সেলিব্রেটি স্বামী

সেলিব্রেটি স্বামী !! Part 33

জ্ঞান ফিরলে আমাকে কেবিনে শিফট করে দিলেন।আমার পাশে ছোট একটা বাচ্চাকে এনে শুইয়ে দিলেন উনি।নরম তুলতুলে বাচ্চাটার হাত পা দেখে কোলে নিতে ইচ্ছে করছে আমার।মুখে হাতের আঙুল ভরে পা ছুটিয়ে খেলছে সে।উনি আমার মাথার কাছে এসে বসলেন। কপালে হাত রেখে একটু ঝুঁকি বললেন আমাকে,
-এটা আমাদের বেবি আরু।
মুহূর্তে আমার দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরল।আমি কেঁদে উঠে বললাম উনাকে,
-সত্যি বলছেন? এটা আমাদের বেবি?
উনি আমার চোখের পানি বালিশে গড়িয়ে পরার আগেই মুছে দিয়ে বললেন,
-হ্যাঁ আমাদের মেয়ে।তোমাদের কিচ্ছু হয় নি আরু।তুমি আর আমাদের মেয়ে দুজনেই আমার কাছে আছো।আর ওই স্নিগ্ধা! যে তোমাদের আমার থেকে কেড়ে নিতে চেয়েছিলো সে এখন তার শাস্তি পাচ্ছে।
আমি উনার হাত টেনে ধরে বললাম,
-বিশ্বাস করুন আহান স্নিগ্ধা প্রেগনেন্ট নয়।ও শুধু আপনাকে পাবে বলে এতোদিন অভিনয় করেছে।
উনি আমার মাথায় হাত রেখে বললেন,
-শান্ত হও আরু।ওর কথা আর ভেবো না।যেটা ও করেছে তার ফল ওকে পেতে হচ্ছে।ওকে পুলিশে দিয়েছি।নাইরা ফোন দিয়ে জানালো পুলিশের সামনে স্নিগ্ধা মুখ খুলেছে।এখন ওর শাস্তি হবেই।
আমি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লাম।আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যান্ডেজ করা হয়েছে।উঠে বসতে পারলাম না আমি।বেবিটাকে কোলে নিতেও পারলাম না। উনি আস্তে করে আমার হাতটা মেলিয়ে দিলেন। হাতের উপরে বালিশ রেখে বেবিটাকে শুইয়ে দিলেন।আমি বেবিটার কপালে একটা চুমু দিতেই খেয়াল করলাম ধরফরিয়ে কেবিনের মধ্যে কেউ চলে আসলেন।চোখ তুলে চেয়ে দেখলাম আমার বাবা, মা আর শ্বাশুড়ি মা।শ্বাশুড়ি মা তার এতোদিনের ব্যাবহারের জন্য আমাকে ছরি বললেন।আমার মা খুব রেগে আছেন শ্বাশুড়ি মা আর উনার উপরে। মা আর উনাদের সাথে ওবাড়িতে যেতে দেবেন না আমাকে।বাবা মাকে বোঝালেন।মা যদি এমন জেদ ধরেন তাহলে বাবা আবার দেশের বাইরে চলে যাবেন।
এভাবে দু’দিন কেটে গেলো। আজ হসপিটাল থেকে বাড়িতে ফেরার কথা।মা কিছুতেই আমাকে আজ যেতে দেবেন না।মাইশা আর রুহানও এসেছেন আমাদের মেয়েকে দেখতে।মেয়েটাকে কোলে নিয়ে দুজন যে ইশারায় কি এতো কথা বলছেন তা শুধু দুজনই জানেন।মায়ের সেই একই জেদ বস্তিতে আজ আমাদের সবাইকে যেতে হবে।বস্তির সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।আহান, রুহান, মাইশা তিন সেলিব্রেটির সাথে আমাদের মেয়েকেও দেখবে তারা।
🍁
অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হবার পর দু’দিন রেস্টে ছিলেন চুমপুয়িং।আজ ডাক্তার মুখের ব্যান্ডেজ খুলবেন তার।চুমপুয়িং এর সামনে দাড়িয়ে ডিসুজার হাত পা থরথর করে কাঁপছে।চোখদুটো ভয়ে বন্ধ করে রেখেছেন সে।ব্যান্ডেজ খোলার সাথে সামনের মানুষটাকে দেখলেন চুমপুয়িং। তার চোখের চশমাতে নিজের মুখটা ঝাপসা দেখতে পেলেন।কিছুক্ষণ তাকানোর চেষ্টা করে আবার চোখ বন্ধ করে নিলেন।আস্তে করে চোখ মেলে এবার স্পষ্ট ভাবে তাকিয়ে দেখলেন।তার বিধস্ত মুখটা।যা দেখে নিজেরই ভয় লাগছে তার।কতোটা বিশ্রীভাবে পুড়েছে মুখটা।ডিসুজা এক পলক চুমপুয়িং কে দেখে অনুশোচনায় চোখদুটো নিচু করে রাখলেন।চুমপুয়িং নিশ্চুপ হয়ে আছেন।কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলে উঠলেন সে,
-আমাকে একটু একা থাকতে দিন স্যার।
ডিসুজা কিছু বলতে গিয়েও আমতা আমতা করে থেমে গেলেন।কিছু বলার সাহশ পেলেন না সে।ডাক্তার বললেন পেশেন্ট যখন চাইছে তখন একটু একা থাকতে দেয়া ভালো।
🍁
সবাই চলে গেলে চুমপুয়িং চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন।চুমপুয়িং এর আর বাঁচতে ইচ্ছা করছে না এই চেহারা নিয়ে। তাছাড়া তার ভালোবাসা তো তাকে ভালোইবাসেনি কোনো দিন।এই মুখটা দেখার পরে কি সে তাকে কখনো ভালোবাসবে? যেই মুখটা দেখলে চুমপুয়িং এর নিজেরই ভয় করছে এখন।চুমপুয়িং এর মধ্যে নানান প্রশ্ন আসছে।ডিসুজা ডাক্তারের কাছ থেকে পেসকিপশোন নিয়ে বাইরে ওষুধ আনতে গিয়েছেন।চুমপুয়িং উঠে দাড়িয়ে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজতে লাগলেন।পাশের টলিতে ফল কাটা ছুড়ি দেখতে পেয়ে উঠে দাড়ালেন সে।ছুড়িটা হাতে নিয়ে ভাবলেন এভাবে বেঁচে থাকা যায় না সারাটা জীবন।তার চেয়ে বরং…নিজেকে শেষ করে দিই।
চুমপুয়িং ছুড়িটা নিজের পেট বরাবর রাখতেই কেবিনের দরজার কাছে দাড়িয়ে চিৎকার করে ডেকে উঠলেন তাকে ডিসুজা।চুমপুয়িং থেমে গেলেন।অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন ডিসুজার দিকে।এগিয়ে এসে তাকে নিজের মাতৃভাষায় বললেন ডিসুজা,
-এমনটা করো না তুমি। আমার কথা শুনো ভুল হয়ে গেছে আমার আমাকে ক্ষমা..
এটুকু শুনতে চুমপুয়িং ডিসুজার হাত থেকে ওষুধের শিশিগুলো কেড়ে নিলেন।চিৎকার করে উঠলেন।কেঁদে দিয়ে ওষুধের শিশিগুলো দূরে ছুড়ে ফেলে বললেন,
-ক্ষমা করে দেবো? তারপর! আমি কিভাবে বাঁচবো ডিসুজা? আমার তো কেউ নেই। আমার এই মুখ, চেহারা।কেউ তো আমার দিকে মুখ তুলে তাকাবে না আর।বন্দি হয়ে সারাটা জীবন বেঁচে থাকতে হবে আমাকে।আপনার জন্য আমি কিনা করেছি।নিজের দেশটাও ছেড়ে দিয়েছি।বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরও একটাবার দেখতে যায় নি পর্যন্ত।না জানি আমার বাবা-মায়ের লাশ কোথায় কবর দেওয়া হয়েছে।আপনাকে ভালোবেসেছি এটাই কি আমার অন্যায়? ভালোবেসে আপনার জন্য এতোগুলা বছর অপেক্ষা করেছি।আপনাকে কখনো বলি নি।ভেবেছিলাম আপনি বুঝবেন আমার ভালোবাসাটা।কিন্তু না আপনি তো ম্যাশকে ভালোবাসেন।জানেন, ম্যাশ তার স্বামীকে ভীষণ ভালোবাসে।আমি মন থেকে চেয়েছিলাম ওকে ওর ভালোবাসার মানুষটির কাছে পৌঁছে দিতে।
চুমপুয়িং কে আর কিছু বলতে দিলেন না ডিসুজা।এক ঝাটকায় বুকে টেনে নিয়ে বললেন তাকে,
-আমি জানি খুব বড় ভুল করে ফেলেছি।আমিও তোমাকে ভালোবাসি বিশ্বাস করো।তোমাকে এই অবস্থায় আমি দেখতে পারছি না।বড্ড কস্ট হচ্ছে আমার।ম্যাশ আমার কাছে মোহ ছাড়া কিছুই ছিলো না।আজ বুঝছি, তুমিই আমার সত্যিকারের ভালোবাসা।
চুমপুয়িং ফুফিয়ে কেঁদে উঠে বললেন,
-বড্ড দেরি করে ফেলেছেন আপনি। নিজেকে খুব মহৎ প্রমাণ করতে চান তাই না? আমি কিছুতেই আপনার জীবন নস্ট হতে দেবো না। বিশ্বের সেরা দশজনের একজন বিজনেসম্যান আপনি।আপনার মতো একজনের জীবনে এই আমিটাকে যুক্ত করতে চাই না।আপনি আমাকে ভুলে যান।আপনি তো এখন স্পষ্ট বাংলা বলতেও শিখে গেছেন আমাকে আর আপনার প্রয়োজন নেয়। ছাড়ুন আমায়।
ডিসুজাকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়ে ছুড়িটা উঁচু করে নিজের পেটে ঢুকাতে যাবে চুমপুয়িং হেচকা টানে ডিসুজা ফেলে দিলেন ছুড়ি। চুমপুয়িং এর ডান গালে একটা চড় বসিয়ে দিলেন।আর চিৎকার করে বললেন,
-আমার ভুলের জন্য আজ এমনটা হচ্ছে তাই না? তুমি কেন মরবে? আমিই যখন তোমার মুখটা নস্ট করেছি তখন আমাকেই এর মাশুল দিতে দাও।
ছুড়িটা ফ্লোর থেকে উঠিয়ে নিজের মুখে ক্ষতবিক্ষত ভাবে আঁচড় দিয়ে কাটতে থাকেন ডিসুজা।ডিসুজার মুখে রক্তের বন্যা বইছে।চুমপুয়িং ডিসুজাকে আটকাতে পারছে না।পকেট থেকে কাটি বের করে জ্বালিয়ে রক্তাক্ত মুখটার উপর ঠেষে ধরেছেন সে।চুমপুয়িং চিৎকার করছে ওর চিৎকারে হসপিটালের সকলে ছুটে এসেছে।মুহুর্তে কেবিনের ভেতরে ডাক্তার, নার্স আর বাইরে লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়ে গিয়েছে। ডিসুজাকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে যাওয়া হয়েছে। চুমপুয়িং উরনা দিয়ে নিজের মুখটা ঢেকে বসে আছেন ও.টির সামনের বেঞ্চটাতে। মনে মনে ভাবছেন কেন হলো এমনটা? এমন একটা ঝড় তার জীবনে কেন আসলো?
অঝোড়ে দু’চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে চুমপুয়িং এর।বসে বসে ভাবছে সে কেন এতো পাগলামো করেন এই লোকটা? ভালোই যদি বাসবেন তাহলে কস্ট কেন দিলেন আর এখন নিজেই বা কেন কস্ট পাচ্ছেন?
🍁চলবে,,,