Childhood marriage

Childhood marriage 2 ! Part- 06

#লেখিকা-সানজিদা সেতু
(কিছুদিন পর)
সায়নের বন্ধুরা ক্যাফেটেরিয়াতে বসে আড্ডা দিচ্ছে।
তন্ময়ঃ দোস্ত ফার্স্ট ইয়ারে কিন্তু বেশ কয়েকটা সুন্দরী মেয়ে আছে।তুই দেখেছিস?
মারুফঃ হ্যাঁ রে দোস্ত,ম্যানেজমেন্টের ওই মেয়েটা আছে না…আমিতো সেদিন প্রোগ্রামে দেখেই…
রাকিবঃ কে ওই লাল শাড়ী পরা মেয়েটা?ওইটার চিন্তা বাদ দে
মারুফঃ কেন বাদ কেন দিব?
রাকিবঃ কারণ মেয়েটাকে আমি আগে দেখেছি তাই আমার ওকেই চাই
দীপুঃ দোস্ত চুপ কর,তানি আসছে…
রাকিবঃ তানি আসছে তো আমি কি করব?আমি কি ওকে ভয় পাই নাকি?
তানিঃ কে কাকে ভয় পায় রে?
তন্ময়ঃ আরে দোস্ত তেমন কিছু না,তুই তোর কাজ কর যা…
রাকিবঃ ওই শালা মিথ্যা কেন বলছিস?শোন তানি,I need your help ইয়ার..
তানিঃ কি হেল্প বল
দীপুঃ দোস্ত না…বলিস না

তানিঃ দীপু…শসসস…রাকিব তুই বল…
তন্ময়ঃ রাকিব বেটা,আবতো তু গেয়া…
দীপুঃ কিছু বলিস না দোস্ত,মজা নে…
রাকিবঃ কথা হচ্ছে ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের একটা মেয়েকে…না মানে তুই যদি একটু হেল্প করতি তাহলে…
তানিঃ কি বললি তুই?
রাকিবঃ যা বলার বলে দিয়েছি,এখন তুই কাজটা করবি কিনা বল নাহলে আরো অনেল মানুষ আছে
তানিঃ (দাঁতে দাঁত চেপে)কথাটা আরেকবার বলে যা
রাকিবঃ ওকে ফাইন,ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের একটা মেয়েকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে তুই যদি…
তানিঃ রাকিবের বাচ্চা…তোরেতো আমি আজকে…
রাকিবঃ ওই ছুড়ি তোর কি মাথা খারাপ হইছে?
তানিঃ হইলে হইছে তাতে তোর কি?
রাকিবঃ আমার কি মানে?ওই ছুড়ি হেল্প করবি না করিস না,কিন্তু মারছিস কেন?
তানিঃ বেশ করছি,আজতো তোকে মেরেই ফেলব…
রাকিবঃ কেন প্রাবলেম কি তোর?

তানিঃ আমার প্রবলেম?তুই ঐখানেই দাঁড়া আমি এসে দেখাচ্ছি কি প্রবলেম…
(তানি রাকিবের পেছন পেছন ছুটে চলে গেল,ওদের কাহিনী দেখে সবাই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে লাগল।তখনই ওখানে সায়নের আগমন ঘটল)
সায়নঃ কাহিনী কি রে?ওই দুইটা এই রকম মার-পিট করছে আর তোরা এভাবে হাসছিস!ব্যাপার কি?
মারুফঃ কি আর হবে,সেই পুরান কাহিনী।রাকিবের একটা মেয়েকে পছন্দ হয়েছে আর এই ব্যাপারে ও তানির হেল্প চেয়েছে
সায়নঃ বলিস কি?তাইলেতো আজকে ব্যাটার খবর আছে
তন্ময়ঃ রাকিবটা না আসলেই একটা গাধা,তানি আর ওর ব্যাপারটা আমরা সবাই বুঝি কিন্তু ওই বোঝে না
সায়নঃ বোঝে না তা কিন্তু না
দীপুঃ তাহলে?
সায়নঃ বোঝে বাট বুঝেও না বোঝার ভান করে
তন্ময়ঃ কিন্তু কেন?
মারুফঃ আরে বুঝিস না,ও আসলে তানিকে ঠিক ঐভাবে পছন্দ করে না
দীপুঃ তাহলে সোজাসুজি বলে দিলেই তো পারে
সায়নঃ আসলে ও চায় না এই ফ্রেণ্ডশিপটা নষ্ট হোক,তাছাড়া তানিকেও কষ্ট দিতে চায় না তাই…
তন্ময়ঃ এই তানিটাও না,দেখতে শুনতেতো বেশ সুন্দর কিন্তু অলটাইম কেমন ছেলেদের মত গেট আপ নিয়ে থাকে।একটু মেয়েদের মত সেজে গুজে ঘুরলে রাকিব কেন যে কেউ ওর উপর ফিদা হয়ে যেত কিন্তু এই মেয়েতো…
(তখনই)
রিয়াঃ গাইজ সায়ন…
সায়নঃ আমাকে খুজছিলে?
রিয়াঃ হ্যাঁ সেদিনের প্রোগ্রামের গেস্টলিস্ট আর এই ডকুমেন্টগুলো…
সায়নঃ ওহ..মারুফ এগুলো তোর কাছেই রাখ,আমি পরে নিব…
রিয়াঃ ওকে বাই সি ইউ লেটার
সায়নঃ আ…রিয়া…
রিয়াঃ (অবাক হয়ে)আমাকে কিছু বললে?
সায়নঃ রিয়া…Would you mind to join me in dinner tonight?
রিয়াঃ আ..আমি..কি..ডিনা..র!!
সায়নঃ Just relax yaar.see you at night…
রিয়াঃ ওকে…দেন বাই…
(রিয়া চলে গেল,মারুফ অবাক হয়ে সায়নের দিকে তাকালো)
সায়নঃ এভাবে কি দেখছিস?
মারুফঃ Are you okey bro?
সায়নঃ Of course
মারুফঃ তাহলে তুই রিয়াকে..ডিনারে..I just can’t imagine
সায়নঃ বুঝলি মারুফ,কাল সারারাত ধরে তোর কথাগুলো ভেবেছি।ভেবে দেখলাম তুই ঠিকই বলেছিস,রিয়াকে একটা চান্স দেয়া উচিত।ভাবছি লাইফটাকে নতুন করে শুরু করলে কেমন হয়?
মারুফঃ That’s a good decision কিন্তু তাই বলে রিয়া!
সায়নঃ কেন তুইইতো বলেছিলি রিয়া ইজ এ পারফেক্ট ম্যাচ ফর মি
মারুফঃ হ্যাঁ বলেছিলাম কিন্তু…
সায়নঃ ডোন্ট ওয়ারি জাস্ট ট্রাই করছি,এখনও কোনকিছু ফিক্স করিনি সো রিল্যাক্স…

(সন্ধ্যায়)
রেস্টুরেন্টের একেবারে কর্ণারের একটা টেবিলে বসে আছে সায়ন।চারপাশে হালকা নীল আলো বেশ রোমান্টিক একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।এমনই এক সময়ে রিয়া আস্তে আস্তে সায়নের দিকে এগিয়ে আসলো,সায়নও ওর দিকে এগিয়ে গেল
সায়নঃ রিয়া…
রিয়াঃ (মনে মনে)ইয়ার রিয়া,এত্ত ভাল একটা সুযোগ পেয়েছিস!আজকেতো প্রপোজ করেই দে,গো ফর ইট বেবি…
সায়নঃ Wow looking gorgeous…
রিয়াঃ আ..সায়ন..আমার..তোমাকে কিছু কথা…
সায়নঃ আরে কথাতো পরেও বলা যাবে,তার আগে একটু আমার সামনে বসবে?তোমাকে একটু প্রাণ ভরে দেখব…
রিয়াঃ Oh may god!কোন স্বপ্ন দেখছি নাতো?সায়ন আর এত রোমান্টিক!এখনও সময় আছে রিয়া বলে ফেল যা বলতে চাস(মনে মনে)
সায়নঃ রিয়া…রিয়া…কি ভাবছো?
রিয়াঃ We need to talk.আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই
সায়নঃ ওকে ফাইন,কি বলবে বল…
রিয়াঃ সায়ন আমি…I mean I love you…আজ থেকে না যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিন থেকেই বিশ্বাস কর…অনেকদিন থেকেই বলতে চাইছিলাম কিন্তু…আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো না কিন্তু বিলিভ মি আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আর তুমিও আস্তে আস্তে…
সায়নঃ রিয়া…
রিয়াঃ প্লিজ না বল না,I really love you প্লিজ সায়ন…
সায়নঃ রিয়া…Calm down আমার কথাটা একবার শোন
রিয়াঃ সায়ন প্লিজ…
সায়নঃ ওকে ফাইন তুমি যা বলছো তাই হবে…
রিয়াঃ তারমানে তুমিও আমাকে…আমি জানতাম,আমি জানতাম তুমি আমার কথা ফেলতেই পারবে না।I love you Sayon love you so…much…
(রিয়া আচমকাই সায়নকে জড়িয়ে ধরল,সায়ন সরাতে চেয়েও পারল না,তখনই ওর ফোনটা বেজে উঠল।ফোনটা হাতে নিতেই ওর চোখ মুখ কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেল।সায়ন রিয়াকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে দিল তারপর বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর ফোনটা রিসিভ করল…)
সায়নঃ হ্যালো…হুম…আচ্ছা ঠিক আছে…আমি দেখছি কি করা যায়….
(আর কিছুই বলল না সায়ন,চুপচাপ ফোনটা নামিয়ে রাখলো)
রিয়াঃ কি হয়েছে?খারাপ কোনকিছু কি…
সায়নঃ সরি রিয়া,I have to go right now…
রিয়াঃ This is not fare sayon.এটা আমাদের ফার্স্ট ডেট আর তুমি!
সায়নঃ আজকে একটু প্রবলেম আছে সো…
রিয়াঃ কি প্রবলেম?আমাকে অন্তত বল…আমাকেও কি বলা যাবে না?
সায়নঃ Sorry but…তুমি কি একাই যেতে পারবে নাকি আমি নামিয়ে দিব?
রিয়াঃ লাগবে না,আমি একাই যেতে পারব…
সায়নঃ তাহলেতো ভালই হয়।আচ্ছা আমি আসছি বাই
(রিয়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সায়ন বেরিয়ে গেল,সায়নের এমন ব্যবহারে রিয়াতো পুরোই অবাক হয়ে গেল)
রিয়াঃ আ…এইটা কোন ধরণের আচরণ!মি.সায়ন একবার খালি তোমাকে বাগে পেয়ে নেই তারপর সবকিছুর জন্যে উচিত জবাব পাবে…

(সায়ন রুমে ফিরতেই মারুফ ওকে চেপে ধরল)
মারুফঃ কি রে..এত তাড়াতাড়ি চলে আসলি যে?আমিতো ভেবেছিলাম আজ রাতে আসবিই না…
সায়নঃ ওর কথায় কোন পাত্তা না দিয়ে ব্যাগ গোছাতে লাগলাম,মারুফকে দেখলাম অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছে…
মারুফঃ সামার ভেকেশন হতেতো এখনও দেরি আছে
সায়নঃ আমি জানি
মারুফঃ জানিস তাহলে ব্যাগ গোছাচ্ছিস কেন?কোথায় যাবি?
সায়নঃ বাড়ি যাব
মারুফঃ (অবাক হয়ে)বাড়ি মানে!কার বাড়ি,কিসের বাড়ি,কি উপলক্ষে?
সায়নঃ কার আবার?আমার নিজের বাড়ি
মারুফঃ তোর বাড়ি!তোরও বাড়ি আছে?
সায়নঃ মানে কি,বাড়ি কেন থাকবে না?
মারুফঃ না মানে তুইতো কখনও বাড়ি যাওয়ার কথা বলিস না।ইভেন লং টার্ম ছুটি হলেওতো বাড়ি যাস না।তোর সাথে আমার চার বছরের পরিচয়,এর মধ্যে একবারওতো তোকে বাড়ি যেতে দেখিনি!তহলে এখন…
সায়নঃ যাই না বাট এবার যাব
মারুফঃ হঠাৎ!কেন কি হয়েছে?ঐ রিয়আ মেয়েটা কি কিছু…তোকে আগেই বলেছিলাম মেয়েটাকে আমার একটুও পছন্দ না খালি তুই যে কেন ওকে…
সায়নঃ ও কিছু করেনি
মারুফঃ তাহলে…
সায়নঃ অতকিছু বলার সময় নেই,আরজেন্ট যেতে হবে নাহলে…
মারুফঃ কেন রে খারাপ কোন খবর আছে?
সায়নঃ আগে যাই তারপর বুঝতে পারব
মারুফঃ এখনই যেতে হবে?
সায়নঃ হুম
মারুফঃ আচ্ছা ঠিক আছে যা,কোন হেল্প লাগলে জানাস কেমন?
সায়নঃ ওকে বাই…
মারুফঃ বাই…

(সকালে)
চারদিকে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে,হেমন্তের এই সময়টাতে সকালে হালকা ঠাণ্ডা পড়লেও কুয়াশার দেখা মেলে না।কিন্তু আজকের সকালটা একটু অন্যরকম,চারিদিকের আবছা কুয়াশা যেন শীতের আগমনী বার্তা দিচ্ছে।তারই মাঝে কুয়াশার চাদর কেটে দূরন্ত গতিতে ছুটে যচ্ছে ট্রেনটা আর তারই একটা বগিতে জানালার ধারে বসে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সায়ন।হয়তো ছয় বছর আগে ফেলে আসা দিনগুলোর কথাই ভাবছে।আসুন দেখা যাক সায়নের মনের মধ্যে এই সময় ঠিক কি চলছে…
(সায়নের পয়েন্ট অফ ভিউ)
ছয় বছর আগে ঠিক এই পথ ধরেই চলে এসেছিলাম সবকিছু ছেড়ে।আজ এতগুলো বছর পর ফিরে যাচ্ছি,জানিনা সবকিছু আগের মতই আছে নাকি বদলে গেছে।যেই সম্পর্কগুলো থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম আজ সেই সম্পর্কের টানেই আবার ফেরত যেতে হচ্ছে।যার কথা গত ছয় বছরে একটাবারের জন্যেও মনে পড়েনি,যার নাম,যার অস্তিত্ব প্রায় ভুলতে বসেছিলাম আজ যেন তার কথাই সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে।
হ্যাঁ ছোঁয়ার কথাই বলছি,ও কি এখনও আমাদের বাড়িতেই থাকে?থাকবে নাই বা কেন ওতো আমারই বউ,তিনবার কবুল বলে সব ধর্মীয় অনুশাসন মেনে ওকে বিয়ে করে ও বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম আমি।কি আশ্চর্য!এসব আমি কি ভাবছি!যেই বিয়েটাকে আমি বিয়ে বলেই মেনে নেইনি কখনও,যেই বিয়ের কথা এই কয় বছরে একটাবারের জন্যেও আমার মনে পড়েনি,যার কথা আজ পর্যন্ত আমার নিতান্ত ঘনিষ্ট কোন বন্ধুও জানে না আজ তার কথাটা এভাবে কেন মনে পড়ছে?ইয়ার সায়ন…গ্রো আপ এন্ড ফরগেট ইট…

আচ্ছা ছোঁয়া কি এখন অনেক বড় হয়ে গেছে?কি বোকার মত প্রশ্ন!ছয় বছরতো আর কম না,অবশ্যই অনেক বড় হয়ে গেছে।কিন্তু কতটা বড় হয়েছে?কোন ক্লাসে পড়ে ও?দেখতে কেমন হয়েছে?আমি কি ওকে চিনতে পারব?পারব না কেন ছোটবেলায়তো দেখেছি কিন্তু তখনতো ও অনেক ছোট ছিল তাহলে এখন…।আচ্ছা ও আমাকে চিনবেতো?ওর কি আদৌ আমার কথা মনে আছে?
ওহ গড আমিতো পাগল হয়ে যাব দেখছি,দাদী অনেক অসুস্থ শুনে রীতিমত দৌঁড়ঝাঁপ করে এই রাত্রি ১টার ট্রেনটাতে উঠলাম অথচ ট্রেনে উঠে পর্যন্ত আমার একটাবারও দাদীকে নিয়ে একটুও টেনশন হল না!সেই তখন থেকে শুধু ছোঁয়া আর ছোঁয়া!Oh god I am fed up,what is happening to me?
ট্রেন তার নিজের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে আর সায়ন নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে ছোঁয়াকে ভুলে থাকার কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও কোন লাভ হচ্ছে না।গন্তব্যের যত কাছাকাছি যাচ্ছে ততই যেন বেশি করে মনে পড়ছে সবকিছু।সেদিনের সেই ঝুম বৃষ্টিতে বাড়ির উত্তর দিকের ছোঁয়া যখন ওকে পুকুরের পানিতে ফেলে দিয়েছিল সেদিন খুব রেগে গেলেও আজকে যখন কথাটা মনে পড়ল,অদ্ভুতভাবে ঠোঁটে কোণে এক চিলতে রহস্যময় হাসির রেখা ফুটে উঠল!সায়ন হয়তো ব্যাপারটা খেয়ালই করেনি,কিন্তু আমার পাঠকদের চোখ থেকে কি কোন কিছু এড়ানো যায়?তারাতো ঠিকই খেয়াল করেছে তাইনা?কি বলেন আপনারা?
চলবে…
#জানি সবাই ছোঁয়াকে অনেক মিস করছেন,চিন্তা করবেন না আগামী পর্বেই তার দেখা মিলবে।কেমন লাগলো জানাবেন…