কিছুক্ষণ পর)
সায়নের বাহুবন্ধন থেকে নিজেকে এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিল ছোঁয়া,এমনভাবে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে যেন ভয়ংকর কোন অপরাধ করে ফেলেছে আর সায়ন?সেও ছোঁয়ার অবস্থা দেখে রীতিমতো অপরাধবোধে ভুগছে।দুজনের নিরবতা ভাঙতেই মুখ খুললো সায়ন
সায়নঃ ছোঁয়া…আমি…আসলে…
সায়নের ভাঙা ভাঙা কথাগুলো ছোঁয়ার (কানে ঢুকলো কিনা ঠিক বোঝা গেল না তবে ওর রিয়্যাকশনটা দেখে একটু ভয়ই পেল সায়ন।হবে নাই বা কেন ওকে কোনকিছু বলার সুযোগ না দিয়েই যে ছোঁয়া ছুটে রুম থেকে বেরিয়ে গেল…)

ঘড়ির কাঁটা বারোর ঘর পেরিয়েছে অনেক্ষণ আগেই।অন্যদিন হলে ছোঁয়া এতক্ষণে হয় ঘুমিয়ে পড়তো নয়তো ওকে দেখে যেতো বইয়ের পাতায় মুখ গুজে টেবিলে বসে আছে কিন্তু আজকের ব্যাপারটা একটু আলাদা।আজকে ওকে এ দুটোর কোনটাই করতে দেখা যাচ্ছে না,তার বদলে ঘর অন্ধকার করে বেডের সাথে হেলান দিয়ে মেঝেতে বসে আছে।
ছোঁয়ার রুমের বাইরেই দাঁড়িয়ে আছে সায়ন,ভেতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না সেই হিসাব কষতে কষতেই বেশ অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে।শেষমেশ অনেক ভেবে দরজায় নক করেই ফেললো
ছোঁয়াঃ এখন আবার কে এলো?
সায়নঃ ছোঁয়া…জেগে আছো?
ছোঁয়াঃ হ্যাঁ আছি কেন কিছু বলবেন?
সায়নঃ হ্যাঁ ওই আর কি,ভেতরে আসতে পারি?
ছোঁয়াঃ ভেতরে?ও হ্যাঁ আসুন,দরজা খোলায় আছে
সায়নঃ একি ঘর এমন অন্ধকার করে রেখেছো কেন?আলোটা জ্বেলে দিলাম…
ছোঁয়াঃ না মানে এমনি…
সায়নঃ খুব রেগে আছো আছো আমার উপর?
ছোঁয়াঃ তাছাড়া আর কি করব?এই রাতের বেলা নিজেতো শাওয়ার নিলেনই,আমাকেও কাকভেজা করে ভিজিয়ে ছাড়লেন!ঠাণ্ডা লাগলে তখন?
সায়নঃ (অবাক হয়ে)তুমি..এই জন্য রেগে আছো!আমিতো ভাবলাম…
ছোঁয়াঃ রাগবো না!আপনারতো কিছু হবে না কিন্তু আমার চুল ভেজা থাকলে ঠাণ্ডাতো লাগবেই
সায়নঃ ওহ এই কথা!ঠিক আছে একটু ওয়েট করো
ছোঁয়াঃ আরে,আপনি আবার কোথায় যাচ্ছেন?কি আশ্চর্য!মানুষট কখন যে কি করে কিছুই বুঝিনা…
সায়নঃ এই যে চলে এসেছি,এখন চুপটি করে বসে থাকো তোমার চুলের ব্যবস্থা আমি করছি
ছোঁয়াঃ কিন্তু…
সায়নঃ কোন কিন্তু না,চুপচাপ চেয়ারে বসে পড়ো কুইক…
ছোঁয়াঃ আচ্ছা…
সায়নঃ হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে ওর চুলে হট এয়ার ফ্লো দিচ্ছি আর ও বাধ্য মেয়ের মতো চুপটি করে বসে আছে।ছোঁয়া…
ছোঁয়াঃ জ্বি?
সায়নঃ তখন আমার রুমে…না মানে আমি বলতে চাইছি এতো রাতেতো তুমি কখনও আমার রুমে যাও না তাহলে আজ কেন…কোন কি দরকার ছিল?
ছোঁয়াঃ না মানে আমি…আসলে বাবা আর আপনার মধ্যে তখন যা কথা হয়েছে সবই আমি…
সায়নঃ ইট’স ওকে,তুমি আমার স্ত্রী তাই আমার ব্যাপারে সবকিছু জানার অধিকার তোমার আছে,নিতান্ত পার্সোনাল ব্যাপারগুলোও
ছোঁয়াঃ আমি আসলে সেটা মিন করিনি,আমি বলতে চাইছি বাবার প্রস্তাবটা একটু ভেবে দেখলে হতো না?
সায়নঃ এতে ভাবাভাবির কিছু নেই,আমি বিজনেসের ব্যাপারে কোনদিনও ইন্টারেস্টেড ছিলাম না আর কোনদিন হবোও না
ছোঁয়াঃ ভবিষ্যতে কি হবে সেটা আপনি এখন জানলেন কিভাবে?
সায়নঃ দেখো ছোঁয়া আমি…
ছোঁয়াঃ দেখুন সব সময় যে সবকিছু নিজের পছন্দ মতোই হতে হবে তা কিন্তু না,কখনও কখনও আপনজনদের মুখের দিকে তাকিয়ে নিতান্ত অপছন্দের জিনিসও হাসিমুখে…

