অবশেষে তুমি আমার !! Part- 15
অসহায়ের দৃষ্টি নিয়ে রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,’ সেদিনের ভুলের কি কোন ক্ষমা হবে না?”
– রাজ অধরার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিয়ে বলে,’ যে আগুন আমার বুকে জ্বালিয়েছিলি সেটা সুদে-আসলে উসূল করবো। তোর এবার্রশন করাবো কাল। রেডি থাকিস। আগামী তিনমাস তোকে দিয়ে কোটি টাকার ডিল সাইন করাবো। আর মা-বাবার বিচার করবো।
– কি হলো তোর অভিনয়ের চোখের পানি ফেলবি না আমার সামনে।।
– আপনি প্লিজ এমন বলবেন না। আমাকে প্লিজ মুক্তি দেন।
– তোর মুক্তি? আমার হৃদয়ে যে আগুন জ্বালিয়েছিস তা না নিভে যাওয়া পর্যন্ত মুক্তি পাবি না।
কথাটা বলে রাজ বাহিরে চলে গেল। অধরা রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে কাঁদতে লাগলো । এ কান্না যেন বাদল ঝরণা ধারাকেও হার মানায়। এক কালবৈশাখী ঝড় তার জীবনটা এভাবে শেষ করে দিবে সে ভাবতে পারেনি। ফোনটা বারবার রিং হচ্ছে। কিন্তু ফোন ধরার সাহস হচ্ছে না অধরার। কয়েকবার রিং হওয়ার পর অধরা চোখের পানি মুছে ফোনটা রিসিভ করলো। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসলো পরিচিত সে কন্ঠটা।
” আপু কেমন আছো?”
– হ্যাঁ ভালো তুই কেমন আছিস?
– আপু তোমাকে ছাড়া ভালো থাকি কিভাবে?আপু কতদিন তোমার মুখ দেখি না। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোমায়।
– অধরা চোখের পানি মুছে বললো,’ তাই বুঝি? কিন্তু ইশু দেখ আমার বস একবারেরই মন ভোলা আমাকে ছাড়তে চায় না। তুই টেনশন করিস না আর কয়েকটা দিন তারপর তোর সাথে দেখা করবো।”
– আপু আমি মরে গেলে আসবে? আমি কি কিছু বুঝি না? তুমি মিথ্যা বলছো হয়ত আমাকে। আমার মন বলছে তুমি কষ্টে আছো। প্লিজ বলো না তোমার কি হয়েছে।
– অধরা আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারছে না। ছোট থেকে ইশুকে নিজ হাতে বড় করে করেছে। আর সে ইশু থেকে কত দূরে। ইশুর জন্য অধরার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু করার নেই। কান্না করাও যাবে না। কান্না শুনতে পেলে ইশু কষ্ট পাবো।
– কি হলো আপু কথা বলছো না কেন?
– হুম বলছি তো?
– আপু সত্যি করে বলোতো তুমি কেমন আছো?
– আরে আমি ভালো আছি। তুই চিন্তা করিস না। এখন রাখছি পরে কথা হবে। অধরা ফোনটা কেটে দিয়েই হাউ-মাউ করে কেঁদে দিল। সে জানে না তার এ জীবনের শেষ কোথায়?
– এদিকে মিসেস রাহেলা তার মেয়ে ত্রিযামিনীকে বললো, ‘ ত্রিযামিনী অধরার মতিগতি ঠিক লাগছে না। আর রাজ যদি পরে অধরাকে সত্যি সত্যি মেনে নেই। তাহলে কোটি টাকার সম্পদ হাত ছাড়া হয়ে যাবে। আর আমার ভাবতেও লজ্জা লাগছে তুই, রাজকে তোর প্রেমে পড়াতে পারছিস না?
– মা রাজ শুধু বলে সে একজনকে ভালোবাসে। আর কাউকে ভালোবাসতে পারবে না!
– সে একজনটা আবার অধরা নয় তো?.
– মা তুমি ঠিক বলেছে। অধরাই হবে। যাইহোক অধরাকে যে করেই হোক বাড়ি থেকে তাড়াবো। অধরা থাকলে রাজ আমার হবে না।
– ত্রিযামিনীর মা বললো,’ যা করলো তাড়াতাড়ি কর। ”
– এদিকে রাত্রি বেলা রাজ বাসায় এসে দেখে অধরার রুমের দরজা খোলা। রাজ দরজার কাছে আসতেই বুঝতে পারলো অধরা কার সাথে যেন কথা বলছে ফিসফিসিরে। রাজ রুমে ঢুকতেই ফোনটা রেখে দিল।
– রাজ অধরার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো তোর আমাকে দিয়ে হয় না? প্রেগন্যান্ট করানোর পরও তোর নাগরের সাথে কথা বলতে হয়?
– আজ তোর সব চাহিদা আমি মিটাবো। এই বলে অধরার শরীর থেকে টান দিয়ে কাপড় খুলে ফেলে।
– প্লিজ আমাকে ছেড়ে দেন।
কেন ছেড়ে দিবো তোকে?
