যদি তুমি জানতে

যদি তুমি জানতে !! Part- 17

হ্যাঁ, গিটারের মধ্যে ক্যামেরা সেট করা।
-মানে?
-আমি তোর সাথে দেখা করার আগে গিটারে ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছিলাম। গিটার যেহেতু দিপের রুমে ছিল এজন্য সব রেকর্ড হয়ে গেছে।
-ভাই তোমার না মাথাটা কেটে মিউজিয়ামের রাখা দরকার। মাথায় এত বুদ্ধি !!
-তোর মতো হবো নাকি! মাথামোটা! গদর্ভ ! আগেই যদি কাগজে লিখে দিপের ম্যাটার জানাতি তাহলে কি হতো!!
-আমার মাথায় ছিল না সাঈদ ভাই।
-তোর মাথায় কি থাকে! গাধা!
-ভাই তুমি আবারো বকছো।।
-চুপ! কথায় কথায় ভাই ভাই! আমি কি তোর মায়ের পেটের ভাই নাকি! ভাই ডাকবিনা।
-তোমাকে নাম ধরে ডাকতে পারব না ভাই!
-আবার!
-না আসলে মানে হলো সাঈদ আমাকে একটা গান শুনাও।
-সাউন্ডস বেষ্ট। এভাবেই ডাকবি!
-এখন তো গান শুরু করো।।
-গিটার ছাড়া জমবে না।
-কে বলসে? তুমি আগে গান শুরু কর প্লিজ!!
-ওকে।করছি

রাতের অন্ধকারে ঢেকে গেছে আকাশ। দূর দূর থেকে আসা নিয়ন বাতির আলো এসে কিছুটা ছাদে পড়ছে। ঠান্ডা বাতাস।। চোখ বন্ধ করে সাঈদ ভাই খুব সুন্দর করে সুর তুলতে লাগলেন। আস্তে আস্তে সুর মিলিয়ে গান শুরু করলেন। নিয়ে চললেন গানেররাজ্যে…

“তোমার ইচ্ছেগুলো, ইচ্ছেগুলো
তোমার ইচ্ছেগুলো ইচ্ছে হলে
আমায় দিতে পারো
আমার ভালোলাগা ভালোবাসা
তোমায় দেবো আরো

তুমি হাতটা শুধু ধরো
আমি হবো না আর কারো
তুমি হাতটা শুধু ধরো
আমি হবো না আর কারো

তোমার স্বপ্নগুলো আমার চোখে হচ্ছে জড়সড় …

তোমার আবেগমাখা খামখেয়ালী
হাটছে আমার পিছু,
আমার আসা-যাওয়া পথের
বাকে পাইনি অন্যকিছু,

তুমি হাতটা শুধু ধরো
আমি হবো না আর কারো,
তুমি হাতটা শুধু ধরো
আমি হবো না আর কারো,

তোমার স্বপ্নগুলো আমার চোখে হচ্ছে জড়সড়…..

সাঈদ ভাই এখনো চোখ বন্ধ করে গেয়ে যাচ্ছেন। গানের মাঝেমাঝে কয়েকটা শব্দ মুচকি হেসে গাচ্ছেন। বাতাসে চুলগুলো উড়ছে….মিষ্টি কন্ঠে গান গেয়ে চলছেন। গান শুনতে থাকলে ঘোর লেগে আসে একদম, কেমন যেন এক তীব্র নেশা।। সাঈদ ভাই গান শেষ করে চোখ খুলে দেখেন আমি তাকিয়ে তাকিয়ে তাকে দেখছি। উনি আমাকে টান দিয়ে কাছে এনে বললেন-
-এভাবে হ্যান্ডসাম ছেলেদের তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে নেই!! তারাও লজ্জা পায়।। চল এখন ফানুস উড়াব।

সাঈদ ভাই আমাকে নিয়ে ফানুস উড়ানোর জন্য প্রস্তুত। টেবিল থেকে ফানুস নিয়ে উনি আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছেন আর আমি ফানুসটা ঠিক করে ধরে আছি। আগুন জ্বালানো শেষ হলে আমি ভাইকে বলি-
-আমাকে উচু করে তুলে ধর, আমি ফানুস উড়াব।
-তুই উড়াবি আমি কেন তোকে ধরব!
-প্লিজ উচু করে তুলে ধরো না!!
-নো।
-প্লিজ!
-না করছি!
-তুমি না অনেক কিউট!!প্লিজ!!!
-ন আকার না ! আমাকে মাখন লাগানো বন্ধ কর। আমি ধরব না!

ভাই যে আমাকে উচু করে তুলবেন না একদম টাটকা সুন্দর করে বলে দিলেন। মনটাও উনার কথা শুনে খারাপ হয়ে গেল। উনি লম্বা তালগাছ বলেই তো একটু উচু করে তুলে ধরতে বলছি!! আমি মুখ কালো করে ফানুস হাতে ছাড়তে নিলে সাঈদ ভাই আচমকা আমাকে উচু করে তুলে ধরেন। আমি মাথা নিচু করে উনার দিকে ঝুকে খুশি হয়ে তাকালে বলেন-
-এতো খুশি হওয়ার দরকার নাই! উপরে তাকিয়ে ফানুস উড়া।
-আচ্ছা ।

আমি উপরে তাকিয়ে ছেড়ে দিলাম ফানুসটা। বাতাসের জোরে ফানুসটাও উড়ে গেল। জলন্ত লালরেশটা কালো আকাশের বুকে মিটিমিটি করে জ্বলছে। খুব সুন্দর সে দৃশ্য। ফানুস উড়ানো শেষ হলে আমি নিচে নামতে চাইলে সাঈদ ভাই ছাড়লেন না। চেষ্টা করলাম নামার কিন্তু না, উনি ছাড়ছেন না। উনি ওভাবেই ধরে থাকলেন। আমি বললাম-
-ভাই ছাড়ো আমি নিচে নামব।
-ছাড়ব? ছাড়লে কিন্তু ধিরিম করে নিচে পড়বি। এরপর হাড়গোড় ভেঙে বেডে শুয়ে থাকিস!
-না না প্লিজ ভাই!! ছেড়ে দিও না।।
-ভাই ডাকা বন্ধ কর!
-আমি পারবনা।
-ছেড়েই দেই, বেশি কাহিনি আমার সহ্য না।
-আল্লাহ্ আল্লাহ!! না না প্লিজ ছেড়ো না!!
-আগে নাম ধরে ডাক!
-প্লিজ ভাই আমি তোমার নাম ধরে ডাকতে অভ্যস্ত না। সময় লাগবে।
-চুপ! এখনি ডাকবি। বানান কর সা ঈ দ সাঈদ সাঈদ সাঈদ বল!
-প্লিজ! পারবোনা!
-ছেড়ে দিলাম।
-সাঈদ আমাকে তুমি নিচে নামিয়ে দেবে?
-নাও ইটস বেষ্ট!
-আচ্ছা আচ্ছা।।

টেবিলে রাখা সবগুলো ফানুস উড়িয়ে সাঈদ ভাই আমাকে নিয়ে নিচে নেমে গেলেন। নিচে এসে রাতের খাওয়া পর্ব সেরে নিলাম।আমি আমার রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। রাতে বৃষ্টি নামলে গায়ে কাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। মিস্টার জুনায়েদ সাঈদও উনার রুমে যেয়ে শুয়ে পড়েন।

মাঝরাতে মনেহয় কেউ আমার মুখের উপর “ফু” দিচ্ছে। চোখ খুলে দেখি সাঈদ ভাই! এমন কিছু করায় আমার ঘুম ভেঙে গেলে সাঈদ ভাই বললেন-
-নাবিলা তাকালি কেন? ঘুমিয়ে থাকতি!
-এই রাতে তুমি ভূতের মতো এরকম করলে ঘুমাব কি করে?
-চল, উঠ। বাইরে যাব।
-বাইরে বৃষ্টি।
-হুম। উঠ। বৃষ্টি বিলাস করব।
-না। বৃষ্টিতে তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে।
-উঠ বলছি!
-এমন করো না, তোমার ঠান্ডা লাগবে!! বাইরে ঠান্ডা অনেক।
-আমি এখানে ঘুমাব। তোর সাথে।
-অসম্ভব! যাও এখান থেকে!
-নো! আমি এখানেই ঘুমাব!
-হুহ! যাও তো তুমি!
-প্লিজ নাবিলা।।

