Childhood marriage 3 !! Part- 09
চতুর্থ বিজ্ঞান ভবন…
ভার্সিটির বাঁকি তিনটি বিজ্ঞান ভবনের চেয়ে এটার স্ট্রাকচার একেবারেই আলাদা,বলা যায় ক্যাম্পাসের সবচেয়ে আধুনিক বিল্ডিং এটা।সেন্ট্রাল লাইব্ররীর সবচেয়ে কাছাকাছি হওয়ায় এটার দুপাশের দুটো গেটেই প্রায় সব সময়ই ভিড় লেগেই থাকে।আর আজকের ব্যপারটা আরেকটু একসেপশনাল,আফটার অল নিউ কামার্সরা আসছে বলে কথা!তাইতো প্রায় প্রতিটা এন্ট্রি পয়েন্টেই সিনিয়রদের ভিড়
রাকিব,মারুফ,দীপু,আসিফ,তানি ওরাও তাই সকাল সকালই এসে হাজির হয়েছে কিন্তু ওদের গ্যাং লিডার সায়নেরই কোন দেখা নেই!
রাকিবঃ কোথায় গেল বলতো?এতক্ষণেতো চলে আসার কথা
মারুফঃ সেটা আমি কি করে বলব,আমাকেতো এক রকম জোর করেই পাঠিয়ে দিল।বলেছিল কি একটা কাজ আছে,শেষ করেই চলে আসবে
দীপুঃ আজকে আবার কিসের কাজ?এদিকে পোলাপানতো আসতে শুরু করেছে,এখন কি হবে?
রাকিবঃ আরে সায়ন নেই তাতে কি আমিতো আছি আর তোরাতো জানিসই এসব ব্যাপারে সায়নের চেয়ে আমিই বেশি পারফেক্ট,ওতো একটু সফট হার্টেড তাই…
আসিফঃ তাতো জানি কিন্তু ওই গাধাটা গেল কই বলতো…
মারুফঃ সব হয়েছে ওই মেয়েটার জন্য,না জানি কি যাদু করেছে!ওর জন্যইতো আমাদের সায়নটা এভাবে বদলে গেল…
আসিফঃ ওসব ছাড় দোস্ত,আগে ওদিকে দেখ পুরো একটা বার্বি ডল…
দীপুঃ কি যা-তা বলছিস বলতো…
তানিঃ যা-তা না দোস্ত,একবার ওদিকে তাকা তাহলেই বুঝতে পারবি।এটা কিভাবে সম্ভব!এ যে জীবন্ত ম্যানিকুইন!
মারুফঃ তোরা কি বলছিস বলতো?যত্তসব উদ্ভট কথা!কই দেখি..হোয়াট দ্য…
পাতলা ছিপছিপে গড়ন,পরনে বেবি পিঙ্ক কালারের ডিজাইনার টপ,পিওর হোয়াইট লেগিংস,পায়ে সাদা শু,শিফন জর্জেটের ওড়নাটা অনেকটা সারভিকাল ক্যাপের মতো করে গলায় পেঁচানো,মাথাভর্তি কোকড়ানো চুলগুলোকে আড়াল করে রেখেছে গোলাপি আর সাদা স্ট্রাইপের বেরেট হ্যাট।সাদা ধবধবে গায়ের রঙ,লম্বাটে মুখ,টানা টানা চোখ তাতে হালকা গোলাপি ফ্রেমের চশমা,হালকা গোলাপি ঠোঁটে কৃত্রিম রঙের ছোঁয়া দেয়াটা যেন নিতান্তই বিলাসিতা।দেখেই বোঝা যাচ্ছে সাজগোজের ধারে কাছেও নেই মেয়েটা কিন্তু তবুও চোখ ফেরানো দায়,দেখে মনে হচ্ছে যেন সত্যি সত্যিই শপিংমলে সাজিয়ে রাখা সুন্দরী কোন ম্যানিকুইন যেন ধীরে ধীরে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে।
মেয়েটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওরা সবাই,কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারছে না
রাকিবঃ এ..এই তানি,একটা চিমটি কাটতো,আমি কোন স্বপ্ন দেখছি নাতো?