সায়নঃ আর উনাদের বেলায়?সবসময় সব স্যাক্রিফাইস কি আমাকেই করতে হবে?উনারা কি কখনোই আমার জন্য কিছু…
ছোঁয়াঃ এ কথা কেন বলছেন?উনারাও আপনার জন্য অনেক…
সায়নঃ কি করেছেন?নিজের সন্তানের প্রতি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস পর্যন্ত নেই উনাদের,আমার বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণটা জানো?তার জন্যও উনারাই দায়ী…
ছোঁয়াঃ তখন পরিস্থিতিটায় এমন ছিল যে…
সায়নঃ পরিস্থিতি যেমনই হোক,আমি যখন বারবার বলছিলাম আমি তোমাকে গাড়ীর ডিকিতে বন্ধ করিনি তখন একবারও বিশ্বাস করলেন না!আমি কি করতে পারি আর কি পারিনা এটুকুও কি জানতেন না!নিজের ছেলে সম্পর্কে এটুকু ধারণাতো বাবা-মায়ের থাকা উচিত তাইনা?
ছোঁয়াঃ সন্তানকে বিশ্বাস করেন না এমন কোন বাবা মা নেই,উনারাও আপনাকে অনেক ভালোবাসেন,বিশ্বাসও করেন।আর তাছাড়া দোষ যদি দিতেই হয় তাহলে আমাকে দিন,সেদিন স্কুলের ওই বদ ছেলেমেয়ে গুলোর হাত থেকে বাঁচতে আমি নিজেই গাড়িতে…
সায়নঃ তোমার আবার কিসের দোষ?তুমিতো তখন সেন্সলেস ছিলে তাই কিছু বলতে পারোনি কিন্তু উনারা আমার বাবা-মা হয়ে কিভাবে…
ছোঁয়াঃ বাদ দিন না,শুধু শুধু অতীত নিয়ে ঘেঁটে কি লাভ?তার থেকে বরং…
সায়নঃ তা আমাকে কি করতে হবে?

ছোঁয়াঃ বাবার প্রস্তাবটা একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখেন,আপনার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হতেতো বেশ কয়েক মাস সময় আছে ততদিন নাহয়…আর তারপরও যদি আপনার মত চেঞ্জ না হয় তখন নাহয় বাবাকে আমরা দুজন মিলে বুঝিয়ে বলবো
সায়নঃ আপনার মাথা,এখন একটু চুপটি করে বসো নাহলে কিন্তু…
ছোঁয়াঃ তার আগে আমাকে কথা দিন সবকিছু ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখবেন
সায়নঃ আচ্ছা ঠিক আছে ম্যাডাম,তাই হবে।এখন কি একটু চুপ করে বসবেন?আপনার চুলগুলো শুকিয়ে দেই নাহলে আবার ঠাণ্ডা লাগানোর অপবাদটাও আমাকেই…
চলবে…