ধ্রুবতারা

ধ্রুবতারা !! Part- 09


পরেরদিনঃ
তারা অফিসে এলো। এসেই কেমন যেনো অন্যরকম লাগলো আজ অফিসটা। সবাই চুপচাপ নিজের ডেস্কে কাজ করছে। চারদিকে নিস্তব্ধতা কাজ করছে।
তারাঃএটা কি হলো। আজ সবাই এতো চুপচাপ কেনো?মনে হচ্ছে কোনো ঝড় গেসে সবার উপর দিয়ে।।তারা ভিতরে ঢুকেই প্রিয়ার কাছে গেলো।
তারাঃঐ প্রিয়া,কি হয়সে রে?
সবাই এতো চুপচাপ কেনো?মনে হচ্ছে অফিসে ঝড় গেসে।
প্রিয়াঃআরে ঝড় তো গেসেই।
তারাঃমানে??
প্রিয়াঃআরে আজ স্যার এর কি হয়সে,কি জানি?অফিসে এসেই সবাইকে বকা দিতে শুরু করলো।স্যারকে দেখে মনে হলো স্যার কোনো কিছু নিয়ে খুব রেগে আছেন।তুই কি কিছু জানিস এসব ব্যাপারে?
তারাঃআমি কি করে বলবো? আমি তো মাত্র এলাম।
প্রিয়াঃআচ্ছা শুন এই নে ফাইল আমাদের নতুন দুজন এমপ্লয় এর কিছু ডাটা স্যার চেয়েছিলেন। তুই আসলে তোকে যেতে বলেছে। এই ধর নে আর যা।
তারাঃকিহহহহ!! আমি ???😵😵বইন তুই আমারে পছন্দ করিস না এটা বললেই পারতি তাই বলে স্যারকে দিয়ে আমাকে মারার প্লান করতাসোস। এখন স্যার এর কাছে গেলে স্যার আমারে গাইরা লাইবো।বইন রহম কর এটা ধর আর তুই যা। ঠিক আছে??তোকে আমি ফুচকার ট্রিট দিমু বইন।
প্রিয়াঃআমি তোরে ডাবল ফুচকার ট্রিট দিমু তুই যা জানু। আমার কোনো শখ নাই স্বহস্তে বাঁশ খাওয়ার৷ তুই যা ।
তারাঃপ্রিয়া এই দিন,দিন নয় আরো দিন আছে। তোমারও দিন আইবো আমিও্ তখন তোমার ঠ্যাংগা দিমু। 😡😡
প্রিয়াঃতা দেখা যাইবো তুই এখন যা।
তারা ঢোক গিলে ফাইল নিয়ে কেবিনের সামনে এলো।
তারাঃআল্লাহ আজকের মতো বাঁচায় দাও,কি হবে কি জানি?আচ্ছা স্যার এর মুড খারাপ কেনো?কি এমন হয়েছে?
তারা ঢুকতে যাবে এমন সময় চিল্লানির আওয়াজ শুনলো।
ধ্রুব কাউকে চিল্লাচ্ছে।
কিছুক্ষন পর ম্যানেজার স্যার বের হলো রুম থেকে। ওনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে এইমাত্র চরম অপমান হয়েছেন। বৃদ্ধ মানুষ ম্যানেজার স্যার। বয়সের ভারে ক্লান্ত। ছেলেমেয়েরা খরচ দেই না তাই এখানে চাকরি করেন। আর এক মাস পরই রিটায়ার হবেন।সবাই ওনাকে অনেক সম্মান করেন।এমন কি স্যারও তাহলে আজ কি এমন হলো স্যার ওনাকে এতো বকা দিলো। ওনাকে দেখতে কেমন যেনো অসহায় লাগছে।স্যার এটা কি করে করতে পারলো। না স্যার এটা একদম ঠিক করেননি। আমি স্যার এর সাথে কথা বলবো। এটা উচিত নয়।
ম্যানেজার বের হতেই তারা পারমিশন নিয়ে,কেবিনে ঢুকলো।
ধ্রুবঃএসেছো??
তারাঃজ্বি স্যার
আজ স্যার এর গলা এমন কেনো লাগছে?
ধ্রুবঃবসো।
তারাঃনা স্যার লাগবে না।
ধ্রুবঃআমি তোমাকে বসতে বলেছি!!!!!শুনতে পাও না?(চিৎকার দিয়ে)
তারা ধ্রুবর চিৎকারে বসে পড়লো।তারার ভয় করছে। বুকে ধুকধুক করছে।
ধ্রুবঃতো কেমন আছো?
তারাঃজ্বি ভালো।(ভয়ে ভয়ে)
ধ্রুবঃতোমার লাইফ কেমন চলছে?
তারাঃজ্বি স্যার ভালোই।
ধ্রুবঃভালো তো হবেই তোমার লাইফে তো সবকিছুই এখন ফূর্তিময় চলছে।(ব্যঙ্গ করে)
তারা ভ্রু কুচকালো।
তারাঃমানে?(জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)
ধ্রুব ব্যঙ্গময় হাসি দিয়ে বললো কিছু বুঝতে পারছোনা তাই,না??
ওয়েট।
এই বলে ধ্রুব ড্রয়ার খুলে কিছু ছবি বের করলো।
আর তারার মুখে ছুড়ে মারলো।

তারা উঠে দাড়ালো।
তারাঃএর মানে কি এভাবে ছবি ছুড়ে মারার?😡😡
ধ্রুবঃএতো কিছু না বলে ছবিগুলো দেখো।

তারা টেবিলে রাখা একটা ছবি উঠালো।
আর ছবি দেখেই তারার চোখ বের হওয়ার উপক্রম।
ধ্রুবঃকি হলো?
দেখো দেখো আরো আছে। এই নাও।বলে ধ্রুব আরো কিছু ছবি তারার মুখে ছুড়ে মারলো।
তারা তাড়াতাড়ি ছবিগুলো নিয়ে দেখতে শুরু করলো।
ছবিগুলো তারার। এসব ছবিতে তারা একটা ছেলের সাথে কিছু বাজে ভঙিতে ছবি তুলেছে।যে কেউ দেখলেই বলবে ওরা গফবফ।
তারার বিশ্বাস হচ্ছে না কে এমন ছবি তুলতে পারে। কারণ ছবির ছেলেটিকে তারা কখনোও দেখেনি। তাহলে??
ধ্রুবঃকি হলো তারা অনেক সুন্দর না ছবিটা?
তারাঃস্যার??এগুলো….
ধ্রুবঃকি হয়েছে এমন ভাব দেখাচ্ছো যেনো তুমি কিছুই জানো না।
তারাঃস্যার সত্যি বলছি আমি কিছুই জানি না। এসব ছবি আমার না স্যার কেউ হয়তো……
ধ্রুবঃজাস্ট সাট আপ তারা!!!! (চিল্লিয়ে).
তারাঃকিন্তু স্যার…
ধ্রুব দাড়িয়ে বললো-চুপ করো তারা। আর কত মিথ্যা বলবে? আমি সব নিজ চোখে দেখেছি। এসব ছবি দেখে আমারও মনে হয়েছিলো এসব মিথ্যা কিন্তু আজ আমি নিজের চোখে তোমাকে অন্য আরেকটা ছেলের সাথে দেখেছি।নিজের চোখকে কি করে অবিশ্বাস করি?

তারাঃকি বলছেন স্যার??
ধ্রুবঃবিশ্বাস হচ্ছে না তো?
ওয়েট। ধ্রুব নিজের মোবাইল বের করে তারাকে একটা ছবি দেখালো। এই ছবিতে তারা অন্য একটা ছেলের সাথে কথা বলছে। আরেকটাতে তারা ঐ ছেলের বাহুতে আবদ্ধ। আর এই ছবিটা আজকেরই তোলা এবং অফিসে আসার সময় তোলা এটা বুঝতে তারার বেশি সময় লাগেনি।
ধ্রুবঃকি হলো কিছু বলছো না কেনো?
তারাঃস্যার এটা মিথ্যা । এই ছেলেটা……(তারার চোখে পানি টলমল করছে)
তারাঃআমি জানি তারা এই ছেলেটা কে তোমার লাভার তাই,না?
তারাঃ😢😢
ধ্রুবঃআচ্ছা তারা আমাকে এটা বলো তোমার লাভার কয়টা?এই পিক এ একজন আজকের ছবিতে একজন৷ এতোজন সামলাও কি করে?তোমার ট্যালেন্ট আছে বলতে হবে৷
তারা ঃস্যার এটা…
ধ্রুবঃতুমি আর কি বলবে তারা আজ আমি সব দেখেছি। তোমাকে ভালো মনে করেছিলাম। তোমার গুণ দেখে মনে হয়েছিলো তুমি অন্য মেয়েদের থেকে আলাদা কিন্তু তুমি……(ব্যঙ্গভাবে হেসে)
কিন্তু তুমি আসলেই আলাদা। তোমার মধ্যে তো অনেক বড় গুণ আছে। ছেলেদের ফাঁসানো। আচ্ছা তারা,কতবছর ধরে করছো এসব?? আচ্ছা যাদের সাথে রিলেশন করো তাদের থেকে টাকা,গিফ্ট তো নাও তাই না আচ্ছা বিনিময়ে ওদের কিছু দিতে হয়?
তারাঃস্যার!!!!!!!!(চিৎকার করে)😢😢😢
ধ্রুবঃচিৎকার করো না তারা।আজ তোমার সব ভালোমানুষি মুখোশ খুলে গেছে।
এতোদিন তোমার মুখে যে এই মুখোশ ছিলো সহজ,সরল মেয়ের তা আজ খুলে গেছে।
আচ্ছা তারা আমাকে নিয়েও কি এই ভাবনায় ছিলো?
তারা অবাক হয়ে ধ্রুবর দিকে তাকালো।।
ধ্রুবঃকি হলো এমন অবাক হচ্ছো কেনো?
তোমার চুরি ধরে ফেলেছি বলে তাই?
তোমার মতো মেয়েকে কিভাবে যে বাবা চাকরিতে রাখলো।
আমি জানি তুৃমি বাবাকে ইমোশোনাল ব্লাকমেইল করেছো তাই না?নিজেকে অসহায় প্রমান করেছো তাই না?
তোমার মতো ক্যারেক্টালেস মেয়ে থেকে কি আশা করা যায়।

তারা আর শুনতে পারলোনা।
তারাঃব্যস!!!!!!
অনেক বলেছেন মি.ধ্রুব। অনেক!!!এবার চুপ করুন।
ধ্রুব তারাকে দেওয়ালের সাথে খুব জোরে ধাক্কা দিয়ে আটকে নিলো। তারা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
ধ্রুব আর তারা কাছাকাছি। ধ্রুবর নিঃশ্বাস তারার কপালে স্পর্শ করছে।
তারা ধীরে ধীরে চোখ খুললো।
ধ্রুবর চোখ লাল হয়ে আছে। তারার ভয় করছে।ধ্রুবকে অন্য রকম লাগছে। এই ধ্রুব সেই ধ্রুব নয় যাকে তারা কাল দেখেছিলো। যাকে তারা ভালেবাসতে চেয়েছিলো।হ্যা তারাও ধ্রুবকে ভালোবাসতে চেয়েছিলো। কিন্তু আজ???এই ধ্রুব কোন ধ্রুব??অন্য কোনো ধ্রুব???
ধ্রুব দেওয়ালে খুব জোরে আঘাত করলো৷ তারার ধ্যান ভাঙলো।
ধ্রুবঃকি হলো কি ভাবছো,আমি কি করে জানলাম?তোমার এসব কুকীর্তি আমি আজকেই দেখেছি।কিভাবে ঐ ছেলের সাথে….
ছিহ!!তোমার মতো একজন মেয়ে তো……
তারা ধ্রুবকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরালো।
ধ্রুব দূরে সরে গেলো।
তারাঃএনাফ ইজ এনাফ। অনেক হয়েছে। অনেক বলেছেন আপনি আর অনেক শুনেছি আমি।। কি বলছিলেন আপনি আজ সকালে আপনি ওকে দেখেছেন আমার সাথে তাই না??
এই ছেলে আমার ফ্রেন্ড,নিলয়। নিলয় রহমান। আমি এই কোম্পানিতে জয়েন করার পর আমাদের কোম্পানির সাথে ওর কোম্পানির ডিল হয়।তখন ওর সাথে আমার পরিচয়। ও আমার খুব ভালো বন্ধু।ওকে আংকেলও চিনেন। আজ সকালে অফিসে আসার সময় ওর সাথে আমার দেখা হয়। আমি গাড়ি না পাওয়ায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তখন ওকে দেখি। ওর সাথে কথা বলতে বলতে আমি পাথরের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে লাগলে ও আমাকে ধরে। আর এটা ঐ ছবিই। আর অন্য ছবিগুলো কিভাবে কার কখন আমি কিছুই জানি না। জানি না,কিচ্ছুই জানি না বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়লো তারা। কান্না করার এক পর্যায়ে তারা মেঝেতে বসে পড়লো।
ধ্রুব কিছু বুঝতে পারছেনা কি বলবে?তারা কি সত্যি বলছে?তাহলে এসব কি?
আর কে ছিলো?ধ্রুবর মন কেনো যেনো বলছে তারা সত্যি বলছে।ওর চোখের পানি মিথ্যা লাগছে না। তাহলে…..
ধ্রুব তারার কাছে গিয়ে,কিছু বলতে যাবে তার আগে তারা চোখের জল মুছে দাড়িয়ে পড়লো।
তারাঃআপনি ঠিক বলেছিলেন স্যার আমি আংকেল থেকে চাকরি নিয়েছি,কিন্তু অসহায়ত্বের অযুহাত নিয়ে নয় বরং নিজের কোয়ালিফিকেশন এর উপর পেয়েছি।আমি ক্যারেকটারলেস মেয়ে নই। নই আমি চরিত্রহীনা৷ আমি জানি আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই কিন্তু আমি তো জানি আমি নির্দোষ৷ আমার আল্লাহ জানে আমি নির্দোষ আর আমার ফ্যামিলি জানে আমি নির্দোষ। আর কারোর দরকার নেই আমার। আপনি বলেছিলেন আমি ক্যারেকটারলেস। ঠিক বলেছেন আমি ক্যারেকটারলেস কারন আমি আপনাকে বিশ্বাস করেছি, আপনাকে ভা……..

ধ্রুব জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো তারার দিকে……
তারা চোখের কান্না মুছে বললো – ধন্যবাদ স্যার অনেক ভালো পুরুষ্কার দিয়েছেন। 😢😢😢😢😢

বলে তারা চলে গেলো।
ধ্রুব নিশ্চুপ হয়ে আছে।ওর মাথা কাজ করছে না। তারাকে নির্দোষ লাগছে। আমি কি সঠিক প্রমান ছাড়া ওকে অপমান করে ভুল করলাম? ওর চোখের জল কেনো আমার মনকে আঘাত করছিলো। তাহলে আমার কাছে যে প্রমান আছে ঔসব কি ভুল?

তারা কান্না করতে করতে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়লো।আজ চোখের জল বাধ মানছেনা। থামার কোনো নাম নেই। এতো কষ্ট কেনো হচ্ছে?
বুকে খুব ব্যাথা হচ্ছে।কেনো হচ্ছে উনি অপমান করেছে বলে তাই???
কেনো খারাপ লাগছে তারা? কেনো??
চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছা হচ্ছে। আমি পারছিনা সহ্য করতে না না না।
তারা রাস্তার মাঝ দিয়ে হাটছে । আশেপাশে গাড়ি যাচ্ছে কিন্তু তারার সেদিকে খেয়াল নেই। তারা আপন মনে হাটছে।
হটাৎ কোথা থেকে একটা গাড়ি আসলো। গাড়ির হর্নে তারার ধ্যা ভাঙলে তারা সামনে তাকায় কিন্তু পিছে সরার আগেই…………….
তারা রাস্তাতে পড়ে গেলো মুখ থুবরে। মাথা দিয়ে,রক্ত পড়ছে। তারার মাাথা থেকে রক্ত পড়ছে। তারা দেখতে পারছে তাকে কয়জন পুরুষ মহিলা ঘিরে রেখেছে। ঝাপসা ঝাপসা দেখছে তারা। তারা আর পারলোনা। মাথা ভারি হয়ে আসছে। চোখ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কানে শব্দ আসা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তারার কাছে ধীরে ধীরে সব অন্ধকার হয়ে পড়লো।

.

।চলবে………

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *