আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 09

অনু কলেজ শেষে বাড়ি যাবার জন্য গেটের বাহিরে এসে অপেক্ষা করছে।
এমন সময় একটা কালো কার গাড়ি এসে সোজা ওর সামনে থামে।
অনু কোনো কিছু বুঝে ওঠার অাগেই গাড়ির দরজা খুলে ভেতর থেকে কেউ একজন অনুর হাত ধরে জোড়ে টান দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে ওর মুখটা চেপে ধরে রাখে।
অনু অনেক সময় ধরে চেষ্টা করে নিজেকে অপরিচিত মানুষের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে কিন্তু অজানা সেই ব্যক্তির শক্তির সামনে সে আর পারে না।
অনেক সময় ধরে ধস্তাধস্তি করে যখন আর পারে না তখন সে চুপচাপ একদম নিস্তেজ হয়ে যায়।
এর পর চোখের জল ছেড়ে দিয়ে ভাবতে থাকে,”প্রতিবাদী হবার জন্য শেষে কি নিজের সম্মান হারাতে হবে আমাকে? আমি কি নিজের সম্মান রক্ষা করতে পারবো না? না অনু কখনো পরাজিত হতে পারে না।অনু তোকে জিততে হবে।”
এরপর গাড়িটা রিদিদের বাড়ির পেছনের রাস্তার দিকে যেতে থাকে।অনু মনে মনে তা দেখে ভাবে,”এদিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?
কেউ বাড়ির এতো কাছে কেনো আনবে আমার ক্ষতি করার জন্য? সবটা আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে জানি না কপালে কি আছে আমার। ”
এরপর গাড়িটা কিছুদূর আসার পর থেমে যায়।

গাড়ি থামার পর থেকে অনুর হার্টবিড বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে।না জানি এখন কি হবে আল্লাহ মালুম।
এরপর গাড়ি থেকে অনুকে নামিয়ে আনে।
ওরা নেমে গেলে গাড়িটা চলে যায়।
অনুকে সামনে খড়ের গাদার উপর এক ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।
অনু খড়ের গাদার ভেতর থেকে বাহির হয়ে এসে দেখে ওর সামনে অারিয়ান দাঁড়িয়ে আছে।
আরিয়ান অনুর সামনে দাঁড়িয়ে সোজা অনুর গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
অনু থাপ্পড় খেয়েও কোনো প্রতিবাদ না করো সোজা আরিয়ান কে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কান্না করে দেয়।
আরিয়ান পরম ভালবাসার চাদরে অনুকে জড়িয়ে ধরে ওর চুলের মধ্যে মুখ গুঁজে নিবরে কিছু সময় থাকে।
এরপর আরিয়ান অনুর কপালে একটা চুমা দিয়ে অনুর এলোমেলো চুল গুলো গুছিয়ে সোজা করে দিয়ে অনুকে নিজের সামনে সোজা করে দাড় করিয়ে বলে,”নিজেকে কি ভাবো তুমি?”

অনু চুপ হয়ে শুধু কান্না করতে থাকে।
এরপর অারিয়ান অনুর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে আবারো নিজে জড়িয়ে ধরে।
আরিয়ান অনুর মাথার চুলে হাত দিয়ে বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,”তোমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারবো না কেনো বোঝোনা তুমি আমার মনের কথা অনু কবে বুঝবে তুমি? ”
অনুর তো আরিয়ানের কোনো কথা কানে ঢুকছে না।ভয়ে বেচারির ফর্শা মুখের রং বদলে কালো হয়ে গেছে।
আরিয়ান অনুকে পাশে খড়ের গাদার সাইডে বসিয়ে বলে,”এতো যখন ভয় পাও তাহলে কোনো করো এমন উল্টা পাল্টা কাজ? ”
অনু এবার নিজেকে ঠিকঠাক করে আরিয়ানের দিকে একটা রাগী দৃষ্টি তে তাকিয়ে বলে,”এই আপনি আমাকে এভাবে জোড় করে কিডন্যাপ করে এখানে কেনো নিয়ে আসছেন? ”

