Childhood marriage

Childhood marriage 3 !! Part- 07

সায়নের যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সন্ধ্যা প্রায় নেমেই এসেছে।চোখ মেলেই দেখলো ছোট খাটো মাটির একটা দোচালা ঘরের ভাঙাচোরা একটা চৌকিতে শুয়ে আছে।হঠাৎই পরিচিত একটা কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো
– থ্যাঙ্ক গড আপনার জ্ঞান ফিরেছে,আমি যে কি পরিমাণ টেনশনে ছিলাম আপনি ভাবতেও পারবেন না
– আচ্ছা এটা কোন জায়গা?আর আমরা এখানে কিভাবে…
– ওহ এটা?এটাতো কলিম চাচার বাড়ি,তখনতো কিছু না বলেই আপনি সেন্সলেস হয়ে গেলেন,তখন সবাই মিলে ধরাধরি করে আপনাকে এখানে নিয়ে আসলো।জানেনতো এরা খুব ভালো মানুষ…
– তোমাকে না বলেছি এতো সহজে কাউকে বিশ্বাস করবে না…
– তা না করে আর কি করব?তখন ওখানে ওই পরিস্থিতিতে…
– আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে,এখন চলো তাড়াতাড়ি গেলে হয়তো বাসটা পেলেও পেতে পারি
– মোটেও না,আমরা আজ রাতটা এখানেই থাকবো
– নো ওয়ে,আমরা এক্ষুনি এখান থেকে চলে যাবো
– দেখুন আপনার টেম্পারেচার এখনও অনেক হাই,বেশি প্রেশার নিলে হয়তো আবারও…তাই বলছি আজকের রাতটা রেস্ট নিন,কাল সকালে এরাই আমাদের বাসে তুলে দিয়ে আসবে
– কিন্তু…
(তখনই ঘরে দুজন মহিলা প্রবেশ করলো)
মহিলা-১ঃ ওমা,তোমার সোয়ামির দেহি জ্ঞান ফিরছে!এহন কেমন লাগতাছে বাজান?
সায়নঃ জ্বি ভালো
মহিলা-১ঃ এইডা ধরো,ঘন ঘন বাজানের শরীরডা এই কাপড় আর পানি দিয়া মুইছা দিবা আর জলপট্টিটা ঠিকঠাক দিবা ঠিক আছে?
– এ..এসব আমি!

মহিলা-২ঃ শোন মাইয়া সোয়ামীর সেবাযত্ন পরম ধর্ম বুঝছো?এই কাজডাতো তোমারে করতেই হইবো
– দে…দেখুন উনি আমার…
সায়নঃ ওর হাত চেপে ধরলাম,ইশারায় চুপ থাকতে বলছি
– উনি হঠাৎ এমন করছেন কেন?কিছুইতো বুঝতে পারছি না,তবে যাইহোক আপাতত চুপ থাকি পরে জেনে নেওয়া যাবে
মহিলা-২ঃ তোমরা আইজ রাইতটা এইহানেই থাকো,কাইল সকালেই তোমাগো যাওনের ব্যবস্থা করা হইব
সায়নঃ জ্বি ঠিক আছে
মহিলা-২ঃ আর এই যে তুমি,ঠিকমতো সোয়ামীর যত্ন নাও বুঝছো
– হুম
মহিলা-১ঃ আমরা বাইরেই আছি,কিছু লাগলে ডাইকো…
(মহিলা দুজন ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন)
– আপনি তখন আমাকে চুপ থাকতে বললেন কেন?
– তো আর কি করব?তোমার যে মাথা মোটা কি বলতে কি বলে ফেলবে…
– কি আবার বলব?এই মহিলাগুলো এসে পর্যন্ত সোয়ামী সোয়ামী করে মাথা খারাপ করছে,ওদের ভুলটা ভাঙাতে হবে তো…আরে আপনি কি আমার স্বামী নাকি?
– আপাতত তাই
– মানে?
– মানে এখানে যতক্ষণ আছি ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা স্বামী-স্ত্রী
– কি যা-তা বলছেন!আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?আপনি আমার স্বামী হতে যাবেন কেন?
– সত্যি সত্যি না,জাস্ট অভিনয়
– কিন্তু কেন?

– দেখো এরা হচ্ছে গ্রামের সহজ সরল মানুষজন।তাই জঙ্গলে আমাদের ওভাবে দেখে ধরেই নিয়েছে আমরা স্বামী-স্ত্রী,তাই যতটা সম্ভব আমাদের সাহায্য করছে।যদি জানতে পারে আমাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই তাহলে কিন্তু ব্যপারটা মোটেও ভালো চোখে দেখবে না
– কিন্তু…
– দেখো কাল সকালেতো আমরা চলেই যাবো,তাই শুধু শুধু ওদের মনে কষ্ট দিয়ে কি লাভ?একটু নাহয় অভিনয় করলেই…
– আচ্ছা ঠিক আছে তাই হবে…
(মাঝরাত)
– উফ!কি মশা রে বাবা!মশাতো নয় মনে হচ্ছে যেন একেকটা ইয়া বড় বড় রক্তচোষা…
– আগেই বলেছিলাম মশারীর ভেতরে ঘুমাতে,বাহাদুরি করে বাইরে ঘুমাতে গেলে এখন ঠেলা সামলাও…
– দেখুন ব্যাপারটা কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে
– যাব্বাবা আমি আবার কি করলাম?
– এমনিতেই এই মশার বাচ্চাগুলো আমার জীবনটাকে তেজপাতা বানিয়ে ফেলেছে তার উপর আপনি এভাবে খোটা দিচ্ছেন!
– তাছাড়া কি করব?কেউ যদি নিজের বিপদ নিজেই ডেকে নিয়ে আসে তো আমার আর কিই বা করার থাকে?
– আমি নিজে নিজের বিপদ ডেকে এনেছি?
– তা নয়তো কি?কতবার বললাম বাইরে মশা,মশারীর ভেতরে এসে ঘুমাও কিন্তু তুমিতো…
– কি করে ঘুমাবো,তাহলে যে আপনার সাথে এক বিছানায়…
– এমন ভাব দেখাচ্ছো যেন আমার সাথে এক বিছানায় কখনও ঘুমাওইনি!কাল রাতেইতো…
– ঠিক আছে ঠিক আছে আর বলতে হবে না,একটু সরুন আমি ঘুমাবো
– জো হুকুম মহারাণী…
– আর হ্যাঁ এই ব্যপারে কিন্তু একদম আমাকে খোঁটাবেন না ঠিক আছে?
– ওকে ম্যাডাম তাই হবে
– শাট আপ…
– ওকে…

গ্রাম বাংলার মানুষগুলো যে আসলেই খুব সহজ সরল আর হেল্পফুল হয় সেটা আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল।কথামতো সকাল সকালই ওদেরকে বান্দরবানগামী বাসে উঠিয়ে দিয়ে গেছে।এখন প্রায় বিকেল হয়ে এসেছে,আর কিছুক্ষণ আগেই ওরা বান্দরবান শহরে পৌঁছেছে।
দেশ ট্রাভেলসের বান্দরবান শহর কাউন্টার…
সায়ন একটা লাগেজ আর ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে আসলো
– এই নাও ধরো,কথামতো ওরা তোমার জিনিসপত্র কাউন্টারে পৌঁছে দিয়েছে।সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা একবার চেক করে নাও,অবশ্য না থাকলেও তেমন কিছু করার নেই তবুও…
– ট্রাভেল ব্যাগটা খুলতেই পার্সটা চোখে পড়লো,নাহ সবকিছু ঠিকই আছে আর কিছু দেখার দরকার নেই
– ভালো করে দেখো কোনকিছু মিসিং থাকলে এখনই…
– তার আর দরকার হবে না,যেটা দরকার সেটা যখন ঠিক আছে তখন আর কিছু চেক করার প্রশ্নই আসে না
– তাও ঠিক,তা এখন কি করবে?
– কি আবার করব,যে উদ্দেশ্যে এখানে আসা তাই করব আরকি
– বলছিলাম এতোটা পথ যখন একসাথে পার করেই ফেলেছি তাহলে বাকিটাও নাহয়…
– আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন একটু ক্লিয়ার করে বলবেন প্লিজ…
– না মানে আমি বলতে চাইছি আমরা ফ্রেণ্ডরাতো হাইকিংয়েই যাচ্ছি,you can join us if you want
– থ্যাঙ্কস বাট আসলে কি জানেন,এমনিতেই এই তিনটা দিন আমার পরিকল্পনার বাইরে চলে গেছে,আর একটা দিনও আমি নষ্ট করতে চাই না।যা যেভাবে প্ল্যান করে বাসে উঠেছিলাম ঠিক সেভাবেই কাটাবো বলে ঠিক করেছি
– হুম বুঝলাম…তাহলে চলো ভালো কোন হোটেলে তোমার চেক ইনের ব্যবস্থা করে দেই
– তা আর লাগবে না,ও আমি একাই পারবো।এমনিতেই আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন,আর আপনাকে কষ্ট দিতে চাই না।এনি ওয়ে,আপনার পেমেন্টটা কিভাবে করব বলুনতো ক্যাশ নাকি চেক?
– কিসের পেমেন্ট?
– এই যে এই তিনটা দিন আমার পেছনে যা যা খরচ করলেন,বলেছিলাম না আমি বান্দরবান পৌঁছেই সব শোধ করে দিব।কত হয়েছে বলুন আমি এক্ষুণি…
– ওটা নাহয় তোলায় থাক,আবার যদি কখনও দেখা হয় তাহলে সুদসমেত বুঝে নিব
– কিন্তু…

– আচ্ছা তোমার নামটা কি জানতে পারি?
– কেন বলুনতো?
– না মানে তিনটা দিন একসাথে কাটালাম বাট কেউ কারো নাম জানলাম না এটা শুনতে একটু অড লাগছে না?
– মোটেও না আই থিঙ্ক ইটস কোয়াইট ইন্টারেস্টিং,জার্নির শুরুতেও আমরা স্ট্রেঞ্জার ছিলাম আর এখনও তাই।আর তাছাড়া অ্যাডভেঞ্চার যখন শেষই হয়ে গেছে তখন আর নাম জেনে কি করবেন?
– কিন্তু…
– কিছু জিনিস না জানাই ভালো।এবারের পরিচয়টা নাহয় মিস ড্রামা কুইন আর মি.নোবেল ম্যানেই সীমাবদ্ধ থাক,যদি আবার কখনও দেখা হয় তাহলে নাহয় প্রপারলি ইনট্রোডিউস করব…
– Okay as your wish any way nice meeting you…
– Nice to meet you too…
– এক মিনিট…
– কি?
– এই নাও ধরো
– এটা কি?
– মনে করো এই তিনদিনে যা কিছুই হয়েছে তার একটা মেমেন্টো,সুভিনিয়ারও বলতে পারো।সেদিন হোটেলের গিফট শপ থেকে নিয়েছিলাম বাট তোমাকে দেওয়ার সুযোগ হয়নি
– কিন্তু এটাতো কাপল টিশার্ট,আর আমরাতো…
– পৃথিবীর কোন ডিকশনারীতে লেখা আছে যে কাপল না হলে কাপল টিশার্ট পরা যাবে না?
– না মানে…
– ঠিক আছে তোমার যখন হেজিটেশন হচ্ছে তাহলে দুটোই তুমি রেখে দাও,একটা তোমার আর অন্যটা তোমার বিএফের
– কিন্তু আমারতো…
– আর কোন কিন্তু না,গুড লাক ফর ইউর জার্নি
– থ্যাঙ্কস আর এটা আপনার জন্য
– কি এটা?প্যাকেটটা খুলতে লাগলাম
– প্লিজ ওটা এখন খুলবেন না
– কিন্তু কেন?
– ওখানে একটা চিঠি আছে আর আমি চাই আমি চলে যাবার পর আপনি ওটা পড়বেন
– ওকে তাই হবে আর হ্যাঁ যদি আবার কখনও এমন সিচুয়েশনে পড়ো তাহলে হুট করে কাউকে বিশ্বাস করে বসো না,সবাই আমার মতো লয়্যাল নাও হতে পারে
– হুম
– তাহলে এখন…গুড বাই মিস ড্রামা কুইন…

– গুড বাই মি.নোবেল ম্যান…
ওরা দুজন দুদিকে পা বাড়াতেই সায়নের কানে পরিচিত একটা কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো,ওটা আর কারো না ওর বেস্টফ্রেণ্ড প্লাস কাজিন মারুফের গলা।ওকে দেখেই সায়ন ছুটে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো কিন্তু বিনিময়ে মারুফের এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি হজম করতে হলো।
সায়নঃ আহ মারুফ,লাগছেতো…
মারুফঃ লাগুক লাগার জন্যইতো মারছি।শালা,এই তোর আসার সময় হলো?ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছিস,জানিস এদিকে আমাদের টেনশনে কি অবস্থা?
সায়নঃ বন্ধ করে রাখিনিতো,ফার্স্টে চার্জ শেষ হয়ে গেল আর তারপর বৃষ্টিতে ভিজে…
মারুফঃ তা আপনার আসতে এতো দেরি হওয়ার কারণটা কি বলবেন?
সায়নঃ কি করব গাড়ী নষ্ট হয়েইতো…
মারুফঃ গাড়ী নষ্ট তো কি,দেশে কি আর কোন গাড়ী ছিল না!শালা তিনদিন আগে আসার কথা আর উনি এখন এসে বলছেন গাড়ী নষ্ট হয়ে গিয়েছিল!ইয়ার্কির একটা সীমা পরিসীমা থাকা উচিত
সায়নঃ আই স্যয়ার যা বলছি সব সত্যি
মারুফঃ তা এই কয়দিনে কি রাজকার্য উদ্ধার করছিলেন শুনি,আর তোর সাথের ওই মেয়েটা কে ছিল?
সায়নঃ সে অনেক কথা,পরে একসময় খুলে বলবো এখন চল সবাই ওয়েট করছে
মারুফঃ হ্যাঁ সেই ভালো,এমনিতেও মাইরের ডোজতো এখনও পূরণ হয়নি ওটাওতো পূরণ করতে হবে…
চলবে….