ভালোবাসার প্রতারণা

ভালোবাসার প্রতারণা !! Part- 09

প্রভাতকে দেখে তারা যতটা না অবাক হলো তার থেকেও বেশি আনন্দিত হলো তারা দৌড়ে প্রভাতের কাছে গেল তখন প্রভাত সেখান থেকে সরে এসে ওর বাবার সামনে দাঁড়ালো।

প্রভাতের বাবা প্রভাতকে জিজ্ঞেস করলো

—–তুমি এতক্ষণ কই ছিলে?

—–ড্যাড আমি গাড়ি পার্কিং করছিলাম। আকাশকে আমিই যেতে বলেছিলাম আমাদের রিসিভ করতে।

—-তা এয়ারপোর্টে যেতে কি 3 দিন লাগে ? ঐ গর্দব এতদিন কোথায় ছিল?

—–ড্যাড আসলে আমি ওকে বলেছিলাম কিছুদিন কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসতে তাহলে মন ভালো হয়ে যাবে তাই ও গেছে।

—-তোমার কথা আমার পুরোপুরি সত্যি মনে হচ্ছেনা। তা তোমার তো আরো 3 দিন থাকার কথা ছিল। এত জলদি ফিরে এলে যে !

—-ড্যাড আমার দরকারি একটা কাজ পরে যায় তাই ইমিডিয়েটলি ব্যাক করতে হলো।

—–আচ্ছা অনেক জার্নি করে এসেছো এবার বউমাকে নিয়ে ঘরে যাও ফ্রেশ হয়ে নাও সার্ভেন্ট খাবার দিয়ে আসবে।

—-ঠিক আছে।

প্রভাতকে দেখে লিজা দৌঁড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো তখনি ওর পেটে চাপ পড়ায় উহু শব্দ করে উঠল। লিজা ঘাবড়ে গিয়ে বলল কি হয়েছে প্রভাত? প্রভাত বলল তেমন কিছুনা আমার ভালো লাগছেনা আমি রেস্ট নিব সরো। বলেই প্রভাত উপরে রুমে চলে গেল তারাও প্রভাতের পেছন পেছন গেল। আকাশ তো খুব ভয় পেয়ে গেছে সাথে অনুতপ্ত বোধ কাজ করছে ওর মধ্যে। যে ভাই ওকে এত ভালোবাসে তার সাথে এমনটা করলো কি করে ও ! ভাবতেই ওর কান্না পাচ্ছে আর রাগে মাথার চুল ছিড়ছে।

তারা প্রভাতের পেছনে দাঁড়িয়ে প্রভাতকে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। মানুষটার খুব লেগেছে। আর এই মানুষটা এত ভালো কেন ? তার যে এত ভালো মানুষের কোনো দরকার নেই যে শুধু নিজের কথা ছাড়া সবার কথা ভাবে। এত ভালো হওয়ার কারণেই আজ তার এই অবস্থা। তবে তারা নিজেকেই বেশি দোষী ভাবে। আজ যদি ও আকাশের জীবনে না আসতো তাহলে এমন কিছুই হতো না। প্রভাতও ওকে দেখতো না আর ভালোবাসতোনা। আসলে তারার এখন নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে। নিজেকেই সে ফেস করতে পারছেনা। প্রভাকে করবে কিভাবে?

তারাকে ঐভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রভাত রাগি গলায় বলল

—–‘এখানে কি এমন হ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি ! যত্তসব

বলেই তারাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। তারা বেশ বুঝতে পারছে প্রভাত তার উপর রেগে আছে।
কিন্তু ও কি করবে? ওর তো করার কিছুই নেই। প্রভাতের কথা চিন্তা করেই তো আকাশের সাথে দেশে ফিরলো।

প্রভাত ফ্রেশ হয়ে এসে না খেয়ে শুয়ে পড়লো তারা অনেক ডাকে কিন্তু ও উঠেনা। তাই তারাও না খেয়েই শুয়ে পড়ে।
যত দিন যাচ্ছে প্রভাত তত তারাকে এড়িয়ে চলছে। একদিন হুট করে অফিস থেকে এসে প্রভাত তারার কাছে গিয়ে ওকে ডাকে। তারা তো খুশিতে আত্নহারা হয়ে যায় আজ কতদিন পর তার প্রভাত তার নাম নিয়েছে। তারা হুম বলার সময়ও পেল না তার আগেই প্রভাতের কথা শুনে অবাক।

প্রভাত তারার সামনে একটা ডিভোর্স পেপার দিয়ে বলল

—-এই নাও তোমাকে মুক্তি দিলাম। আমি সাইন করে দিয়েছি এবার তুমিও সাইন করে আমাকে মুক্তি দাও।

—-মানে !

—–মানে খুব সিম্পল। ডিভোর্সের পর তুমি তোমার মতো আমি আমার মতো। মানে তুমি আকাশকে বিয়ে করবে আর আমি লিজাকে বিয়ে করবো।

—–এসব আপনি কি বলছেন ?

—–কেন ভুল কিছু বলেছি ! তুই তো এটাই চেয়েছিলি। মুক্তি দিলাম তোকে যা এবার সুখে সংসার কর আকাশের সাথে আর শুন কোনো চিন্তা করবিনা তোর ভরণ পোষনের দায়িত্ব যেহেতু একবার আমি নিয়েইছি তাই আমি সারাজীবন সেই দায়িত্ব পালন করবো। কারণ এক রাতের জন্য হলেও নিজের অধিকার আদায় করতে পেরেছি। তাই তোর যা পাওনা সব মিটিয়ে দিব।

কথা গুলো শুনে তারা তো অবাক। কি বলবে ও! ও তো চায় না প্রভাতকে ছাড়তে কারণ ও যে ভালোবেসে ফেলেছে প্রভাতকে। আর এখন সে কিভাবে নিজের ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে দিবে?

—–কি হলো আমায় মুক্তি দিবেনা ?

প্রভাতের কথায় তারার হৃদয় চুরমার হয়ে যাচ্ছিল। প্রভাত তার থেকে মুক্তি চায়! মুক্তি? ঠিক আছে দেবে মুক্তি তারা কিছু বলল না পেপারটা হাতে নিয়ে সাইন করে দিল প্রভাত তখন পেছন ফিরে নিজের চোখটা মুছে নেয়। সে ভেবেছিল তারা পেপারটা ছিড়ে ফেলে বলবে

—ভালোবাসি আপনাকে খুব ভালোবাসি।

প্রভাতের ধারণা মিথ্যে করে দিয়ে তারা যে সাইনটা সত্যিই করবে ভাবতেও কষ্ট লাগছে। তাহলে তো ধরায় যায় তারার মনে এখনো আকাশই আছে। তাহলে তো আর কিছু বলার নেই ওদেরকে একা ছেড়ে দিলেই তো ভালো। ও তো একটা বোঝা ওদের জন্য। এখন সিদ্ধান্ত ফাইনাল ও লিজাকে বিয়ে করবে। আর তারার লাইফে ফিরে যাবেনা।

—–লিজা আমায় ভালোবাসো?

প্রভাতের কথা শুনে লিজা বলে উঠল হুম অনেক ভালোবাসি।

—-বিয়ে করবে আমায়?

কথাটা শুনে লিজা যেন আকাশের চাঁদ পেল। বেহায়ার মতো হ্যাঁ বলেই দিল।
প্রভাত ওর পরিবারকে সব জানায় ওর বাবা প্রথমে রাজি না হলেও পরে রাজি হয়ে যায় কারণ এভাবে তো তিনটা জীবন শুধু শুধু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তার থেকে ভালো প্রভাত যা করছে তা চুপ করে সহ্য করা।

আজ প্রভাত আর লিজার বিয়ে। সকাল থেকে সব আয়োজন তারা নিজের হাতে করেছে। এমনকি লিজাকে বউও সাজিয়েছে। আজ যে তার ভালোবাসার মানুষটার জীবনে একটা স্পেশাল দিন। সে চায় না তার জন্য সব নষ্ট হোক। আর এই কষ্টটাও তো সহ্য করার ক্ষমতা ওর নেই। তাই নিজেকে কাজের মাঝে ব্যস্ত রাখছে।

চলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *