সেলিব্রেটি স্বামী !! Part 32
চোখ মেলে আমি নিজেকে অপারেশন থিয়েটারে আবিষ্কার করলাম।ডাক্তার আন্টির সাথে দু’জন নার্সও আছেন।উনি আমার হাতটা ধরে কিছুটা ঝুঁকে বসে আছেন আমার মাথার কাছে।আমাকে চোখ মেলতে দেখে উঠে বসলেন উনি।ডাক্তার আন্টি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন।এগিয়ে এসে আমার পেটে হাতের ঠ্যাশ রেখে বললেন পুশ করতে।আমি পারলাম না।ডাক্তার আন্টি বৃথা চেস্টা না করে বলে উঠলেন,
-সির্জার করতে হবে।আপনার স্ত্রীর অবস্থা ভালো নয়।এমন সময় সির্জার করলে এতে আপনার স্ত্রী আর সন্তান দুজনকেই আমরা বাঁচাতে পারবো না।
কথাটা শুনে উনি ভয় পেয়ে গেলেন।আমি উনার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম।উনাকে কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম আমি বাঁচতে চায়। আমাদের সন্তানকে নিয়ে। উনিও ভেঙে পরলেন।কিছুক্ষণ আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে আমাকে ছেড়ে দিলেন উনি।চিৎকার করে আমার মুখের সামনে আঙুল তুলে বললেন,
-আজ যদি তুমি আমায় ছেড়ে চলে যাও তাহলে তোমাকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না।কখনো না।আমি তোমাকে আদেশ করছি আরু আমার সন্তানকে পৃথিবীতে আনো।
আমার চোখদুটো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। উনি আমাকে কিছুটা টেনে তুলে ঝাকিয়ে বললেন,
-কি হয়েছে তোমার? আমার কথা কি তুমি শুনতে পারছো না? আমি তোমার স্বামী তোমাকে আদেশ করছি পুশ করতে।যতো কস্টই হোক।
আমি চোখদুটো মেলে হালকা মাথা ঝাকিয়ে বোঝালাম উনাকে পারবো না।উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে গিয়ে উল্টো ঘুরে দাড়িয়ে রইলেন।আমি উনার দিকে তাকালাম। উনি ফিরে তাকালেন না আমার দিকে। আমি হাতটা উঁচু করে উনাকে ডাকলাম উনি তবুও ঘুরলেন না।দেয়ালের সাথে হাতের ঠ্যাশ দিয়ে দাড়িয়ে রইলেন উনি।আমি জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিলাম আর পুশ করার চেস্টা করলাম। হঠাৎ বাচ্চার কান্নার আওয়াজ কানে এলো আমার। আমি একটা চিৎকার দিয়ে উঠলাম। দেখতে পেলাম উনি ঘুরে তাকিয়েছেন আমার দিকে।নিমিষেই আমার চোখদুটো বন্ধ হয়ে গেলো।
🍁
রুহান মাইশাকে নিয়ে নিজের বাড়িতে আসলে জানতে পারলেন সেনডি চলে গেছে এবাড়ি ছেড়ে।মাইশাকে রুহানের মা জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন আর ক্ষমা চাইলেন।রুহান তার মায়ের থেকে মাইশাকে ছাড়িয়ে দূরে সরিয়ে দিলেন।আর বললেন তাকে,
-আমার মাইশার আসেপাশেও যেন তোমাকে আর তোমার মেয়েকে আমি কখনো না দেখি।
মাইশা রুহানের বিহেভিয়ার দেখে অবাক হয়ে গেলো।রুহানের পিঠে হাত রাখলো।ইশারায় শান্ত হতে বলল।রুহান বুঝলেন না।মাইশাকে টানতে টানতে নিজের রুমে নিয়ে আসলেন।মাইশার গালে হাত রেখে বললেন,
-এদের জন্য আজ এতোগুলা দিন আমরা আলাদা থেকেছি মাইশা।এতোটা কস্ট পেয়েছি।আমি চলে যাবো তোমাকে নিয়ে। থাকবো না আর এদের সাথে।
মাইশাকে জড়িয়ে ধরলেন রুহান।মাইশা রুহানকে টেনে নিজের সামনে আনলেন। রুহানের দিকে রাগি দৃস্টিতে তাকিয়ে চিৎকার করে বললেন,
-এতোটা বদলে গেছেন আপনি? ভালোবাসেন আমাকে? এমন ভালোবাসা আমি চায় না রুহান।আপনি জানেন আমি কেন এবাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম? আপনাদের মা-ছেলে, ভাই-বোনের সম্পর্ক যেন নস্ট না হয় তার জন্য। আর আপনি আমার এতো কস্ট, এতো চেস্টা সব বৃথা করে দিলেন।পারলেন আপনি এমনটা করতে? রুহানকে ঝাকিয়ে বলল মাইশা, কিভাবে করতে পারলেন আপনি এমনটা বলুন?
রুহানের মুখে কোনো কথা নেয়। দরজার কাছে দাড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে রুহানের মা, বোন।মাইশা রুহানকে টেনে তাদের সামনে আনলো।ছরি বলতে বললো তাদের।রুহান মাথাটা নিচু করে ছরি বলতেই রুহানের মা আর বোন রুহানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলেন।
🍁
অন্ধকার স্টোর রুমে ক্ষত বিক্ষত শরীরটা নিয়ে পরে আছেন চুমপুয়িং। সারাদিন কিছু খাই নি সে।ডিসুজা দরজাটা খুলে এগিয়ে আসলেন তার কাছে।তার একমুষ্টি চুল টেনে ধরে তাকে টানতে টানতে কিচেনে নিয়ে এলেন।একটা চেয়ার টেনে চুমপুয়িং এর সামনে পা তুলে বসে বললেন উঠে দাড়াতে।তার জন্য গরম করে এক কাপ চা বানিয়ে দিতে।চুমপুয়িং নিজের সর্বস্ব শক্তি টুকু দিয়ে উঠে দাড়ালেন।কাঁপাকাঁপা শরীরে গ্যাসের চুলা অন করলেন।গরম পানি কড়াইয়ে ঢেলে চুলায় দিতেই তার মাথাটা ঘুরে উঠলো।সে পরে যেতে লাগলে ডিসুজার হাতটা ধরে বসলেন। আর ডিসুজা রাগে, বিরক্তি ভাব পোষণ করে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেন চুমপুয়িং কে।চুমপুয়িং তাল সামলাতে না পেরে গরম কড়াইয়ের উপরে এসে হাত পরল তার।হাতের টান লেগে কড়াইটা এসে পরলো তার পায়ের উপর। পা দাপিয়ে উঠতেই তার মাথা ঘুরে মুখটা এসে পরলো গ্যাসের চুলার আগুনের উপর। চুমপুয়িং চিৎকার দিয়ে উঠলে ডিসুজা বসা ছেড়ে উঠে দাড়ালেন।এগিয়ে এসে চুমপুয়িং কে টেনে ধরলেন।চুমপুয়িং গালে হাত রেখে চিৎকার করছেন আর ডিসুজা বলছেন তাকে শান্ত হতে।চুমপুয়িং চিৎকার করেই চলেছে।ডিসুজা চুমপুয়িং কে কোলে তুলে নিলেন। রুমে এনে শুইয়ে দিয়ে ডাক্তারকে ফোন করলেন।ডাক্তার এসে চুমপুয়িং এর অবস্থা দেখে একটা ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে হসপিটালে নিতে বললেন।ডিসুজা ডাক্তারের কথা মতো চুমপুয়িং কে হসপিটালে নিয়ে এলেন।
চলবে,,,