Childhood marriage 2 !! Part- 35
#পর্ব-৩৫
#লেখিকা-সানজিদা সেতু
আয়ানঃ Oh come on Chowa,তোমার প্রজেক্টের কাজতো শেষ so officially it is our last day of work together.লাস্ট ডে হিসেবে সি অফ করার সুযোগতো দিতেই পারো তাইনা?Just as a friend,not more than that I promise…
ছোঁয়াঃ Okey let’s go
(কিছুক্ষণ পর)
আয়ান ডাইভ করছে আর ছোঁয়া চুপচাপ বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।কেউ কোন কথা বলছে না,আসলে কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না।নিরবতা ভাঙলো আয়ান…
আয়ানঃ ছোঁয়া…
ছোঁয়াঃ জ্বি?
আয়ানঃ একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
ছোঁয়াঃ কি কথা?আচ্ছে বলেন
আয়ানঃ সায়ন…I mean to say তোমার হাজবেন্ড…না মানে তোমার আর সায়নের রিলেশনটা…উফ!কিভাবে যে বলব?সায়নই কি তোমার হাজবেন্ড?
(কথাগুলো বলেই হাফ ছেড়ে বাঁচলো আয়ান,যেন বুকের উপর থেকে ভারি কোন বোঝা নেমে গেল।এদিকে ছোঁয়ার অবস্থা ঠিক উল্টো,কথাগুলো শুনে রীতিমত চমকে গেছে,কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না)
আয়ানঃ আ..আমি কি..ভুল কিছু বললাম?
ছোঁয়াঃ আ..আপনি কিভাবে…
আয়ানঃ কিভাবে জানলাম তাইতো?
ছোঁয়াঃ হ্যাঁ,কিন্তু আপনি…
আয়ানঃ ভেরি ইজি চোখ কান খোলা রাখলে যে কেউই ব্যপারটা ধরতে পারবে
ছোঁয়াঃ তারমানে সবাই…
আয়ানঃ ডোন্ট ওরি,আর কেউই জানে না।সবার কি আর অত সময় আছে?সবাইতো শুধু তামাশা দেখায় ব্যস্ত,এসবের পেছনের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করার ইচ্ছে বা সময় কোনটাই কারো নেই সো চিন্তার কোন কারণ নেই
ছোঁয়াঃ কিন্তু আপনি কিভাবে…
আয়ানঃ সায়নের বিহেভ দেখে আগেই সন্দেহ হয়েছিল বাট আমি ভেবেছিলাম হয়তো আমার মতই ও তোমাকে পছন্দ করে,এর থেকে বেশি কিছু এক্সপেক্ট করিনি।আস্তে আস্তে খেয়াল করলাম তোমার ব্যপারে ও যতটাই ইন্টারফেয়ার করুক না কেন তুমি কোন প্রতিবাদ কর না আর সায়নও দিন দিন তোমার উপর অধিকার খাটাতে শুরু করলো!আমি অনেকটাই ইনসিকিউর ফিল করছিলাম তাই সেদিন তাড়াহুড়ো করেই তোমাকে প্রপোজ করে ফেলেছিলাম বাট…
(এই পর্যন্ত বলে আয়ান একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো তারপর আবার বলতে শুরু করলো)
আয়ানঃ সেদিন তুমি ম্যারিড শোনার পর আমার রিয়্যাকশনটা কেমন ছিল তোমার ম্পনে আছে?I just step back but Sayon?ওর রিয়্যাকশনটা ছিল সম্পূর্ণ উল্টো,তোমার হাত ধরে সবার থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।কোন ছেলে যতটাই ডেস্পারেট হোক না কেন মেয়েটা অন্য কারো স্ত্রী এটা ফার্স্ট টাইম শোনার পর এতটা ঠান্ডা মাথায় থাকা কোন ছেলের পক্ষেই সম্ভব নয় যদি না সে আগে থেকেই ব্যপারটা জানতো।আর বাঁকিটা আমি জাস্ট গেস করে তোমাকে বলেছিলাম আর তুমি স্বীকার করে নিলে!
ছোঁয়াঃ আ..আমি..আসলে…
আয়ানঃ চিন্তা কর না আমি কাউকে বলবো না
ছোঁয়াঃ উনার দিকে অবাক হয়ে তাকালাম
আয়ানঃ দেখো ছোঁয়া,আমি জানিনা তোমরা ঠিক কি কারনে ব্যপারটা সবার থেকে লুকাচ্ছো বাট ইট’স ইয়োর লাইফ সো ডিসিশনটাও তোমাদেরই হওয়া উচিত তাই তোমরা না চাইলে আমি কখনোই কাউকে জানাবো না
ছোঁয়াঃ থ্যাঙ্কস
আয়ানঃ সায়ন কিন্তু তোমাকে অনেক ভালোবাসে
ছোঁয়াঃ জ্বি!
আয়ানঃ অবাক হওয়ার কিছু নেই,আমার খুব ভালোভাবেই মনে আছে সেদিন ল্যাবে তোমাকে সেন্সলেস অবস্থায় দেখে ওর ঠিক কি অবস্থা হয়েছিল নিজ চোখে না দেখলে হয়তো আমি নিজেও বিশ্বাস করতাম না।He was completely lost and wanted to kill me.সায়নকে আমি অলমোস্ট পাঁচ বছর ধরে চিনি,অতটা ক্লোজ না হলেও এটা জানি ও প্রচণ্ড কুল মাইণ্ডেড একটা ছেলে বাট তোমার ক্ষেত্রে ও সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা মানুষ।আর ওই স্ক্যান্ডালটার পরতো…সায়নকে এতটা ফিউরিয়াস বোধহয় কেউ কক্ষনো দেখেনি,হয়তো দেখবেও না…
(ছোঁয়া কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না তাই মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে)
আয়ানঃ একটা ফ্রি এ্যাডভাইস দিব?
ছোঁয়াঃ কি?
আয়ানঃ সত্যিকারের ভালোবাসা পাওয়াটা কিন্তু অনেক কঠিন,এই ভাগ্যটা কিন্তু সবার হয় না তাই বলছি তোমাদের মধ্যে যত বড় প্রবলেমই বা থাকুক না কেন just try to patch it up,don’t loose him…
ছোঁয়াঃ উনি হয়তো ঠিকই বলছেন,আমি বোধহয় একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলছি।নাহ আর না,ভাবছি এবার উনাকে বলে দিব উনি চাইলে সবাইকে আমাদের বিয়ের ব্যপারে জানিয়ে দিতে পারেন…(মনে মনে)
আয়ানঃ ছোঁয়া…ছোঁয়া…হ্যালো…
ছোঁয়াঃ (চমকে উঠে)জ্বি?
আয়ানঃ আরে আমরা চলে এসেছি সো..আমার মনে হয় তোমার এখন নেমে যাওয়া উচিত।নাকি এখানেই সারারাত….
ছোঁয়াঃ জ্বি!
আয়ানঃ আরে I was just joking don’t take it seriously
ছোঁয়াঃ ওহ I am really sorry I was just…আমি এক্ষুণি নেমে যাচ্ছি
আয়ানঃ It’s okey…
ছোঁয়াঃ সিটবেল্টটা নিয়ে টানাটানি করছি বাট খুলতে পারছি না,প্রবলেমটা কি বুঝতে পারছি না
আয়ানঃ কি হলো,কোন সমস্যা?ওহ আই থিঙ্ক জ্যাম হয়ে গেছে,let me see.অনেক কষ্টে ছোঁয়ার সিটবেল্টটা খুলে দিলাম,এট লাস্ট…ডান…
ছোঁয়াঃ থ্যাঙ্কস…এন্ড বাই…
আয়ানঃ Bye..see you…