সাঈদ ভাইয়ের আবদার পূরনে আমি শোয়া থেকে উঠে ভালোমতো বসি। বসার সাথেসাথেই সাঈদ ভাই কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যান। আমিও উনার চুলে হাত ডুবিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি খেয়াল নেই। সকালে চোখ মেলে তাকালে দেখি সাঈদ ভাই রুমে নেই। হয়তো উনার রুমে চলে গিয়েছেন। আমি ফ্রেশ হয়ে উনার রুমে গেলে দেখি সাঈদ ভাই রেডি হচ্ছেন, কোথাও যাবেন হয়তো। আমাকে দেখে বললেন-
-ঠিক সময়ে উঠেছিস নাবিলা। রেডি হ। মেজো খালামনির বাসায় যেতে হবে।
-ওখানে না গেলে হয়না?আমার আর ভাল্লাগেনা ওখানে।
-আমি জানি তুই কমফরটেবল ফিল করিস না। বাট দিপকে উচিত শিক্ষা দিতে তোর ওখানে যেতে হবে। আমি আছি নাবিলা। চিন্তা করিস না। ওই শয়তান আর তোকে টাচ করতে পারবে না!!
-একটা প্রশ্ন করি?
-কর।
-আমার বাসায় রাতে যে ব্যক্তি আসত, ওটা কি দিপ ছিল?
-হুম। দিপ ছিল। রাতে তোকে দেখতে আসত। কজ রাতে বেশিরভাগ মেয়েরা ওড়না ছাড়া ঘুমায়, আর দিপ ঠিক এই জিনিসটার সুযোগ নিয়েছে। রাতে এসে তোকে খারাপ নজরে গিলে খেত।
-ছি! আমার ভাবতেও লজ্জা করছে! দিপ কিনা আমার ভাই ! ঘেন্না লাগছে!
-চল এখন। সময় হাতে কম।
-চলো।

সাঈদ ভাই আর আমি না খেয়েই বেরিয়ে পড়লাম গন্তব্যের দিকে। গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করে রওনা দিলাম। কিছুটা এগোনোর পর ভাই লাবিব ভাইয়াকে গাড়িতে তুলে নিলেন। লাবিব ভাইয়া খুব সৌহার্দ্যপূর্ণ। ভালো মানুষ বটে। সাঈদ ভাই লাবিব ভাইয়াকে ড্রাইভিং সিটে বসতে বলে আমাকে উনার সাথে পেছনের সিটে নিয়ে গেলেন।

লাবিব ভাইয়া ড্রাইভ করছেন। সাঈদ ভাই জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে, থুতনিতে হাত রেখে কী যেন ভাবছেন। এমন নিরবতা দেখে আমি হাই ডোজে বোরিং হচ্ছি। সাঈদ ভাইকে কনুই দিয়ে খোচাতে খোচাতে বলি-

-ভাই আমার বোরিং লাগতেছে!
-কী বললি আবার বল,
-ওই যে বললাম কি সাঈদ আমার বোরিং লাগতেছে,
-তো আমি কী করব?
-একটু নাচো, আমি দেখি।
-কানের নিচে একদম গরম করে দিব! সাহস কত্ত বড়!
-হেই বয়! ডোন্ট ফরগেট আমি নাবিলা হক ফিহা! কেমিস্ট্রির সালফিউরিক এসিড এনে ঝলসে দিব!

সাঈদ ভাই আমার শুনে বোকার মতো তাকিয়ে আছেন। আর অন্যদিকে লাবিব ভাইয়া খিলখিলিয়ে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে। সাঈদ ভাই এক ধমক দিলে লাবিব ভাইয়া খিলখিলিয়ে হাসি থামিয়ে মুখ বুজে হেসে চলছেন। সাঈদ ভাই আমার মাথায় চাট্টি মেরে বললেন-

-অপদার্থ কোথাকার! কখন কি বলতে হয় জানস না! শুধুশুধু কি তোকে মাথামোটা বলি!
-তুমি তো আমাকে দরজার সামনে নামিয়ে দিয়েই চলে যাবা। এরপর সারাদিন ওই প্ল্যান মোতাবেক চলতে হবে। তুমি পাশেও থাকবে না। আর এখন চুপ করে আছো।
-আমি সাথে থাকলে খুশি?
-হুম