আরিয়ান বলে,”যে কাজটা মামুন ভাই তোমার সাথে করবে আমি সেই কাজের ট্রেইলাই দেখালাম তোমাকে।তুমি তো ট্রেইলার দেখেই ভয়ে কাছুমাছু হয়ে গেছে।সত্যি এমনটা হলে তখন কি করবে? ”
অনু আরিয়ানের শার্টের কলার ধরে বলে, “ঐ গুণ্ডা গুলোকে যে পেঁদানি দিয়েছি তারপর আর আমার সামনে আশার সাহস করবে না।
আপনি কোন সাহসে আমার সাথে এমন করলেন? ”
আরিয়ান অনুর দু হাত ধরে বলে,”নিজের অধিকার বোধ থেকে করেছি?”
অনু একটা ভ্রু কুঁচকে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,”আপনি আমার ভাই না,,স্বামী না তাহলে মাঝে অধিকার আসলো কোথায় থেকে?”
অারিয়ার অনুর মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলে,”ওরে গাধী তুমি যে আমার ভাইয়ের শালি লাগো? সেই দিক থেকে তো আমার বিয়েন হও।বিয়েনের অধিকারের কথা বলছি।”
অনু নাক মুখ কুঁচকে বলে,”ওহ আচ্ছা বিয়েন লাগি। ”
আরিয়ান বলে,”কেনো আরো অন্য কিছু হবার শখ আছে না কি তোমার? ”
অনু মনে মনে বলে,”হুম আমার তো আপনার বউ হবার শখ আছে।সরা জীবন আপনার এই বুকের মাঝে নিজে মুখ গুঁজে পরম শান্তি তে থাকবো।”
আরিয়ান অনুর দিকে তাকিয়ে ভাবে,”তোমার মাঝে তো কোনো না কোনো মায়া আছে যে মায়া আমাকে না চাইতেও তোমার কাছে বার বার টেনে আনে।হয়তো আমি তোমাকে পছন্দ করি।
কিন্তু এই কথাটা কোনোদিন প্রকাশ করতে পারবো না।আমার যে ভালোবাসায় প্রতিবন্ধকতায় মোড়ানো। তুমি দূরে ভালো থাকো তাই চাইবো।”
অনু মনে মনে বলে,”আপনার জীবনের পুরোটা জুড়ে না থাকতে দিন একটু মনের কিনারাতে স্থান দিলেই হবে।আমি যে আমার ক্রাশের পাগলী! আমার ক্রাশ তো সে খবর জানে না।”

এবার অারিয়ান নিজের অনুভূতি গুলোর গলা টিপে দিয়ে বলে,”তুমি নিজেকে বুঝি খুব বড় কিছৃ মনে করো? ”
অনু বলে,”নিজেকে বড় কিছু কেনো মনে করতে যাবো? ”
আরিয়ান বলে,”তাহলে যেনে বুঝে কেনো ঐ মামুন গুণ্ডার লোকেদের সাথে লাগতে গিয়েছিলে জানো ওরা কতোটা খারাপ? ”
অনু বলে,”তারা যতোটা খারাপ হোক তাতে আমার কিছু না। আমি যেখানে অন্যায় দেখবো সেখানে প্রতিবাদ করবো। আমাকে প্রতিবাদ করা থেকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না।”
আরিয়ান বলে,”তাই বলে তুমি জেনে বুঝে আগুনে নিজের হাত পোড়াবে? ”
অনু বলে,”মানুষ হয়ে যদি আরেকজন মানুষের বিপদে তার পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য না করতে পারি তাহলে কেমন ধাচের মানুষ আমি বলেন।”
অারিয়ান বলে,”তাই বলে ছেলেদের মতো গুণ্ডামি করবে?”
অনু বলে,”আপনি আমার স্থানে থাকলে কি করতেন বলবেন? ”
আরিয়ান বলে,”অবশ্যই প্রতিবাদ করতাম! ”
অনু বলে,”আমি মেয়ে তাই জন্য আমার প্রতিবাদ করার দিকে এতো আঙ্গুল উঠছে তাই না।”
আরিয়ান বলে,”অনু তুমি জানো না ওরা খুব খারাপ তোমার যে কোনো সময় ক্ষতি করতে পারে। ”
অনু বলে,”কিছু খারাপ মানুষের ভয়ে ঘরের মাঝে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকার মতো মেয়ে আমি না। যে আমাকে ভালোবাসবে আমার মতো করে বাসতে হবে। আমি যেমন তেমন ভাবে গ্রহণ করতে হবে।”
আরিয়ান বলে,”তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার কি হবে তা তুমি বোঝোনা অনু? ”
অনু আরিয়ানের মুখে এমন কথা শুনে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে।
আরিয়ান এবার নিজেকে সংযত করে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ফোন হাতে নিয়ে কাকে যেনো মেসেজ দেয়।
আরিয়ান অনুকে বলে,”আজকের পর থেকে তুমি বাড়ির বাহিরে কখনো একা একা কোথাও যাবে না।যদি পণ্ডিতি করে নিজেকে বিপদে ফেলেছো তো তোমার খবর আছে এই বলে দিলাম।”

অনু কিছু বলবে তার আগে ওদের সামনে সিয়াম বাইক নিয়ে চলে আসে।
সিয়ামের কাছে থেকে বাইক নিয়ে অনুকে পেছনে বসতে ইশারা করে।
আরিয়ানের ইশারা করতে সময় লাগে কিন্তু অনুর পেছনে বসতে সময় লাগে না।
আরিয়ান অনুকে বাইকের পেছনে নিয়ে ঘুরাঘুরি করছে এ দৃশ্যটা কারো নজরে পড়ে যায়।
এরপর অারিয়ান অনুকে রিদিদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে যাবার সময় বলে,”একা একা বাড়ির বাহিরে কোথাও যাবে না কথাটা ঘটে ভালো করে ঢুকিয়ে রাখো। ”
এরপর আরিয়ান সোজা চলে যায়।
অনু তো মনের খুশি তে বাড়ির ভেতর চলে আসে।
বাড়ির ভেতর আসতেই রিদি আর রিমা এক দৌড়ে অনুকে জড়িয়ে ধরে বলে,”অনু তুই ঠিক আছিস তো? ”
অনু বলে,”আরে আমি একদম ঠিক আছি আমার আবার কি হবে বলো তো।”
রিদি বলে,”তুই যে মামুন ভাইয়ের লোকের সাথে গুণ্ডামি করেছিস। তারা কি তোকে এতো সহজে ছেড়ে দিবে মনে হয়? ”
অনু বলে,”উফফ আপু এসব নিয়ে একদম চিন্তা করোনা তো।ওরা আমার কিচ্ছু করতে পারবে না।”
অনুর খালা বলে,”অনু তুমি জানো না ঐ মামুন এখানকার নাম করা খারাপ গুণ্ডা। ওর সাথে লেগে তুমি ভালো করো নাই।”
অনু খালাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আরে খালাম্মা তুমি চিন্তা করো না। সবাই এদের ভয় করে তাই এরা মাথায় উঠে বসা সাহস করে।”
অনুর খালা বলে,”অনু তুমি আমার কাছে আমানত। তোমার কিছু হলে আমি আপা দুলাভাই কে কি জবাব দিবো?
তোমার আর বেশিদিন সময় নেই এইচ এস সি পরিক্ষার। ততোদিন তুমি একা কোথাও যাবে না তোমার পরিক্ষার শেষ হলেই আমি তোমাকে ঢাকাই পাঠিয়ে দিবো এতো রিস্কের মধ্যে রাখতে চাই না।”

অনু বলে,”খালাম্মা প্লিজ এসব কিছু বাড়ির কাউকে কিছু বলবেন না।তারা অযথা আমাকে নিয়ে চিন্তা করবে।”
অনুর খালা বলে,”হুম এখন চাইলেও আমি তাদের তোমার এই গুণের কথা বলে চিন্তায় ফেলতে চাই না।”
এরপর অনু রিমার হাত ধরে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে ওরে জড়িয়ে ধরে বলে,”রিমা আজ আমি অনেক অনেক খুশী রে?”
রিমা বলে,”গুণ্ডামি করছিস সেই জন্য?
আচ্ছা তোর জানে কি ভয়ডর বলে কিছু নেই? ”
অনু বলে,”ধুর কচু নিয়ে পরছিস।
জানিস আমাকে বাড়িতে আরিয়ান ড্রপ করে দিয়ে গেছে আজকে।”
রিমা অনুর উপর রেগে বলে,”আরিয়ান কে ধৌত করে শরবত বানিয়ে খা শয়তান মেয়ে। ”
অনু বলে,”আরে জানু রাগ করে না।আমার অনুভূতি তো বুঝতে চেষ্টা করবি! ”
রিমা বলে,”অচেনা শহরে তোর এমন কাজের কথা শোনার পর আমার তোর অনুভূতি বোঝার ক্ষমতা কাজ করছে না।”
অনু বলে,”এই তোর কি হয়েছে রে?
আজ এমন বিহেভিয়ার করছিস কেনো?”

রিমা বলে,”আমি চাইছি যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ঢাকা ফিরে যেতে তোর এই আরিয়ানের গান শুনতে আমার ভালো লাগে না।”
অনু বলে,”আজব এখানে আরিয়ান কি করছে বলবি তো? ”
রিমা বলে,”আজ তো প্রায় দুই বছরের মতো হতে যাচ্ছে আরিয়ানের পেছনে ঘুরছিস?
একবার ও আরিয়ান তোকে বলছে সে তোকে পছন্দ করে অথবা ভালোবাসে? কখনো বলে নাই তাই যতো তাড়াতাড়ি ঢাকা যাবো ততো দ্রুত তোর মাথা থেকে আরিয়ানের ভুত নামবে।”
অনু বলে,”আজব মেয়ে তো তুই এইসবের মধ্যে আজারে আরিয়ান কে ফাঁসিয়ে দিচ্ছিস।”
রিমা কিছু না বলে হনহন করে রুমের বাহিরে চলে যায়।
(কি মনে হয় সমস্যা এখানে শেষ না কি নতুন কোনো ঝড় আসতে পারে?😒ভুলএুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ। )



চলবে….