Childhood marriage 3 !! Part- 06
– এ..এতো সিরিয়াসলি নেওয়ার কিছু নেই,ওটাতো কুট্টুসের পক্ষ থেকে…
– ড্রামা কুইন একটা(বিড় বিড় করে)
– কিছু বললেন?
– ও কিছু না,এখন চলুন যাওয়া যাক?
– হ্যাঁ তাই চলুন কিন্তু এখন আমরা যাবোটা কোথায়?
– যেদিকে দুচোখ যায়
– মানে?
– মানে রাততো আর বেশি নেই আর তাছাড়া একটু আগে যা হলো তাতে আর কোন হোটেলে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না।তাই বলছি এই রাস্তা যেদিকে নিয়ে যাবে সেদিকেই নাহয় যাওয়া যাক…
– তাহলে তাই চলুন
(ওরা কথা শেষ করার আগেই পুলিশের গাড়ীর হুইসেল শুনতে পেল)
– এ..এটা পুলিশের হুইসেল না?পুলিশ আবার কোথা থেকে আসলো?
– কোথা থেকে আবার?সবই আপনার এই কুট্টুসকে আনতে গিয়ে হয়েছে…তখনতো কোন রকমে ওদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছি,এবার ধরতে পারলে কিন্তু…
– তাহলে আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই দৌঁড় দেন
– সে আবার বলতে…মেয়েটার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম
– অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম
– ওভাবে কি দেখছেন?হাতটা ধরুন,তাহলে জোরে দৌঁড়াতে পারবেন নাহলে কিন্তু পিছিয়ে পড়বেন
– উনার দিকে একবার তাকালাম তারপর উনার হাত ধরেই দৌঁড়াতে শুরু করলাম
।
(ঘণ্টা খানেক পর)
ওরা এখন যেই জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছে,দেখে মনে হচ্ছে ছোট খাটো একটা জঙ্গল।দুজনেই এখন মাটিতে বসে পড়ে হাঁপাচ্ছে,বেশ খানিকক্ষণ চুপ থাকার পর মুখ খুললো সায়ন
– আই থিঙ্ক আর কোন ভয় নেই,পুলিশ আর আমাদের খুঁজে পাবে না
– পাবে কি করে,মেইন রোড বাদে যে আমরা এই নির্জন জঙ্গলের রাস্তা ধরেছিলাম।কিন্তু এখন কি করব?কোথায় যাবো?
– আমরা ঠিক কোথায় আছি তাইতো বুঝতে পারছি না,সকাল হওয়ার আগে বোধহয় বোঝা যাবেও না
– তাহলে?
– তাহলে আবার কি?এখানেই বাঁকি রাতটুকু স্পেণ্ড করতে হবে
– এখানে!জাস্ট ইম্পসিবল
– Everything is possible miss drama queen just wait and see
– কিন্তু কিভাবে?
– নিন ধরুন
– এটা কি?
– একটু ওয়েট করেন তাহলেই বুঝতে পারবেন।ব্যাগ থেকে জিনিসপত্র বের করে তাবুটা গেড়ে ফেললাম।কি এবার চলবেতো?
– চলবে কি,এতো দৌঁড়াবে…কিন্তু এসব কিভাবে?
– বলেছিলাম না আমরা ফ্রেণ্ডরা মিলে হিল ট্র্যাকিংয়ে যাচ্ছি আর ক্যাম্পিংয়ে এসব একদম নেসেসারি ইকুইপমেন্ট,সবাই ক্যারি করে এসব…
– ওয়াও দ্যাটস গ্রেট,আর দেরি না করে তাবুর ভেতর ঢুকে পড়লাম।প্রচণ্ড এক্সাইটেড লাগছে,রীতিমতো লাফালাফি শুরু করে দিয়েছি
– মেয়েটা ঠিক বাচ্চাদের মতো লাফালাফি করছে,দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব এক্সাইটেড।আমিও ওর পিছু পিছু তাবুর ভেতরে ঢুকে পড়লাম।একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
– কি?
– অাপনি আগে কখনো এভাবে খোলা আকাশের নিচে তাবুতে নাইট স্পেণ্ড করেননি তাইনা?
– কিভাবে বুঝলেন?
– আপনার এক্সাইটমেন্ট দেখে যে কেউই বুঝতে পারবে
– ঠিকই ধরেছেন।আসলে শুধু তাবুতেই না,আমি আসলে কখনোই একা একা কোথাও যাওয়ার সুযোগ পাইনি।একা একা বাড়ির বাইরে যাওয়া;অচেনা অজানা কারো সাথে ফ্রেণ্ডশিপ করা;ক্লাস শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া;ছুটির দিনে কাছে পিঠে কোথাও ঘুরতে যাওয়া;সবার সাথে ফুচকা,চটপটি,আইসক্রিম খেতে যাওয়া এসব করাতো দূরে থাক কখনও স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি
– কিন্তু কেন?
– এসবই আমার বাবা-মা…আসলে উনারা আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসেন তাই সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকেন বেশি ছাড় দিলে একদিন হয়তো আমিও…বেশি কেয়ার নিতে গিয়ে কখন যে এটা একটু বেশিই রেস্ট্রিকশন হয়ে গেছে উনারা হয়তো বুঝতেই পারেননি…
– কিন্তু তাহলে এই যে একা একা এতো দূরে চলে আসলেন যে,কেউ বাঁধা দেয়নি?
– দিয়েছিল কিন্তু জানেনতো আজ আমার এইটটিন্থ বার্থডে
– রিয়েলি!Then happy birthday to you…
– Thanks.আমার ১৮ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বাবা-মার কাছে আমি এই একটাই গিফট চেয়েছিলাম তাই তারা না করতে পারেনি
– গিফট?সেটা কি…
– হুম এই ট্যুরটা,তাও একা একা।আমি চেয়েছিলাম জীবনে একটাবার হলেও স্বাধীনভাবে নিজের মতো করে বাঁচতে তাই…
– হুম বুঝলাম
– বাবা-মা চেয়েছিলেন আমি ট্রেনে আসি,একটা ফার্স্টক্লাস কেবিনও বুক করা ছিল আমার জন্য।আমি জানতাম বাবার কয়েকজন লোক ঠিকই আমাকে ফলো করছে তাই সুযোগ বুঝে নেমে গেলাম ট্রেন থেকে,উঠে পড়লাম এই বাসে তারপরতো আপনি সবই জানেন
– একটা ওয়াইল্ড গেস করব?
– কি?
– আপনি ফোনটা বাসে ফেলে আসেননি,অন্য কোথাও ফেলে এসেছেন এণ্ড সেটা ইচ্ছে করেই।Am I right?
– হুম ট্রেন থেকে নামার সময় ফোনটা ওখানেই ফেলে এসেছিলাম যাতে এই কয়দিনে কেউ আমার সাথে কোন যোগাযোগ করতে না পারে
– সবই বুঝলাম কিন্তু তার ফলাফলটা কি হলো দেখতেইতো পাচ্ছেন
– তাতে আমার বিন্দুমাত্রও আফসোস নেই,ব্যাপারটা প্রচণ্ড রকমের এক্সাইটেড আর আমি খুব এনজয় করছি
– আপনি সত্যিই পাগল,এই সিচুয়েশনে অচেনা অজানা একটা ছেলের সাথে এভাবে…আপনার একটুও ভয় করছে না?
– মোটেও না কারণ আমি জানি আপনি আমার কোন ক্ষতি করবেন না
– মেয়েটার কথা শুনে মুচকি একটা হাসি দিলাম।একটা ফ্রি পরামর্শ দেই,এতো ইজিলি কাউকে এতোটা বিশ্বাস করবেন না,তাতে বড় রকমের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে
– পরামর্শটা তোলা থাকলো,পরবর্তীতে কাজে লাগানোর চেষ্টা করব এণ্ড Thanks for your concern…
– মাই প্লেজার…
(দুজনে একসাথে হেসে উঠলো)
– একটা কথা বলব?
– কি কথা?
– তখন যে আমাকে তুমি করে বলছিলেন…
– ওহ ওটাতো রাগের মাথায়…আপনি কিছু মনে করবেন না প্লিজ…
– আপনার মুখে না তুমিটা শুনতেই ভালো লাগছিলো
– মা..ম..মানে?
– আসলে আমিতো আপনার থেকে অনেক ছোট তাই বলছিলাম আপনি বরং আমাকে তুমি করেই ডাকবেন,অবশ্য আপনার যদি কোন আপত্তি না থাকে…
– ঠিক আছে তাই হবে,এখন তাহলে ঘুমিয়ে পড়ো সকাল হলেই এখান থেকে বেরোনোর পথ খুঁজতে হবে
– আর আপনি?
– আমি?আমি নাহয় আজ রাতে নাইটগার্ডের দায়িত্বটাই নিলাম।তুমি ঘুমাও আমি বাইরে ওয়েট করছি
– বাইরে কেন?এখানেই থাকুন না…
– এখানে!কিন্তু…
– চিন্তা করবেন না,আমি আপনার রেপ করব না
– মেয়েটার কথা শুনে না হেসে আর থাকতে পারলাম না
– কি আশ্চর্য!হাসছেন কেন?
– ঠিক আছে আর হাসব না।আর একটা কথা এখানে কিন্তু বেরিকেড দিয়ে সেপারেট বেড বানাতে পারব না
– লাগবে না,এখন ঘুমাতে দিনতো…
কথায় আছে,”অভাগা যেদিকে যায়,সাগর শুকায়ে যায়”প্রবাদ বাক্যটার বোধহয় ওদের জন্যই প্রচলন হয়েছিল।কথাটা বলছি কারণ ওরা এখন যেই সিচুয়েশনে আছে তাতে এর থেকে ভালো আর কোন উপমা খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
বাইরে প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি,সেই ভোরবেলা থেকেই শুরু হয়েছে প্রকৃতির এই তাণ্ডব।এত কিছুর মধ্যেও তাবুটা কোন রকমে টিকে আছে তবে অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আর বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারবে না।
উপর থেকে পানি না পড়লেও চারপাশ থেকে হুহু করে বৃষ্টির পানি ঢুকতে শুরু করেছে।ওরা দুজন তাবুর এক কোণে গুটিশুটি মেরে বসে আছে,আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে মুখ খুললো সায়ান
– যা অবস্থা দেখছি তাতে আর বেশিক্ষণ এভাবে টিকে থাকা সম্ভব হবে বলেতো মনে হচ্ছে না
– তাহলে এখন উপায়?
– উম্ম…এক কাজ করো তুমি এখানেই অপেক্ষা করো,আমি এক্ষুণি আসছি
– কিন্তু এই বৃষ্টির মধ্যে আপনি কোথায় যাবেন?
– (মুচকি হেসে)ভয় পেও না,তোমাকে একা ফেলে কোথাও যাচ্ছি না
(কিছুক্ষণ পর)
– এই যে মিস ড্রামা কুইন,চলুন…
– আ..আপনি চলে এসেছেন!কিন্তু একি,আপনার এই অবস্থা হলো কি করে?
– ভেজা কাক হয়ে গেছি তাইতো?কি করব বলো,বৃষ্টিতো আর আমার শ্বশুর না তাই এক বিন্দুও ছাড় দিল না।এখন চলো যাওয়া যাক
– কিন্তু কোথায়?
– এই অবস্থায় রাস্তা খুঁজে বের করা জাস্ট ইম্পসিবল আর এখানে থাকাটাও।তাই সেফ কোন জায়গায় যেতে হবে
– আচ্ছা চলুন…
– এক মিনিট,ব্যাগ থেকে এক্সট্রা শার্টটা বের করে মাথার উপর মেলে ধরলাম।কই এসো…
– অবাক হয়ে উনার দিকে একবার তাকালাম তারপর সোজা উনার মেলে ধরা শার্টের নিচে ঢুকে পড়লাম
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো,বৃষ্টি থেমেছে কিছুক্ষণ আগে,আকাশ এখন ঝকঝকে পরিষ্কার।জঙ্গলের বৃষ্টি ভেজা গাছের পাতা থেকে এখনও ফোঁটায় ফোঁটায় পানি ঝরে পড়ছে।
বিশ্বের প্রায় সব জঙ্গলের আশেপাশেই কিছু লোক বসতি থাকে যাদের জীবন জীবিকার পুরোটাই নির্ভর করে সেই জঙ্গলকে ঘিরে।এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।বৃষ্টি থামতেই তাই একদল লোক জঙ্গলে এসে ঢুকেছে,উদ্দেশ্য যদি উপার্জন করার মতো কিছু পাওয়া যায়।
কিন্তু দীঘির ধারের বড় বটগাছটার দিকে আসতেই ওরা থমকে দাঁড়ালো।
গাছটার গোড়ায় বসে আছে অচেনা দুজন যুবক যুবতী,বসে আছে বললেও ভুল হবে,ওরা আসলে দুজন দুজনের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমের কোলে ঢলে পড়েছে।এই ভর দুপুরে এরা কোথা থেকে আসলো আর করছেটাই বা কি এসব নিয়ে যখন সবাই শলাপরামর্শ করছে তখনই ওরা চোখ মেলে তাকালো।চোখ মেলেই এতোগুলো মানুষকে দেখে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো সায়ন,মেয়েটাকে যতটা সম্ভব আড়াল করার চেষ্টা করলো
– তোমরা কারা?আর এইহানেই বা আইলা কি কইরা?
– আ…আমরা…আসলে…
আর কিছুই বলতে পারলো না সায়ন,তার আগেই কাটা কলাগাছের মতো মাটিতে লুটিয়ে পড়লো…
চলবে….