আর তুই এতক্ষণ কার সাথে কথা বললি? বল।
– আপনার জানতে হবে না।
– কেন জানতে হবে না? এ তিনমাস তুই শুধু আমার। নিশ্চয়ই তুই তিয়াসের সাথে কথা বললি?
– হ্যাঁ তাতে আপনার কি? আপনার তো আমার শরীর চায়। বুকের বা পাশে যে একটা হৃদপিন্ড আছে সে খুঁজ কি কখনো নিয়েছেন?
– চুপ কর আমার বাসাতে থেকে আমার মুখে মুখে তর্ক?
– অধরা আর কিছু বললো না। রাজ ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে দেখে অধরা এখনো বিছানায় বসে আছে।
– রাত্রে খেয়েছিস?
– অধরা কিছু বললো না।’
– কি হলো কথা বলছিস না কেন?(ধমক দিয়ে)
– অধরা ভয়ে মাথা নাঁড়িয়ে না সূচক জবাব দিল।
– রাজ নিচে থেকে খাবার এনে দিয়ে বললো,’ খেয়ে নে। নয়তো বাচ্চার প্রবলেম হবে। তোর সাথে শত্রুতা থাকতে পারে যে আসছে তার সাথে তো কোন শত্রুতা নেই।
– আপনি না বলেছন বেবী নষ্ট করে দিবেন।
– অধরার কথা শুনে রাজ কষে একটা থাপ্পর দিয়ে দেয়।
– থাপ্পর খেয়ে অধরা কান্না করে দিলে রাজ ধমক দিয়ে চুপ হতে বলে। অধরা একদম চুপ হয়ে যায়।
– রাজ নিজে হাতে অধরাকে খাইয়ে দেয়।
– অধরার খাওয়া শেষ হলে। অধরা রাজকে বলে, ‘ রাজ আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না?
– রাজ কিছু বললো না। অধরাকে হেচকা টান দিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে দিলো।
– কি করছেন এসব ছাড়েন আমাকে।
– তাই বুঝি? তা তোমাকে ছাড়বো কেন? আইনত তুমি আমার বউ। আজ কোন কথা হবে না। আজ তোমাকে আদর-সোহাগে ভরিয়ে দিবো।
– রাজের মুখে বউ শব্দটা শুনে মুহূর্তে অধরার চোখে পানি এসে যায়। সে আর রাজকে বাধা দেয় না। রাজের প্রতিটা স্পর্শে আজ কোন হিংস্রতা খুঁজে পাচ্ছে না অধরা। রাজ অধরার ললাটে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিলো কপালে বৃত্তকার টিপ স্বরূপ! অধরা তার আঁখি জোড়া বন্ধ করে নিলো। আর রাজকে নিজে থেকেই শক্ত করে বাহুডুরে আবদ্ধ করে নিল। রাজ তার নাক দিয়ে অধরার গলায় আর বুকে আলতো করে সুঁড়সুঁড়ি দিলো। অধরা দু’হাতে রাজের চুলগুলো খামছে ধরলো। রাজ খুব যত্ন করে আজ অধরার বস্ত্র হরণ করছে। অধরার শরীর কাঁপছে। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে মনে হচ্ছে। অধরা পারছে না চোখ খুলতে। আঁখি জোড়া বন্ধ করে অনুভূতির রাজ্যে হারিয়ে যাচ্ছে।
অধরার কাছে আজকের রাতটা খুব স্পেশাল মনে হচ্ছে কেননা রাজ তাকে না ভালোবাসলেও তার গর্ভের সন্তানকে তো ভালোবাসে।
এদিকে রাজ অধরার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যায়। বিদ্যৎ চলে গেছে। জানালা দিয়ে অন্ধকারে জোনাকি পোকাগুলো আলো জ্বালিয়ে তাদের পাহাড়া দিচ্ছে। রাতটার সৌন্দর্য যেন শতগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে । অধরার খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে আজ, ‘
আকাশের নক্ষত্রেরা সাক্ষী
কেবল তোমাকেই ভালোবাসি,
হ্য ভালোবাসি।
আমার চিলেকোঠার জানালায়,
তোমার নামে যত বৃষ্টি ঝরে
তাদের কসম,
কেবল তোমাকেই ভালোবাসি।
তোমার দেওয়া অবহেলার আকাশে
মেঘ জমাতে জমাতে একদিন
আমিও বৃষ্টি হয়েই ঝরে যাবো।
হ্যা মরবো,
তোমাকে ভালোবেসেই
প্রতিনিয়ত বুকের ভিতরে,
চিৎকার করতে করতেই
একদিন মারা যাবো।
এদিকে রাজ ঘুমের ঘরে বলতে লাগলো,’ আমার হৃদয়স্বেরি। আমাদের খুব ছোট্ট একটা সংসার হবে। আমাদের ছোট্ট ঘর আলো করে খুব সুন্দর একটা রাজকুমার আসবে। রূপকথার গল্পের মতো । আমরা সারাদিন ঝগড়া করবো আমাদের রাজকুমার সে বিচার করবে।
– রাজের কথাগুলো অধরার হৃদপিন্ডে আঘাত করছে। প্রতিটা আঘাতে অধরার চোখ দিয়ে খুশিতে বৃষ্টি বর্ষণ হচ্ছে। রাজের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে আর মনে মনে বলছে আল্লাহ যদি এ মানুষটাকে সারাজীবন বুকে রাখতে দিতো। তাহলে কতই না সুখী হতাম।
-পরের দিন রাজের ঘুম ভাঙতেই বুঝতে পারলো সে কারো বুকে। চোখ দুটি খোলে তাকাতেই দেখলো অধরা তাকে বুকে জড়িয়ে রেখেছে।
– রাজ অধরাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো,’ তোর কি করে সাহস হয় আমাকে বুকে জড়িয়ে রাখতে? নাকি আমার বাবার সম্পতি নিয়ে তোদের লোভ শেষ হয়নি? আমারটা নিতে আসছিস?
