সে কি জানে ! Part- 20
–” বেশি উড়তে ইচ্ছে করছে তাই না।।ডানা টা কেটে দিলে কেমন হয়??একটা কথা শুনে রাখ,,হাত-পা ভেঙ্গে দিবো যদি আমার বউয়ের দিকে বাজে নজরে দেখিস।।জানে মেরে ফেলব একদম!! ”
কথাটা বলেই রেয়ান নির্ঝরের পাঞ্জাবির কলার টেনে একটা রুমে নিয়ে গেলেন।।সবাই দিধাকে হলুদ লাগাতে ব্যস্ত।।তাই এদিকে কি হচ্ছে না হচ্ছে এতে কারো খেয়াল নেই।। রেয়ান যেন খুব ভালো ভাবেই নিজের কাজ সম্পূর্ণ করতে পারবেন এখন।।
.
প্রায় আধা ঘন্টা ধরে এখানে দাঁড়িয়ে আছি আমি।।রুমে রেয়ান নির্ঝরের সাথে কি করছেন তা জানতে ব্যপক ইচ্ছে হচ্ছে আমার।।কিন্তু আফসোস!! ইচ্ছেটা পূরণ করতে পারছি না।।এদিকে কোনো আওয়াজও আসছে না রুম থেকে।।কিছুটা বিরক্ত হয়েই রেয়ানের আসার অপেক্ষা করতে লাগলাম আমি।।অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ হয়ে রেয়ান নির্ঝরকে নিয়ে বের হলেন রুম থেকে।।তাদেরকে দেখতেই ভ্রুঁ কুঁচকে এলো আমার।। বুঝতে পারছি না নির্ঝর এমন ক্যাবলা মার্কা হাসি হাসছে কেন??একটু ভালোভাবে তাকাতেই দেখি নির্ঝরের গাল দু’টো লাল হয়ে আছে।।তারমানে রেয়ান নির্ঝরের গালে থাপ্পড় মেরেছেন।।কিন্তু কিভাবে??উনার এক হাতে তো গুলি লেগে ছিল,,এ-র জন্য ও-ই হাতটা ওতো নাড়াতেও পারতেন না।।তবে-কি অন্য হাত দিয়ে নির্ঝরের গালে এমন মারাত্ত্বক থাপ্পড় মেরেছেন!!বলতে হবে,,,রেয়ানের শক্তি আছে বটে।।পুলিশ কি উনি এমনি এমনি হয়েছেন!!কথাটা ভাবতেই আনমনেই বলে উঠলাম “গুন্ডা একটা”।।
রেয়ান নির্ঝরকে ইশারা করতেই সে আসতে আসতে সেখান থেকে চলে গেল।।যেন রেহাই পেয়েছে সে!!এদিকে আমি রেয়ানের দিকে তাকাতেই স্তব্ধ ।।এতক্ষনে রেয়ানের সৌন্দর্য ধরা পরেছে আমার চোখে।।হলুদ রঙ্গের পাঞ্জাবিতে মারাত্ত্বক লাগছে তাকে।।আগের মতোই বুকের প্রথম দু’টো বোতাম খোলা।।সাথে তার নিজ্বস এটেটিউট।।যা তার সৌন্দর্যকে আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে তুলেছে।।উনি খুব গম্ভীর ভাবে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন।।তারপর কিছু না বলেই এটেটিউট দেখিয়ে চলে গেলেন সেখান থেকে।।অদ্ভুদ!!আচ্ছা তার এমন করার কারন কি??আমাকে দেখে উনি এমন করছেন কেন??ব্যপারটা আসলেই অদ্ভুদ।।কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এগুলো অদ্ভুদ না।।চরম বিরক্তির একটা বিষয়।।এ মানুষটাকে মাঝে মাঝে চিনতে খুব কষ্ট হয় আমার।।কি চায় সে??তাকে বুঝবার ক্ষমতা হয়তো কারো নেই!!
দিধার স্টেজের কাছে যেতেই দেখি মহাসয় একটা চেয়ারে বসে আছেন।।তার পাশেই রিহান আর মা।।গল্পেমশগুল তারা।।আমি নামক একজন ব্যক্তি যে আছি সেটা হয়তো তারা ভুলেই গেছেন।।যেন তাদের পরিবারের কোনো সদস্যই না আমি।।একটু ডাকলোও না আমাকে।।এবার রাগ লাগছে আমার।।এমন কি করেছি আমি যে সবাই আমাকে এত ইগনোর করছে।।আর রেয়ান,,,রেয়ান তো রিতিমতো আমাকে ভুলেই গেছেন।।ইচ্ছে করছে উনার এসব এটেটিউট ডাস্টবিনে ফেলে দি।।ইসস!!যদি এমন করতে পারতাম।।তাহলে আমার থেকে আনন্দ আর কেউ পেতো না।।
হঠাৎ একটা মেয়ে এসে রেয়ানের পাশেই চেয়ার নিয়ে বসে পরে।।সে কি গল্প তাদের।।মেয়েটা যেন হাসতে হাসতে রেয়ানের গায়ে ঢলে পড়ছে।।আহা কি মজা!!রেয়ানেরও যেন এসব মজা লাগছে।।কিন্তু আমি তো রাগে ফুসছি।।ইচ্ছে করছে মেয়েটার মাথা ফাটিয়ে দি।।অসভ্য মেয়ে।।আর কোনো ছেলে পাসনি তুই??তাছাড়া দোষ রেয়ানেরও আছে।।উনি কেন এত সুন্দর পার্সোনেলিটি নিয়ে এসেছেন হলুদের অনুষ্টানে।।এত সুন্দর-ই বা লাগছে কেন তাকে??একটু বাজে ভাবে আসতে পারলেন না।।তাহলেই তো মেয়েরা উনার দিকে তাকাতো না।।ভাবতেই রাগ যেন আরও বেড়ে গেল।।সবার সামনে গিয়ে রেয়ানের হাত ধরে দিলাম এক টান।।সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালেন উনি।।মুখে তার চরম বিরক্তি।।যেন আমার এমন কাজ তার একটুও ভালো লাগেনি।।একটুও না!!কিন্তু এতে আমার কি।।আমি রেগে আছি।।অনেক রেগে আছি!!আজকে উনার একদিন কি আমার একদিন।।টানতে টানতে উনাকে সবার থেকে দূরে একটা নির্জন স্থানে নিয়ে আসলাম।।আমার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছেন উনি।।গম্ভীরভাব নিয়ে কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আমি তার পাঞ্জাবির বোতাম লাগিয়ে দিলাম।।গাল টেনে একেবারে লাল করে দিয়ে দু’হাত দিয়ে চুলগুলো এলোমেলো করে দিলাম।।সবশেষে উনার দিকে তাকাতেই আমি অবাক।।এতকিছু করার পরও যেন তাকে আরও বেশি সুন্দর লাগছে।।অদ্ভুদ!!নিজের কাজে যেন এখন নিজেরই আফসোস হচ্ছে।।আগেই মনে হয় ঠিক ছিলেন।।এখন যে আগের থেকেও কিউট লাগছে তাকে।।একদম নিষ্পাপ বাচ্চা।।যেন পৃথিবীর কিচ্ছুটি বুঝে না সে।।তার চেয়েও অদ্ভুদ বিষয় হলো উনি চুপ-চাপ দাঁড়িয়ে আছেন।।কিছু বলছেন না আমায়।।তার দৃষ্টি বরাবর আমার চোখের দিকে।।তার এমন শান্ত ভাব দেখে মনে হচ্ছে এখন কিছু হবে।।খুবই ভয়ংকর কিছু।।
ভাবতেই চলে আসতে নিলাম সেখান থেকে।।সাথে সাথে রেয়ান আমার হাত টেনে দেওয়ালের সাথে ঘেষে দাঁড় করালেন।।আমার দিকে একটু ঝুঁকে বাঁকা হেসে বললেন……
—” জান তৈরি তো তুমি।। ”
তার কথায় কাশতে লাগলাম আমি।।আমতা আমতা করে বললাম…….
—” আআমাকে যযেতে দিন রেয়ান।।সসবাই হয়তো আমার জন্য অপেক্ষা করছে।। ”
—” হুম!! যেতে দিবো তো।। আগে রোমেঞ্চ তো করে নি।।জানো তোমাকে না মারাত্ত্বক লাগছে আজ।।তাই তো দূরে দূরে থাকছিলাম তোমার কাছ থেকে।।যদি ভুল কিছু হয়ে যায়।।বাট ইউ নো ওয়াট।।এতকিছুর পরও তুমি নিজেই ধরা দিলে আমার কাছে।।তাই!! ”
—” তাই কিচ্ছু করবেন না আপনি।।আমাকে যযেতে দিন প্লিজ।। ”
—” অবশ্যই না।।আমার এ অবস্থা করেছো তুমি।।তোমাকেও তো কিছু করতে হবে তাই না?? ”
—” কককি ককরবেন আপনি?? ”
—” হলুদ লাগাবো ”
বলেই পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা প্যাকেট বের করলেন উনি।।যেখানে আছে হলুদ!!বুঝতে পারছি না রেয়ানের মতলব কি।।হলুদ কি আমাদের যে উনি আমাকে হলুদ লাগাবেন।।হলুদ যদি লাগানোর এতই ইচ্ছে থাকে তাহলে দিধাকেই না লাগাবেন।।আমাকে কেন??প্রশ্নটা বেশ ভাবে করতে ইচ্ছে করছে আমার তাকে।।কিন্তু পারছি না করতে।।উনি কাছে আসলেই কেন যেন গলা থেকে সর বের হয় না আমার।।আচ্ছা এমন কেন হয়??
হঠাৎ নিজের কোমড়ে শীতল কিছু অনুভব করি।।রেয়ান আমার কোমড়ে হলুদ লাগিয়েছেন।।ভাবতেই জমে গেলাম আমি।।মুহুর্তেই চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলি।।তা দেখে রেয়ান নেশা ভরা কণ্ঠে বলে উঠেন……
—” চোখ খুলো মরুভূমি ”
তার কথা যেন আমার কানে পৌঁছাচ্ছে না।।আপন মনে চোখ বন্ধ করে আছি আমি।।এতে রেয়ান আবারও বললেন…..
—” ভয় নেই।।বিয়ের আগে কিচ্ছু করব না তোমাকে।।চোখ খুলতে পারো তুমি।। ”
তার কথা শুনে সাহস হলো আমার।।ধীরে ধীরে চোখ খুললাম আমি।।সাথে সাথে রেয়ান আমার নাকের সাথে নিজের নাক ছোঁয়ালেন।।শান্ত কণ্ঠে বললেন…..
—” ভালোবাসি ”
বলেই আর এক মুহুর্ত দাঁড়ালেন না উনি।।চলে যান সেখান থেকে।।এদিকে আমি তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছি।।মনে মনে একটা কথাই বলছি “#সে_কি_জানে আমিও ভালোবাসি তাকে”।।হঠাৎ নাকে হাত দিতেই বুঝতে পারি তরল কিছু লেগে আছে সেখানে।।হাত দিয়ে দেখতেই দেখি হলুদ!!
.
.
.
#চলবে🍁