Childhood marriage 3 !! Part- 24
দরজা জানালা সব বন্ধ,আলো বলতে রড লাইটের হালকা সাদা আলো জ্বলছে।ঘরের ঠিক মাঝখানে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে ছোঁয়া,ভয় আর লজ্জায় একেবারে কুঁকড়ে আছে মেয়েটা দেখে মনে হচ্ছে মানুষ নয়,যেন একটা রোবট দাঁড়িয়ে আছে।ওর অবস্থা দেখে ঈষৎ হাসলো সায়ন,তারপরই শাড়ি পরানোর দিকে মনোযোগ দিলো।
সায়নের প্রতিটা স্পর্শে যেন শিউরে উঠছে ছোঁয়া আর সায়ন?অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছে,বার বার ইচ্ছে করছে ছোঁয়াকে একান্ত আপন করে পেতে কিন্তু…
শাড়িটা পরানো শেষ হতেই যেনহাঁফ ছেড়ে বাঁচলো দুজনে।ছোঁয়া ঝটপট ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে পড়লো আর সায়ন?কিছু না বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো,ড্রয়িংরুমের টেবিলে রাখা পানিভর্তি গ্লাসটা এক নিঃশ্বাসে খালি করে ফেলে তবেই শান্ত হলো
(কিছুক্ষণ পর)
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছোঁয়ার দিক থেকে কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারছে না সায়ন,মেয়েটা যেন ওকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করছে!নিজের বউয়ের দিকে এমন হ্যাঙলার মতো তাকিয়ে থাকাটা বেশ লজ্জার কিন্তু তবুও সায়নের যেন কিছুতেই কিছু যায় আসে না।
সায়নঃ হঠাৎ দেখলাম আমি ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি,কেন যাচ্ছি নিজেও জানি না,শুধু মনে হচ্ছে ওর কাছেতো আমার যাওয়ারই ছিল…
ছোঁয়াঃ উনি হঠাৎ এদিকে আসছেন যে!আর এভাবেই বা তাকিয়ে আছেন কেন?সাজগোজ সব ঠিক আছে তো?আল্লাহই জানেন এই বৃষ্টির বাচ্চা আমাকে কি সাজিয়ে দিয়েছে…
সায়নঃ হ্যাঁচকা টানে ওকে একেবারে কাছে টেনে নিলাম,ওর হালকা গোলাপি ঠোঁট জোড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি,নিজেকে কিছুতেই আটকাতে পারছি না
ছোঁয়াঃ একি!কি করছেন আপনি?আপনার মাথা ঠিক আছেতো…ছাড়ুন বলছি…
সায়নঃ শসসস…আজকে আর কোন বাঁধা দিও না প্লিজ…
ছোঁয়াঃ দে..দ..দেখুন আ..প..নি..কিন্তু…
(ঠিক তখনই ডোরবেলটা বেজে উঠলো,ছোঁয়া যেন এই সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিলো।সায়নকে একটু অন্যমনস্ক হতে দেখেই ওর কাছ থেকে সরে দাঁড়ালো,তারপর সোজা দরজার দিকে ছুটলো)
ছোঁয়াঃ ইয়ে..মানে..আমি দেখছি কে এলো..
সায়নঃ এটা কি হলো?সবে একটু…ইশ রে,সব ভেস্তে দিলো…(মনে মনে)
ছোঁয়াঃ দরজা খুলতেই রীতিমতো চমকে উঠলাম,এ যে উনার পুরো গ্যাঙ!
সবাই একসাথেঃ সারপ্রাইজ…
সায়নঃ একসাথে এতো জনের কণ্ঠস্বর শুনে ঘুরে দাঁড়ালাম,ইডিয়ট গুলোকে দেখে মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল।কি রে তোরা এখানে!তোদেরতো…
রাকিবঃ আসলে আমরা ভাবলাম রেস্টুরেন্টে গেলে তোর পানিশমেন্টটা খুবই মাইনর হয়ে যাবে তাই…
সায়নঃ কিন্তু এসবের সাথে দল বেঁধে এখানে আসার কি সম্পর্ক?
আসিফঃ আমি বলছি,আমরা ভাবলাম রেস্টুরেন্টে যাওয়ার চেয়ে যদি ভাবির হাতের রান্না…
সায়নঃ কিহ!তোদের মাথা ঠিক আছেতো?কি যা-তা বলছিস!
দীপুঃ যা-তা কেন হবে?আমরা ভাবলাম অপরাধটা যারা করেছে তাদেরকেই…
সায়নঃ কিন্তু ওতো রান্না…আর তাছাড়া ও একা একা এসব
রাকিবঃ একা কোথায়?তুই আছিস না…
সায়নঃ তা এই ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়াটা কার মাথা থেকে বেরিয়েছে?
মারুফঃ অফকোর্স আমার মাথা থেকে,সবাই জানে এমন ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া একমাত্র আমার মাথাতেই আসতে পারে
সায়নঃ ঠিক জানতাম,এসব ফালতু আইডিয়া তুই ছাড়া আর কারো মাথায় আসতেই পারে না
মারুফঃ কিহ ফালতু!এমন এক্সিলেন্ট একটা আইডিয়াকে তুই ফালতু বলছিস!যাই হোক এখন সর,সব জিনিসপত্র কিচেনে নিতে হবে
সায়নঃ জিনিসপত্র!
মারুফঃ তাছাড়া রান্না কি দিয়ে হবে শুনি?আজকের ডিনারের জন্য যা যা লাগবে সবকিছু আমরা সাথে করেই নিয়ে এসেছি।এখন জাস্ট কাজে লেগে পড় তাহলেই হবে,Guys let’s move everything to the kitchen…
সায়নঃ এতোকিছু!মনেতো হচ্ছে পুরো বাজারটাই তুলে এনেছিস
রাকিবঃ অফকোর্স,গ্র্যাণ্ড ডিনার বলে কথা…Now will you move from the way please?
ছোঁয়াঃ ফিশ কারি,মিক্সড ভেজিটেবল,মাটন কাবাব,চিকেন রোস্ট,পোলাও,বেগুন ভাজি ওহ গড এরা কি মানুষ না রাক্ষস!এতকিছু একসাথে কিভাবে…এসব রান্না করাতো দূরে থাক,এগুলো কিভাবে কাটবো তাইতো বুঝতে পারছি না।কি করে জানবো,জীবনেতো একটা ডিমও ভাজিনি তাহলে এসব কিভাবে…আর ওই ইডিয়টটা,এখনও আসছে না!কি যে করছে কে জানে…
সায়নঃ কিচেনে পা রাখতেই দেখলাম এক অদ্ভুত দৃশ্য,ছোঁয়া বাম হাতে একটা মাঝারি সাইজের ডিশ নিজের সামনে ঠিক ঢালের মতো করে ধরে রেখেছে আর অন্য হাতে একটা মাছের টুকরো।কড়াইয়ের দিকে একবার নিয়ে যাচ্ছে আবার ফেরত নিয়ে আসছে।আর হাসি আটকে রাখতে পারলাম না,শব্দ করে হেসে উঠলাম
ছোঁয়াঃ এই যে,এই আপনার আসার সময় হলো!আর এভাবে পাগলের মতো হাসছেন কেন?
সায়নঃ হাসছি কি আর সাধে?এসব কি করছো তুমি?
ছোঁয়াঃ দেখতেইতো পাচ্ছেন মাছ ভাজছি তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছেন কেন?
সায়নঃ এটাকে মাছ ভাজা বলে!আচ্ছা তুমি মাছ ভাজছো নাকি যুদ্ধ জয় করতে যাচ্ছো?
ছোঁয়াঃ আমার কাছে রান্নাতো অনেকটা যুদ্ধ জয় করার মতোই
সায়নঃ এমন ইজি একটা কাজকে তুমি যুদ্ধের সাথে তুলনা করছো!ভেরি ফানি…
ছোঁয়াঃ এতোই যদি সহজ মনে হয় তাহলে নিজেই করুন না,আমাকে কেন করতে বলছেন?
সায়নঃ তাতো করতেই হবে।আমি কি আর জানতাম,আমার বউটা ঘরের কাজে যাকে বল একেবারে ঢেঁড়স…
ছোঁয়াঃ কি বললেন আপনি?আমি কি?
সায়নঃ ও কিছু না,দেখি একটু সরে দাঁড়াও আর আমাকে আমার কাজ করতে দাও
ছোঁয়াঃ চোখের পলকে উনি ঝটপট সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছেন আর আমি হা করে তাকিয়ে আছি।একটা কথা বলবো?
সায়নঃ কি?
ছোঁয়াঃ আপনি না ঠিক প্রফেশনাল সেফ দের মতো রান্না করেন
সায়নঃ ছোট থেকেই একা একা ছিলামতো তাই রান্না করতে করতে অভ্যেস হয়ে গেছে।আচ্ছা তুমি সত্যিই কিছু রান্না করতে পারো না?
ছোঁয়াঃ উহু আসলে মা তো আমাকে কখনও কিছু করতেই দেয়নি,কিচেনে গেলেই বকাবকি করে বের করে দিতো তাই কখনও সুযোগই হয়নি
সায়নঃ হুম বুঝলাম,আচ্ছা যদি এখন সুযোগ পাও?
ছোঁয়াঃ মানে?
সায়নঃ মানে আমি যদি তোমাকে রান্না শেখাই?
ছোঁয়াঃ অসম্ভব,আমাকে দিয়ে ওসব হবে না,আমি পারব না
সায়নঃ বললেই হলো!দেখি এদিকে আসো আর এই মাছটা কড়াইয়ে ছাড়ো,প্রথমে তোমাকে মাছ ভাজাই শেখাবো
ছোঁয়াঃ আমি পারব না,ওটা কড়াইয়ে দিলেই সব তেল আমার দিকে ছুটে আসবে
সায়নঃ আসবে না,আমি যেভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে সেভাবে করো তাহলেই হবে
ছোঁয়াঃ উহু আমি পারব না
সায়নঃ পারব না বললেতো হবে না,একবার চেষ্টাতো করো।দেখি এদিকে এসো,আস্তে আস্তে..এইতো হয়ে গেছে,দেখলে কতো ইজি?
ছোঁয়াঃ সত্যি!আমি পেরেছি!ইয়াহু…
সায়নঃ মেয়েটা বাচ্চাদের মতো লাফালাফি শুরু করেছে,সামান্য এইটুকু একটা কাজ তাতেই এতো খুশি!
ছোঁয়াঃ আর কি করব?শুনুন আপনি আমাকে বলে দিন কিভাবে কি করতে হবে আমি ঠিক করে ফেলবো
সায়নঃ ঠিক আছে ম্যাডাম তাই হবে,এমনিতেও আর বেশি দেরি করা ঠিক হবে না,সবাই ওয়েট করছে
এর মধ্যে কেটে গেছে বেশ কয়েকটি মাস।সায়ন আর ছোঁয়ার সম্পর্কটা এখনও ঠিক স্বামী-স্ত্রীর মতো না হলেও অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে,ওরা এখন দুজন দুজনের ভালো বন্ধু।ক্যাম্পাসে এখন সামার ভেকেশন চলছে,এত বছর পর এই প্রথম আর সবার মতো সায়নও ভেকেশনে বাড়ি এসেছে।আসবে নাই বা কেন ছোঁয়া যে চলে এসেছে তাই না এসে কোন উপায় আছে?
মহসিন চৌধুরী এখন পুরোপুরি সুস্থ তবে আগের মতো আর ছুটোছুটি করতে পারেন না,সুস্থ হয়ে উঠলেও শরীরটা অনেক দুর্বল।হবে নাই বা কেন বয়স হয়ে যাচ্ছে আর তার উপর এতো বড় একটা সার্জারী,আর তাছাড়া কোম্পানির সব দ্বায়িত্ব একা হাতে সামলানো তো আর চাট্টিখানি কথা না।অনেক ভেবে একটা উপায় বের করেছেন আর তারজন্যই সায়নকে ডাকা
সায়নঃ কিছু বলবেন?
বাবাঃ বলব বলেইতো তোমাকে ডেকেছি।আচ্ছা তোমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হতে আর কত দেরি?
সায়নঃ ভেকেশনের পরেই ফাইনাল এক্সাম শুরু হবে কিন্তু কেন বাবা?
বাবাঃ আমি চাই মাস্টার্সটা তুমি এখানে এসে করো
সায়নঃ কিন্তু কেন?
বাবাঃ কারণ আমি চাই আমাদের ফ্যামিলি বিজনেসটা এখন থেকে তুমি দেখাশোনা করো আর তুমি ওখানে থাকলেতো এটা কোনভাবেই সম্ভব হবে না
সায়নঃ কিন্তু বাবা আমিতো…
বাবাঃ আমার বন্ধু শওকতকেতো তুমি চেনো,এখানকার সবচেয়ে বড় প্রাইভেট ভার্সিটি রান করছে ও।ওর সাথে আমার কথা হয়ে গেছে,অ্যাডমিশনে কোন ঝামেলা হবে না
সায়নঃ কিন্তু…
বাবাঃ আর হ্যাঁ,ছোঁয়াকে নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না।ওখানে ওর যাতে কোন অসুবিধা না হয় তার সব ব্যবস্থা আমি করব।তুমি চলে আসার পর ফুলি আর রহিম ওখানে গিয়েই থাকবে।আশা করি তোমার আর কোন প্রবলেম নেই…
সায়নঃ আপনিতো আমার কোন কথা শুনতেই চাইছেন না,এ্যাজ ইউজুয়াল আমার মতামত ছাড়াই নিজের সিদ্ধান্ত আমার উপর চাপিয়ে দিতে চাইছেন
বাবাঃ সায়ন…
সায়নঃ আপনার বিজনেসের প্রতি আমার না কোনদিন কোন ইন্টারেস্ট ছিল আর না কোনদিন হবে।আমি নিজে কিছু করতে চাই আর সেটা আপনার কোন সাহায্য ছাড়াই
বাবাঃ তাহলে আমার পর এসব কে দেখবে?দেখো বাবা,তুমি আমাদের একমাত্র সন্তান তাই আমার পর তোমাকেইতো সবকিছুর দ্বায়িত্ব নিতে হবে
সায়নঃ দেখুন বাবা আমি এখন বড় হয়েছি,সেই ছোট্ট সায়ন আর নেই যে আপনাদের কথায় উঠবো আর বসবো।আমার নিজস্ব একটা মতামত আছে,আমি লাইফে কি করব,কোনটা আমার জন্য ভালো হবে সেই ডিসিশন আমিই নিব আপনি না
বাবাঃ কিন্তু…
সায়নঃ আমি আর কিছু বলতে চাই না,সরি আপনার কথামতো আমি…
বাবাঃ সায়ন…খোকা…আমার কথাটা একবার বোঝার চেষ্টা করো…
দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিল ছোঁয়া,বাবা আর ছেলের মধ্যে এতক্ষণ যা যা কথা হলো আড়ালে থেকে সবকিছুই শুনেছে।সায়ন ওর দিকে একবার তাকিয়েই নিজের রুমের দিকে চলে গেল আর ছোঁয়া ঢুকলো বাবার রুমে
ছোঁয়াঃ এই যে বাবা,আপনার ঔষধ।আপনি কোন চিন্তা করবেন না বাবা,উনাকে আমি রাজি করাবো
বাবাঃ সত্যি মা,তুই পারবি?
ছোঁয়াঃ কেন পারব না বাবা,হাজার হোক উনিতো আপনারই ছেলে তাই উপরে উপরে যতটা শক্ত ভেতরে ঠিক ততটাই নরম।এখন রেগে আছেন তাই রাগের মাথায় ওসব…মাথাটা একটু ঠাণ্ডা হোক সব বুঝতে পারবেন…
চলবে…