– আর শোন তোর গর্ভে আমার সন্তান এটা যেন কেউ না জানে। জানলে কিন্তু তোর গর্ভের সন্তান পৃথিবীর আলো দেখবে না।
– সন্তান কি আমার শুধু? এ সন্তানের বাবা তো আপনি। বাবা হয়ে কিভাবে বলেন সন্তানকে নষ্ট করতে। আর রাতে তাহলে ওসব মিথ্যা ছিলো?
– কোনসব?
-আপনি যে আমার সাথে ওসব করলেন।
– হাহা! মনে রাখবি মানুষ পতিতালয়েও রাত কাটায়। পতিতার সাথে রাত্রিযাপনের আগে কত কথায় বলে। পতিতারা কি ওসব মনে রাখে?
শোন তোকে তো এমনিতেই ব্যবহার করছি না।টাকা দিচ্ছি তোকে। এছাড়া দু’জনেই তো মজা পাচ্ছি। এছাড়া তোে গর্ভের তিয়াসের সন্তানও হতে পারে।
– অধরা রাজের মুখে এ কথাটা শুনে ঠাস করে রাজের গালে চড় বসিয়ে দেয় আর বলতে লাগে, ‘ ছি আপনার লজ্জা করে না? নিজের সন্তানের নামে মিথ্যা অপবাদ দিতে। আপনার চেয়ে তিয়াস হাজারগুণ ভালো আছে। আপনার টাকা চাই না। আমি চলা যাবো।অধরার বুক ফেঁটে কান্না আসছে।ছিঃ মানুষ একটা নোংরা মানুষিকতার কেমনে হতে পারে। বিয়ে করে পতিতার সাথে তুলনা করছে।
– চলে যাবে ভালো কথা কিন্তু বাসা থেকে এক পা বের হতেই তোমার সব ভিডিও ফাঁস করে দিবো!
– কিসের ভিডিও?
– তোমার আর আমার ঘনিষ্ট মুহূর্তের ভিডিও!
– কী বলছো এসব তুমি! ভিডিও! না তুমি এসব করতে পারো না।
– আমি ভিডিও করতে পারবো না। আর তুমি তিয়াসের সাথে ফোনে প্রেম করতে পারবে তাই না?
– রাজ এটা তো কথা ছিল না। ছি তুমি এতোটা বাজে?
– ওয়েট ওয়েট! শুনেন যে কতদিন আমার সাথে কন্টাক্টে আছেন সে কতদিন আপনি আমার। আমি প্রমিজ করছি আপনার সময় যেদিন শেষ হয়ে যাবে সেদিন ভিডিও ডিলিট হবে। আর তো মাত্র কয়েকটা দিন তাই না?
– অধরা আর কিছু বললো না। বাধ্য হয়েই থাকতে হবে তার রাজের কাছে। রাতের খুশিটা পারলো না সে বেশিক্ষণ ধরে রাখতে।
– এদিকে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে রাজ আর অধরার সব কথা শুনে নেয়। এবং তার মা’কে সবকিছু খুলে বললো ত্রিযামিনীর মা বলে অধরার বাচ্চা নষ্ট করে দিতে হবে। নয়তো পরে এ সন্তান রাজের উত্তরাধিকারী হবে।
– রাজ অধরার সাথে ঝগড়া করে অফিসে চলে যায়।
– অধরা যোহরের নামায পড়ে রুমে বসে আছে এমন সময়, মিসেস রাহেলা অধরার জন্য এক গ্লাস দুধ এনে বলে মা তোমার সাথে অনেক অন্যায় অবিচার করেছি ক্ষমা করে দিয়ো। তুমি অন্তঃসত্ত্বা এ শরীর নিয়ে এতো কাজ করতে হবে না। তোমার জন্য দুধ নিয়ে আসছি খেয়ে নাও। অধরা হাতে দুধের গ্লাস নিতেই, ত্রিযামিনী মনে মনে ভাবতে লাগলো দুধটা খেলেই বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাবে। দুধের মাঝে বেবী নষ্ট করার মেডিসিন দিয়েছে।
– এদিকে অধরা দুধের গ্লাস মুখে ”””
চলবে””””’