যদি তুমি জানতে

যদি তুমি জানতে !! Part- 18

বিকেলের দিকে সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আছি। অপেক্ষা শুধু কখন দিপ ভাইয়া আসবেন আর আমিও প্ল্যান মোতাবেক কাজ করব। এখনো খালামনি, মা এবং বড় আপু কে জানাই নি। কেননা এখন বললে মজাটাই শেষ….

কলিং বেল বেজে উঠল। তার মানে চলে এসেছেন। আমি উঠে দরজা খুলে দেই। মেজো খালু, খালামনি, দিপ ভাই ভেতরে ঢুকলেন।ভাবি হয়তো বাপের বাড়িতে আছেন। উনার সবাই এমন দৃষ্টিতে আছেন যেন দিনের আকাশে চাদঁ দেখেছেন । দিপ ভাইয়ার তো পুরোপুরি চোয়াল ঝুলিয়ে হা করে আছেন।আমাকে এখানে আশা করেননি স্পষ্ট পরিলক্ষিত। দিপ ভাই কাপাকাপা গলায় বললেন-

-তু..তুই বেচে আছিস ফিহা??
-এ কেমন প্রশ্ন? আমি কি এতো তাড়াতাড়ি মরব নাকি?
-তো..তোকে তো ফে…
-হ্যাঁ ঠিক। আমাকে ফেলে রেখে এসেছিলে। ভেবেছো পড়ে যেয়ে মরে যাব। কিন্তু মরিনি।

আমার আর দিপ ভাইয়ের কথোপকথন
শুনে সবাই কৌতুহল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। কেউ কিছুই মিলাতে পারছেননা আমি কি বলছি। মেজো খালামনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন-
-ফিহা তুই কি বলছিস এসব?
-আমি যা বলছি যেমন বলছি সব ঠিক বলছি। তোমার ছেলেকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর সে কেন এমন প্রশ্ন করছে।
-দেখ আমি আমার ছেলেকে জিজ্ঞেস করব কি করব না, সেটা আমি বুঝব। তুই কেন তোর বড় ভাইয়ের সামনে এভাবে কথা বলবি।
-তোমার ছেলে দুধে ধোয়া তুলসি পাতা না যে তুমি আমাকে কথা শুনাবে। জিজ্ঞেস করো কেন আমাকে ফেলে রেখে এসেছিল।
-ও কি ফেলে রেখে এসেছে, নাকি তোর সেই অজ্ঞাত ব্যক্তিই তোকে তুলে নিয়ে গেছে! আর এখন দোষ আমার ছেলের উপর দিস!
-আচ্ছা একটা কথার জবাব দেওতো। এত বড় তোমার বাড়ি তার উপর বিয়ের আমেজ, শতশত ব্যস্ততা। আমাকে পারলে তো এইখান থেকে এই বাড়ি থেকেই অজ্ঞাত ব্যক্তি তুলে নিয়ে যেতে পারত। রাস্তা থেকেই কেন তুলল! তোমরা তো আর আমার দিকে বিশেষ কোনো খেয়াল রাখোনি যে আমাকে অজ্ঞাত ব্যক্তি তোমার বাড়িতে ধরতে পারবেনা।
-দেখ ফিহা আমার মুখেমুখে তর্ক করবি না! আমি আমার বাড়িতে এসব পছন্দ করিনা।
-ঠিক বলছো। এটা তোমার বাড়ি। কিন্তু তোমার বাড়ি বলে যে গর্ব করে কথাটা বলছো! সেই বাড়িতে আমার কোনো সেইফটি নেই কেনো? জবাব আছে!
-তোর মা কিন্তু কখনো আমার সামনে গলা উচু করার সাহস পায়নি! মুখ সামলে কথা বল!

আমাদের কথা কাটাকাটি দেখে একপর্যায়ে বড় খালামনি বললেন-
-রোকসানা সামান্য ব্যাপারটা তুই পাহাড় কেন বানাচ্ছিস? আমি তো কোনো ভুল দেখছিনা ফিহার কথায়।
-আপা, তুমি ফিহার তরফ নেওয়া বন্ধ করলে হয়তো দেখতে পাবে ! ও আমার ছেলে দিপকে নিয়ে গলা উচু করছে!!
-আমার ছেলে সাঈদকে যদি তোদের সামনে ভুল করার জন্য থাপ্পড় দিতে পারি, তাহলে তোর দিপকে কেন শাসন করতে পারবিনা! তোর দিপকে জিজ্ঞেস কর কেন ও ফিহাকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলেছে!
-আপা তুমি বড় বলে তোমাকে সম্মান করছি। এর মানে এটা না যে তুমি আমার ছেলেকেও বকবে!
-তোর ছেলেকে আমি বকিনি। তুই এটা ভালো করেই জানিস আমার সামনে কেউ ভুল করলে তাকে ছাড় দেই না! স্বাভাবিক ভাবেই বলছি দিপ কেন ফিহাকে ফেলে আসলো!
-তোমার ফিহার জন্যই কিন্তু কাল আমার ছেলেরও খারাপ অবস্থা হয়েছে। ফিহাকে নিয়ে যদি না বেরুতো তবে আজ এমন কিছু ঘটতো না!
-রোকসানা কথা না ঘুরিয়ে জবাব দেয়ার ব্যবস্থা কর। আমি জবাব বুঝি! কোনো বেহুদা কথা শুনার টাইম নেই।
-আপা, ছোটর মেয়ে যে একটা অপয়া, সেটা তুমি বুঝো না! এই মেয়ে যে তোমার ছেলে সাঈদের সাথে থাকত, সেই সাঈদ-ই এখন গুম! কাল আমার ছেলের সাথে ছিল, আমার ছেলেকে পযর্ন্ত শেষ করার প্রচেষ্টায় ছিল! তুমি কি এখনো চোখে পট্টি বেধে রাখবে!
-কার মেয়ে কেমন সেটা আমার থেকে তুই বেশি বুঝিস না! এজন্য জ্ঞান যদি নাই দিস তো ভালো। আজ তুই যেই মেয়েকে নিয়ে আঙ্গুল তুলে কথা বলছিস! সেই মেয়েকে বাড়ির বউ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলি! লজ্জা হওয়া উচিৎ ! নিজের বোনের মেয়েকে নিয়ে কটুক্তি করছিস!

খালামনির কথা শুনে মেজো খালামনি চুপ করে আছেন। মা চুপ করে এককোনায় বসে কান্না করছেন। দিপ ভাই, খালু একদম চুপ। খালু যে মেজোখালামনির কথার উপর কথা বলেন না আজ সেটা প্রমাণ দেখে নিলাম। বড় খালামনি দিপ ভাইকে টেনে সামনে এনে জিজ্ঞেস করলেন-

-দিপ আমি ঘুরানো-ফেরানো কথাবার্তা পছন্দ করিনা ! যা জিজ্ঞেস করব একদম স্ট্রেট কথাবার্তা বলবি!
-জ্বী খালামনি।
-তুই কাল কোথায় নিয়ে গিয়েছিলি?
-মানে বুঝলাম না খালামনি,
-তুই কাল বাসায় এসে বলেছিস তোদের বেপারী সড়ক থেকে গুন্ডারা ধরেছে। কিন্তু আমার জানামতে আমি তোদের ডাক্তারের কাছে পাঠিয়েছিলাম যেটা ছিল পন্ঞ সড়কে। পন্ঞ সড়ক থেকে ওই বেপারী সড়ক আরো বিশ মিনিট দূর। তুই পন্ঞ সড়ক না যেয়ে বেপারী সড়কে কি করছিলি?
-না..না..হয়ে..ছে কি খালামনি ওওই খানে না..
-চুপ! একটা কথাও বলবি না! তুই যে মিথ্যা কথা বলছিস বুঝা শেষ! বিষয়টা কাল মাথায় কেন আসেনি সেটাই বুঝে পাচ্ছিনা!! আজ যদি ফিহা বাসায় এসে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দেয়ার ঘটনাটা না বলতো, তাহলে আমি জানতামই না তুই মিথ্যে বলছিস!
-খালামনি ফিহা মিথ্যা কথা বলছে, আমি কেন ওকে ফেলে দিয়ে আসবো??
-সেটাই তো কথা। তুই কেন ফেলে দিয়ে আসবি!! অবশ্যই তুই কিছু জানিস !
-না..আমি কি জানব বলো???..রাতের মতো ফিহাকে হয়তো ওই ব্যক্তি আবা..র নিতে এসে..ছিল…
-এক মিনিট। আমিতো কোথাও রাতের ঘটনা বলছিনা! তুই কোন রাতের কথা বলছিস!

খালামনির প্রশ্ন শুনে ফিমা আপু সামনে এসে বললেন-
-খালামনি আমি কিছু বলব। আমি জানি দিপ ভাইয়া কোন ব্যপারে বলছেন।
-বল।
-ওইযে সেদিন তোমরা বৌভাতে চলে যাওয়ার পর রাতে যে ঘটনা ঘটেছিল। ওটা বলছেন ভাইয়া।

আপুর কথা শুনে খালামনি দিপ ভাই আবার বললেন-
-কি দিপ। তোমার কথাবার্তা তো গন্ডগোল ঠেকছে! আমি জিজ্ঞেস করি একটা, আর তুমি জবাব দেও দেখি আরেকটা। ব্যাপার কি?
-না খালামনি কই না তো কিছুনা।
-নাহ, কিছু তো অবশ্যই আছে। আমি তোকে গাড়ির ঘটনা জিজ্ঞেস করি, জবাব দিচ্ছিস বৌভাতের ঘটনা। তোর ব্যাপারগুলো আজ আমায় মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে!! আগে কেনো ভেবে দেখিনি!! আচ্ছা দিপ একটা কথা বলতো,
-জ্বি.. খালামনি
-তোর হলুদের দিন ফিহাকে স্টোররুমে কেউ কি ধরেছিল?
-হ্যাঁ তুমি জানো না? ওর অজ্ঞাত ব্যক্তি।
-এতো বিশ্বাস কীভাবে? ওটা যে অজ্ঞাত ব্যক্তিই ছিলো?
-ফিহাই তো বলেছিল। ওকে স্টোর রুমে অজ্ঞাত ব্যক্তি এসে শাসায়।

খালামনি দিপ ভাইয়ের কথা শুনে হোহো করে হাসছেন। দিপ ভাইয়ের পিঠে হালকা করে দুটো কিল দিয়ে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো হেসেই যাচ্ছেন। হাসি একটু থামিয়ে বললেন-
-ফিহারে তোর অজ্ঞাত ব্যক্তি দেখি আমাদের সাথেই ছিলো!!!
সবাই খালামনির কথা শুনে একদম আকাশ থেকে পড়লেন। দিপ ভাই ভয়ে চুপসে আছেন। কিন্তু খালামনি হোহো করে হেসেই চলছেন। মেজো খালামনি এমন পরিস্থিতিতে কপাল কুচকে বললেন-

-আপা তুমি পাগল হয়ে গেছো? ওভাবে হাসছো কেন? কী বলতে চাইছো তুমি?
-বোনের মেয়েকে অপয়া বললি না, সেজন্য হাসছি!!
-আপা তুমি কিন্তু বেশি করছো।
-কেন রে?? এখন শুনতে ভালো লাগে না?? তুই যাকে অপয়া বললি তার পিছেই তো, তোর ছেলে দিপ ঘুরঘুর করে আসছিলো।
-আবোল তাবোল কেনো বলছো তুমি?
-ঠিকি বলছি। আমি দিপকে স্টোররুমের কথা জিজ্ঞেস করলে যে উত্তর দেয়, আর ফিহা যে উত্তর দিয়েছিলো। রাত-দিন তফাত।
-মানে?
-ফিহা বলেছিল ও ভুলবশত স্টোররুমে আটকা পড়ে। আর দিপ বলল অজ্ঞাত ব্যক্তি নাকি স্টোররুমে ধরেছিল। আর ও এতো বিশ্বাসের সাথে কেনইবা বলবে ওই ব্যক্তি ফিহাকে শাসায়!! কেউ যখন নিজে সেই বিষয়ে জড়িত থাকে তখন সে হুরহুর করে সত্যটা বলে দেয়।। তার মানে কথা পরিষ্কার! ফিহাকে ধরা অজ্ঞাত ব্যক্তি এই “দিপ”। তোমার আদরের সোহাগের ছেলে।
-দেখো আপা, যখন তোমার ছেলে সাঈদের সাথে ঘুরতো তখনও নাকি ফিহাকে অজ্ঞাত ব্যক্তি ধরতো, তাহলে তোমার ছেলে সেই ব্যক্তি না কীভাবে বলো!
-সাঈদ ওকে “নাবিলা” ডাকে, ওদের সম্পর্ক দেখে কি তুই এখনো বুঝিস না, ওদের মধ্যে কী চলছে!যাইহোক তুই তখনো ফিহাকে তোর বাড়ির বউ বানাতে পারিসনি, এখনো আর পারলিনা। আর আমার ছেলে ফিহার সাথে ছিলো বলেই বড় দূর্ঘটনা ঘটাতে পারেনি। নাহলে তোর ছেলের যা মতিগতি দেখছি!! অঘটন ঘটাতে সময় নিতো না।সামলে থাকিস!

বড় খালামনি আমাকে বললেন-
-ফিহা দিপ কি সেই অজ্ঞাত ব্যক্তি নাকি অন্যকেউ? নাকি সাঈদ? সত্যি করে বল!
-খালামনি দিপ ভাই।

বড় খালামনি কী করলেন বুঝলাম না, উনি ফোন বের করে কাকে যেন কল করলেন। এরপর কাছে এসে দিপ ভাইকে বললেন-

-দিপ নতুন বিয়ে করলি, এখন তুই বিবাহিত। বউ আছে। টাকা পয়সার কমতি নেই। নিজের বাড়ি-গাড়ি, অফিস-ব্যবসা সবই আছে। কী এমন প্রয়োজন পড়ল তুই ফিহার সাথে এমন করলি!
-………………………………………..
-চুপ করে থাকার সময় নেই। তোর সত্য যে আমি বুঝে গিয়েছি, সেটার গা ঢাকা দিসনা!
-সত্য যেহেতু জেনেছে! দেন লিসেন! বুঝেই যখন গিয়েছো মিথ্যা আমি বলছি তাহলে জবাবটাও আমি দিব। হ্যাঁ আমিই ছিলাম ফিহার পিছনে। ওকে আমার বানানোর জন্য করেছিলাম এসব! খালামনি সব তোমার দোষ! জাষ্ট ইউর! তুমি যদি সাঈদের জন্যে ফিহাকে না চুজ করতে তবে আজ গল্পটা এমন হতো না! শুধু তোমার কারনে আমি ফিহাকে অন্যের সাথে দেখব!

-তুই কখনো ফিহার জন্য ছিলিনা! কেননা ফিহা তোকে ওর বড় ভাই ছাড়া অন্যকোনো নজরে দেখতো না!
-সাঈদ কী দোষ করছে! সাঈদকে কেন ভাইয়ের নজরে দেখতে পারলোনা!আমাকে কেন দেখতে গেল!!আমিতো ওকে ছোট থেকে পছন্দ করতাম!
-তুই ওকে পছন্দ করলে এভাবে আঘাত করার চিন্তা কখনোই করতি না!
-তুমি মাকে ফিহার হাত না দেয়ার জন্য কেন বলতে গেলে! কেনো তুমি স্বার্থবাদী মানুষের মতো নিজেরটা চিন্তা করলে!
-তোর মা আমার সামনেই যদি নিজের বোনের মেয়েকে অপয়া বলতে পারে, তার ছেলে কেমন চরিত্রের হতে পারে জানা আছে!
-কেন তুমি ফিমাকে নিজের ছেলের জন্য চুজ করতে গেলে না! ফিহাকে কেন! কেন খালামনি!
-আমার ছেলেকে ঠিক করে সামলানোর জন্য ফিহার মতো ঠান্ডা মেজাজের মেয়ে দরকার। তা আমি নিজের জবানিতে রোকসানা আর ফারজানাকে বলেছি। সবার আগে আমি ফিহাকে চেয়েছি তোর মা না।
-ইয়াহ্ রাইট! একজন স্বার্থবাদী মহিলার মতো!
-তোর মতো ছেলের কাছ থেকে ও বেচেছে এটাই বেশি। বাকিটা পুলিশ সামলে নিবে। আশাকরি তোর মা তার জবাব পেয়ে গেছে।

খালামনি উচু গলায় সবাইকে জানান দিয়ে দিলেন দিপ ভাই তার শাস্তি পাবেনই। মেজো খালামনি থ মেরে আছেন, পাশে খালু বসে সামলাচ্ছেন। মাকে নিয়ে ফিমা আপু রেডি হচ্ছেন। আজই এই বাড়ি ত্যাগ করবেন। বড় খালামনি আমাকে নিয়ে রুমে বসে আছেন। পুলিশের হাতে দিপ ভাইয়াকে তুলে দিয়ে আমাকে নিয়েও চলে আসবেন।।

ব্যাগ গুছানো শেষ। দিপ ভাইয়াকে ডাইনিং টেবিলের সাথে রশি দিয়ে খালামনি বেধে রেখেছেন। যেন কোথাও পালাতে না পারে।

কলিংবেল বাজলে সবাই রুম থেকে ব্যাগট্যাগ নিয়ে একেবারেই বের হই।সদর দরজার কাছে যেয়ে দাড়াই। খালামনি দরজা খুলে দিলে একদল পুলিশ এসে বাড়িতে ঢুকলেন। একটা পুলিশ আমার দিকে তাকিয়ে সবার অলক্ষ্যে চোখ টিপ মারলেন। আজব কারবার! পুলিশ কিনা চোখ টিপ মারছে!! নিখুত ভাবে খেয়াল করে দেখি লাবিব ভাইয়া! উনি বেশভূষা পাল্টিয়ে পুলিশ সেজে এসেছেন। কেউ দেখে বলবেই না এটা লাবিব ভাইয়া, একারনে খালামনিও চিনতে পারেননি।লাবিব ভাইয়া লাঠি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বললেন-

-আসামী কোথায়?

খালামনি ডাইনিং টেবিলের চেয়ারের দিকে ইশার করলেন। আর বললেন-
-ওইযে আপনাদের আসামী। নিয়ে যান।
-ধন্যবাদ।

লাবিব ভাইয়া এসে দিপ ভাইয়ার বাধন খুলে হেন্ডক্রাফট পড়িয়ে নিয়ে যেতে লাগলেন। এদিকে খালামনিও মেজো খালামনিকে পরোখ না করে আমাদের নিয়ে চলে আসলেন। সবাই গাড়িতে উঠে বসলে দেখি ড্রাইভিং সিটে সাঈদ ভাই!!

মা, খালামনি খুশিতে হেসে দিলেও, খালামনি তার নিখোজ ছেলে কাছে পেয়ে দিলেন এক কানমলা।। আর বললেন-

-বেয়াদপ কোথাকার! কোথায় ছিলি! কতদিন ধরে টেনশনে মরে যাচ্ছিলাম!
-আহ্ আম্মু কান ছাড়ো!!! ব্যাথা পাচ্ছি।
-পা আরো ব্যাথা! আরো পা! কতকিছু হয়ে গেলো! আর তুই এখন আসিস!পুলিশে খবর দিয়েচি তবুও তোকে পাচ্ছিলাম না!
-আম্মু কান টা ছেড়ে কথা বলো না। ব্যাথা পাচ্ছি তো।।। আম্মু আমি প্রজেক্টের কাজে ছিলাম!! ছাড়ো!!

খালামনি কান ছেড়ে দিলেন। সাঈদ ভাই কান ঢলতে ঢলতে “উহু” করছেন। মা-ছেলের ঘটনা দেখে আমরা সবাই হেসে দেই। এরপর তিনঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে চলে আসি সাঈদ ভাইয়ের বাসায়। ভাই আমাদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে কোথাও চলে গেলেন।

বাসায় পৌছে বাবাকে পুরো ঘটনা জানানো হয়। বাবা অফিস থেকে ছুটি পাবেননা বলে এখানে নিতে আসতে সপ্তাহখানিক সময় লাগবে। বাবা বলেছেন শুক্রবার এসে আমাদের দুবোন আর মাকে নিয়ে চলে আসবেন। খালামনি আমাদের যেতে দিবেননা তাই নানা বাহানা দেখাচ্ছেন।

সবাই যার যার রুমে চলে আসি। রেষ্ট নেই। খালুর কোয়াটারের কাজে ব্যস্ত আছেন, এজন্য এ সপ্তাহ আসতে পারবেননা। মা খালামনি দুজনে একসাথে থাকবেন।

.

.

রাতের খাবার খেয়ে পড়তে বসেছি। বিছানায় বই-খাতা ছড়িয়ে বসে আছি।একটা ম্যাথ মিলছেনা। কলমের ক্যাপ একনাগাড়ে কামড়ে যাচ্ছি। হঠাৎ আমার ফোনের মেসেজ টিউন বাজলে দেখি সাঈদ টেক্সট করেছেন- “নাবিলা রুমে আয় কুইক!
সারাদিন পর মহাশয় জুনায়েদ সাঈদ আমাকে স্মরন করেছেন। আহা কী কপাল!!ধন্য আমি ধন্য!! আমি রুমে যেয়ে দেখি সে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। আমি বিছানার কাছে যেয়ে বললাম-

-জাহা আজ্ঞা, মহারাজ। আমি আপনার জন্য কোন কামলামি খাটতে পারি!!
-ইয়াক! কি বলছিস এসব। ফাউল ওয়ার্ড ইউজ করছিস কেন!
-ভাই আমি পড়তে বসেছিলাম। পড়ার মুডটাই শেষ করে দিলে।
-বস এখানে।
-আমি বসতে আসিনি! যা কাজ আছে তাড়াতাড়ি বলো!
-দরজা লাগিয়ে আয়।
-না। মা আমাকে রুমে না পেলে সন্দেহ করবে।।
-দরজা লাগাতে বলছি!

আমি যেয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে উনার মাথার কাছে বসলাম।উনি মাথা কোলে উঠিয়ে বললেন-
-নাবিলা,
-বলো।
-দিপকে মেরে ফেলছি।
-কি বললে!!
-দিপকে মেরে ফেলছি।
-কখন কীভাবে!
-লাবিব যে এসেছিল সেটা বুঝেছিস?
-হ্যাঁ।
-লাবিবের সাথে যে পুলিশ ফোর্স এসেছিল, সেগুলো আব্বুর পাঠানো লোক। সেজেগুজে পুলিশ এসেছিল। বাড়িতে সবাইকে নামিয়ে দিয়ে অসম্পন্ন কাজটা সম্পন্ন করেছি নাবিলা।।
-তাই বলে মেরে ফেলবে নাকি!
-ও তোকে যেকয়টা আঘাত করেছিল। সবকয়টার হিসাব দিয়েছি।।
-তুমি এটা কী করলে!
-বেশি কিছু করিনি। জাষ্ট ছুড়ি দিয়ে কলিজাটা বের করে টুকরো করেছি। এরপর বস্তায় ভরে দিয়েছি।
-ছি!তুমি উঠো ! আমি চলে যাব এখান থেকে!
-নো। তুই এখানেই থাকবি।
-তুমি ওই দিপকে মেরে নিজের হাত কেন কালো করলে?
-ও তোর দিকে কুদৃষ্টি দিয়েছে মানে আমার উপর দিয়েছে। আর আমার উপর দৃষ্টি দিলে তাকে এই জুনায়েদ সাঈদ আস্ত রাখেনা।দ্যাটস হোয়ায়,শেষ করে দিছি।।
-ওর লাশ?
-একটা বিল্ডিং ফাউন্ডেশনের কাজ চলছে সেখানে ওর টুকরো ভর্তি বস্তা মাটির নিচে গুম করে দিয়েছি। কয়েকদিন পর একটা বিল্ডিং দাড়িয়ে যাবে।
-তুমি খারাপ কাজ করেছো! মোটেও ঠিক করোনি! উঠো!
-ঘুমাব। ঘুমাতে দে।
-আমারতো এখন তোমাকে ভয় করছে! তুমি যদি আমাকেও এভাবে মেরে ফেলো!
-তোকে মারব তারপর নিজেও মরব।
-তুমি এত ভয়ঙ্কর আগে জানতাম না সাঈদ!
-ভালোর ভালো খারাপের শেষ।এটাই আমার অবশেষ….

সাঈদ ভাই ঘুমিয়ে পড়লেন। আমি উনার ঘুমন্ত মুখপানে তাকিয়ে আছি। কখনো এমন রুপ দেখতে পাব। আদৌ জানা ছিলনা । জুনায়েদ সাঈদ- যাকে চিনতাম, সে ব্রিলিয়ান্ট, মাল্টি টেলেন্টেড, ইনটেলিজেন্ট, হ্যান্ডসাম, ইগোস্টিক, আনরোমান্টিক,কম কথা বলা ব্যক্তি। আর এখন যাকে চিনি সেতো…….

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি আমার রুমে শুয়ে আছি। গায়ে কাথা। হাই তুলে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে সাঈদ ভাইয়ের রুমের দিকে উকি দিলাম। রুম খালি। পরে নিচে নেমে দেখি মা আর খালামনি ডাইনিং টেবিলে বসে খাচ্ছেন। আমাকে দেখে খালামনি চেয়ার থেকে উঠে প্লেটে খাবার বেরে দিলেন। আমি খালামনিকে জিজ্ঞেস করলাম-

-খালামনি বাসায় এতো নিরবতা কেন?
-কই নিরবতা আমরা আছিনা।
-না মানে আপুকে দেখছিনা যে…
-তোর সাঈদ ভাই ভার্সিটিতে গেছে।
-তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম কি! জবাব দিচ্ছো কি!!
-আমি ভালো করেই বুঝেছি তুই যে তোর সাঈদ ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করছিস।
-ওহ্ আচ্ছা তাই। আচ্ছা ঠিকআছে। আচ্ছা মানে ওইযে…
-আচ্ছা আচ্ছা না করে মুখ ফুটে বল কি বলবি।
-আমি একটু যাইইইই???
-কই যাবি?
-ওইটা না বলতেই বুঝসো আর এইটা বুঝাইতেছি বুঝতে চাইসো না!!
-বুঝছি।। একটু কেন বেশিইইই যা। না করিনি।
-থ্যাংকু!!!থ্যাংকু!!

খালামনির কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে রওনা দিলাম সাঈদ ভাইয়ের ভার্সিটির দিকে। খালামনি সাথে করে গাড়ি, ড্রাইভার দুটোই দিয়ে দিয়েছেন। ফলে রাস্তায় তেমন বিঘ্ন ঘটেনি। ভার্সিটির দারোয়ানকে খালামনি ফোন করে আমার ব্যাপারে জানিয়ে দেওয়াতে রাস্তা আটকায়নি। সোজা ভার্সিটিতে এন্ট্রি!!

অনেক বড় ভার্সিটি। খুব সুন্দর, ছিমছাপ পরিবেশ। বাগানও আছে দেখছি। পুরো ভার্সিটি খুজতে লাগলাম সাঈদ ভাইয়ের ডিপার্টমেন্ট আসলে কোন জায়গায়।।নিজে নিজেই খুজতে লাগলাম।। ঘন্টা এক পার হওয়ার পর খুজেঁ পাই ভাইয়ের ডিপার্টমেন্ট! ফরথ্ ফ্লোর “PHYSICS DEPARTMENT”!! আমি ডিপার্টমেন্টে যেয়ে ভাইকে খুজতে থাকি। কিন্তু অনেক স্টুডেন্ট বসে থাকলেও ভাইয়ের কোনো হদিস মেলছেনা। সবাই কিছু না কিছু নিয়ে ব্যস্ত। কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই আমি যে দাড়িয়ে আছি। হঠাৎ একজন ভাইয়া আমাকে দেখে কাছে এসে বললেন-

-এক্সকিউজ মি!! আপনি কি এ ডিপার্টমেন্টের কেউ?
-না ভাইয়া। আমি এখানে একজনকে খুজছি।
-কিছু মনে না করলে নামটা জানতে পারি কাকে খুজছেন?
-জুনায়েদ সাঈদ, চেনেন?
-হ্যাঁ, কেন চিনবনা ও তো আমাদের বন্ধু। ও একটু আগে ক্যান্টিনের দিকে গিয়েছে। ওখানেই পাবে।
-ধন্যবাদ ভাইয়া।।

আবার চারতলা থেকে নেমে ক্যান্টিনের দিকে দিলাম। ক্যান্টিন পুরো ভরা। সব সিট ফিলআপ। কেউ গ্যাং করে বসে আছে, কেউ কাপল কাপল করে বসেছে। কিছুক্ষন দাড়িয়ে দাড়িয়ে খুজতেই দেখি সাঈদ ভাই চশমা চোখে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছেন। হাতে ফোন। বাম হাতে ” কফি ” লিখা কাপ। ডান হাতে মোবাইল। মনেহচ্ছে কিছু জোরছে টাইপিং করছে। টেবিলে রাখা একটা “বিল্ডিং নকশা মডেল”। আমি কাছে যেয়ে উনার বিপরীত সিটটা টেনে বসলাম। ওমা! এখনো মোবাইলেই ডুবে আছেন! আমি যে পাগলের মতো খুজতে খুজতে এখানে এসে বসেছি সেটা তিনি খেয়ালই করছেন না। আমি বললাম-

-হেই বয়!!
-চুপ থাক! লাত্থি না খেতে চাইলে চুপ!
-এই! আমি যে তোমার সামনে বসে আছি চোখে দেখো না!
-তোর দিকে না তাকিয়েও, 90 ডিগ্রি এন্গেলে দেখা যাচ্ছে এক গদর্ভ বসে আছে।
-এখানেও বকছো?
-তোকে হানিমুনের দিনও ইচ্ছামতো বকব সিউর থাক!
-এখন পযর্ন্ত প্রপোজ করতে পারেনি ! আবার হানিমুন !
-আমি এসব তাড়ছিড়া টাইপ কাজ করিনা।
-ফিহাকে তো ঠিকি প্রপোজ করেছিলে!
-নো, নেভার এভার! ও আমাকে প্রপোজ করেছিল, নট মি! আন্ডারস্টেন্ড।
-ইগোষ্টিক!
-ইয়েস আই নো।
-তুমি ভার্সিটিতে কেন এসেছো? আর এই মডেল কীসের?
-ইট ইজ এ প্রজেক্ট। দু সপ্তাহ আগে এসাইনমেন্ট ছিলো। কেমন হয়েছে?
-গুড!!

একটু পর ওই ঠিকানা বলা ভাইয়া সহ ছয়সাত জন ছেলে এসে সাঈদ ভাইয়ের সাথে মডেল নিয়ে কথা বলতে লাগল। সম্ভবত উনারা গ্যাং মেম্বার। ডিসকাস শেষে সবার দৃষ্টি এখন আমার দিকে, কে আমি !! একজন সাঈদ ভাইকে জিজ্ঞেস করল-
-দোস্তো মেয়েটা কে???ওর নাম কি?
-ওর নাম নাবিলা।বাট তোরা ফিহা ডাকিস।
-কীরে ওই ফিহার মতো এটাও গার্ল…
-নাহ্। গার্লফ্রেন্ড না।

আমি অপেক্ষায় আছি সাঈদ ভাই আমার ব্যাপারে বন্ধুদের কাছে কি বলবেন!! আমি অধীর হয়ে বসে আছি উনি জবাবটা কি দেন!! ভালো কিছুই দিবেন হয়তো!!কেননা গার্লফ্রেন্ড পরিচয় দেননি!!

-কী রে সাঈদ বলস না কেন? কী হয় তোর?
-আমার খালাতো বোন। ছোটখালামনির মেয়ে।ছোট বোন।
-ও আই সি। নাইস টু মিট ইউ ফিহা।

আমি সাঈদ ভাইয়ার জবাব শুনে হাত মুঠ করে চেপে বসে আছি।। কী জবাব দিলেন এটা! আমি উনার বোন। বাহ্!! সেইরকম একটা জবাব! কান্না করতে ইচ্ছে করছে! উনি আমার পরিচয়, এতো লাজাবাব ভাবে দেওয়ার জন্য!!

আমি ভাইয়াগুলোকে হাসি মুখে বিদায় দিয়ে সিট ছেড়ে বাইরে চলে গেলাম। সাঈদভাই একবারো আমার পিছু আসলেন না। উনি সিটে বসেই কুল এন্ড কাম হয়ে কফি খাচ্ছেন। হি ইজ জাস্ট এ লায়ার!!

-চলবে

One thought on “যদি তুমি জানতে !! Part- 18

  • Captain Salazar

    দূর ফালতু একটা গল্প
    ভাবছিলা৷ থ্রিলার টাইপের কিছু একটা হবে আর বালে খালাত বোন খালভাই এর এক বাল মার্কা লাভ স্টোরি হুদাই টাইম নষ্ট করলাম। রাইটারের চিন্তাধারা পূরাই বাংলা ছবির মতোর হইছে 💔

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *