Childhood marriage

Childhood marriage 3 !! Part- 08

“ডিয়ার মি. …..
নামের জায়গাটা ফাঁকা রাখলাম কারণ আপনার নামটা আমার এখনও অজানা,চাইলেই জানতে পারতাম কিন্তু তার কোন প্র‍য়োজন বোধ করিনি,হয়তো কখনও করবও না।আপনার সাথে আমার দেখা হওয়াটাকে কাকতালীয় বললেও হয়তো কম হয়ে যাবে।নিতান্তই অনাকাঙ্খিত এই সাক্ষাৎটা যে এতোটা মিনিংফুল হবে কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি।
আমার জীবনটা কেটেছে চার দেয়ালের মাঝে,প্রচণ্ড রেস্ট্রিকশনের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি আমি যেখানে বাড়ির বাইরে এক পা ফেলতে চাইলেও বাবা-মায়ের পারমিশন নিয়ে পা বাড়াতে হয়,মাঝে মাঝেই দু চারজন বডিগার্ড সাথে নিয়ে ঘুরতে হয়।এসবই হয়েছে এক সেলফিশ,কাওয়ার্ড,অকৃতজ্ঞ ইডিয়টের জন্য যে নিজে পালিয়ে গিয়ে আমাকে পরাধীনতার শিকলে বন্দী করে গেছে,আমার জীবনটাকে হেল বানিয়ে দিয়েছে।এই চার দেয়ালের বাইরের পৃথিবীটা আমার কাছে প্রচণ্ড রকমের অচেনা তাইতো কদিন এই অজানা অচেনা পৃথিবীটাকে স্বাধীনভাবে উপভোগ করতে চেয়েছিলাম,মুক্ত আকাশে পাখির মতো ডানা মেলে উড়তে চেয়েছিলাম।
আপনার সাথে কাটানো এই তিনটা দিন আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের,যেন ভয়ঙ্কর সুন্দর কোন স্বপ্নের ঘোরে ছিলাম এ কদিন।
শুনেছিলাম বিপদে পড়লে মানুষ নাকি আপনা আপনিই কিছুটা বদলে যায়,বলতে পারেন এটা তার একটা ডিফেনসিভ মেকানিজম।আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি,আপনার সামনে আমি যেন অন্য এক আমি হয়ে উঠেছিলাম।সারাক্ষণ চুপচাপ শান্তশিষ্ট থাকা মেয়েটা হঠাৎ করেই কেমন উচ্ছল,চঞ্চল হয়ে উঠলাম!হতে পারে এটাই আমার ওই মুহূর্তের ডিফেনসিভ মেকানিজম,আবার এমনও হতে পারে এটাই আমার প্রকৃত সত্তা,এতদিন খাঁচায় বন্দী ছিল এখন সুযোগ পেয়ে আকাশে ডানা মেলে দিয়েছে।
তবে একটা ব্যাপার কি জানেনতো,অচেনা অজানা কারো সামনে নিজেকে মেলে ধরা যতটা সহজ পরবর্তীতে তাকে ফেস করাটা ঠিক ততটাই কঠিন।আর তার জন্যই আপনার সাথে দ্বিতীয়বার দেখা হোক সেটা আমি চাই না।এই কটা দিনে ঘটে যাওয়া সবকিছু আমি সুন্দর কোন স্বপ্ন ভেবে ভুলে যাবো,ফিরে যাবো আমার পুরনো জগতে।জানি আপনিও আমার মতোই দুদিন পরেই সবকিছু ভুলে যাবেন,শুধু শুধু এই ট্রাবলমেকারকে মনে রেখে কি লাভ?
আশা করি আমাদের আর কখনোই দেখা হবে না তবে যদি আবার কখনও দেখা হয়েই যায় তাহলে প্লিজ প্রিটেণ্ড করবেন সেটাই আমাদের প্রথম দেখা,এর আগে আমরা কেউ কাউকে কক্ষনও দেখিনি।
আর হ্যাঁ আপনার পাওনাটা তোলা রইলো,যদি আবার কখনও দেখা হয় সুদে আসলে মিটিয়ে দিব…
ইতি,
মিস ড্রামা কুইন”

মোটামুটি মাস ছয়েক আগের একটা চিঠি,গত ছ’মাসে এমন কোন দিন যায়নি যেদিন সায়ন এই চিঠিটা অন্তত একবার হলেও পড়েনি।কি অবাক হচ্ছেন তাইতো?ভাবছেন একটা চিঠি এতোবার কোন পাগলে পড়ে!
হ্যাঁ পাগল,সায়ন আসলেই পাগল হয়ে গেছে।সেদিনের পর থেকে একটাবারের জন্যও মেয়েটাকে ভুলতে পারেনি ও,সয়নে-জাগরণে সারাক্ষণ শুধু ওর সাথে কাটানো সেই তিনটা দিনের কথাই ভেবে চলেছে।চিঠিটা যতই পড়ে মন ভরে না,ওর সাথে কনট্যাক্ট করার নানান রকম ফন্দি আঁটতে থাকে কিন্তু কিছুতেই কোন লাভ হয় না।হবে কি করে?দ্বিতীয় পক্ষ যদি স্বেচ্ছায় নিজেকে আড়াল করে রাখে তাহলে তাকে খুঁজে পাওয়া কার সাধ্য?
আজ ছুটির দিন,সায়নে বন্ধুরা তাই শপিংয়ে এসেছে,সায়ন আসতে চায়নি কিন্তু বন্ধুদের জোরাজোরিতে একরকম বাধ্য হয়েই আসতে রাজি হয়েছে।
মারুফঃ কি রে একা একা এখানে কি করছিস?
দীপুঃ কি আবার করবে,দেখ আবার সেই মিস্টিরিয়াস মেয়েটাতে ডুবে আছে
মারুফঃ কোথায় ক্যাম্পাসে জুনিয়র পোলাপান আসছে,কোন সুন্দরীকে পটানোর প্ল্যান করবি তা না,কোথাকার কোন ছাতার মেয়ের পিছনে পড়ে আছিস!
সায়নঃ দেখ যেটা বুঝিস না সেটা নিয়ে কথা বলতে আসবি না
তানিঃ তা বুঝব কেন?আমরাতো সব গাধা,যত বুদ্ধি সবতো তোর মাথায় গিজগিজ করছে
সায়নঃ তানি…
রাকিবঃ শুধু শুধু ওকে ধমকাচ্ছিস কেন?ওতো ঠিকই বলেছে,চেনা নেই জানা নেই মাত্র দুদিনের পরিচয় মেয়েটার সাথে আর তাতেই…
সায়নঃ দুদিন না তিনদিন
মারুফঃ ওই হলো,আচ্ছা সায়ন তুই কি পাগল?
সায়নঃ কেন এতে পাগল হওয়ার কি দেখলি?
মারুফঃ তা নয়তো কি,ওই তুই মেয়েটার না নাম জানিস,না কোন ঠিকানা।দ্বিতীয়বার ওর সাথে দেখা হওয়ার কোন সম্ভাবনা আমিতো দেখতে পাচ্ছি না
সায়নঃ তুই দেখতে না পেলে কি হবে,একদিন দেখিস আমি ঠিক ওকে খুঁজে বের করব
দীপুঃ হ্যাঁ তুই সেই আশাতেই থাক,যত্তসব…
সায়নঃ উফ অসহ্য,এরা বন্ধু নাকি শত্রু?কোথায় একটু আমাকে সাহস দেবে,মেয়েটাকে খুঁজে বের করার নতুন নতুন বুদ্ধি দেবে তা না…হঠাৎ সামনের তিনতলার শোরুমটার দিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠলাম,কোন কিছু না ভেবে সোজা সিঁড়ির দিকে ছুটলাম
(দুদিন পর)

সায়নঃ কি রে কিছু বলবি?
মারুফঃ ছোট খালা ফোন দিয়েছিল,তুই নাকি ফোন ধরছিস না?
সায়নঃ তো আর কি করব?ফোন ধরলেইতো খালি বাড়ি যেতে বলছে তাই…
মারুফঃ তা একবারতো ঘুরে আসলেই পারিস,সাত সাতটা বছর পেরিয়ে গেল তবুও তোর রাগ কমলো না!
সায়নঃ কি করে কমবে বলতো,যত যাই হোক আমিতো ওদের একমাত্র সন্তান।তাহলে আমার কথা বিশ্বাস না করে ওরা…
মারুফঃ অনেকতো হলো এবার অন্তত সবকিছু ভুলে…
সায়নঃ কক্ষণো না,আমি বেঁচে থাকতে আর ওই দিনটার কথা কিছুতেই ভুলতে পারব না…
মারুফঃ বেশ ভুলিস না তবে এখন ঝটপট রেডি হয়ে নে,আজকে আবার ফার্স্ট ইয়ারের অরিয়েন্টেশন।বলাতো যায় না কোন সুন্দরীর দেখা পেলেও পেতে পারি
সায়নঃ তুই যা আমার একটা কাজ আছে…
মারুফঃ ঠিক আছে আমি যাচ্ছি,তুই কিন্তু সময়মতো চলে আসিস কেমন?
সায়নঃ ঠিক আছে ঠিক আছে এখন যাতো…
মারুফ চলে গেল,হাতের চিঠিটা ভাঁজ করে সযত্নে খামের ভেতরে রেখে দিল সায়ন আর ভেতর থেকে বের করে আনলো আরও ছোট একটা কাগজ।এটা একটা ব্ল্যাঙ্কচেক,এমাউন্টের জায়গাটা ফাঁকা।সেদিন সায়নের বারণ স্বত্তেও মেয়েটা ঠিকই চেকটা রেখে গেছে,ইঙ্গিতটা স্পষ্ট এই তিনদিনে যা খরচ হয়েছে এমাউন্টের জায়গায় বসিয়ে নেবেন।সিগনেচারের জায়গাটায় চোখ বোলালো সায়ন,হিজিবিজি একটা সাইন যার শুধু একটা অক্ষরই বোঝা যাচ্ছে “T”
মুচকি হেসে সবকিছু আবার খামে ঢুকিয়ে রাখলো সায়ন,মনে মনে বললো,”এ্যাটলিস্ট এটাতো জানি তোমার নামের শুরুটা T দিয়ে,আপাততঃ ওতেই হবে,বাঁকিটাও ঠিকই খুঁজে বের করব আজ নাহয় কাল… ”
গত ছয় মাসে অন্তত শখানেক বার চেকটা এপিঠ ওপিঠ করে দেখেছে সায়ন।একটু চেষ্টা করলেই হয়তো একাউন্ট নাম্বার ধরে মেয়েটার ঠিকানা খুঁজে বের করতে পারতো কিন্তু অজানা এক ভয়ে বরাবরই পিছিয়ে এসেছে।ভয় একটাই যদি চেকটা জাল হয়,তাহলে যেটুকু আশা আছে সেটুকুও যে ধুলায় মিশে যাবে…

বৃষ্টিঃ কি রে,তুই চলে আসলি তাহলে তাসু কই?
লোপাঃ কোথায় আবার,ম্যাডাম রেডি হচ্ছে
বৃষ্টিঃ রেডি হচ্ছে মানে!ওতো সাজগোজের স ও বোঝে না,ও আবার কি রেডি হবে?
লোপাঃ সেটা আমি কি করে বলব,ওতো সেই কখন থেকে ওয়াশরুমে ঢুকে বসে আছে।কি করছে না করছে কিছুইতো বুঝলাম না…
বৃষ্টিঃ তুই জানতে চাসনি?
লোপাঃ চেয়েছিতো কিন্তু ম্যাডাম বললেতো…শুধু বললো তোরা যা,আমি সময়মতো পৌঁছে যাবো
বৃষ্টিঃ উফ অসহ্য,এই মেয়েটা না…আজকে আমাদের ফার্স্ট ডে,শুনেছি এই ভার্সিটিতে নাকি র‍্যাগিং ট্যাগিংয়ের বেশ ঝামেলা আছে
তাসনিয়াঃ র‍্যাগিং!আচ্ছা ওরা যদি সত্যি সত্যিই আমাকে র‍্যাগ দেয় আর সেটা যদি খুব বাজে কোন কাজ হয় তাহলে?
(হঠাৎ তাসনিয়ার কণ্ঠ শুনে লোপা আর বৃষ্টি দুজনেই ঘুরে তাকালো,প্রায় সাথে সাথেই দুজনে একসাথে চেঁচিয়ে উঠলো)
লোপা+বৃষ্টিঃ একি!তুই কি এই গেটাপে যাবি নাকি?
তাসনিয়াঃ কেন এটাতে কি সমস্যা?আমিতো বরাবরই এভাবেই…
লোপাঃ সেতো বুঝলাম কিন্তু এখনতো তুই আর ছোট্টটি নেই,ভার্সিটিতে পড়িস তাই বলছি স্টাইলটা এবার অন্তত চেঞ্জ কর
তাসনিয়াঃ ভার্সিটিতে পড়ি তো কি হয়েছে?আমি যেমন ছিলাম তেমনই থাকব বুঝেছিস
বৃষ্টিঃ কিন্তু…
লোপাঃ ছাড়তো ওর যা ইচ্ছে হয় করতে দে,দুদিন পরে দেখবি আপনা আপনিই সব চেঞ্জ হয়ে গেছে
তাসনিয়াঃ আচ্ছা শোন না,সত্যি সত্যিই কি সিনিয়ররা আমাদের র‍্যাগ দেবে?
বৃষ্টিঃ সেতো দিতেই পারে কিন্তু ওসব কোন ব্যাপারই না,সবই জাস্ট ফান।আরে এসব ছোটো খাটো ব্যপারেইতো বণ্ডিংটা স্ট্রং হয়
তাসনিয়াঃ কিন্তু…
লোপাঃ আরে বাবা,আমরাতো আছি…ভয় পাস না কিচ্ছু হবে না
তাসনিয়াঃ বলছিস?
বৃষ্টিঃ হুম বলছি,এখন চলতো।এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে…

শপিং সেন্টারের সাউথ উইংয়ের তৃতীয় তলার কর্ণারের দোকানটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সায়ন।ভেতরে একটু উঁকি ঝুকি দিতেই সেদিনের সেই লোকটাকে দেখতে পেলো,আর দেরি না করে সোজা তার দিকে এগিয়ে গেলো।সায়নকে দেখেই লোকটার ভ্রু কিঞ্চিৎ কুঞ্চিত হলো বলে মনে হলো
দোকানীঃ আপনি আবার এসেছেন!আপনাকে না বললাম আমি আপনাকে কোনভাবে হেল্প করতে পারব না…
সায়নঃ দেখুন জাস্ট একটাবার একটু চেষ্টা করে দেখুন না,আমি কথা দিচ্ছি জীবনে আর কক্ষণো আপনাকে বিরক্ত করব না
দোকানীঃ এতো আচ্ছা ভেজালে পড়া গেল দেখছি,কই দেখি কাকে খুঁজছেন আপনি?কোন ছবি টবিতো নিশ্চয়ই আছে…
সায়নঃ ছ..ছবি!নাতো কোন ছ..বিতো নেই…
দোকানীঃ ওই মিয়া,ছবি নাইতো এইখানে আইছেন কেন?ছবি ছাড়া কেমনে সম্ভব!
সায়নঃ একটু মনে করার চেষ্টা করুন প্লিজ,দুদিন আগে ঠিক এই সময়।লম্বা ছিপছিপে গড়ন,চোখে চশমা আর একটু বেশিই ফর্সা ঠিক বিদেশীদের মতো আর ওরা সম্ভবত তিনজন একসাথে এসেছিলো,তিনজনই মেয়ে…
দোকানীঃ দিনের মধ্যে এই রকম কত কাস্টমারইতো আসে,কাকে রেখে কাকে মনে রাখব বলেনতো…
সায়নঃ আপনার দোকানের সিসিটিভি ফুটেজটা যদি…
দোকানীঃ আপনি কে বলেনতো?কোন স্পাই নাতো?নাকি কোন আন্ডারকাভার অভিসার?দেখুন যদি সার্চ ওয়ারেন্ট না থাকে তাহলে কিন্তু আমি একটা জিনিসেও হাত দিতে দিব না…

সায়নঃ আরে না না আপনি অযথাই ভয় পাচ্ছেন,আমি ওসব কিছুই না
দোকানীঃ ওসব কিছু নাতো?তাহলে আপনি আসতে পারেন,আর হ্যাঁ দ্বিতীয়বার যদি এভাবে বিরক্ত করতে আসেন তাহলে কিন্তু আমি পুলিশে রিপোর্ট করতে বাধ্য হবো…
সায়নঃ দেখুন আপনি…
দোকানীঃ আপনি এক কাজ করেন,কোন একটা ভালো ডাক্তার দেখান কেমন?যত্তসব পাগল ছাগল এসে জুটেছে এখানে…
সায়নঃ কোন লাভ হবে না দেখে বেরিয়ে আসলাম।মিস ড্রামা কুইন,তোমার জন্য আর কত কি যে করতে হবে কে জানে…
চলবে…