Childhood marriage 2 !! Part- 36
#পর্ব-৩৬
#লেখিকা-সানজিদা সেতু
লোপাঃ হেঁয়ালী না করে কি বলতে চাইছিস স্পষ্ট করে বল
ছোঁয়াঃ সেদিন সারাদিন তোদের বলা কথাগুলো ভেবেছিলাম,রাতে যখন আয়ান ভাইয়া আমাকে লিফট দিল উনিও একই কথা বলেছিল জানিস।আমিতো ডিসিশন নিয়েই নিয়েছিলাম রুমে ফিরেই উনার সাথে প্যাচ আপ করে নিব,শুধু তাই না সবাইকে আমাদের বিয়ের ব্যপারে ডিক্লেয়ার করে দিব কিন্তু তার আগেই উনি…সব আবার এলোমেলো করে দিলেন…
লোপাঃ দেখ ছোঁয়া,আমি বুঝতে পারছি তোর উপর দিয়ে কি গেছে।একজন মেয়ে হিসেবে তোর মনের অবস্থা আমি বুঝি কিন্তু…
ছোঁয়াঃ না বুঝিস না,তোরা কেউ আমার কষ্টগুলো বুঝিস না,কখনও বুঝবিও না।সেই ছোটবেলায় যখন বিয়ে কি জিনিস কিছুই বুঝতাম না তখন উনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।উনার উপর দিয়ে যেই ঝড়ই যাক না কেন তা নিশ্চয়ই আমার থেকে বেশি না।বিয়ের দিনই বাবা মারা গেল,মা আর ছোটবোনকে ওই অবস্থায় রেখেই আমাকে উনার সাথে চলে আসতে হল আর উনি?সবকিছুর জন্য আমাকে দায়ী করে দিনের পর দিন আমার সাথে যাচ্ছে তাই ব্যবহার করে গেছেন!বলতে পারিস কি দোষ ছিল আমার?
লোপাঃ কেন শুধু শুধু পুরনো কথা উঠাচ্ছিস বলতো,ওসবতো সেই কবেই শেষ হয়ে গেছে।শোন ওসব বাদ দে,একটা দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যা আর সায়ন ভাইকে ক্ষমা করে দে
ছোঁয়াঃ বলা যতটা সহজ,করাটা কিন্তু অতটাই কঠিন।তুই ওসব বুঝবি না,আমার জায়গায় তুই থাকলে ঠিকই বুঝতি
লোপাঃ দেখ ছোঁয়া,তুই কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি করছিস
ছোঁয়াঃ আমি বাড়াবাড়ি করছি!আরে উনি আমার সাথে যা করেছেন তার কাছেতো এটা কিছুই না।সাত বছর আগে উনি যখন আমাকে ফেলে বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিলেন তখন কি একবারও ভেবে দেখেছিলেন আমার কি হবে?ওই ছোট্ট বয়সে আমাকে শুনতে হয়েছে আমি নাকি অলক্ষুণে,অপয়া,আমার জন্যই নাকি উনি বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন।মা-বাবা আমাকে কখনই কিছু বলতেন না কিন্তু আমি জানি উনারা নিজেদেরকেই এসবের জন্য দায়ী ভেবে মনে মনে কষ্ট পেতেন।যখন স্কুলে যেতাম দেখতাম সবাই আমার দিকে কেমন যেন অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছে,একেক জনের চোখের চাহনি একেক রকম।কেউ রাগী চোখে,কেউ ঘৃণার দৃষ্টিতে, কেউ বা করুণার চোখে আবার কেউ এমনভাবে তাকাতো যেন অশুভ কোন কিছুর দিকে তাকাচ্ছে,যেন চোখ সরিয়ে নিলেই ওদের মারাত্মক কোন ক্ষতি হয়ে যাবে!সাত সাতটা বছর আমাকে সবার এমন রক্তচক্ষু সহ্য করতে হয়েছে,কেন কি দোষ ছিল আমার?
লোপাঃ আহ ছোঁয়া,বাদ দে না…
ছোঁয়াঃ বাদইতো দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু উনি তা হতে দিলেতো…একটা জিনিস কি জানিস লোপা,যেকোন রিলেশনশিপে বিশ্বাস জিনিসটা সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর।যেই রিলেশনশিপে বিশ্বাস জিনিসটা নেই সেটা ভিত্তিহীন একটা স্তম্ভের মত নড়বড়ে হয়ে দুলতে থাকে।আমাদেরটাও হয়েছে তাই,উনি এতদিনেও আমাকে চিনতে পারলেন না!আমি কেমন,এমন একটা কাজ আমি করতে পারি কিনা বিন্দুমাত্র চিন্তা না করেই উনি আমাকে এতগুলো বাজে কথা শুনিয়ে দিলেন!উনি কিভাবে পারলেন বলতে পারিস?
লোপাঃ দেখ ছোঁয়া,আমি জানি ভাইয়া ভুল করে ফেলেছেন।আসলে পুরুষ মানুষের রাগটা একটু বেশি আর রেগে গেলে নিজের উপর কোন কন্ট্রোলই থাকে না তাই…দেখ উনি উনার ভুল বুঝতে পেরেছেন তাইতো তোর কাছে বার বার সরি বলছেন তাই বলছি…
ছোঁয়াঃ রাগ অভিমান এসব কি শুধু উনারই আছে?আমার নেই?সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি,উনার সাথে যখনই কোন খারাপ কিছু হয়েছে তারজন্য উনি সবসময় অন্যকে দায়ী করে এসেছেন।উনি কি কখনও চিন্তা করে দেখেছেন যাদের উপর উনি এসব দোষ চাপাচ্ছেন তাদের জায়গায় থাকলে উনি কি করতেন?না দেখেননি,নিজে যা চেয়েছেন সেটাই উনার চাই তার বাইরে কোনকিছু হলেই দোষটা অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে পালিয়ে গেছেন কেন বলতে পারিস?
লোপাঃ সবই বুঝলাম কিন্তু ওসবতো অতীত,এখনতো উনি আর অমন নেই তাইনা?
ছোঁয়াঃ কে বলেছে?উনি এখনও ঠিক আগের মতই আছেন তা নাহলে কাল রাতে অমনটা করতে পারতেন না
লোপাঃ দেখ ছোঁয়া,ওটা জাস্ট একটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং আর উনি নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছেন তাই বলিছি…
ছোঁয়াঃ এ ব্যপারে আমি আর একটা কথাও শুনতে চাই না।তোর যদি আর কোন কথা না থাকে তাহলে…
লোপাঃ ঠিক আছে যাচ্ছি,তুই থাক তোর এটিটিউড নিয়ে…
কেটে গেছে আরও কিছুদিন।সায়নের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ছোঁয়া এখনও ওর উপর মারাত্মক রকম রেগে আছে,ওর ফোন রিসিভ করাতো দূরে থাক সামনাসামনি দেখা হলেও কোন কথা বলেনি।ওকে দেখলেই একশো হাত দূর দিয়ে পালিয়েছে।এরমধ্যেই ক্যাম্পাসে বেশ লম্বা একটা ছুটি পড়ে গেল,সায়ন ভেবেছিল এবারে দুজন একসাথে বাড়ি যাবে আর একবার ওখানে গেলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু না,ম্যাডামেরতো বাড়ি যাওয়ার কোন প্ল্যানই নেই।সে নাকি ছুটিটা হলেই কাটাবে আর হল ভ্যাকেন্টের সময় নাকি স্থানীয় এক বান্ধবীর বাসায় বেড়াবে যাবে।খবরটা শোনার পর থেকেই সায়নের মেজাজটা একেবারে সপ্ত আসমানে চড়ে আছে,ছোঁয়ার ওই বান্ধবীটার উপরও চরম বিরক্ত হয়ে আছে।শেষমেষ একেবারেই হাল ছেড়ে দিয়েছে…
আজ সকাল থেকেই লোপা নিজের ব্যাগ গোছানো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে,ছোঁয়া বাইরে থেকে এসেই এসব দেখে রীতিমত ভড়কে গেছে
লোপাঃ কি রে এভাবে কি দেখছিস?
ছোঁয়াঃ তুই হঠাৎ ব্যাগ গোছানোর পেছনে পড়লি যে,তুই না বলেছিলি হল ভ্যাকেন্ট না হওয়া পর্যন্ত তুই আমার সাথেই থাকবি…
লোপাঃ হ্যাঁ থাকব তো
ছোঁয়াঃ তাহলে?
লোপাঃ কারণ আমি যেখানে যাচ্ছি তুইও আমার সাথে যাচ্ছিস
ছোঁয়াঃ কোথায় যাচ্ছি আমরা?
লোপাঃ বান্দরবান
ছোঁয়াঃ মানে!
লোপাঃ মানে আমরা কয়দিনের জন্য বান্দরবান ঘুরতে যাচ্ছি,ছুটিটা কাজে লাগাতে হবে তো
ছোঁয়াঃ কিন্তু…
লোপাঃ কোন কিন্তু না,আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি,তোর ব্যাগ গোছানোও শেষ সো জাস্ট শাট ইয়োর মাউথ এণ্ড গেট রেডি আজ রাতেই আমরা রওনা দিব
ছোঁয়াঃ কিন্তু দোস্ত…
লোপাঃ শসসস…যা বলছি চুপচাপ কর,ডোন্ট ডিস্টার্ব মি…
(পরদিন সন্ধ্যায়)
ছোঁয়াঃ এই আপনি কি করছেন?ছাড়ুন বলছি…
সায়নঃ বেশি কথা না বলে একটু পায়ের গতি বাড়াও
ছোঁয়াঃ আমি পারব না,আপনি আমার হাতটা আগে ছাড়ুন নাহলে কিন্তু আমি এক পাও নড়ব না
সায়নঃ কি আশ্চর্য!এই মাঝরাত্রে এই রকম একটা সিচুয়েশনেও তুমি…আচ্ছা জেদি মেয়েতো তুমি!
ছোঁয়াঃ আমি এমনই,এখন ছাড়বেন কিনা বলেন
সায়নঃ নাহ ছাড়বো না,দেখি তুমি কি করতে পারো
ছোঁয়াঃ ঠিক আছে আমিও কোথাও যাচ্ছি না,এই এখানে বসে পড়লাম দেখি আমাকে কিভাবে নিয়ে যান…
সায়নঃ এই মেয়ে,এসব কি করছো?আরে ওরা এক্ষুণি চলে আসবে,তখন কিন্তু সর্বনাশ হয়ে যাবে…
ছোঁয়াঃ হলে হবে তাতে আমার কি,আপনি আমার হাত না ছাড়লে আমি এক পাও নড়বো না
সায়নঃ উফ!এই মেয়েকে নিয়ে আর পারি না,কি যে করি…হ্যাঁ পেয়েছি দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।ওকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলাম
ছোঁয়াঃ এই এই কি করছেন,কি করছেন নামান..নামান বলছি…
সায়নঃ চুপ একদম চুপ নাহলে কিন্তু আছাড় দিয়ে ফেলে দিব
ছোঁয়াঃ বাঁচাও…বাঁচাও…
সায়নঃ নাহ এই মেয়ে দেখছি এভাবে শুনবে না।সরি ছোঁয়া…
ছোঁয়াঃ এই আপনি কি করছেন!আপনার কি ম..ম..
(ছোঁয়া আর কোন কথা বলতে পারলো না কারণ সায়ন ততক্ষণে ওর মুখ দুই হাত ওড়না দিয়ে বেঁধে ফেলেছে)
সায়নঃ নাউ ইট’স বেটার,এখন চলো…
ছোঁয়াঃ শালা খাটাস,একবার খালি ছাড়া পাই তারপর তোর বারোটা বাজাচ্ছি…
সায়নঃ কিছু বলছিলে?ওহ তুমি আবার বলবে কিভাবে মুখতো বাঁধা,যাই হোক মনে মনে গালাগালি দেওয়া শেষ হলে এখন চলো যাওয়া যাক নাহলে আবার ওরা চলে আসবে
ছোঁয়াঃ হায় হায় এর থেকেতো হাত ধরে দৌঁড়ানোই ভাল ছিল,কেন যে শুধু শুধু জেদ করতে গেলাম…
ছোঁয়াকে কোলে নিয়ে সায়ন দ্রুত ওখান থেকে সরে পড়লো,পেছন পেছন আরও কিছু মানুষের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।মানুষগুলো ফিসফিস করে কি যেন বলছে যার কোনকিছুই ওরা বুঝতে পারছে না।সায়ন ছোঁয়াকে নিয়ে খুব দ্রুত একটা বড় গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়লো।এতক্ষণ যাদের কথা শুনতে পাচ্ছিল এবার তাদেরকে দেখতে পাচ্ছে,মানুষগুলোকে দেখে ছোঁয়ার ছটফটানিও বন্ধ হয়ে গেছে।ভয়ঙ্কর দর্শন এই মানুষগুলোকে দেখলেই বোঝা যাচ্ছে ডাকাত বা সন্ত্রাসী টাইপসের কিছু হবে,ওদের একজনের হাতে একটা পিস্তল আর আরেকজনে হাতে মাঝারি সাইজের একটা চাকু।ভয়ের একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল দুজনের মধ্যে,ভয়ার্ত চোখে ছোঁয়া সায়নের দিকে তাকালো,সায়ন ইশারায় ওকে শান্ত থাকতে বললো।দুজনে একেবারে নিশ্চুপ হয়ে লোকগুলোর চলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো…
কি ভাবছেন?
এসব কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছেন না তাইতো?
ভাবছেন ভুল করে লেখিকা আপু একটা পর্ব মিস করে ফেলেছে?
তাহলে আপনাদের ধারণা ভুল…
আচ্ছা এবার তাহলে আমিই সবকিছু ক্লিয়ার করে দিচ্ছি।আজ লোপা আর ছোঁয়ার একটা ট্যুরে যাওয়ার কথা ছিল,আসলে এটা কোন ট্যুর না।লোপা আর সায়নের বন্ধুরা মিলে এই প্ল্যানিংটা করেছে,আসল প্ল্যানিংটা অবশ্য তানি আর রাকিবের।ওহ আপনাদেরতো বলাই হয়নি,তানি আর রাকিব কিন্তু এখন চুটিয়ে প্রেম করছে।যাই হোক শুরুর দিকে কেউ ওদের প্ল্যানিং শুনে একমত না হলেও পরে কিছুটা মডিফাই করে সবাই এই সিদ্ধান্তে এসেছে যে ছোঁয়া আর সায়ন্নের মধ্যকার প্রবলেম সল্ভ করার একমাত্র উপায় হচ্ছে দুজনকে কিছু স্ময়ের জন্য একা কোথাও পাঠিয়ে দেওয়া যেখানে ওরা দুজন ছাড়া আর কেউই থাকবে না।
তানির এক মামা ফরেস্ট অফিসার,উনার থেকেই ও এই জঙ্গলের কথা শুনেছে আর তাই মামার হেল্পেই ও সব ব্যবস্থা করে ফেলেছে।বান্দরবান যাওয়ার অযুহাতে দুজনকে আলাদা ভাবেই নিয়ে এসেছে তারপর কৌশলে এই জায়গাটায় দুজনকেই ট্রেন থেকে নামিয়ে দিয়েছে।মামার থেকে তানি আগেই জেনে নিয়েছে জঙ্গলটা দেখতে যতই ভয়ঙ্কর হোক না কেন,এখানে কিন্তু তেমন ভয়ের কিছু নেই।আর সায়নের বন্ধুরাও কিন্তু ওদের সাথেই আছে,প্ল্যান অনুযায়ী মারুফ সায়নদের সাথেই আর বাঁকিরা সবাই পরের স্টেশনেই নেমে গেছে আর নেমেই সোজা এই জঙ্গলের দিকে ছুটেছে।তারপর থেকেই একটু দূরত্ব রেখে ওদেরকে ফলো করে যাচ্ছে।আর গুণ্ডা চেহারার যেই মানুষগুলোর কথা বলছিলাম ওরাও আসলে ওদেরই ঠিক করা লোক,ছোঁয়া আর সায়ন যাতে কোন উপায় না পেয়ে এই জঙ্গলে এসে আশ্রয় নেয় তারজন্যই এই ব্যবস্থা।
জঙ্গলের এই আলো আঁধারীতে একেকটা মিনিটও যেন হাজার বছরের মত লম্বা মনে হচ্ছে।সায়ন আর ছোঁয়া এখনও গাছের আড়ালেই লুকিয়ে আছে,ছোঁয়া ভয়ে থরথর করে কাঁপছে আর সায়ন ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।তীব্র উৎকণ্ঠা নিয়ে লোকগুলোর চলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে,কিন্তু অপেক্ষার প্রহর যেন শেষই হচ্ছে না!লোকগুলো ওখানেই গোল হয়ে বসে কি যেন করতে লাগলো,এদিকে ওদের দুজনের ধৈর্য্যের বাঁধই ভেঙে যাওয়ার পথে কিন্তু কিছুই করার নেই,এই মুহূর্তে অপেক্ষা করাটায় সবচেয়ে বড় ডিফেন্স নাহলে যেকোন মুহূর্তে ভয়ঙ্কর কিছু হয়ে যেতে পারে…
অবশেষে লোকগুলো ওখান থেকে অন্যদিকে চলে গেল,ওরা দুজনে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।সায়ন এবার আস্তে আস্তে ছোঁয়ার মুখের আর হাতের বাঁধন খুলে দিল
ছোঁয়াঃ আপনি…
সায়নঃ শসসস…আগে এখান থেকে চলো তারপর যা জানার জানতে চেয়ো,লোকগুলো যেকোন সময় আবার ফিরে আসতে পারে সো…(ফিসফিস করে)
ছোঁয়াঃ ওকে…
(সায়ন ছোঁয়াকে নিয়ে অন্য একটা রাস্তা ধরলো কিন্তু জঙ্গল এতটাই অন্ধকার আর ঘন যে ঠিকমত কোনকিছুই দেখা যাচ্ছে না তাই কোনদিকে যাচ্ছে ওরা নিজেরাও বুঝতে পারছে না।আরও কিছুক্ষণ হাঁটার পর সায়ন একটা জায়গায় এসে থেমে গেল)
ছোঁয়াঃ কি হল,থেমে গেলেন যে!
সায়নঃ আমাদের আজকের রাতটা এখানেই কাটাতে হবে
ছোঁয়াঃ মানে!কি যা-তা বলছেন বলুনতো?ফাযলামি না করে তাড়াতাড়ি এখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা বের করুন প্লিজ…
সায়নঃ দেখো ছোঁয়া,আমি নিজেও এখানে থাকতে চাই না কিন্তু এছাড়া যে আমাদের হাতে আর কোন রাস্তায় নেই…
ছোঁয়াঃ হোয়াট ডু ইউ মিন বাই আর কোন রাস্তা নেই?
সায়নঃ মানেটা খুবই পরিষ্কার,চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার,রাস্তাঘাট কিছুই দেখা যাচ্ছে না।আমাদের ব্যাগ মোবাইল সবকিছু ট্রেনেই থেকে গেছে সো গুগল ম্যাপ বা ফোনের টর্চলাইট কোন অপশনই খোলা নেই।এই অবস্থায় জঙ্গল থেকে বেরোনোর রাস্তা খুঁজে বের করা টোটালি ইম্পসিবল,আমাদেরকে তারজন্য সকাল পর্যন্ত ওয়েট করতেই হবে।আর তাছাড়া যদি এই মুহূর্তে বের হতেও পারি তখন কিন্তু আরও বড় প্রবলেমে পড়বো
ছোঁয়াঃ এর থেকেও বড় প্রবলেম!
সায়নঃ হুম।দেখো আমাদের মানিব্যাগটা পর্যন্ত নিজেদের কাছে নেই সো এখান থেকে বের হলে রাত কাটানোর জন্য কোন একটা জায়গা দরকার আর আমার মনে হয় না টাকা ছাড়া কোন হোটেলে কেউ আমাদের থাকতে দেবে
ছোঁয়াঃ আমি ওসব কিচ্ছু শুনতে চাই না,আমি জাস্ট এই জঙ্গল থেকে বের হতে চাই এবং তা এক্ষুণি এই মুহূর্তে
সায়নঃ সরি বেবি,আমি অনেক টায়ার্ড সো আমি আর এখন পারব না আর তাছাড়া আমি জানি এখন ওসব করা মানেই টাইম ওয়েস্ট করা।তুমি চাইলে নিজেই চেষ্টা করে দেখতে পারো
ছোঁয়াঃ ওকে ফাইন আমি একাই রাস্তা খুজে নিতে পারি আমার কারো কোন হেল্পের দরকার নেই…
সায়নঃ All the best baby…
ছোঁয়াঃ Don’t call me that…
(ছোঁয়া গটগট করে ওখান থেকে চলে আসলো কিন্তু আসলে কি হবে কিছুদূর এগোতেই নানা রকম চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো)
ছোঁয়াঃ উনি পেয়েছেনটা কি?ভেবেছেন উনাকে ছাড়া আমি কিছুই করতে পারব না!কক্ষনো না,আমার নামও ছোঁয়া,আনি দেখিয়ে দিব ছোঁয়া চাইলেই সবকিছু করতে পারে।আচ্ছা এখন যদি এখানে বাঘ ভাল্লুক কিছু চলে আসে!আর ওই লোকগুলো?ওরা যদি আমাকে একা পেয়ে…না না কি উল্টো পাল্টা চিন্তা করছি!কিচ্ছু হবে না,Be brave Chowa,you can do it…
(ছোঁয়া যখন মনে মনে এসব হিসেব কষছে তখনই একটু দূরে হালকা একটু শব্দ হলো আর শব্দটা শুনতেই ছোঁয়া চমকে উঠলো)
ছোঁয়াঃ এটা কিসের শব্দ?ও কিছু না এমনিই হয়তো পাখি টাখি কিছু কিন্তু যদি ভূত টুত হয় তাহলে…
(দ্বিতীয়বার শব্দটা কানে আসলেই ছোঁয়া বিদ্যুতের গতিতে পেছন দিকে দৌঁড় দিল)
ছোঁয়াঃ ভাগ ছোঁয়া ভাগ,বেঁচে থাকলে উনাকে দেখিয়ে দেওয়ার মত অনেক সুযোগ পাবি।আপাতত এখান থেকে পালা…
সায়ন কিন্তু আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই,ছোঁয়ার পিছু পিছু অনেকদূর চলে এসেছে,একটু দূরত্ব রেখে হাঁটছিল তাই ছোঁয়া বুঝতে পারেনি।হঠাৎ দেখলো ছোঁয়া ওর দিকেই ছুটে আসছে আর এসেই সোজা ওর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো,সায়নও পরম মমতায় ওকে বুকে জড়িয়ে নিল।
সায়নঃ ডোন্ট ওয়ারি,আমি আছিতো।তোমার কিচ্ছু হবে না ট্রাস্ট মি…
(ছোঁয়া মাথা তুলে সায়নের দিকে তাকালো ওর চোখের ভাষা স্পষ্ট পড়তে পারছে সায়ন।যেন ওই চোখদুটো ছোঁয়ার মনের কথায় বলছে…
“আমি জানি আপনি আমার কোন ক্ষতি হতে দেবেন না,আমার আর কোন ভয় নেই…”)
চলবে…
#নোটঃ ডিয়ার রিডার্স,আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন না যে আমি অনেকদিন ধরেই বেশ অসুস্থ আর এই কারণেই গল্পটা নিয়মিত দিতে পারিনা।যাইহোক কাল সকালে চিকিৎসার জন্য ইণ্ডিয়া যাচ্ছি তাই ওখানে না পৌঁছানো পর্যন্ত গল্পটা দিতে পারবো না।পৌঁছাতে মোটামুটি দুদিনের মত লাগবে,ভেলোরে পৌঁছেই গল্পটা দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব।সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন যেন ট্রিটমেন্ট শেষ করে তাড়াতাড়ি আপনাদের মধ্যে ফিরে আসতে পারি….