তানিঃ এহ ঢং দেখে আর বাঁচি না,দাঁড়া দেখাচ্ছি তোকে স্বপ্ন
রাকিবঃ আউচ!তানির বাচ্চা,চিমটি কাটতে বলেছি তাই বলে কি এতো জোরে…
তানিঃ বেশ করেছি,দরকার পড়লে আরও করব।সুন্দর বলেই কি মেয়েটার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকবি!যত্তসব লুজ ক্যারেক্টার পাবলিক…
রাকিবঃ কিহ আমার ক্যারেক্টার লুজ!তবে রে…
মারুফঃ এই তোরা থামবি,জুনিয়রদের সামনে কি নাক মুখ কাটাবি নাকি?বলি আমরা এখানে কি করতে এসেছি তা কি কারো মনে আছে?
রাকিবঃ আছে রে বাবা আছে,ঠিক আছে এই বেবি ডলের ক্লাসতো আমিই নিব।জাস্ট ওয়েট এণ্ড সি
দীপুঃ তাই বলে এত্ত সুন্দর মেয়েটাকে…
তানিঃ সুন্দরী হয়েছে বলেই কি মাথা কিনে নিয়েছে নাকি?ওকে এমনি এমনি ছেড়ে দিব!
আসিফঃ আরে ছাড়বি কেন আমি জাস্ট বলতে চাইছি একটু সফটলি…
মারুফঃ ঠিক আছে ঠিক আছে ওসব আমি বুঝবো,আগে আসতেতো দে…
তাসনিয়াঃ এ..এই দেখ না ওরা বোধহয় আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে
লোপাঃ তাকাবে না কেন?সঙ্গে যদি এমন একটা হিরোইন মার্কা মেয়েকে নিয়ে ঘুরি..তার উপর ম্যাডাম যেই গেটাপে এসেছে না তাকিয়ে উপায় আছে?(বিড়বিড় করে)
তাসনিয়াঃ কি রে কি বিড়বিড় করছিস?কিছু একটা কর না…
লোপাঃ কি আর করার আছে,চুপচাপ হাঁটতে থাক।কিছু বললে পরে দেখা যাবে
বৃষ্টিঃ আর শোন,কেউ কোন রকম ব্যাক এ্যানসার করবি না।যা করতে বলবে চুপচাপ করে ফেলবি,মাত্রতো কয়েক মিনিটের ব্যাপার তারপরই সব ঠিক হয়ে যাবে
দীপুঃ হ্যাল্লো ফ্রেশার্স…এদিকে এদিকে…
তাসনিয়াঃ এই রে সত্যি সত্যিই ডাকছে যে…এখন কি করবি?
লোপাঃ কি আর করব,চল দেখি কি বলে
রাকিবঃ আয়িয়ে আযায়িয়ে আহি যায়িয়ে ইউ না রেহে রেহে কার হামে তারছায়িয়ে…
মারুফঃ ওই তুই থামবি…এই যে মিস গোলাপি…
লোপাঃ আ..আমাকে বলছেন?
মারুফঃ তোমার নাম কি মিস গোলাপি?
লোপাঃ জ্বি…না…
মারুফঃ তাহলে আগ বাড়িয়ে কথা বলছো কেন?
লোপাঃ না মানে আমি…
মারুফঃ ঠিক আছে ঠিক আছে,এই যে তুমি…না মানে মাঝের জন
তাসনিয়াঃ জ্বি..ভাইয়া…
মারুফঃ কি নাম?
তাসনিয়াঃ তা..তাস..নিয়া..
মারুফঃ তা মিস তাসনিয়া,তোমাকে যদি একটা কাজ করতে বলি করবে?
তাসনিয়াঃ আ..আমি!বৃষ্টি আর লোপার দিকে অসহায়ভাবে তাকালাম
লোপাঃ ইয়ে মানে ভাইয়া,বলিছিলাম কি ওর বদলে যদি আমরা কেউ…
মারুফঃ তোমাকে কি কিছু বলতে বলেছি?তুমি কি ওর উকিল যে শুধু শুধু ওর ব্যপারে নাক গলাচ্ছো?
লোপাঃ জ্বি না…(মাথা নিচু করে)
মারুফঃ তোমরা দুজন আসতে পারো,তোমাদের সাথে পরে কথা হবে
লোপাঃ কিন্তু…
মারুফঃ আহ আর কোন কথা না,এক থেকে তিন পর্যন্ত গুনবো।যদি না যাও তাহলে কিন্তু…এক…দুই…
বৃষ্টিঃ এ..এই লোপা,বলছিলাম কি আমরা বরং যাই,এখানে থাকলে শুধু শুধু কমপ্লিকেশন বাড়বে।তাসু…অল দ্য বেস্ট ইয়ার…
(লোপা আর বৃষ্টি একটু আড়ালে গিয়ে দাঁড়ালো)
লোপাঃ আমার না ভয় হচ্ছে তাসু যদি উল্টো পাল্টা কিছু…
বৃষ্টিঃ আরে কিচ্ছু হবে না,এটাতো জাস্ট ফান।সিনিয়ররাতো শুধু একটু মজা করার জন্য…
লোপাঃ জানিতো,তুই বা আমি হলে টেনশন হতো না কিন্তু তুইতো জানিস তাসুতো কখনোই কারো সাথে মেশেনি,তাই কাকে কিভাবে হ্যাণ্ডেল করতে হবে কিছুই জানেনা…
বৃষ্টিঃ টেনশন নিস না,আমরাতো আছিই।যদি সেই রকম কিছু দেখি তাহলে ওকে হেল্প করতে বিনা দ্বিধায় এগিয়ে যাবো কেমন?
লোপাঃ বলছিস?
বৃষ্টিঃ হুম বলছি
মারুফঃ তা মিস তাসনিয়া,তোমাকে কি করানো যায় বলোতো।তোরা চুপ করে আছিস কেন,একটু সাজেশন দে না
রাকিবঃ শোন না দোস্ত,বলছিলাম কি ওকে ছেড়ে দে..নামে মানে এই লেভেলের সুন্দরীকে শুধু শুধু কষ্ট দিয়ে কি লাভ?
মারুফঃ কিছু না বলেই এমনি এমনিই ছেড়ে দিব!ইম্পসিবল…
রাকিবঃ তাহলে বরং হালকা পাতলা কিছু করিয়েই ছেড়ে দে
মারুফঃ হালকা পাতলা তাই না?এ্যাসাইওনমেন্ট কপি করানো,হোমওয়ার্ক,প্র্যাক্টিকাল এ্যাসেসমেন্ট এসবতো ভারি কাজ।নাচ,গান,র্যাম্পওয়াক ওসবতো কালচারাল ফেস্টের সময় চাইলেই দেখতে পারবো।তাহলে…
দীপুঃ লাভলেটার আইমিন তোর যে একটা ক্রাশ আছে না ওকে পটানোর দ্বায়িত্বটা দিলে কেমন হয়?
মারুফঃ উহু ওসব না,অন্যকিছু ভাবতে হবে
তাসনিয়াঃ হায় হায় এরাতো দেখি…হে আল্লাহ রক্ষা করো,এমন কিছু যেন না করতে বলে যাতে আমি…(মনে মনে)
আসিফঃ ওই দেখ আইসিটির ওই হাঁদারামটা,এদিকেই আসছে
মারুফঃ সেদিন রাতে ওদের কোয়ার্টারের সামনে আড্ডা দিচ্ছিলাম বলে যা নয় তাই নলে অপমান করল!ঠিক আছে আজকে দেখাচ্ছি মজা…
রাকিবঃ কি করবি ভাবছিস?
মারুফঃ এই যে মিস ফ্রেশার,খুব সিম্পল একটা টাস্ক দিচ্ছি।ওই যে নীল টি-শার্ট পরা ছেলেটাকে দেখতে পাচ্ছো?
তাসনিয়াঃ একবার চোখ পড়তেই দেখলাম মোটাতাজা গোলগাল চেহারার একজন এদিকেই এগিয়ে আসছে।জ্বি ভাইয়া,আমাকে কি..কর..তে হবে?
মারুফঃ এই নাও ধরো,এটা নিয়ে সোজা ওর সামনে চলে যাবে।গিয়ে বলবে “I love you” বাঁকিটা আমরা বুঝে নিব
রাকিবঃ কিন্তু..এই মারুফ তুই কি বুঝে শুনে ডিসিশনটা নিচ্ছিস?
মারুফঃ শসসস…বিলিভ মি কিচ্ছু হবে না…
তাসনিয়াঃ কিন্তু ভাইয়া..এ..এটা..আমি পারব না
মারুফঃ কেন কি প্রবলেম?
তাসনিয়াঃ না মানে…
মারুফঃ যা বলছি চুপচাপ করে ফেলো নাহলে কিন্তু আরো কঠিন কিছু করতে হবে
(অবস্থা বেগতিক দেখে লোপা আর বৃষ্টি ছুটে আসছিলো,ওদেরকেও আটকে দিল)
মারুফঃ এই যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছো?কাম অন…
তাসনিয়াঃ লোপা আর বৃষ্টির দিকে অসহায়ভাবে তাকালাম,ওরাও ইশারায় যেতে বললো।অগত্যা কি আর করার,সামনের দিকে এগোতে লাগলাম
সায়নঃ সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর সামনে আসতেই একটু দূরে খুব পরিচিত একটা মুখ চোখে পড়লো।সেই মাস ছয়েক আগের মতোই সেম গেটাপে থাকা পুতুলের মতো মেয়েটাকে চিনে নিতে একটুও কষ্ট হলো না।আর কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা ওর দিকে ছুটতে শুরু করলাম
তাসনিয়াঃ আর মাত্র কয়েক ফুট,এখন কি করব?ভয়ে ভয়ে চোখদুটো বন্ধ করে ফেললাম,এখন সবকিছু ঠিকঠাক বলতে পারলেই হলো…
সায়নঃ আর কোনদিকে খেয়াল নেই আমার,সোজা ওর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম কিন্তু একি এই মেয়ে এভাবে চোখ বন্ধ করে আছে কেন?এক্সকিউজ মি…
তাসনিয়াঃ হাতের লাভ শেপের বেলুনটা দুহাত দিয়ে সামনে বাড়িয়ে ধরলাম।I love you…
সায়নঃ হুট করে কথাটা শুনেই থমকে দাঁড়ালাম তারপর একটু সময় নিয়ে বলেই ফেললাম I love you too…
তাসনিয়াঃ এ্যা!আমি কি ঠিক শুনলাম?ঝটপট চোখ খুলে ফেললাম কিন্তু একি,এ আমি কাকে দেখছি!আ..আপনি…
(হঠাৎ কিভাবে যেন তাসনিয়ার হাতের বেলুনটা ফেটে গেলো আর তার ভেতরে রাখা রঙ মেশানো পানির পুরোটায় সায়নের গায়ে)
সায়নঃ হোয়াট দ্য…(রেগেমেগে)
তাসনিয়াঃ দে..দেখুন আ..আমি এসব ইচ্ছে করে করিনি,এসব কিভাবে আমিতো…I am sorry…
সায়নঃ আর সময় নষ্ট না করে ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলাম।
চলবে…