অনেক্ষণ ধরেই ছোঁয়ার হোস্টেলের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে সায়ন।প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে,বৃষ্টিতে ঠিকমত দাঁড়িয়ে থাকতেও রীতিমত বেগ পেতে হচ্ছে,ছাতা মাথায় দিয়েও কোন লাভ হয়নি,বৃষ্টির ঝাপটায় অলরেডি একেবারে কাক ভেজা হয়ে গেছে কিন্তু তবুও একই জায়গায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে সায়ন।যে ভাবেই হোক আজকে যে ছোঁয়ার সাথে ওকে কথা বলতেই হবে।কাল থেকে এতবার ওকে ফোন দিয়েছে,ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু মেয়েটা কিছুতেই ওর সাথে কোন কথা বলতে রাজি হচ্ছে না,ওকে দেখলেই ছুটে পালিয়ে যাচ্ছে!সন্ধ্যার আগে লোপাকে ফোন দিয়ে জানতে পেরেছে ছোঁয়া এখনও রুমে ফেরেনি,সেই থেকে এখানেই ওর জন্য অপেক্ষা করছে,আয়ানদের বাসায় যায় নি কারণ ছোঁয়া এমনিতেই রেগে আছে তার উপর এমন কিছু করলে আরও বেশি রেগে যাবে তাই আর রিস্ক নেয়নি…
বৃষ্টির পানিতে ভিজে ভিজে ঠাণ্ডায় একেবারে জমে গেছে সায়ন,লম্বা সময় ধরর ভেজার কারণে শীতে রীতিমত কাঁপতে শুরু করেছে।ঠিক তখনই গাড়িটা রাস্তার পাশে এসে থামলো,সায়ন যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল তার থেকে সামান্য একটু দূরেই থেমেছে গাড়িটা তাই না চাইতেও চোখ পড়ে দেল ওদিকে আর তারপর যা দেখলো তাতে চোখের সামনে পুরো অন্ধকার ঘনিয়ে আসলো।গাড়িটা আয়ানের আর ওর পাশের সিটে বসে আছে ছোঁয়া,শুধু বসে আছে বললেও ভুল হবে,সায়ন যখন ওদিকে তাকিয়েছে আয়ান তখনই ছোঁয়ার সিটবেল্টটা খোলার জন্য ওর দিকে ঝুঁকে পড়েছে আর দূর থেকে সায়ন ওদেরকে ওভাবে দেখে ব্যপারটা ঠিক বুঝতে পারেনি।উল্টো ভুল বুঝে বসে আছে আর তাইতো আয়ানের গাড়িটা বেরিয়ে যেতেই রাগে ফেটে পড়ে ছোঁয়ার দিকে ছুটে গেল
ছোঁয়াঃ সবে হোস্টেলের দিকে পা বাড়িয়েছি,হঠাৎই কেউ পেছন থেকে মুখটা চেপে ধরলো!কিছু বুঝে উঠার আগেই নিজেকে হোস্টেলের পেছন দিকের রাস্তার ধারে আবিষ্কার করলাম।ভয়ে ভয়ে চোখ মেলে তাকাতেই দেখলাম আমাকে ওয়ালের সাথে চেপে ধরে উনি রেগে মেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন,উনি এমন কেন করছেন?আমার মাথায়তো কিছুই ঢুকছে না…
সায়নঃ এত রাতে কোথা থেকে আসছো?
ছোঁয়াঃ সেটা কি আপনাকে বলতে হবে?
সায়নঃ হ্যাঁ বলতে হবে,তুমি কোথায় যাচ্ছো,কি করছো,কার সাথে বেড়াচ্ছো সবকিছু আমাকে বলতে হবে।আমি তোমার স্বামী তাই তোমার ব্যপারে খুটিনাটি সবকিছু আমাকে জানাতে হবে বুঝেছো?
ছোঁয়াঃ প্লিজ একটু আস্তে কথা বলুন আর একটু দূরে সরে দাঁড়ান প্লিজ।আমার ভীষণ ভয় করছে…
সায়নঃ কেন ভয় কেন করবে আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক?
ছোঁয়াঃ এখনতো তার থেকেও…
সায়নঃ হ্যাঁ তাতো হবেই,আমি কাছে আসতে চাইলেইতো আমাকে বাঘ ভাল্লুক মনে হবে আর আয়ান যখন কাছে আসে তখন?তখন ভয় লাগে না?তা লাগবে কেন,ওকেতো তোমার প্রেমিক পুরুষ মনে হয় তাই ভয় পাওয়ার প্রশ্নই উঠে না…
ছোঁয়াঃ কি..ক..কি যা-তা বলছেন!
সায়নঃ আমি যা-তা বলছি তাইনা,আর ওই আয়ান যা কিছুই বলে সবই মিষ্টি লাগে তাইনা?
ছোঁয়াঃ চুপ করুন আপনি প্লিজ…আপনার দোহায় লাগে…
সায়নঃ এখন বুঝেছি সেদিন আমার সাথে নাইট স্পেণ্ড করা নিয়ে তোমার এত প্রবলেম কেন হচ্ছে
ছোঁয়াঃ মানে?
সায়নঃ মানেটা খুব পরিষ্কার,ওই আয়ানের সাথে ফষ্টিনষ্টি করবে তাই…
ছোঁয়াঃ শাট আপ…আর একটাও বাজে কথা বললে কিন্তু…আপনাকে অনেক ভাল ভেবেছিলাম,কখনও চিন্তাও করিনি আপনার মন মানসিকতা এতটা নিকৃষ্ট!আপনি না বললেন আপনি আমার স্বামী,তাহলে নিজের স্ত্রীর সম্পর্কে এমন নিকৃষ্ট চিন্তাভাবনা একটা মানুষ কিভাবে করতে পারে!
সায়নঃ আমার চিন্তাভাবনা নিকৃষ্ট তাইতো?ঠিক আছে এতদিন অনেক সুযোগ দিয়েছি তোমাকে আর না,এখন বুঝবে নিকৃষ্ট বিহেইভিয়ার কাকে বলে…
ছোঁয়াঃ এ..এই..কি করতে চাইছেন আপনি?খবরদার..একদম কাছে আসার চেষ্টা করবেন না,নাহলে কিন্তু আ..ম…
(ছোঁয়া আর একটা কথাও বলতে পারলো না কারণ ততক্ষণে সায়ন ওর উপর নিজের পুরুষত্ব জাহির করতে ব্যস্ত।ছোঁয়া মুখে কিছু না বলতে পারলেও ওর চোখ কিন্তু ঠিকই কথা বলছে,দুচোখ বেয়ে যেন বুকের মধ্যে জমে থাকা কষ্টগুলো অঝোর ধারায় বেরিয়ে আসছে।ছোঁয়ার চোখের পানি দেখেই সায়ন ওর থেকে একটু দূরে সরে আসলো,অনেকটা সংকোচ নিয়েই ওর দিকে তাকালো।এদিকে ছাড়া পেয়েই ছোঁয়া ধপ করে মাটিতে বসে পড়লো যেন শরীরে যেটুকু শক্তি অবশিষ্ট ছিল সবই শেষ হয়ে গেছে।সায়নের পায়ের কাছে বেয়ে অঝোরে চোখের পানি ফেলছে…)
ছোঁয়াঃ প্লিজ…আ..আমার কাছে আস..বেন না…প্লিজ…
(সায়নও এবার ছোঁয়ার সামনে বসে পড়লো,দুহাতে ওর মুখটা ওর দিকে তুলে ধরলো,আলতো হাতে ওর চোখের পানি মুছে দিচ্ছে।ছোঁয়া এখনও ভয়ে কুঁকড়ে আছে,সায়নের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না)
সায়নঃ কেঁদোনা প্লিজ,I am sorry আমার ভুল হয়ে গেছে আসলে মাথাটা অনেক গরম হয়ে গিয়েছিল তাই…আমার উচিত ছিল ঠিক কি হয়েছে একবার তোমাকে জিজ্ঞেস করে নেওয়া।আমার ভুল হয়ে গেছে,আর কক্ষনো এমন হবে না আই প্রমিজ।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও…
ছোঁয়াঃ প্লিজ আমার কাছে আসবেন না,আ..আমার না আপ..আপনাকে অনেক ভয় লাগছে..(ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে)
সায়নঃ Okey okey just cool down এই দেখো আমি আর তোমার কাছাকাছি যাচ্ছি না।এখন চলো তোমাকে হলে রেখে আসি…
(ছোঁয়া কোন জবাব দিল না ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে ওখানেই বসে রইলো)
সায়নঃ Shit..shit..shit..এটা আমি কি করলাম!কেন যে রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারি না?I just hate myself.কিন্তু এখন কি করব?ওতো কিছুতেই আমার সাথে যেতে চাইছে না আর সারারাত এখানেতো থাকা যাবে না তাহলে…হ্যাঁ পেয়েছি…হ্যালো লোপা…
লোপাঃ কি ব্যপার ভাইয়া,আপনি এত রাতে!আর ছোঁয়া কি আপনার সাথেই আছে?কখন রেখে যাবেন ওকে?রাততো অনেক হয়ে গেল তাই বলছিলাম…
সায়নঃ লোপা আসলে এই জন্যই তোমাকে…
লোপাঃ কি ব্যপার ভাইয়া?আপনার গলাটা এমন লাগছে কেন?কোন সমস্যা?
সায়নঃ হ্যাঁ মানে বলছিলাম তুমি এক্ষুণি একবার হোস্টেলের পেছন দিকে চলে আসবে?খুব জরুরি দরকার আছে প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি আসো,আমি দারোয়ানকে বলে দিচ্ছি কোন প্রবলেম হবে না
লোপাঃ কিন্তু ভাইয়া…যাব্বাবা ফোনটা কেটে দিল!আরে কি দরকার সেটাতো বলতে পারতো দূর ছাই আর ভাল্লাগে না…
(কিছুক্ষণ পর)
সায়ন রাস্তায় পায়চারি করছে,বলায় বাহুল্য লোপার জন্য ওয়েট করছে।ছোঁয়া এখনও ঠিক আগের জায়গাতেই বসে আছে,দুই হাঁটুর মাঝে মুখ গুঁজে চুপটি করে বসে আছে।লোপাকে এক নজর দেখেই সায়ন ওর দিকে ছুটে গেল
সায়নঃ ওহ লোপা,থ্যাঙ্ক গড তুমি চলে এসেছো
লোপাঃ কি ব্যপার ভাইয়া,কি হয়েছে একটু বলবেন?
সায়নঃ ও হ্যাঁ আমার সাথে চলো তাহলেই বুঝতে পারবে
(কিছুদূর যেতেই লোপার ছোঁয়ার দিকে চোখ পড়লো আর চোখ পড়তেই ওর দিকে ছুটে গেলো)
লোপাঃ একি ছোঁয়া!কি হয়েছে তোর?
(ছোঁয়া লোপাকে জড়িয়ে ধরে আবারও কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো)
লোপাঃ কি রে,কথা বলছিস না কেন?কি হয়েছে আমাকে বল…সায়ন ভাই?আপনি এটলিস্ট বলেন…
সায়নঃ ইয়ে মানে লোপা সব দোষ আমার,রাগের মাথায় ওর সাথে…আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে আই এ্যাম সরি
লোপাঃ ভুল মানে?আপনি ঠিক কি করেছেন আমাকে খুলে বলবেন?ওর এই অবস্থা হল কিভাবে?
সায়নঃ ওসব আমি পরে খুলে বলবো,আপাতত আমার একটা হেল্প কর প্লিজ।ওকে এক্ষুণি হলে নিয়ে যাও প্লিজ…
লোপাঃ আচ্ছা ঠিক আছে,আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি।আপনার হিসেবতো আমি পরে নিচ্ছি,চল ছোঁয়া…
(দুদিন পর)
ছোঁয়া দুদিন ধরে নিজের রুম থেকে বের হয়নি,সায়ন অনেকভাবেই ওর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে কিন্তু ও কোনভাবেই রেসপন্স করেনি।সেদিন রাতের ব্যপারে লোপাকে ও একটা কথাও বলেনি কিন্তু সায়ন নিজেই ওকে সব খুলে বলেছে।ছোঁয়ার থেকে আয়ানের ব্যপারটা শুনে লোপায় সায়নের ভুলটা ভেঙ্গে দিয়েছে আর সব শুনে সায়ন আরও বেশি ভেঙ্গে পড়েছে।ছোঁয়ার কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে আর লোপা?সায়নের উপর রেগে থাকলেও এই ব্যপারে ওকে হেল্প করতে রাজি হয়েছে শুধুমাত্র ছোঁয়ার জন্য আর তাইতো সায়নের সাথে দেখা করাবে বলে ছোঁয়াকে আজকে এই পড়ন্ত বিকেলে এই পার্কে নিয়ে এসেছে।ছোঁয়া কিন্তু এসবের কিছুই জানে না,লোপার জেদের জন্যই ওর সাথে আসতে রাজি হয়েছে।পার্কের গেট থেকে কিছুটা এগোতেই সায়নের সাথে দেখা হয়ে গেল ওদের
লোপাঃ আরে ভাইয়া,আপনি এখানে?
সায়নঃ হ্যাঁ ওই একটু ঘুরতে বেরিয়েছিলাম,তোমরা এখানে?
লোপাঃ আমরাও একটু ঘুরতেই বের হয়েছিলাম
সায়নঃ ওহ তাহলে চলো ওদিকটায় গিয়ে বসি
লোপাঃ হ্যাঁ তাই ভাল,চল ছোঁয়া
(কিন্তু ছোঁয়া ওর কোন কথায় শুনলো না,সায়নের দিকে একবার তাকিয়েই ছুটে পালিয়ে গেল।লোপাও ওর পিছু পিছু ছুটতে লাগলো)
লোপাঃ এই ছোঁয়া…কোথায় যাচ্ছিস তুই?দাঁড়া বলছি…
(কিছুক্ষণ পর)
ছোঁয়া জানালার গ্রিল ধরে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।পাশের ছাদটার কার্নিশে একটা চড়ুইপাখি ছোট্ট একটা বাসা বেঁধেছে,পশ্চিম আকাশে ঘন কালো মেঘ জমেছে।যেকোন সময় ঝড় উঠে আসতে পারে আর ঝড় উঠলেই পাখিটার বাসাটা ভেঙ্গে পড়বে।ছোঁয়া একমনে পাখি আর তার বাসাটার দিকে তাকিয়ে আছে,তখনই লোপা ঝড়ের বেগে ঘরে এসে ঢুকলো…
লোপাঃ এসবের মানে কি ছোঁয়া?প্রবলেমটা কি?
ছোঁয়াঃ আমার প্রবলেম কি!তুই বল তোর প্রবলেমটা কি,তুই কেন বুঝছিস না ওই লোকটাকে আমি আর একবারও দেখতে চাই না,উনাকে আমার জাস্ট সহ্য হচ্ছে না তারপরেও তুই…
লোপাঃ কেন কি দোষ উনার?হ্যাঁ আমি মানছি উনি সেদিন রাতে যা করেছেন ভুল করেছেন কিন্তু তারজন্যতো উনি হাজারবার তোকে সরি বলার চেষ্টা করেছেন কিন্তু তুই…
ছোঁয়াঃ সরি বললেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়?
লোপাঃ না হলেও উনিতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন কিন্তু তুই..তুই কি করেছিস?তুই কি কখনও উনাকে একবারও সরি বলেছিস?
ছোঁয়াঃ কেন আমি কেন উনাকে সরি বলতে যাব?কি দোষ আমার?
লোপাঃ শোন ছোঁয়া,এসবের মধ্যে তোর দোষও কিন্তু কম না।আমি মানছি উনি অতীতে তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছেন কিন্তু তারপরতো উনি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন।তুই এখানে আসার পর থেকেইতো উনি তোর মন জয় করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন কিন্তু তুই কি করছিস?কন্টিনিউয়াসলি মানুষটাকে এভয়েড করে যাচ্ছিস,আরে বাবা পুরুষ মানুষ,ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলেতো এমন কাণ্ড করবেই…
ছোঁয়াঃ তোর কথা শেষ?এবার কি আমি কিছু বলতে পারি?
লোপাঃ কি বলবি তুই?আর কি বলার আছে তোর?
ছোঁয়াঃ ওই ছাদের কার্নিশের চড়ুইপাখিটাকে দেখেছিস?ওর আর আমার জীবনটা অনেকটাই একরকম,ওর জীবনটা যেমন অনিশ্চিত আমার জীবনটাও ঠিক তেমনই।যখনই ভাবি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে তখনই কোন না কোন ঝড় এসে জীবনটাকে লণ্ডভণ্ড করে দেয়…
চলবে…