সাঈদ ভাই আমার কাছে এসে কপালে, গালে ঠোট ছুয়িয়ে দিচ্ছেন। একবার না দুবার না, বারবারই আদর করছেন। সামনের সিট থেকে লাবিব ভাইয়া একটু কেশে থামতে বললেও সাঈদ ভাই আদর করেই যাচ্ছেন। লাবিব ভাইয়া বলে উঠলেন-

-দোস্ত ভাবিরে আমার সামনেও চুমা দিতে শরম করেনা!
-আমার জিনিস ! আমি যা ইচ্ছা করতেছি! তুই এইদিকে নজর দেস কেন!
-এ ভাই!! মুই এহনো সিঙ্গেল!!
-সো হোয়াট! আমি তো সিঙ্গেল নাহ্। এখন যা ইচ্ছা করব!তোর কি!
-জানালা আটকায়া নিস।মানুষ দেখব!
-আমি কপালে, গালেই দেই। তোর মতো বেশশরম না! পিছে তাকাবি না। এমনেই আজকের দিনটা ও আমার থেকে দূরে থাকবে।
-আহা বুক ভরা কষ্ট রে! বালতি ভর্তি কষ্ট!
-নাবিলা তোর মতো আরেকটা গর্দভ রে চিনে নে।
-সাঈদরে আর কত অপমান করবি ভাবির সামনে!!!!

.

.

সাঈদ ভাই আমাকে মেজো খালামনির বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। আমি বিদায় দিয়ে বাড়ির কলিং বাজাতে দরজা খুলে দিল। দেখি বড় খালামনি দরজা খুলেছেন। আমাকে দেখে উনি কান্না করে জড়িয়ে ধরলেন। আর বললেন-

-মা কোথায় ছিলি তুই?তোকে এই এলাকার কোথায় কোথায় না খুজছি!! কোথায় ছিলি ফিহা?
-খালামনি তুমি শান্ত হও। আমি ঠিক আছি। শান্ত হও।
-আয় ভেতরে আয়, মা

খালামনি আচলে কান্না মুছে আমাকে নিয়ে ভেতরে গেলেন। মা আর বড় আপু কে ডাক দিলেন। মা, আপু আমাকে দেখে দুজনেই জড়িয়ে ধরলেন। মা জিজ্ঞেস করলেন-

-কোথায় ছিলে মা? কত চিন্তা করছিলাম রে, ভয়ে কলিজায় পানি ছিলো না আমার!
-মা কিছু হয়নি। এই দেখো, আমি ঠিক আছি। কান্না করো না। ঠান্ডা হও।
-মারে কাল কোথায় ছিলি তুই? দিপ বলল তোকে নাকি গুন্ডারা ধরে নিয়ে গেছে!!
-না মা। আমি কাল হাসপাতালে ছিলাম। কোনো গুন্ডা তো ধরে নিয়ে যায়নি।
-কি বলিস?? দিপ তো বলল তোকে নাকি অজ্ঞাত ব্যাক্তি তুলে নিয়ে গেছে।
-আরে না। উল্টো দিপ ভাই চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে গিয়েছিল। চোটের কারনে কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়। গতকাল ওখানেই ছিলাম।
-দিপ তোকে ফেলে দিল কেন?
-জানি না মা।

মা আর বড় খালামনি একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমার কাছে এমন জবাব শুনে রীতিমতো তারা আশ্চর্য! বড় খালামনি জানালেন, বাড়ির বাকি সদস্য দিপ ভাইয়ের শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছেন। শুধু মা বড় খালামনি আর আপু এখানে রয়েছেন।

বড় খালামনি আর মা আমাকে নিয়ে রুমে চলে এলেন। আপু উনার রুমে। রুমে এসে মা খাইয়ে দিতে লাগলেন। আর খালামনি পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। খালামনি বললেন-

-ফিহা, তোর সাঈদ ভাইয়ের কোনো খোজ পাওয়া যাচ্ছে না। কতদিন হয়ে গেলো ছেলেটা আমার নিখোজ। কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছেনারে। পুলিশও হাতে হাত রেখে ঝিমুচ্ছে। তোর খালুকে জানালাম, তার কোনো মাথাব্যথাই নেই।।।
-টেনশন করো না খালামনি সব ঠিক হয়ে যাবে। সাঈদ ভাইয়ের কিচ্ছু হবেনা।

-চলবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *